রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন

পরকীয়ার পরিণাম


‘পরকীয়া’র পরিণতি খুবই মর্মান্তিক এবং ধ্বংসাত্মক। পরকীয়া হল বিবাহিত কোন ব্যক্তির (নারী বা পুরুষ) স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত প্রেম, শারীরিক সম্পর্ক ও যৌন কর্মকাণ্ড। এক কথায় অবাধ যৌনাচার। যারা নিকৃষ্ট পশুর চেয়েও জঘন্য তারাই কেবল এই নোংরামির সাথে জড়িত। এটা এখন মরণব্যাধি ভাইরাসের মত সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মোবাইল, ফেসবুক, ইমু, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি প্রযুক্তির অপব্যবহার ও অভিশাপে পরিবার, সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে, নির্মম খুনের ঘটনা ঘটছে। পারিবারিক অবকাঠামো ও সামাজিক জীবনে এর বিষাক্ত কুপ্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। উলঙ্গপনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশ্চিমা অপসংস্কৃতির প্রভাবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা নষ্টামির জন্ম দিচ্ছে। অপবিত্র জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সামজিক আইন ও বিচার বলতে তেমন কিছু নেই। ফলে এর প্রবণতা বেড়েই চলেছে। তবে ইসলামী শরী‘আতে এটা জঘন্য অপরাধ। এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّہٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ  سَبِیۡلًا  ‘ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কর্ম এবং অত্যন্ত খারাপ পন্থা’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৩২)। গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতাকে আল্লাহ হারাম করেছেন (সূরা আ‘রাফ ৩৩)। রাসূল (ﷺ) স্বীয় উম্মতের মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়াকে অধিক ভয় পেতেন। কারণ যখন কেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন তার মধ্যে ঈমান থাকে না (ছহীহ বুখারী, হা/২৪৭৫)। অপর হাদীছে এসেছে, যে নারী ব্যভিচারে লিপ্ত তার দু‘আ আল্লাহ কবুল করেন না’ (ত্বাবারাণী আওসাত্ব, হা/২৭৬৯; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১০৭৩, সনদ ছহীহ)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِذَا ظَهَرَ الزِّنَا وَالرِّبَا فِي قَرْيَةٍ فَقَدْ أَحَلُّوا بِأَنْفُسِهِمْ عَذَابَ اللهِ ‘যখন কোন গ্রামে ব্যভিচার ও সূদ প্রসার লাভ করে, তখন তারা নিজেদের উপর আল্লাহর আযাবকে হালাল করে নেয়’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হা/২২৬১; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৪০১, সনদ ছহীহ)। আর বৃদ্ধ বয়সের পরকীয়া ও ব্যভিচারের শাস্তি আরো জঘন্য। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির সাথে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না। তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। এরা হলো বুড়ো ব্যভিচারী, মিথ্যুক শাসক এবং অহংকারী দরিদ্র’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০৭)।

বিবাহিত নারী-পুরুষ যারা এই পরকীয়া অপকর্মের সাথে জড়িত শাস্তি হল, পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা, যা প্রশাসন কর্তৃক কার্যকর করা হবে (ছহীহ বুখারী, হা/৬৮৭৮)। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘ব্যভিচারী অবিবাহিত নারী-পুরুষকে একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন করতে হবে। আর বিবাহিত নারী-পুরুষকে রজম করতে হবে অর্থাৎ পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে হবে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৯০)। পরকালীন শাস্তি হল, তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হল, বৃদ্ধ/বিবাহিত ব্যভিচারী, মিথ্যুক শাসক ও অহংকারী ফকীর’ (ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৪১৩; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৪৬১, সনদ ছহীহ)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন ফজর ছালাতের পর স্বপ্নের ব্যাখ্যা করছিলেন। তিনি লম্বা ঘটনার এক অংশে বললেন, আমরা একটি গর্তের নিকট এসে পৌঁছলাম, যা তন্দুরের মত ছিল। তার উপর অংশ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশটি ছিল প্রশস্ত। তার তলদেশে আগুন প্রজ্জ্বলিত ছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরের দিকে উঠছে, তখন তার ভিতরে যারা রয়েছে তারাও উপরে উঠে আসছে এবং উক্ত গর্ত হতে বাইরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। আর যখন অগ্নিশিখা কিছুটা শিথিল হচ্ছে, তখন তারাও পুনরায় ভিতরের দিকে চলে যাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে কতিপয় উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তারা উভয়ে বলল, এরা হচ্ছে- ব্যভিচারী নারী-পুরুষ। এভাবে তাদের আযাব চলতে থাকবে (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৮৬, ২০৮৫)। অপর হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম আমার পাশে দু’জন লোক আসল, তারা আমার বাহু ধরে নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমি কিছু লোকের পাশে যারা খুব ফুলে আছে, তাদের গন্ধ এতবেশি যেন মনে হচ্ছে ভাগাড়। আমি বললাম, এরা কারা? নবী করীম (ﷺ) বললেন, এরা ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণী’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হা/২৮৩৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৯৫১, সনদ ছহীহ)।

পরকীয়ার ধ্বংসাত্মক কুপ্রভাব থেকে পরিত্রাণের জন্য তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির চর্চা করা আবশ্যক। শরী‘আতের যথাযথ অনুশীলন অব্যাহত থাকলে এর আগ্রাসন থেকে জাতি, সমাজ ও দেশ মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ। এর সাথে পরিবারের অভিভাবকদের হতে হবে রক্ষণশীল, যাতে পরিবারে বেহায়াপনা প্রবেশ না করে। কারণ যে ব্যক্তি পরিবারে বেহায়াপনার সুযোগ দিবে তার উপরে আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন (মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩৭২, সনদ ছহীহ)। নেট সংস্কৃতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুবই সচেতন হতে হবে। এ দায়িত্ব অভিভাবকের। আল্লাহ তা‘আলা পরকীয়ার মত সমাজ বিধ্বংসী ভাইরাস থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাযত করুন- আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ





প্রসঙ্গসমূহ »: পাপ সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ