রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৮:৪৩ অপরাহ্ন

নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আলেম সমাজের ভূমিকা


শিরক-বিদ‘আত ও নব্য জাহেলিয়াতের কুপ্রভাবে মুসলিম সমাজ আজ আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। সূদ-ঘুষ, দুর্নীতি, খুন, গুম, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, যেনা-ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি, আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি, অশ্লীলতা-বেহায়াপনা, মদ্যপান, সন্ত্রাস, হিংসা-বিদ্বেষ, ইত্যাদি পাপাচারে পচন ধরেছে এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যেন যুবসমাজ ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও মাদকের ডিলারশিপ নিয়েছে। নারী সমাজ দেহব্যবসা, নগ্নতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছে। আমলারা দুর্নীতির স্থায়ী লাইসেন্স পেয়েছে। আইন ও প্রশাসনের ভূমিকা কোনই কাজে আসছে না। অন্যদিকে মানবরচিত ত্বাগূতী শাসনব্যবস্থা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। যার ফলে ইহুদী-খ্রীষ্টান ও নাস্তিক্যবাদী শক্তিগুলো মুসলিমদের উপর নানারূপী অপশাসন চালিয়ে যাচ্ছে। বস্তুবাদী শিক্ষাব্যবস্থা ও নষ্ট সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে ইসলামী চেতনাকে ধ্বংস করার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। দাওয়াতী কার্যক্রমকে জঙ্গী তৎপরতা বলে মিথ্যাচার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। অথচ ইসলামের সাথে জঙ্গীবাদের কোন সম্পর্ক নেই। এই পতিত সমাজকে খেলাফতের মূলধারায় ফিরে আনতে হলে সালাফী আলেমদেরকেই বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।

যুগে যুগে নবীগণ মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করেছেন এবং সুন্দর, শৃঙ্খল ও শান্তিময় সমাজ উপহার দিয়েছেন। তাঁদের ওয়ারিছ হিসাবে আলেমগণ সেই দায়িত্ব পালন করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি শ্রেণী থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং ভাল কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম’। তোমরা তাদের মত হয়ো না, যাদের নিকট প্রকাশ্য দলীল আসার পরও বিভক্ত হয়েছে ও মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি’ (আলে-ইমরান : ১০৪-১০৫)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদের উত্থান ঘটান হয়েছে মানবজাতির জন্য। তোমরা ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে’ (আলে-ইমরান : ১১০)। অন্য কর্ম প্রতিরোধে যদি দায়িত্ব পালন না করে, তবে সবার উপরেই যে আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব আসবে সে ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) সাবধান করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঐ আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! তোমরা অবশ্যই অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজে নিষেধ করবে। অন্যথা অচিরেই আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি নাযিল করবেন। তখন তোমরা তাঁর নিকট দু‘আ করবে, কিন্তু আল্লাহ তোমাদের দু‘আ কবুল করবেন না’ (তিরমিযী, হা/২১৬৯)। তাই আল্লাহর গযব থেকে বাঁচতে হলে আলেম সমাজকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

দুঃখজনক হল, একশ্রেণী কথিত আলেম ইসলামের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গকে উপেক্ষা করে দাওয়াতের গণ্ডীকে সংকীর্ণ করে ফেলেছেন। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের যে দাওয়াতের চূড়ান্ত মূলনীতি, তাকে অবজ্ঞা করে শুধু ফযীলত ও তোষামোদের বয়ান ও বায়াত নিয়ে ব্যস্ত। আর পীর-দরবেশরা তো শুধু মুরীদদের নযর-নেওয়ায খাওয়ায় ব্যস্ত। তাওহীদ, আক্বীদা ও মানহাজের দাওয়াত নিয়ে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের কাছে যাওয়ার কোন প্রয়োজন মনে করেন না। কিন্তু নিজের স্বার্থে দরবারী আলেম সাজতে তারা একটুও ছাড় দেন না। তারা ভুলে গেছেন যে, ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) সেই যুগের সবচেয়ে বড় ত্বাগূতী শাসক নমরূদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) ফেরআউন, হামান, কারূণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) আবু জাহল, আবু লাহাব, উতবা, শায়বা প্রমুখ বড় বড় ত্বাগূতী নেতার সামনে তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে হাযির হয়েছেন। বহুরূপী অত্যাচার সত্ত্বেও তিনি মক্কার জাহেলী শাসকদের সাথে আপোস করেননি। এভাবে প্রত্যেক নবী-রাসূলের দাওয়াতের মূল টার্গেট ছিল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা এবং ত্বাগূতকে উৎখাত করা (সূরা নাহল : ৩৬)। যাবতীয় মতবাদের মূলোৎপাটন করে ইসলামকে বিজয়ী করা (সূরা ছফফ ৯)। ছাহাবায়ে কেরামও যথাযথভাবে এই দায়িত্ব পালন করেছেন। একই ধারা মুহাদ্দিছ ইমামগণও অব্যাহত রেখেছিলেন। তাঁরা ধর্মব্যবসায়ী বিদ‘আতী আলেমদের গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বার বার।

অথচ আজ আলেমরা জেল-যুলুম ও মামলা-হামলার ভয়ে ত্বাগূতের বিরুদ্ধে মুখ খুলেন না। অপমানের ভয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকে শুধু আঁতুড় ঘরে দাওয়াতী কাজ করতে চান। কিন্তু তারা নবীদের ওয়ারিছ দাবী করতে ভুলেন না। তাদের উচিত ছিল অত্যাচারী শাসকদের সামনে বীরের মত হক্ব কথা তুলে ধরা (আবুদাঊদ, হা/৪৩৪৪; তিরমিযী, হা/২১৭৪)। প্রাচীন ও আধুনিক বিজাতীয় মতবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করা এবং তাওহীদের দাওয়াতকে বিজয়ী করা। আর যে সমস্ত আলেম এই দায়িত্ব পালন করবেন তারা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবেন না (সূরা আহযাব : ৩৯)। বিশ্ববিখ্যাত শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ (৬৬১-৭২৮ হি.) তাতারগোষ্ঠী, ইহুদী-খ্রিষ্টান ও শী‘আদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। বহুবার জেল-যুলুমের শিকার হয়েছেন। ব্রিটিশ-বেনিয়া গোষ্ঠী উপমহাদেশের মুসলিমদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সহ বিভিন্ন নির্যাতন শুরু করলে মুসলিম উম্মাহকে তাদের যুলুম থেকে রক্ষা করার জন্য অকুতোভয় আলিম সমাজ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। মুজ্জাদিদ আলফেছানী আহমাদ সারহিন্দী, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী, শাহ আব্দুল আযীয, শাহ ইসমা‘ঈল শহীদ, সাইয়িদ আহমাদ শহীদ, সৈয়দ নিসার আলী তিতুমীর, আল্লামা এনায়েত আলী, বেলায়েত আলী প্রমুখ বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজকে সম্মানিত আলেমসমাজ যদি পূর্বসূরিদের মানহাজ অনুসরণ করেন, তবে আল্লাহ তা‘আলা সমাজ ও দেশকে যাবতীয় অপশাসন থেকে মুক্ত করবেন ইনশাআল্লাহ (সূরা নূর : ৫৫)। আল্লাহ তা‘আলা আলেম সমাজকে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য কবুল করুন-আমীন!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ




প্রসঙ্গসমূহ »: সম্পাদকীয়
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পরিচয় - সম্পাদকীয়
তাওহীদ সম্পর্কে জানা আবশ্যক কেন? - সম্পাদকীয়
ঈদে মীলাদুন্নবী : শী‘আদের সৃষ্ট অভিশপ্ত অনুষ্ঠান - সম্পাদকীয়
করোনা ভাইরাস : যালিমদের জন্য অশনি সংকেত - সম্পাদকীয়
রামাযান ও তাক্বওয়া : - সম্পাদকীয়
পরকীয়ার পরিণাম - সম্পাদকীয়
ইসলামী শিক্ষা : উন্নত জাতি গঠনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম - সম্পাদকীয়
নীতিবোধের সংকট! - সম্পাদকীয়
­­অসহায় মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন! - সম্পাদকীয়
রামাযান : ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের উদ্দেশ্যে কিছু কথা - সম্পাদকীয়
সালাফী মানহাজ : পরিচিতি ও অনুসরণের আবশ্যকতা - সম্পাদকীয়
নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আলেম সমাজের ভূমিকা - সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ