রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

কুরআন মাজীদের হক্ব আদায় করুন!


মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সরাসরি আল্লাহর কালাম, যা শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর নাযিল করা হয়েছে। মানবজাতির এই চূড়ান্ত সংবিধান আল্লাহ রামাযান মাসের ক্বদর রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছেন এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৫; সূরা আল-ক্বদর : ১; সূরা হিজর ৯)। এর মর্যাদা সকল কিছুর শীর্ষে। এটা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী, পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। মুমিনদের জন্য চিরন্তন হেদায়াত, সুস্পষ্ট দলীল ও উজ্জ্বল নিদর্শন। যারা পূর্ণরূপে কুরআন মাজীদের হক্ব আদায় করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যারা এর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘কুরআন মাজীদ সুপারিশকারী, সুপারিশ গ্রহণকারী এবং সন্দেহ পোষণকারীর বিপক্ষে সত্যায়ণকারী। যে ব্যক্তি তাকে নিয়ে সামনে অগ্রসর হবে সে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তাকে পেছনে রেখে দিবে সে তাকে জাহান্নামে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে’ (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৫৭৩; ১০২৯৮; ইবনু হিব্বান, হা/১২৪, সনদ ছহীহ)। অন্য হাদীছে এসেছে, কুরআন তোমার পক্ষে দলীল হবে অথবা বিপক্ষে দলীল হবে (ছহীহ মুসলিম, হা/২২৩)। যারা কুরআন মাজীদের হক্ব আদায় করবে তারা কবরে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। কবরে তাদের জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দেয়া হবে, জান্নাতের পোশাক পরিধান করানো হবে, তাঁর জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে, তাঁর দিকে জান্নাতের সুবাতাস ও সুগন্ধি আসতে থাকবে এবং তাঁর কবর তাঁর দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। কুরআনকে যারা অবমাননা করবে তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত থাকবে (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫৫৭; আবূ দাঊদ, হা/৪৭৫৩, সনদ ছহীহ)

কুরআন মাজীদের হক্ব আদায় করা ছাড়া কারো পক্ষে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই জীবনের শুরুতেই কুরআন শিখতে হবে, সম্মানের সাথে নিয়মিত তেলাওয়াত করতে হবে, বুঝার চেষ্টা করতে হবে এবং আসমানী সংবিধান হিসাবে  জীবনের সর্বক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে। কুরআনের কোন আইন ও বিধানের সাথে নাফরমানি করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন, کِتٰبٌ  اَنۡزَلۡنٰہُ  اِلَیۡکَ مُبٰرَکٌ  لِّیَدَّبَّرُوۡۤا اٰیٰتِہٖ وَ  لِیَتَذَکَّرَ  اُولُوا الۡاَلۡبَابِ ‘এটা এক বরকতময় কিতাব, এটা আমরা আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা ছোয়াদ : ২৯)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘আমরা আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, সবকিছুর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা হিসাবে এবং মুসলিমদের জন্য হেদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ স্বরূপ’ (সূরা নাহল ৮৯, ১০২)। এজন্য প্রত্যেকটি অক্ষর, শব্দ, বাক্য, আয়াত ও সূরা রহমত, বরকত, হেদায়াত, প্রশান্তি ও নেকীতে পরিপূর্ণ। যখনই আল্লাহর কালাম তেলাওয়াত করা হয়, তখনই এগুলো নাযিল হয়। এতে মুমিন ব্যক্তির ঈমানও বৃদ্ধি পায়। কারণ কুরআন বরকতপূর্ণ। যে অন্তর কুরআন মুখস্থ করেছে, আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন না (দারেমী, হা/৩৩১৯, সনদ ছহীহ)। কুরআন তেলাওয়াতে প্রত্যেক হরফের বিনিময়ে রয়েছে দশ নেকী (মুসতাদরাক হাকিম, হা/২০৮০, সনদ ছহীহ)। এ কুরআন ক্বিয়ামতের দিন তার পাঠকদের জন্য সুপারিশকারীরূপে আসবে (ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৪)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন কুরআনের হাফেযকে তার ডান হাতে মালিকানা দেয়া হবে আর বাম হাতে দেয়া হবে স্থায়ী নে‘মত এবং তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হবে। আর তার মাতা-পিতাকে এমন দুই জোড়া কাপড় পরানো হবে, দুনিয়াবাসীর কোন কিছুই তার সমপরিমাণ হবে না। তখন মাতা-পিতা বলবে, আমাদেরকে এটা কেন পরানো হল? তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলে তাই। অতঃপর হাফেযকে বলা হবে, তুমি কুরআন পড়তে থাক আর জান্নাতের মর্যাদা ও রূমসমূহের দিকে আরোহণ করতে থাক। স্বাভাবিকভাবে বা তারতীলসহ পড়তে পড়তে যেখানে আরোহণ করবে, সেটাই হবে মর্যাদা (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩০০৪৫; দারেমী, হা/৩৪৩৪; সনদ ছহীহ)

এই কুরআন রামাযান মাসে তেলাওয়াত করা আরো অনেকগুণ বেশি ফযীলতপূর্ণ। তাছাড়া কুরআন মাজীদ রামাযানেই নাযিল হয়েছে। আর রাসূল (ﷺ)ও এ মাসে বেশি বেশি তেলাওয়াত করতেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বেশি বেশি আসতেন এবং বেশি বেশি কুরআন শুনতেন ও শুনাতেন। তাই রামাযান মাসে কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) মানুষের মধ্যে অধিক দানশীল ছিলেন। যখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) রামাযান মাসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরও বেশি দান করতেন। কারণ রামাযানের প্রতি রাতে তিনি জিবরীল (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট কুরআন তেলাওয়াত করতেন এবং প্রবাহিত বাতাসের ন্যায় অধিকহারে দান করতেন (ছহীহ বুখারী, হা/১৯০২)। অন্যত্র এসেছে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) প্রত্যেক বছর রামাযানের রাত্রিতে একবার করে কুরআন পুনরাবৃত্তি করতেন। আর মৃত্যুর বছর তিনি আমার কাছে দুইবার কুরআন পুনরাবৃত্তি করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/৬২৮৬)

অতএব চূড়ান্ত কথা এটাই যে, কুরআন মাজীদ মানবকুলের জীবন-ব্যবস্থা, সকল কিছুর স্পষ্ট ব্যাখ্যা, দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র মানদণ্ড। সকল জ্ঞানের ঝর্ণাধারা, রহমত, বরকত ও যাবতীয় কল্যাণের ভাণ্ডার, যেকোন রোগের আরোগ্য। তাই আল্লাহর অহী আল-কুরআন ও তার ব্যাখ্যা ছহীহ হাদীছকেই সত্য-মিথ্যার মানদণ্ড হিসাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। আর তখনই দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করা সম্ভব হবে। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম উম্মাহকে অভ্রান্ত সত্যের চূড়ান্ত উৎস অহীর বিধানের দিকে ফিরে আসার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ 





প্রসঙ্গসমূহ »: সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ