اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَا نَبِيَّ بَعْدَهُ
মহামারীর কারণ ও পরিত্রাণের উপায়
জঘন্য অপকর্ম ও পাপাচারের কারণে মহামারীকে আল্লাহ তা‘আলা গযব হিসাবে নাযিল করেন। আল্লাহ বলেন, ‘স্থলে ও সাগরে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে’ (রূম ৪১)। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা বলেন, হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে পরিত্রাণ চাচ্ছি তোমরা যেন সেগুলোর সম্মুখীন না হও।
(ক). যখন কোন জাতির মাঝে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে, তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হবে যা পূর্বের লোকদের মাঝে কখনো দেখা যায়নি।
(খ). যখন কোন জাতি ওযন ও মাপে কারচুপি করবে, তখন তাদের উপর নেমে আসবে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুছীবত।
(গ). যখন যাকাত আদায় করবে না তখন আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হবে, যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তাহলে আর কখনো বৃষ্টি হত না।
(ঘ). যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করে দিবেন। তখন তারা তাদের যাবতীয় সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।
(ঙ). যখন তোমাদের শাসকরা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়ছালা করবে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে প্রাধান্য দিবে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দিবেন (ইবনু মাজাহ হা/৪০১৯, সনদ হাসান; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬)।
অন্য হাদীছে এসেছে, যখন কোন ভূখণ্ডে ব্যভিচার ও সূদ বিস্তার লাভ করবে, তখন তারা নিজেরাই আল্লাহর আযাবকে হালাল করে নিবে (হাকেম হা/২২৬১, সনদ হাসান)।
অন্যত্র এসেছে, যখন নর্তকী, বাদ্যযন্ত্র ও মদের বিস্তৃতি লাভ করবে, তখন এই উম্মতের মাঝে ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের মত আযাব নাযিল হবে (তিরমিযী হা/২২১২, সনদ ছহীহ)।
উক্ত আলোচনায় আল্লাহর গযবের কারণগুলো স্পষ্ট হয়েছে। তবে এই মহামারী কাফের-মুশরিক ও পাপিষ্টদের জন্য আযাব। কিন্তু মুমিনদের জন্য রহমত ও পরীক্ষা, যদি তারা ধৈর্য ধারণ করে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্লেগ মহামারী আমার উম্মতের (মুমিনদের) জন্য শাহাদাত ও রহমত আর কাফেরদের জন্য শাস্তি (আহমাদ হা/২০৭৮৬, সনদ ছহীহ)। অন্য হাদীছে এসেছে, ‘এটি হচ্ছে এক রকম আযাব। আল্লাহ যার উপর পাঠানোর ইচ্ছা করেন, তার উপর পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনদের জন্য রহমত স্বরূপ করেছেন। অতএব প্লেগ রোগে কোন বান্দা যদি ধৈর্য ধারণ করে এবং এই বিশ্বাস নিয়ে নিজ শহরে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা ছাড়া অন্য কিছু হবে না; তাহলে তার জন্য শহীদের মর্যাদার সমান ছওয়াব হবে’ (বুখারী হা/৫৭৩৪)। মুমিনদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে কোন রোগ নিজস্ব শক্তিতে সংক্রমিত হতে পারে না আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া (বুখারী হা/৫৭০৭)।
সেজন্য কেউ আক্রান্ত হয় আবার কেউ মুক্তি পায়। তাই যেখানে মহামারি দেখা দিবে সেখানে যেতে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন এবং দূরে থাকার জন্য সতর্ক করেছেন। অনুরূপ আক্রান্ত এলাকা থেকে কাউকে বের হতেও নিষেধ করেছেন (বুখারী হা/৫৭৩০; ৫৭০৭)।
অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘রোগাক্রান্ত উট নীরোগ উটের সাথে মিশ্রিত করবে না’ (বুখারী হা/৫৭৭৪)। উল্লেখ্য, কুষ্ঠ রোগীর সাথে এক প্লেটে খাওয়া সম্পর্কে যে বর্ণনা এসেছে, তা যঈফ (যঈফ আবুদাঊদ হা/৩৯২৫)।
এক্ষণে বিভিন্ন ব্যাধি ও মহামারী থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহর দিকেই আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। মোকাবেলা করার মত দম্ভোক্তি উচ্চারণ করা যাবে না। কারণ আল্লাহর শক্তিকে কে মোকাবেলা করবে? বরং শারঈ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
(ক). যাবতীয় পাপ থেকে তওবা করতে হবে, বেশী বেশী ইস্তিগফার করতে হবে এবং যিকির-আযকারের মাধ্যমে আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ ও অসীলা করে দু‘আ করতে হবে (আনফাল ৩৩; বুখারী হা/১০৪৪)। যেমন
أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ الَّذِىْ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ. لَاۤ اِلٰہَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَکَ اِنِّیۡ کُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِین، لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا اللّٰهُ الْعَظِيْمُ الْحَلِيْمُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا اللّٰهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ، لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا اللّٰهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ. لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيمِ
(খ). আল্লাহ যেন দ্রুত বালা-মুছীবত দূর করে দেন সে জন্য বেশী বেশী দু‘আ করতে হবে (তিরমিযী হা/৩৫৪৮, সনদ ছহীহ)। যেমন
اَللهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ الْقَضَاءِ وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ
اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ
(গ). সকাল-সন্ধ্যায় পঠিতব্য দু‘আগুলো নিয়মিত পাঠ করতে হবে। বিশেষ করে بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ পড়বে। এই দু‘আ সকালে তিনবার, সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করলে হঠাৎ কোন বিপদ আক্রমণ করতে পারবে না (আবূ দাঊদ হা/৫০৮৮)। এছাড়া أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ পড়বে (মুসলিম হা/২৭০৯)।
(ঘ). বেশী বেশী নফল ছালাতসহ নেক আমল করবে এবং ছাদাক্বাহ করবে (শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭০৪, সনদ ছহীহ; বুখারী হা/১০৪৪, ১৪৬২)।
(ঙ). বিশেষ রহমত বর্ষণের আশায় বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করবে (বনী ইসরাঈল ৮২; ইউনুস ৫৭; মুসলিম হা/২৬৯৯; বুখারী হা/৪৮৩৯)। ইনশাআল্লাহ এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্তি দান করবেন।
বর্তমানে ‘করোনা ভাইরাস’ বিশ্বব্যাপী যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া কোন পরিত্রাণ নেই। তাই তাঁর কাছেই আশ্রয় চাইতে হবে। সেই সাথে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে যে সমস্ত অপকর্মের কারণে আল্লাহ গযব নাযিল করেন সেগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্দেশ জারি করে বন্ধ করতে হবে। আল্লাহর কাছে দু‘আ করছি- আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের তওবা কবুল করুন, আমাদেরকে আপনার রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দিন, চলমান মহামারি দ্রুত তুলে নিন, আক্রান্তদের তাড়াতাড়ি শেফায়ে কামিলা দান করুন, পরিবেশ-পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক ও কল্যাণময় করে দিন, মুসলিম উম্মাহর উপর বিশেষ রহমত ও নিরাপত্তা নাযিল করুন এবং যাবতীয় রোগ-ব্যাধি থেকে হেফাযত করুন, হারামাইনের মর্যাদা অটুট রাখুন। আপনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, আপনার উপর কারো ক্ষমতা নেই, আপনার ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না, আপনি আমাদের দু‘আ কবুল করুন-আমীন!!
رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ
প্রসঙ্গসমূহ »:
সাময়িক প্রসঙ্গ