ঈদে মীলাদুন্নবী : শী‘আদের সৃষ্ট অভিশপ্ত অনুষ্ঠান
আরবী রবীউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ নামে কথিত জন্মদিবস উদযাপন করা হয়। রাসূল (ﷺ) ১২ তারিখ জন্ম গ্রহণ করেছেন মর্মে ছূফী মাযারপূজারীরা অতি ভালোবাসা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উক্ত দিবস পালন করে থাকে। তারা এর নামকরণ করেছে, ‘সাইয়িদুল আ‘ইয়াদ’ বা সব ঈদের সর্দার। তাদের শ্লোগান হল, সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মীলাদুন্নবী (নাঊযুবিল্লাহ)। ইসলামে বিশেষ আনন্দের দিন দু’টি- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা (আবূ দাঊদ, হা/১১৩৪, সনদ ছহীহ)। অন্য হাদীছে জুমু‘আর দিনকেও মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে (মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/২১৩; মিশকাত, হা/১৩৯৮, সনদ ছহীহ)। আর এই বিদ‘আতী কবরপূজারীরা উদ্ভট মিথ্যা অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছে ‘সেরা ঈদ’। ইসলামের বিধানকে খাট করে এ ধরনের শব্দ-বাক্য উচ্চারণ করা হারাম। মীলাদ অনুষ্ঠানে রাসূল (ﷺ) আগমন করেন এমন কল্পনা করে তারা জমকাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। উদ্ভট দরূদ পাঠ, ক্বিয়াম তথা সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়া, সীরাতের উপর মিথ্যা কাহিনী বর্ণনা করা, খানার আয়োজন করা, জিলাপী বিতরণ, গান-বাজনা, সভা-সমাবেশ, মিছিল, র্যালি, জশনে জুলূস ইত্যাদির ব্যবস্থা করে। বিশেষ মর্যাদা ও ফযীলতপূর্ণ দিন মনে করে সরকারীভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবই বন্ধ রাখা হয়। অথচ এ সমস্ত জঘন্য বিদ‘আতের সাথে শরী‘আতের কোন সম্পর্ক নেই। যাঁরা রাসূল (ﷺ)-এর সবচেয়ে বেশি সম্মান-শ্রদ্ধা করতেন, সেই ছাহাবী-তাবেঈ, তাবে‘ তাবেঈ, মুহাদ্দিছ ও মুজতাহিদ ইমামগণের কেউ এ ধরনের জন্ম বা মৃত্যু দিবস একদিনের জন্যও পালন করেননি। তাই এর দ্বারা যেমন ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি দেশের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ শিরক-বিদ‘আতের অন্ধজালে নিমজ্জিত হচ্ছে।
প্রত্যেকের জানা উচিত যে, মুসলিম বিদ্বেষী অভিশপ্ত শী‘আদের মাধ্যমে চতুর্থ শতাব্দী হিজরীর মাঝামাঝিতে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’র নিকৃষ্ট বিদ‘আত চালু হয় (ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, পৃ. ৩২৪)। অতঃপর ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের শেষে বা ৭ম হিজরী শতকের শুরুর দিকে ইরাকের ‘ইরবল’ শহরে গভর্ণর মুযাফফারুদ্দীন আবূ সাঈদ কূকুবূরী (৫৪৯-৬৩০ হি.) আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়। এই শী‘আ গভর্ণর নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য পেটপূজারী আলেমদের কাজে লাগায়। সর্বপ্রথম আবুল খাত্ত্বাব ওমর ইবনু হাসান ইবনু দেহিয়াহ আল-কালবী (৫৪৪-৬৩৩ হি.) নামের কথিত আলেম বহু জাল হাদীছের সমন্বয়ে মীলাদের পক্ষে ‘আত-তানভীর ফী মাওলিদিস সিরাজিল মুনীর’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ রচনা করে। ৬২৫ হিজরীতে গভর্ণর কূকুবূরীর নিকট উপস্থাপন করলে সে খুশি হয়ে আবুল খাত্ত্বাবকে নগদ এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করে। তখন থেকেই বিশাল বিশাল প্যান্ডেল করে, আলোকসজ্জা করে, তবলা বাজিয়ে, নাচ-গান করে এটা উদযাপন করা শুরু হয়। যদিও বিদ‘আতীরা পরবর্তীতে এ বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছে। এভাবেই একশ্রেণীর স্বার্থপর রাজনৈতিক নেতা এবং দরবারী আলেমদের সহযোগিতায় মীলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। কোটি কোটি মুসলিম যে শী‘আদের প্রতারণার শিকার হয়েছে, তা স্পষ্ট-
প্রথমতঃ ইসলামে দিবসপূজা বা রাতপূজার কোন সুযোগ নেই। এটা অনেক ক্ষেত্রে বিদ‘আত, আবার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিরক। তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সকল আলেমের ঐকমত্যে ঈদে মীলাদুন্নবী একটি ঘৃণিত বিদ‘আতী প্রথা (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৭-৩৮; আল-বিদাঊল হাওয়ালিয়াহ, পৃ. ১৯৫-২০৬)। সে জন্য যারা একে বিদ‘আতে হাসানাহ বলে প্রচার করে, তারা একেবারেই নিরেট মূর্খ।
দ্বিতীয়তঃ রাসূল (ﷺ)-এর জন্ম ও মৃত্যু সোমবারে হয়েছে এটা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (ছহীহ মুসলিম, হা/১১৬২; ইবনু হিব্বান, হা/৬৫৮১, সনদ ছহীহ)। আর প্রাধান্যযোগ্য বক্তব্য হল, রাসূল (ﷺ)-এর জন্ম ৯ রবীউল আওয়াল সোমবার (আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃ. ৫৪)। আর সর্বসম্মত মতানুযায়ী ১২ই রবীউল আওয়াল সোমবার হল রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর দিন (শারহুন নববী, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ১০০)। তাই ১২ই রবীউল আওয়াল রাসূল (ﷺ)-এর জন্মদিন এই দাবী ঠিক নয়।
তৃতীয়তঃ মীলাদের প্রধান আকর্ষণ হল ক্বিয়াম- তথা রাসূল (ﷺ) মীলাদের মজলিসে উপস্থিত হন মনে করে তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়া। এটা কুফুরী আক্বীদা এবং দরূদের এই পদ্ধতি ইসলামের পরিপন্থী। তাছাড়া এই ক্বিয়ামের সাথে হিন্দুদের অনুষ্ঠানের সাদৃশ্য রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে জন্মাষ্টমীতে হিন্দু ধর্মের পুরোহিতরাও হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যায়। বিধর্মীদের সাদৃশ্য মুসলিমরা গ্রহণ করতে পারে না।
অতএব ‘মীলাদুন্নবী’ নামের ঈমান বিধ্বংসী অপসংস্কৃতিকে বর্জন করা একান্ত কর্তব্য। এর দ্বারা রাসূল (ﷺ)-কে সম্মান করা হয় না, বরং অসম্মান করা হয়। আর বিদ‘আতীদের অভ্যাস হল, সুন্নাহকে ব্যঙ্গ করা, উপহাস করা এবং সুন্নাতের অনুসারীকে ভর্ৎসনা ও তাচ্ছিল্য করা। ইমাম আহমাদ ইবনু সিনান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পৃথিবীর প্রত্যেক বিদ‘আতী আহলেহাদীছদেরকে গালি দেয়। আর যখন কোন লোক বিদ‘আত করে, তখন তার অন্তর থেকে হাদীছের মহব্বত ছিনিয়ে নেয়া হয়’ (মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীছ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪)। তাই এই অনুষ্ঠানে যেকোন ধরনের সহযোগিতা করা হারাম। কারণ যারা বিদ‘আত করে এবং বিদ‘আতীকে সাহায্য-সম্মান করে, তাদের তওবা কবুল হয় না, তাদের ফরয-নফল কোন ইবাদতই আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না (ছহীহ বুখারী, হা/১৮৭০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬)। যারা নবী করীম (ﷺ)-কে মহব্বত করে এবং তাঁর শাফা‘আতে জান্নাতে যেতে চায়, তারা সর্বদা ছহীহ হাদীছকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে এবং বিশুদ্ধ দলীলের আলোকে আমল করে। তারা কখনোই কোন বিদ‘আতকে আশ্রয় দেয় না। বরং তারা শিরক-বিদ‘আতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম উম্মাহকে সব ধরনের বিদ‘আতী আমল থেকে হেফাযত করুন-আমীন!!
প্রসঙ্গসমূহ »:
শিরক, বিদ‘আত ও কুসংস্কার