সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَا نَبِيَّ بَعْدَهُ

‘শী‘আদের’ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন!


যে সমস্ত ভ্রান্ত ফের্কা সম্পর্কে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, সেগুলোর মধ্যে একটি হল ‘শী‘আ’। তারা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার নিয়েই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে (আহমাদ হা/৬৩০২; বুখারী হা/৩৭৫৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৪৯৪-এর ব্যাখ্যা)। শী‘আ অর্থ অনুসারী, গোষ্ঠী ইত্যাদি। ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের ফসল হিসাবে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এবং মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তাকে কেন্দ্র করেই এই পথভ্রষ্ট শী‘আ সম্প্রদায়ের জন্ম। যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কায় মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষ যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানায়।


ফলে মীমাংসার জন্য আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষে আবু মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আর মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষে আমর ইবনুল আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে শালিস নিযুক্ত করা হয়। এতে একশ্রেণীর লোক আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পক্ষ ত্যাগ করে। তারা ইতিহাসে ‘খারেজী’ বলে পরিচিত। আরেক শ্র্রেণী এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। কিন্তু তারা নিষ্ক্রিয় থেকে যায়। তারা আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি। তাদেরকেই ‘শী‘আ’ বলা হয় (আত-তারীখুল ইসলামী, পৃঃ ২৭৪-২৭৭)।


শী‘আরা বহু দলে বিভক্ত। তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল রাফেযীরা। বর্তমানে ইরানের খোমেনী ও তার সমর্থকরা রাফেযী আক্বীদা পোষণ করে থাকে। এছাড়া সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ ও তার অনুসারীরা ‘নুছাইরিয়া’ সম্প্রদায়ের লোক। আর ইয়ামান, ইরাক, উপমহাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ‘বাত্বেনী’ ফের্কার লোক যারা আছে, তারা ইসমাঈলী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। এদের কোনটিই মুসলিম নয়, বরং কাফের। তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদের চেয়েও বেশী ভয়ানক (ফাতাওয়া শায়খ বিন বায)।


এ সমস্ত ফের্কা পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী অসংখ্য ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ করে থাকে। তাদের উদ্ভট আক্বীদা হল, আলী ভ ছিলেন রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অছী। আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁর পরিবার থেকেই খলীফা নির্বাচিত হবে। তাই শী‘আরা আবূ বকর, ওমর এবং ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-কে খলীফা বলে স্বীকার করে না; বরং আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বাদ দিয়ে যে সমস্ত ছাহাবী তাঁদের হাতে বায়‘আত করেছেন তারা সকলেই কাফের (আল-ফাছল ফিল মিলাল, ৪/১৩৭ পৃ.)।


শী‘আদের গ্রন্থ ‘হাক্কুল ইয়াক্বীন’-এর মধ্যে বলা হয়েছে, ‘দায়মুক্তির ব্যাপারে আমাদের (শী‘আদের) আক্বীদা ও বিশ্বাস হল, আমরা আবূ বকর, ওমর, ওছমান ও মু‘আবিয়ার মত চার মূর্তি থেকে মুক্ত। আমরা আরও মুক্ত আয়েশা, হাফছা, হিন্দা ও উম্মুল হেকামের মত চার নারী এবং তাদের অনুসারী ও তাদের বিভিন্ন দল-গোষ্ঠী থেকে। তারা হল পৃথিবীর বুকে আল্লাহর নিকৃষ্ট সৃষ্টি’ (হাক্কুল ইয়াক্বীন, পৃ. ৫১৯)। অন্যত্র আরো বলা হয়েছে, ‘যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং ফাতেমার প্রতিশোধ হিসাবে তার উপর শাস্তির বিধান কায়েম করবেন’ (হাক্কুল ইয়াক্বীন, পৃ. ৩৭৮)।


তারা আরো দাবী করে যে, ‘নিশ্চয় আবূ বকর এবং ওমর উভয়েই হলেন ফেরাউন ও হামান’ (হাক্কুন ইয়াক্বীন, পৃ. ৩৬৭)। তারা সরাসরি বলে থাকে যে, তারা উভয়ে কাফির ছিলেন। আর যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসবে, সেও কাফির’ (হাক্কুন ইয়াক্বীন, পৃ. ৫২২)। এছাড়া তারা কুরআনকে বিকৃত করেছে, তারা তাদের ইমামদেরকে পৃথিবীর স্রষ্টা হিসাবে বিশ্বাস করে, তারা গায়েবের খবর রাখেন বলেও আক্বীদা পোষণ করে। তারা মুত‘আ বিবাহকে হালাল করেছে এবং তাদের দৃষ্টিতে গুপ্তাঙ্গ ধার করা বা বেশ্যাবৃত্তিও বৈধ (আল-ইসতিবছার, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৬)।


এ সমস্ত জঘন্য আক্বীদার কারণে শী‘আদেরকে মুসলিম বলার কোন সুযোগ নেই। আমরা তাদের এই বিভ্রান্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। উম্মতের শ্রেষ্ঠ বিদ্বানগণ তাদের ব্যাপারে কঠোর মন্তব্য করে গেছেন। বিশিষ্ট তাবেঈ ইমাম ত্বালহা বিন মুছাররাফ (মৃ. ১১২ হি.) বলেন, ‘রাফেযী সম্প্রদায়ের মহিলাদেরকে বিয়ে করা যাবে না এবং তাদের যবহেকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না। কারণ তারা মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী সম্প্রদায়’ (ফাতাওয়া ইসলাম ৯০৭২ নং)। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হি.)-এর ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (মৃ. ১৮২) বলেন, ‘আমি কোন জাহমী, রাফেযী শী‘আ ও তাক্বদীর অস্বীকারকারী ক্বাদারিয়াদের পিছনে ছালাত আদায় করি না’ (শারহু উছূলিল ই‘তিক্বাদ, ৪/৭৩৩ পৃ.)।


ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি.) বলেন, ‘আমি কোন পরওয়া করি না, আমি জাহমী ও রাফেযীর পিছনে ছালাত পড়লাম, নাকি ইহুদী ও খ্রীষ্টানের পিছনে ছালাত পড়লাম। তাদেরকে সালাম দেয়া যাবে না, তারা অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া যাবে না, তাদেরকে বিয়ে করা যাবে না, তারা মারা গেলে তাদের জানাযায় শরীক হওয়া যাবে না এবং তাদের যবহেকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না’ (খালকু আফ‘আলিল ইবাদ, পৃ. ১২৫)। আব্দুল করীম শহরাস্তানী (৪৭৯-৫৪৮ হি.) বলেন, ‘শী‘আদের দাবীসমূহ কুরআনের উপরও দলীল নির্ভর নয়, মুসলিমদের উপরও নয়। কারণ শী‘আরা মুসলিমদের অন্তর্ভুুক্ত নয়’ (আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, ২/৭৮)।


ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হি.) বলেন, ‘রাফেযীদের দাবী সমূহের অন্যতম হল, কুরআনের ইবারতের পরিবর্তন। কারণ তারা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তারা নতুন একটি ফের্কা। এটি এমন একটি দল যারা মিথ্যাচার ও কুফরীর দিক থেকে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের স্রোতে পরিচালিত হয়’ (আল-ফিছাল ফিল মিলাল, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৫)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হি.) শী‘আ রাফেযীদের সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তাদের কুফরী ইহুদী-খ্রীষ্টানদের চেয়েও ভয়ানক। কারণ ইহুদী-খ্রীষ্টানরা হল সত্ত্বাগত কাফির। পক্ষান্তরে তারা (রাফেযীরা) হল দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া মুরতাদ। আর মুরতাদ হওয়ার কুফর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সত্ত্বাগত কুফরের চেয়েও গুরুতর। এ জন্যই তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে (মুসলিম জনপদে গণহত্যা পরিচালনাকারী) তাতার সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করছে’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া, ৬/৪২১)।


অতএব শী‘আদের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে এবং তাদের আক্বীদা ও কর্মকা- সম্পর্কে মুসলিম জনসাধারণকে সতর্ক-সাবধান করতে হবে। কারণ তারা সারা পৃথিবীতে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল ফ সম্পর্কে, পবিত্র কুরআন, ছহীহ হাদীছ সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং সিরিয়া, ইয়ামান, ইরাক, লেবানন, আফগানিস্তান, মিশর, ফিলিস্তীনসহ বিভিন্ন দেশে সুন্নী মুসলিমদেরকে নানা কৌশলে হত্যা করছে, মসজিদ, মাদরাসা ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠানসমূহ জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই শী‘আদের প্রতি কোন প্রকার সহানুভূতি প্রদর্শন করলে ঈমানও থাকবে না, ইসলামও থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম উম্মাহকে শী‘আদের যাবতীয় অনিষ্ট থেকে হেফাযত করুন এবং তাঁর পক্ষ থেকে মুসলিমদের প্রতি বিশেষ নিরাপত্তা ও সাহায্য নাযিল করুন-আমীন!!


رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ





ফেসবুক পেজ