اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَا نَبِيَّ بَعْدَهُ
করোনা ভাইরাস : যালিমদের জন্য অশনি সংকেত
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল ‘করোনা ভাইরাস’। বিশ্বব্যাপী অজানা মৃত্যুর এক নতুন আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে চীনে এই ভাইরাস চরম মহামারি আকার ধারণ করেছে। মাত্র দুই মাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৬৮ হাজার। মারা গেছে দেড় হাজার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃতের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। আক্রান্ত ৫ লাখ। ইতোমধ্যে আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু চীন চিরকালই আসল তথ্য গোপন করে থাকে। গণমাধ্যমকে প্রকাশ করতে দেয় না। এই ভাইরাস এখন চীনের বাইরে অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন- অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালি, রাশিয়া, সুইডেন, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
‘করোনা’ শব্দের অর্থ ‘জ্যোতির্বলয়’। সূর্য থেকে ছিটকে পড়া আলোকরশ্মির মত হওয়ায় ভাইরাসটির নাম দেয়া হয়েছে ‘করোনা ভাইরাস’ (প্রথম আলো, ২৭ জানুয়ারি ২০২০)। ১৯৬০ সালে প্রথম এই ‘করোনা ভাইরাসে’র সন্ধান মেলে। এর আরেক নাম ২০১৯-এনসিওডি। সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (সার্স) সংক্রমণে ২০০২-০৩ সালে চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৮০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল (চীনে ৩৯৪ জন)। তার পিছনেও ছিল ‘করোনা ভাইরাস’। বিশেষজ্ঞরা এখন নিশ্চিত হয়েছেন যে, বর্তমান চীনা ভাইরাসটি সাবেক করোনা ভাইরাসেরই নতুন সংস্করণ। তবে এর প্রজাতি রয়েছে অনেক।
বর্তমান এই ‘করোনা’ মহামারির সূচনা হয়েছে মধ্য চীনের ‘উহান’ শহর থেকে। গত ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে প্রথম নিউমোনিয়ার মত প্রকাশ পায়। কিন্তু কিভাবে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে তার সঠিক কোন তথ্য এখনো জানা যায়নি। তবে উহানের সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজার থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন প্রাণী এর উৎস। প্রাণী থেকেই কোন মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। যেমন ‘সার্স’ ভাইরাস প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছিল। আর ‘মার্স’ ভাইরাস ছড়িয়েছিল উট থেকে, যেটি করোনার পরিবারভুক্ত। আর উহানের ওই বাজারটিতে নানা ধরনের হারাম প্রাণী বেচাকেনার ব্যাপক প্রচলন ছিল। এই করোনা মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মত করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। ভাইরাসটি সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায় এখনো এর কোন টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।
এটা নিঃসন্দেহে আল্লাহর গযব ও কঠিন পাকড়াও। আল্লাহর ফায়ছালা অপ্রতিরোধ্য। চীন দীর্ঘদিন ধরে ১০ লক্ষ উইঘুর মুসলিমের উপর ভয়াবহ ও ইতিহাসের জঘন্যতম নির্যাতন চালিয়ে আসছে। আজ তারা বন্দি শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। যাবতীয় দ্বীনচর্চা ও ধর্মীয় অনুশাসন নিষিদ্ধ করেছে। হাজার হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তাদের উদ্ধারের জন্য বিশ্বমোড়লরাও কোন পদক্ষেপ নেয়নি, বরং মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। এছাড়াও অমুসলিমরা বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার করছে। কাশ্মীর, আরাকান, ইন্ডিয়া, ফিলিস্তীন প্রভৃতি দেশগুলো তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে এ সমস্ত যালিমদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত। তাদেরকে কেবল সাময়িক অবকাশ দিচ্ছেন। মাযলূমের আর্তনাদ আল্লাহর কাছে ঠিকই পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ এ ব্যাপারে গাফেল নন। যালিমরা কেউ পার পাবে না। ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ বলেন, ‘আর আপনি ভাববেন না যে যালিমদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আল্লাহ বেখেয়াল’ (সূরা ইবরাহীম : ৪২)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ যালেমকে অবকাশ দেন। কিন্তু যখন তিনি পাকড়াও করেন, তখন আর ছাড়েন না’। অতঃপর আয়াত পাঠ করেন, ‘আর আপনার প্রতিপালকের পাকড়াও এমনই, যখন কোন অপরাধী জনপদকে পাকড়াও করেন। নিশ্চয় তাঁর পাকড়াও খুবই মর্মান্তিক, বড়ই কঠিন’ (সূরা হুদ : ১০২; ছহীহ বুখারী, হা/৪৬৮৬)। আল্লাহ বলেন, ‘আপনার রব কোন কিছুই ভুলে যান না’ (সূরা মারিয়াম : ৬৪)।
অন্যদিকে চীনের অধিবাসীসহ অমুসলিমরা এমন সব খাবার ভক্ষণ করে থাকে, যা আল্লাহ তা‘আলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আর হারামকৃত প্রাণী বা বস্তু মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ তাতে বিষাক্ত জীবাণু রয়েছে। তাই আল্লাহ সকল মানুষকে হালাল পবিত্র খাবার খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন (বাক্বারাহ : ১৬৮)। আর এই নিষেধাজ্ঞা লংঘন করাটাও যুলম (কাহফ : ২৯)। আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা হারামসহ যাবতীয় বেহায়াপনা ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হবে তারা অবশ্যই গযব ও মহামারির শিকার হবে (ইবনু মাজাহ, হা/৪০২০)। দুঃখজনক হল, অমুসলিমদের সাথে পাল্লা দিয়ে মুসলিমরাও হারাম প্রাণীসহ নানা রকমের মদ, গাঁজা, চুয়ানি, ফেন্সিডিল, ইয়াবা, বিড়ি, সিগারেট, তামাক, জর্দা, গুল ইত্যাদি ক্যান্সারযুক্ত হারামের সাথে জড়িয়ে পড়েছে।
আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি হল, তিনি যালিমদেরকে অবকাশ দিলেও এক সময় এই পৃথিবী থেকে অপমানের সাথে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন এবং পরকালে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন (সূরা হুদ : ১০২; ইবরাহীম : ৪২)। আর মুমিনদেরকে রক্ষা করবেন এবং সর্বোত্তম প্রতিদান দান করবেন (মু’মিন : ৫১; রূম : ৪৭)। সে জন্য মহামারির কারণে চীনের ১০টি অঞ্চলকে নিষিদ্ধ করা হলেও মুসলিম অধ্যুষিত উইঘুরকে আল্লাহ নিরাপদে রেখেছেন। আল-হামদুলিল্লাহ। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম একটি রিপোর্টে বলেছে, ‘উইঘুর মুসলিমরা করোনা গ্রাস থেকে অনেকটাই রেহাই পাচ্ছেন। কারণ তারা হালাল খাদ্য খেয়ে থাকেন, যা তাদেরকে করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখছে’। তাই আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর আল্লাহ যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ কর। যখন তোমাদের উপরে সৈন্যদল এসে পড়েছিল, তখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে পাঠালাম এক ঝড়-ঝঞ্ঝা, আর এক বাহিনী যা তোমরা দেখতে পাওনি। আর তোমরা যা করছিলে সে সম্বন্ধে আল্লাহ সর্বদ্রষ্টা’ (সূরা আহযাব : ৯)।
অতএব আল্লাহ্র গযবকে ভয় করতে হবে, তাঁর কাছেই আশ্রয় চাইতে হবে, যাবতীয় পাপাচার, অনাচার, যুলম, অত্যাচার থেকে মুক্ত থাকতে হবে এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কারণ যুগে যুগে আল্লাহ অসংখ্য দৃষ্টান্ত ও ঘটনাকে নিদর্শন হিসাবে রেখে দিয়েছেন। নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর কওমকে ডুবিয়ে মেরেছেন, আদ, ছামূদ, ফেরআউনসহ বিভিন্ন জাতিকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আল্লাহ যেন যাবতীয় মহামারি, গযব ও অমুসলিমদের অত্যাচার থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাযত করেন এবং তাদের প্রতি আসমানী সাহায্য নাযিল করেন-আমীন!!
رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ
প্রসঙ্গসমূহ »:
সাময়িক প্রসঙ্গ