সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০১:৩৮ অপরাহ্ন

ইসলামী দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি ও ফলাফল


বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। কিছু নাস্তিক ছাড়া সবাই ইসলামপ্রিয়, দ্বীনকে ভালোবাসে। সে অনুযায়ী উচিত ছিল ইসলামী শাসনব্যবস্থা চালু থাকা। কুরআন-সুন্নাহ হবে দেশের সংবিধান। তার আলোকেই দেশ পরিচালিত হবে। কিন্তু দেশে ইসলামী আইন তো দূরের কথা ইসলাম বিরোধী আইন দ্বারাই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শোষণ করা হচ্ছে। শরী‘আতের বিধান পালন করতে গিয়ে বিভিন্নরূপে বাধা পেতে হয়। ইসলামী প্রোগ্রাম করার জন্য অনুমতি পাওয়া যায় না। অনুমতি পেলেও অসংখ্য শর্ত দিয়ে কোণঠাসা করা হয়। ইসলামিক মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। তবে ক্ষমতায় বসার জন্য ঠিকই ধর্মকে ব্যবহার করে, ধর্মের লেবাস পরে ও মাথায় পট্টি বাঁধে। এভাবে তারা পুরো জাতির সাথে প্রতারণা করে যুগের পর যুগ শোষণ করছে। মূলত তারা পাক্কা নাস্তিক, চরম ইসলামী বিরোধী। তারা নাস্তিক্যবাদকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যারাই এই ধোঁকাবাজি রাজনীতির বশংবদ তাদেরই মধ্যে এই কুচরিত্র পরিলক্ষিত হয়। অথচ তারা কিন্তু জানে যে ইসলামই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ। ইসলামী চেতনার উপর বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন হয়েছে এবং স্বাধীনতা এসেছে। এটা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত।

কুফুরী মতবাদ ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর এই দৌরাত্মের মূল শক্তি হল, খুঁটিবিহীন ইসলামী দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি। কারণ ইসলামী দলগুলোর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া কোন দলই ক্ষমতার মসনদে আসীন হতে পারে না। তাই সর্বদা পরগাছা হয়ে ত্বাগূতী রসদ ভোগ করতে দলগুলো পসন্দ করে। ক্ষমতার নেশায় বর্ণচোরার মত বারবার রং পাল্টাতেও কোন দ্বিধা করে না। এর কারণ হল, দলগুলো ইসলামও বুঝে না, ইসলামী রাজনীতিও বুঝে না। তারা ব্যক্তি জীবনেই ইসলাম ফলো করে না। আর যেটুকু ফলো করে তা তো মেডিন ইন্ডিয়া অথবা মেডিন ইরান। এছাড়াও বড় একটি শ্রেণী পীর-মুরীদির নামে বিনা পূজির ধর্মব্যবসায় জড়িত।

এরা কবরপূজা, পীরপূজা, মাযারপূজার নামে ধর্মের দোহাই দিয়ে সরল মানুষের পকেট ছিনতাই করে। যারা সব সময় সরকারী দলের চৌর্যবৃত্তি করে। ফলে তারা নিরাপদে জমজমাট ধর্মব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। এগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে শিরক, কুফর ও ত্বাগূত মিশ্রিত জাতীয়তাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষবাদী, নাস্তিক্যবাদী, পূঁজিবাদী গণতান্ত্রিক কুফর এবং শী‘আ ও খারেজী রাজনীতির হিংস্রতা। ফলে ইসলামী দলগুলো মেরুদণ্ডহীন সেবাদাসে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই ইসলাম বিরোধী দর্শনের সাথে আপোস করাকে তারা হিকমত বলে চালিয়ে দেয়। কুফুরী তন্ত্রের অপবিত্র ড্রেনে বন্দিত্ব বরণ করে কুরআনের আইন চালু করার শ্লোগান দেয়। তারা দাবী করে আমাদের মার্কায় সিল মারলে ভোটটা আল্লাহ এবং তাঁর নবীকে দেয়া হবে। এজন্য আল্লাহ প্রেরিত মক্কা-মদীনার ইসলাম তাদের ভাল লাগে না। বরং মক্কা-মদীনার ইসলাম তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক এলার্জি। তবে সেখানকার খেজুর, যমযমের পানি আর চাঁদাবাজির রিয়াল তাদের কাছে খুবই তৃপ্তিদায়ক।

এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইসলাম আপোস করার দ্বীন নয়। শিরক, কুফুর ও ত্বাগূতের সাথে আপোস কখনো ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যায় না। মক্কার কাফের নেতৃবৃন্দ আপোসের জন্য রাসূল (ﷺ)-কে কুফুরী টোপ দিয়েছিল, যা ছিল খুবই লোভনীয়। কিন্তু রাসূল (ﷺ) তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা যা কিছু বলছ, সেগুলোর সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। আমি তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছি, তার দ্বারা আমি তোমাদের কাছে সম্পদ চাই না। নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে আমি তোমাদের মধ্যে সম্মানিতও হতে চাই না এবং তোমাদের উপর রাষ্ট্রনায়কও হতে চাই না। বরং আমাকে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নিকট রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন এবং আমার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন তোমাদের সুসংবাদদাতা এবং ভয়প্রদর্শনকারী হই। অতএব আমি কেবল তোমাদের কাছে আমার প্রতিপালকের বার্তা সমূহ পৌঁছে দিয়ে থাকি। তাই তোমরা যদি তা গ্রহণ কর, তবে তোমাদের জন্য ইহকাল-পরকাল উভয় স্থানে প্রতিদান রয়েছে। আর যদি তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করে আমার উপর ফিরিয়ে দাও, তাহলে আমি আল্লাহ্র নির্দেশের (ক্বিয়ামত) জন্য ধৈর্যধারণ করব। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমার মাঝে ও তোমাদের মাঝে ফায়সালা করে দিবেন’ (আস-সিরাহ আন-নাবুবিয়াহ, ১/২৯৬ পৃ.)।

ইসলামী দলগুলোর করণীয় হল, কুরআনুল কারীম, ছহীহ হাদীছ ও সালাফদের মানহাজকে ঐক্যের মানদণ্ড হিসাবে আঁকড়ে ধরা। ইসলাম ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর স্বার্থে বিভক্তি দূর করে সাধারণ মানুষকে কুরআন-সুন্নাহর প্লাটফরমে ঐক্যবদ্ধ করা। তাওহীদ ও ত্বাগূত, ঈমান ও কুফ্র-এর পার্থক্য এবং এর মিশ্রণের ভয়াবহতা সকল মানুষের সামনে তুলে ধরা এবং বুঝানোর চেষ্টা করা। আপোসহীনভাবে জাহেলী মতবাদকে প্রতিরোধ করে ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। পুরো জাতিকে সচেতন করতে পারলে ত্বাগূতী দলগুলোর দৌরাত্ম থাকবে না, ইসলামকে কলুর বলদের মত ব্যবহার করতেও পারবে না এবং জনগণের সাথেও প্রতারণার খেল খেলতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ ত্বাগূতকে পরাজিত করুন এবং তাওহীদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করুন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّیۡعُ الۡعَلِیۡمُ





প্রতারণার পরিণাম - সম্পাদকীয়
ঈদে মীলাদুন্নবী : শী‘আদের সৃষ্ট অভিশপ্ত অনুষ্ঠান - সম্পাদকীয়
ধর্ষণ, খুন, গুম, নারী নির্যাতন : মধ্যযুগীয় বর্বরতার নব-সংস্করণ - সম্পাদকীয়
নারী পোশাকের স্বাধীনতা ও প্রগতিবাদীদের ভ্রান্তি বিলাস - সম্পাদকীয়
ইসলামী দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি ও ফলাফল - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
রামাযান ও তাক্বওয়া : - সম্পাদকীয়
অসুস্থ রাজনীতি ও তার কুপ্রভাব - সম্পাদকীয়
নাগরিকের রাষ্ট্রচিন্তা - সম্পাদকীয়
অবৈধ সম্পর্কের পরিণাম - সম্পাদকীয়
নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আলেম সমাজের ভূমিকা - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
আল-ইখলাছ - সম্পাদকীয়
প্রচলিত কুসংস্কার : মুসলিমদের জন্য মরণব্যাধি ক্যান্সার - সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ