বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৫ অপরাহ্ন

শী‘আ প্রীতি ও সঊদী বিদ্বেষ


শী‘আদের আক্বীদা, পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে সুন্নীদের মধ্যে শী‘আ প্রীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও উপমহাদেশে শী‘আ আক্বীদার কুপ্রভাব যুগ যুগ ধরেই বিদ্যমান। শী‘আরা সংখ্যায় কম হলেও তাদের প্রচার মাধ্যম এবং অপসংস্কৃতি মারাত্মক আগ্রাসী। তারা বহু ভাগে বিভক্ত হলেও বর্তমানে যারা ইরান, ইয়ামান, সিরিয়া, লেবাননে আছে, তারা অধিকাংশই রাফেযী বা বাতেনী কিংবা নুছাইরী। এরা সবাই কাফের (ফাতাওয়া শায়খ বিন বায)। মিডিয়া নির্ভর তাদের বিভিন্ন অপকৌশলের কারণে সুন্নীরা বেশি প্রতারিত হচ্ছে। তারা শী‘আদের প্রশংসা করছে, তাদের কালচারের অনুকরণ করছে, শী‘আদের আখড়া ইরানকে ইসলামী রাষ্ট্রের মডেল মনে করছে, খোমেনীকে ইসলামী বিপ্লবের কিংবদন্তি নেতা আখ্যা দিচ্ছে। অন্যদিকে তাওহীদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র রাষ্ট্র সঊদী আরবকে গালি দিচ্ছে, এর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে। এগুলো সবই অজ্ঞতার ফসল। কারণ শী‘আদের সম্পর্কে সামান্য ধারণা থাকলে কোন মুসলিম ব্যক্তি এ ধরনের মন্তব্য করবে না।

‘শী‘আ’রা পথভ্রষ্ট বাতিল ফের্কা। তারা রাসূল (ﷺ)-এর পরিবার নিয়েই বিভ্রান্তির সূচনা করবে মর্মে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন (মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৩০২; ছহীহ বুখারী, হা/৩৭৫৩; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৪৯৪-এর ব্যাখ্যা)। আর তাদের দ্বারাই এই বাণী বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। তারা আয়েশা, হাফছা, হিন্দা ও উম্মুল হেকাম-কে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ মনে করে (হাক্কুল ইয়াক্বীন, পৃ. ৫১৯)। তারা মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে যেনাকারীণি মহিলা মনে করে। তারা আরো দাবী করে যে, অতিসত্বর তাদের এক ইমাম আত্মপ্রকাশ করবে এবং আয়েশাকে জীবিত করে তার উপর যেনার শাস্তি কার্যকর করবে’ (হাক্কুল ইয়াক্বীন, পৃ. ৩৭৮)। (নাঊযুবিল্লাহ) তারা রাসূল (ﷺ)-এর কোন স্ত্রীগণকে আহলে বায়াত মনে করে না। তারা শুধু পাকপাঞ্জাতন বা রাসূল (ﷺ), ফাতেমা, আলী, হাসান, হুসাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-কে আহলে বায়াত মনে করে। আর বাকী সন্তান ও নাতী-নাতনীদেরকেও পবিত্র মনে করে না। তাদের আক্বীদা হল, আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) ছিলেন রাসূল (ﷺ)-এর অছী।

তাই ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁর পরিবার থেকেই খলীফা নির্বাচিত হবে। সেজন্য শী‘আরা আবূ বকর, ওমর এবং ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-কে খলীফা বলে স্বীকার করে না; বরং আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বাদ দিয়ে যে সমস্ত ছাহাবী তাঁদের হাতে বায়‘আত করেছেন তারা সকলেই কাফের (আল-ফিছাল ফিল মিলাল, ৪/১৩৭ পৃ.)। তারা দাবী করে, ‘আবূ বকর এবং ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) উভয়েই ফেরাউন ও হামান’ (হাক্কুন ইয়াক্বীন, পৃ. ৩৬৭)। তারা উভয়ে কাফির ছিল। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালোবাসে, সেও কাফির’ (হাক্কুন ইয়াক্বীন, পৃ. ৫২২)। তারা মুত‘আ বা সাময়িক বিবাহকে হালাল হিসাবে চালু রেখেছে। তাদের কাছে গুপ্তাঙ্গ ধার করা বা বেশ্যাবৃত্তি বৈধ (আল-ইসতিবছার, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৬)। তারা আল্লাহর কালাম কুরআনে কারীমকে বিকৃত করেছে এবং অসংখ্য মিথ্যা সূরা ও আয়াত রচনা করে নিজেরা পৃথক জাল কুরআন তৈরি করেছে। তারা হাজার হাজার সালাফী আলেমকে হত্যা করেছে, ইয়ামন, সিরিয়া, ইরাক, ইরানে লক্ষ লক্ষ সুন্নী মুসলিমকে খুন করেছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, সম্পদ লুট করেছে, গভীর ষড়যন্ত্র করে বহু দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে।

এদেরকে মুসলিম বলার কোন সুযোগ নেই। অথচ সুন্নী নামধারী বহু ইসলামপন্থী এদের পক্ষ নিয়ে সালাফী-আহলেহাদীছদেরকে গালমন্দ করে। শী‘আরা যেমন সঊদী আরবের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে, সমালোচনা করে, তেমনি তারাও ইসলামের লেবাস পরে শী‘আদের ভাষায় কথা বলে, মিডিয়ায় মিথ্যাচার করে, সাধারণ জনতাকে ধোঁকা দেয়। সঊদী, দুবাই, কুয়েতের শাসকরা ইহুদী-খ্রিস্টানদের দালাল, স্বৈরাচার, অত্যাচারী, সেখানকার আলেমরা ইউরোপ-আমেরিকার গোলাম, তারা হাজীদের টাকা লুট করে জীবনযাপন করে ইত্যাদি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যখন সঊদী আরব রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করল, তখনও ঐ চক্রটি অজ্ঞতার পরিচয় দিল। কারণ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি একজন গোঁড়া ইহুদী এবং শী‘আ প্রেমী। আর ইউক্রেনকে বলা হয় ইহুদীদের দ্বিতীয় তীর্থস্থান। এরা সবসময় মুসলিমদের স্বার্থ বিরোধী কাজে লিপ্ত। ইরান-ইয়ামানী হুতীদের সাথে সঊদী আরবের যুদ্ধটাও একই সূত্রে গাঁথা। এরা সব রাফেযী শী‘আ। আর মুসলিমদের জন্য এরা ইহুদী-খ্রিষ্টানদের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। তারা মুসলিমদের রক্ত হালাল মনে করে।

ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে আমেরিকার সাথে যখন সঊদীর সম্পর্কে টান পড়ল, তখন তারা ক্রুর হাসি হাসল- এবার সঊদীকে শিক্ষা দেয়া যাবে। কিন্তু যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন বাধ্য হয়ে সঊদী সফরে আসলেন, তখন বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হল- কে কার গোলাম, কে কার কাছে ধর্না দেয়, কারা তৈল মর্দনে অগ্রগামী। মোড়লগীরি টিকিয়ে রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে বাইডেন বলে দিলেন, ‘আমেরিকা যখন বিশ্বে তাদের প্রভাব ধরে রাখতে চীন ও রাশিয়ার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত, তখন সঊদী আরবকে অবজ্ঞা করলে আমেরিকার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে’। তার ভাষণেই প্রমাণ হয়ে গেছে বিশ্ব রাজনীতি কারা নিয়ন্ত্রণ করছে। এদিকে রাশিয়া-চীন মনে করে, আমেরিকাকে বগলদাবা করতে সঊদী আরব বড় ফ্যাক্ট। কারণ বিশ্ব রাজনীতি এখন তেলনির্ভর। আর এই ‘লিকুইড ডলার’-এর সর্বোচ্চ রিজার্ব সঊদীর হাতেই সংরক্ষিত। এবার সমালোচকগোষ্ঠী বাইডেন নীতির ধস দেখে চরমভাবে মর্মাহত হল এবং লেজ গুটিয়ে নিল। এটা তাদের চিরাচরিত মুনাফেকী স্বভাব, যা তাক্বিয়া নীতি হিসাবে পরিচিত। এরা দ্বীনও বুঝে না, দুনিয়াও বুঝে না; রাজনীতিও বুঝে না, নিজেদেরকেও চিনে না। আল্লাহ তা‘আলা এদের কুপ্রভাব থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাযত করুন-আমীন!!

 رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ




প্রসঙ্গসমূহ »: সম্পাদকীয়
আশ‘আরী ও মাতুরীদী মতবাদের কুপ্রভাব - সম্পাদকীয়
অর্থ সংকট ও মূল রহস্য - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ : অমার্জনীয় ধৃষ্টতার আস্ফালন - সম্পাদকীয়
নারী পোশাকের স্বাধীনতা ও প্রগতিবাদীদের ভ্রান্তি বিলাস - সম্পাদকীয়
প্রচলিত রাজনীতি ও মানবতার করুণ পরিণতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
অবরুদ্ধ কাশ্মীর : বিশ্ব মোড়লরা নীরব - সম্পাদকীয়
কুরআন মাজীদের হক্ব আদায় করুন! - সম্পাদকীয়
বাবরি মসজিদের রায় : ইতিহাসের জঘন্য অধ্যায় - সম্পাদকীয়
নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আলেম সমাজের ভূমিকা - সম্পাদকীয়
তরুণদের মানহাজ বিভ্রান্তি ও তার কুফল - সম্পাদকীয়
ফিলিস্তীন ও ইহুদী আধিপত্যবাদ - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
প্রতারণার পরিণাম - সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ