মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ অপরাহ্ন

নারী পোশাকের স্বাধীনতা ও প্রগতিবাদীদের ভ্রান্তি বিলাস


পোশাক (بوشاك) ফারসী শব্দ। এর অর্থ- সভ্য বা ভদ্র সমাজের উপযুক্ত জামাকাপড়। রুচিসম্মত ও ভদ্রতাব্যঞ্জক পোশাক। আদম সন্তান এই সভ্য পোশাকেই অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু ইবলীস শয়তান অধিকাংশ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে পোশাক ছাড়া করেছে। অতঃপর তারা অসভ্য জগতে নিমজ্জিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে বনী আদম! আমি তোমাদেরকে লজ্জাস্থান আবৃত করার ও বেশভূষার জন্য পোশাক-পরিচ্ছদের উপকরণ দিয়েছি (বেশভূষার তুলনায়) আল্লাহভীতি পরিচ্ছদই সর্বোত্তম পরিচ্ছদ। এটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম নিদর্শন, আশা করা যায় মানুষ এখান থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে’। ‘হে আদম সন্তানগণ! শয়তান যেন তোমাদেরকে অনুরূপ ফিৎনায় ফেলতে না পারে, যেমন তোমাদের পিতা-মাতাকে ফেৎনায় ফেলে জান্নাত হতে বিতাড়িত করেছিল এবং তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য বিবস্ত্র করেছিল। শয়তান তার দলবলসহ তোমাদেরকে এমনভাবে দেখতে পায় যে, তোমরা তাদেরকে সেভাবে দেখতে পাও না। নিঃসন্দেহে শয়তানকে আমি বেঈমান লোকদের বন্ধু ও অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি’ (আ‘রাফ ৭/২৬-২৭)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আর আল্লাহ তোমাদের জন্য পরিধেয় বস্ত্রের ব্যবস্থা করেন, যা তোমাদেরকে রক্ষা করে’ (নাহল ১৬/৮১)। 

উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায়, আদম সন্তানকে উলঙ্গ করার জন্য শয়তান সর্বদা কুমন্ত্রণা দেয়। কারণ মানুষকে পোশাক ছাড়া করতে পারলে অশ্লীল কর্মে ব্যস্ত রাখা যাবে। বিশেষ করে ইবলীস মহিলাদেরকে বেশি বিভ্রান্ত করে, যাতে তারা পুরুষদেরকে বিপথে নিয়ে যেতে পারে। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘নারী হচ্ছে ঢেকে রাখার সম্পদ। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে নগ্নতার প্রতি উত্ত্যক্ত করে’ (তিরমিযী, হা/১১৭৩, সনদ ছহীহ)। অন্য হাদীছে এসেছে, মহিলা শয়তানের রূপে যায় এবং শয়তানের রূপে আসে (মুসলিম হা/১৪০৩)। অন্য হাদীছে বলেন, ‘তোমরা সেই মহিলার নিকট গমন করো না, যাদের স্বামীরা বিদেশে আছে। কারণ শয়তান তোমাদের শিরা-উপশিরায় চলাচল করে’ (তিরমিযী, হা/১১৭২, সনদ হাসান)। শয়তান মহিলাদেরকে সব সময় বিপদগামী করার চেষ্টা করে। সে জন্য শারঈ বিধান হল, মহিলারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবে না এবং অতি পাতলা পোশাক পরতে পারবে না। মহিলাদের শরীরের অঙ্গভঙ্গি প্রকাশ পায় এমন পোশাক পরা তাদের জন্য হারাম। হাদীছে এদেরকে জাহান্নামী মহিলা বলা হয়েছে। এরা কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না (ছহীহ মুসলিম, হা/২১২৮)। এছাড়া যারা নগ্ন হয়ে চলাফেরা করে তাদেরকে অভিশাপ দিতে বলা হয়েছে। কারণ তারা অভিশপ্ত মহিলা (আহমাদ, হা/৭০৮৩; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৬৮৩)। অন্য হাদীছে এসেছে, যে সমস্ত নারী বেপর্দা, অহংকারী, কপট তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৩২৫৬; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৮৪৯, সনদ ছহীহ)। 

মূলত যারা নারীদের উলঙ্গ করে রাস্তায় নামানোর চক্রান্তে ব্যস্ত তারা ইবলীসের দোসর, তারা শয়তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর। তারা নগ্ন নাটক, উপন্যাস, গল্প লিখে এবং উলঙ্গ সিনেমা তৈরি করে ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতী, নারী-পুরুষকে নষ্ট জগতে ফেলে দিচ্ছে। আর এদের নীল নকশার শিকার হয়ে নারীরা নগ্ন হয়ে তাদের রূপ ও ইজ্জত বিক্রি দিচ্ছে এবং ধর্ষকদের খোরাক বনে যাচ্ছে। কুচক্রী মহল দেশটাকে পশুর রাজ্যে পরিণত করতে চায়। তারা পাশ্চাত্যের লেংটা সমাজের আমদানি করতে চায়। কিন্তু এ সমস্ত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরা বুঝে না যে, তাদের স্ত্রী, মেয়ে, মা, বোন নগ্ন হয়ে থাকলে এবং ১০/১৫ জন লম্পট দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করলে তাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে। দেশদ্রোহী সাংবাদিকরা বুঝে না যে, তার পরিবারের কেউ এই হায়েনা চক্রের শিকার হলে তার কিছুই করার থাকবে না। তাদের যদি বাস্তবতা বুঝার সুবুদ্ধি থাকত তাহলে ইসলামী আইন ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সমালোচনা করত না এবং মিডিয়ায় ভাইরাস ছড়াত না।  

অন্যদিকে নারীরাও বিবেকহীন মাতালের মত কথিত প্রগতিবাদীদের পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছে। অসভ্য-বেহায়া গোষ্ঠীর মত পোশাকের স্বাধীনতা দাবী করছে। কিন্তু পুরোপুরি উলঙ্গ হচ্ছে না, বরং সোর্ট পোশাক দিয়েই তার নগ্নতা ফুটিয়ে তুলছে। বিমান বালা হচ্ছে বা রিসিপশনে মূর্তির মত বসে থাকছে। পণ্যের মত যত্রতত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। যে নারীদের সৌন্দর্য নিয়ে ব্যবসা করছে তা সবারই জানা। অর্থের লোভ, বিলাসী স্বপ্নের প্রতারণা আর যৌবনের তাড়নায় জীবনের সবকিছুই ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইনজয়ের নামে অগণিত লম্পটের স্বাদ গ্রহণ করছে এবং জিঘাংসার শিকার হচ্ছে। গুম-খুনের শিকার হচ্ছে। ক্ষণিকের জৌলুশ থাকলেও পরে কেউ তার দিকে তাকায় না, বিপদে পড়লেও কেউ খবর নেয় না, ভিক্ষার হাত পাতলেও কেউ ভিক্ষা দেয় না। উল্টা ঘৃণা করে, তাচ্ছিল্য করে। ফলে ঠাঁই হচ্ছে বস্তিতে, রাস্তার ধারে বা পতিতালয়ে। কারণ এখন তার দেয়ার মত কিছুই নেই, বয়স নেই, রূপ নেই, জৌলুশ নেই, স্বামী নেই, অভিভাবক নেই। এরূপ বাস্তবতা দেখার পরও নারীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। হাইকোর্টের বিচারপতি এমন নগ্ন পোশাকের সমালোচনা করলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। ইসলাম তাদেরকে যে সম্মান-মর্যাদা দিয়েছে, তা তারা ভুলে যাচ্ছে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। এরা মূলত আল্লাহর গযবের শিকার, মুমিন বান্দাদের অভিশাপ তাদের উপর সব সময়ই বর্ষণ হয়। এরা দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত হবে এবং পরকালেও লাঞ্ছিত হবে ইনশাআল্লাহ।

অতএব নারীবাদীদের উচিত ইসলামী জীবন বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করা এবং তওবা করা। যারা ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালায় তাদের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং ইসলামী সংস্কৃতি চর্চায় আন্তরিক হতে হবে।  আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম উম্মাহকে এদের গভীর ষড়যন্ত্র থেকে হেফাযত করুন- আমীন!!






প্রসঙ্গসমূহ »: সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ