اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَا نَبِيَّ بَعْدَهُ
মিশনারী হল খ্রিষ্টানদের খ্রিষ্টধর্ম প্রচার সংস্থা। বাংলাদেশে খ্রিষ্টান মিশনারীদের আগমনের ইতিহাস অতি প্রাচীন। মূলত ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে পর্তুগিজরা খ্রিষ্টান মিশনারীদের সাথে নিয়েই এদেশে আগমন করে। মোগল সম্রাট আকবর ভারতের বাঙাল প্রদেশের হুগলিতে পর্তুগিজদের বসতি স্থাপনের অনুমতি দেয়। তাদের ছত্রছায়ায় খ্রিষ্টানরা প্রায় ২০০ বছর খ্রিষ্টধর্ম প্রচার করে। অতঃপর তারা বাংলার বিভিন্ন এলাকায় গির্জা প্রতিষ্ঠা করে, স্কুল বানায় ও হাসপাতাল চালু করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ছলে বলে কৌশলে পুরো ভারতের শাসন ক্ষমতা দখল করে নেয়, তখনও তারা তাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখে। তাদের বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা-উপকরণ সরবরাহ করা, স্বাস্থ্যসেবা, ঋণসুবিধা, বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা ইত্যাদির মৌলিক উদ্দেশ্য হল খ্রিষ্টধর্ম প্রচার করা।
এন.জি.ও প্রশিক্ষণের নামে তাদের মিশনারীর প্রশিক্ষণের জন্য ১৯৬৯ সালে ভারতে ও সিংগাপুরে ‘হ্যাগাই ইনস্টিটিউশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। মুসলিমদেরকে খ্রিষ্টান বানানোর জন্য তারা লক্ষ লক্ষ ধর্ম প্রচারককে প্রশিক্ষণ দিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। ১৯৮৫ সালে প্রায় আড়াই লক্ষ পশ্চিমা ধর্ম প্রচারক ৩৫০০টি পশ্চিমা মিশনারী সংস্থার প্রতিনিধি হিসাবে এশিয়া ও আফ্রিকায় সক্রিয় ছিল। তাদের সহযোগী হিসাবে ছিল ৩৫ লক্ষ স্থানীয় ধর্ম প্রচারক। ১৯৮৫ সালে সারা বিশ্বে মিশনারীদের পরিচালিত রেডিও টিভির স্টেশনের সংখ্যা ছিল ১৫৮০ টি এবং সম্ভাব্য সব ভাষায় নিয়মিত প্রকাশিত সাময়িকী সংখ্যা ছিল ২১,০০০। ১৯৮৫ সালে তারা ৬ কোটি ৪০ লক্ষ কপি বাইবেল (নিউ টেস্টামেন্ট) বিতরণ করেছে। ১৯৮৪ সালের আগে ৬০ বছরে তারা বিনামূল্যে প্রতি বছর প্রায় ৪ কোটি ৩০ লক্ষ কপি বিতরণ করেছে। শুধু ১৯৯৬ সালেই খ্রিষ্টানরা সারা পৃথিবীতে বাইবেলের ২৮ বিলিয়ন কপি (আঠাশ’ কোটি কপি) বিতরণ করেছে। আন্তর্জাতিক খ্রিষ্টান মিশনারী গবেষণা বুলেটিন থেকে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, ১৯৯১ সালে বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্টধর্ম প্রচার ও ইসলামী জাগরণকে প্রতিহত করতে ১,২০,৮৮০ টি প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মিশনারী সূত্র মতে, এর ফল হিসাবে বর্তমান শতকের প্রথম সাত দশকে ১১ কোটি ৫০ লক্ষ ৯০ হাজার লোক খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে এর জরিপ খুবই উদ্বেগজনক। ১৮৮১ সালে প্রতি ৬ হাজার লোকের মাঝে ১ জন খ্রিষ্টান ছিল। সে সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭৪ সালে প্রতি ৩২৬ জনের মাঝে ১ জন, ১৯৮১ সালে প্রতি ২৯ জনের মাঝে ১ জন, ১৯৯১ সালে প্রতি বাইশজনের মাঝে একজন খ্রিষ্টান রয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। ১৯৩৯ সালে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ছিল ৫০ হাজার। তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯১ সালে আদমশুমারীতে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখে। ২০০১ সালের আদমশুমারিতে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে তার পরিসংখ্যান যে আরো অনেক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মিশনারী তৎপরতার একটি সহযোগী মিশন হল এন.জি.ও। এর মাধ্যমে তারা দারিদ্র্য ও অনুন্নত মুসলিম রাষ্ট্রসমূহে জাল বিস্তার করেছে। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে তথা প্রত্যন্ত অঞ্চলে খ্রিষ্টান মিশনারীদের ছত্রছায়ায় হাজার হাজার এন.জি.ও ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন, কারিতাস, ব্র্যাক, সালভেশন আর্মি, সংগ্রাম, নারী স্বনির্ভর পরিষদ, আশা, ব্যপ্টিষ্ট এইড মিশন, মিশনারীজ অব চ্যারিটি, ডেনিশ বাংলাদেশ, প্রশিখা, এডাব, নিজেরা করি, বাঁচতে শেখা, দীপশেখা, গণউন্নয়ন সংস্থা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে রেজিস্ট্রিকৃত বর্তমানে এন.জি.ওদের সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। তন্মধ্যে ৬৩২ টি সরাসরি বিদেশী সহযোগিতায় পরিচালিত। বাকীগুলো বিদেশীদের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে। এজন্য তারা আমাদের দেশকে ৬ টি প্রদেশে বিভক্ত করেছে। যথা : (১) দিনাজপুর (২) রাজশাহী (৩) খুলনা (৪) চট্টগ্রাম (৫) ঢাকা এবং (৬) ময়মনসিংহ। তারা বিশেষ করে দু’টি কাজ কৌশলে করে যাচ্ছে- (ক) ইসলাম ধর্মের আদর্শিক ভিত্তি সম্পর্কে শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা। (খ) ইসলামী অনুশীলন ও সংস্কৃতি ধ্বংস করা। এছাড়া সূক্ষ্মভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্য উস্কে দিয়ে দেশ দখলের পাঁয়তারা করা। তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ ও সংস্থার নাম পরিবর্তন করে, মুসলিম ঐতিহ্যবাহী নকশা ব্যবহার করে, নকল ইসলামী পরিভাষা ও নামাবলী ব্যবহার করে এবং পবিত্র কুরআনের অপব্যাখ্যা করে সহজ-সরল মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। এমনকি মসজিদেও নকল ইমাম নিয়োগ দিচ্ছে এবং যুবতী মেয়েদের মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। যারা এদেশে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হল, ড. ইউলিয়াম কেরী, মাদার তেরেসা, ড. টমাস, ফাদার টর্সবার্লার, টর্বেন্ডে পিটারসন, আলফ্রেড বরীন মণ্ডল, ড. অলসন প্রমুখ।
দেশের প্রায় অধিকাংশ জেলাতে তারা মিশনারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে। উক্ত স্কুলগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে যীশু খ্রিষ্টের বই, যীশু খ্রিষ্টের জীবনী ইত্যাদি পড়ানো হচ্ছে। ছোটদেরকে ‘সিবগাতুল্লাহ’ নামের একটি বই পড়ানো হয়, যাতে বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠদান করে ছোট বাচ্চাদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। জার্মানভিত্তিক ন্যাজরিয়ান মিশন সংগঠনটি বিনামূল্যে বই, খাতা, পোশাক এমনকি দুপুরের খাবারসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ধর্মান্তরিতকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ও সীমান্ত এলাকার উপজাতীয়দের মধ্যে মিশনারী কাজ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। তাতে অচিরেই এদেশের সকল উপজাতি খ্রিষ্টানদেরকে পার্বত্য অঞ্চলে একত্রিত করে পৃথক একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী তুলতে পারে।
অতএব এদেশের স্বাধীনচেতা মানুষ বিশেষ করে মুসলিমরা যদি এ ব্যাপারে সচেতন না হয়, তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে মিশনারীদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে আরো এগিয়ে যাবে এবং গভীর ষড়যন্ত্রের শিকড় আরো শক্ত করবে; সাথে সাথে ইসলাম ও বাংলাদেশের জাতিসত্তা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। অতএব খ্রিষ্টান মিশনারীদের তৎপরতা সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক হতে হবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন প্রণয়ন করে তাদের অপতৎপরতাকে রুখে দিতে হবে। এ জন্য দেশের আলিম সমাজ, শিক্ষক, লেখক, মিডিয়া কর্মী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী-বিত্তবান, সরকার প্রধানসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সকল মুসলিমকে নির্ভেজাল তাওহীদী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সহাই হোন-আমীন!!
رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ