সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পরিচয়


জাতীয়, বিজাতীয় ও অসংখ্য ধর্মীয় মতবাদের কুপ্রভাবে মুসলিম উম্মাহ বহু দলে বিভক্ত। অধিকাংশ মানুষ ছিরাতে মুস্তাক্বীম থেকে বিচ্যুত, ইসলামের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন। কারণ তারা কুরআন-হাদীছ ও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ ও আক্বীদাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অথচ দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তির জন্য আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অনুসরণ ছাড়া আর অন্য কোন পথ নেই। তাঁদের অনুসরণ করলে জান্নাত, না করলে জাহান্নাম। এটা আল্লাহর পরিষ্কার ঘোষণা (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৩৭; সূরা আন-নিসা : ১১৫; তিরমিযী, হা/২৬৪১)।  তাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অনুসরণ করা ফরয দায়িত্ব। ছাহাবায়ে কেরাম হলেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের প্রথম সারির মানুষ (আবূ দাঊদ, হা/৪৫৯৭, সনদ হাসান; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭)। এরপর তাবেঈনে এযাম। তাঁরা ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’ হিসাবে সুপ্রসিদ্ধ (মিনহাজুস সুন্নাহ, ২/৩৬৩)। অতঃপর যারা তাঁদের নীতি বা মানহাজের উপর যুগের পর যুগ সুপ্রতিষ্ঠিত তাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত, আহলেহাদীছ, আছহাবুল হাদীছ, সালাফী বলা হয়। তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল (সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৭০-এর আলোচনা দ্র.)। যাদের মাঝে ছাহাবী ও তাবঈেদের মানহাজ ও বৈশিষ্ট্য নেই, তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়া জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাদেরকে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’ বলে আখ্যায়িত করা যাবে না।

আহলুস সুন্নাহ ওয়া জামা‘আতের পরিচয় সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তাঁরা হলেন আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে ধারণকারী ব্যক্তিবর্গ এবং মুহাজির ও আনছারদের প্রথম সারির ছাহাবী এবং তাদের অনুসারী তাবেঈগণ যে নীতিসমূহের উপর একমত ছিলেন তার উপর যারা সুপ্রতিষ্ঠিত’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৩/৩৭৫ পৃ.)। হাফেয ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ৭৭৪ হি.) বলেন, ‘আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে ধারণকারী ব্যক্তিবর্গ, যারা প্রথম সারির ছাহাবী ও তাবেঈগণ এবং প্রাচীন ও বর্তমান যুগের তাদের অনুসারী মুসলিম ইমামগণ’ (তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৬/৩১৭ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৯৯৯ খ্রি.) বলেন, ‘তারা হলেন- নবী করীম (ﷺ) এবং তাঁর ছাহাবীগণ যে নীতির উপরে ছিলেন সেই নীতির অনুসারী। তারা পৃথিবীর যেকোন স্থানে ও যেকোন যুগে নবী করীম (ﷺ) -এর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে এবং ছাহাবীগণ, তাবেঈগণ, তাদের অনুসারী সৎপথপ্রাপ্ত ‘উলামায়ে কিরামকে আঁকড়ে ধরে এবং যারা (তাক্বলীদের বিপরীতে) ইত্তেবা‘ তথা আনুগত্যের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে এবং বিদ‘আত থেকে বিরত থাকে। তারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে ও সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। তারা প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে এবং কথায়, আমলে ও বিশ্বাসে নবী করীম (ﷺ)-এর সুন্নাতের উপর জামা‘আতবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরে থাকার কারণে তাদেরকে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে’ (বায়ানু আক্বীদাতি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আতি ওয়া লুযূমিত তাবাঈহা, পৃ. ৫)। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ১৪২১ হি.) বলেন, ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত তারাই, যারা আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে, তার উপর ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং অন্য কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। এ কারণেই তাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত নামে নামকরণ করা হয়েছে। কেননা তাঁরা সুন্নাহর ধারক ও বাহক। এছাড়া তাদেরকে আহলুল জামা‘আতও বলা হয়। কারণ তারা সুন্নাতের উপর ঐক্যবদ্ধ’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১/৩৭ পৃ.)।

সম্প্রতি একশ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পরিচিতি নিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। গোঁড়া কবরপূজারী, মাযারপূজারী, পীরপূজারী মুশরিক, সর্বেশ^রবাদী ছূফী বিদ‘আতীরাও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী বলে চিৎকার করছে। অথচ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নীতি ও বৈশিষ্ট্যের সাথে তাদের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। তারা অসংখ্য কুফরী, শিরকী আক্বীদায় বিভক্ত ও বিভ্রান্ত। এটা বিদ‘আতী বশংবদদের চিরন্তন স্বভাব। তাই ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘বিদ‘আতীরা বিদ্বেষবশত ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে নিজেদের নাম দিয়েছে ‘আছহাবুস সুন্নাহ’। মূলত তারা মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। এরা আল্লাহর শত্রু, বরং ধূর্ত ও সর্বনিকৃষ্ট। তারা রাসূল (ﷺ)-এর হাদীছকে বর্জন করে নিজেদের মনমত ফৎওয়া দেয়, ভাল-এর নামে শরী‘আত তৈরি করে এবং কুরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে ফায়ছালা দেয়। তারা বিদ‘আতী, নিরেট মূর্খ, পথভ্রষ্ট। তারা মিথ্যাচার এবং অপবাদের মাধ্যমে দুনিয়া উপার্জন করে’ (তাবাক্বাতুল হানাবিলাহ, ১/৩৫-৩৬ পৃ.)। আব্দুল ক্বাদের জীলানী (৪৭০-৫৬১ হি.)  বলেন, জেনে রাখ যে, বিদ‘আতীদের কিছু নিদর্শন রয়েছে, যা দেখে তাদের চেনা যায়। বিদ‘আতীদের লক্ষণ হল আহলেহাদীছদের গালি দেয়া ও বিভিন্ন বাজে নামে চিত্রিত করা। এগুলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিরুদ্ধে তাদের দলীয় গোঁড়ামি ও অন্তর্জ্বালার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়। কারণ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অন্য কোন নাম নেই একটি নাম ব্যতীত। সেটি হল ‘আহলুল হাদীছ’ (কিতাবুল গুনিয়াহ ওরফে গুনিয়াতুত ত্বালেবীন ১/৯০ পৃ.)।

অতএব কোন মিথ্যা প্রতারণা ও কুটকৌশলের আশ্রয় না নিয়ে প্রত্যেকের উপর আবশ্যক হল, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া, সালাফদের মানহাজের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকা। ধর্মব্যবসায়ীদের প্রত্যাখ্যান করা। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে জান্নাতের পথে পরিচালিত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!


رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ




প্রসঙ্গসমূহ »: সম্পাদকীয়
কুরআন মাজীদের হক্ব আদায় করুন! - সম্পাদকীয়
রামাযান ও তাক্বওয়া : - সম্পাদকীয়
নীতিবোধের সংকট! - সম্পাদকীয়
প্রতারণার পরিণাম - সম্পাদকীয়
নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আলেম সমাজের ভূমিকা - সম্পাদকীয়
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পরিচয় - সম্পাদকীয়
রামাযান থেকে আমরা কী শিক্ষা নিব? - সম্পাদকীয়
ইসলাম ও মানবাধিকার - সম্পাদকীয়
তরুণদের মানহাজ বিভ্রান্তি ও তার কুফল - সম্পাদকীয়
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ : অমার্জনীয় ধৃষ্টতার আস্ফালন - সম্পাদকীয়
সালাফী দাওয়াত ও বিদ‘আতীদের সন্ত্রাসী আগ্রাসন - সম্পাদকীয়
খ্রিষ্টান মিশনারী : হুমকির মুখে ইসলাম ও বাংলাদেশ - সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ