বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৮ অপরাহ্ন

আহলে কুরআনের অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতা


অবৈধ ও নাপাকসূত্রে জন্ম নেয়া একটি বাতিল ফের্কার নাম ‘আহলে কুরআন’। তারা হাদীছ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অন্তরে সন্দেহের বিষ ঢেলে দেয় এবং শয়তানের মত বিভ্রান্ত করে। এই বিপদগামী দলটি সাধারণ মানুষকে হাদীছ অস্বীকার করার সবক দেয় (আল-কুরআনিয়্যীন, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯-২১ ও ৫৭-৬৪)। তারা বলে,
১. আমাদের জন্য কুরআনই যথেষ্ট। কুরআনকে বুঝার জন্য হাদীছের প্রয়োজন নেই।
২. তারা মনে করে যে, হাদীছ আল্লাহর অহী নয়, বরং আল্লাহর নামে মিথ্যা মাত্র।
৩. তারা আরো বলে থাকে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশ মানা যাবে না, কেননা এটি শিরক (মাজাল্লাহ্, ইশা‘আতুল কুরআন, পৃ. ৪৯, ৩য় সংখ্যা, ১৯০২ খ্রি.; পৃ. ৩৫; চতুর্থ সংখ্যা, ১৯০৩ খ্রি.; ইশা‘আতুস সুন্নাহ, ১৯/২৮৬, ২৯১, ১৯০২ খ্রি.; বুরহানুল ফুরক্বান, পৃ. ৪; আল-মুবাহাছাহ, পৃ. ৮১, ৪২)।
৪. তাদের আহলে কুরআন দাবী করাটাও একটা প্রতারণা। কারণ এর অর্থ হল, কুরআনের অনুসারী। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছ অস্বীকার করে কেউ আহলে কুরআন হতে পারে না।
৫. তারা নিজেদের মত করে কুরআন বুঝে এবং নিজেদের মত ব্যাখ্যা করে। গোমরা হওয়ার, পথভ্রষ্ট হওয়ার এটা একটা বড় কারণ।

যারা এধরনের আক্বীদা পোষণ করে তারা কাফের, দ্বীন থেকে তারা বের হয়ে গেছে। ইসলামে তাদের কোন অংশ নেই। তারা মুরতাদ। এদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই তার উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৪; তিরমিযী, হা/২৬৬৪, সনদ ছহীহ)। তাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত মতানুযায়ী আহলে কুরআনের লোকেরা কাফির (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ৪/১৯, ফৎওয়া নং-১১৫১২৫), তারা ইসলামের গণ্ডি  ও চৌহদ্দি থেকে বের হয়ে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান অথবা অন্য কোন বিধর্মী সম্প্রদায় বা নাস্তিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে (মিফতাহুল জান্নাহ্ ফিল ইহতিজাজি বিস সুন্নাহ, পৃ. ১৪; আশ-শারী‘আহ, ১/৪১২) এবং তাদের হত্যা করা অপরিহার্য (আল-ওয়াসিয়্যাতুল কুবরা লি ইবনি তাইমিয়্যাহ, ১/৩১৫)। আর আখেরাতে এদের পরিণাম জাহান্নাম (সূরা আল-লাইল :  ১৪-১৬; ছহীহ বুখারী, হা/৭২৮০)। কারণ তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছকে এবং তাঁর আনুগত্যকে অস্বীকার করেছে। কুরআনের অপব্যাখ্যা করে আল্লাহর বাণী বিকৃত করেছে, তার মর্যাদা নষ্ট করেছে। এদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না। পিতার সম্পদের ওয়ারিছ হবে না, এদের যব্হকৃত পশুর গোশত খাওয়া যাবে না। এদের জানাযা পড়া যাবে না, মুসলিমদের গোরস্থানে দাফন করা যাবে না। কুরআনে কারীম এবং শরী‘আত সম্পর্কে এই জাহেলদের কোন ইলম নেই। তারা ছাহাবী ও তাবেঈদের শ্রেষ্ঠত্ব এবং ইলমকে মূল্যায়ন করে না। নিজেদেরকে আহলে কুরআন দাবি করে নবীর কথাকে অস্বীকার করে। তাই এদেরকে আহলে কুরআন না বলে ‘আহলে কুফরান’ বা কাফেরদের দল বলা উচিত। তাছাড়া সুন্নাতকে অস্বীকার করার অর্থই হল, কুরআনকে অস্বীকার করা (মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি বায, ২/৪০৩ ও ৯/১৭৬-১৭৮)।

আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমের ব্যাখ্যা হিসাবে হাদীছ নাযিল করেছেন। তাই কুরআন যেমন আল্লাহর অহী তেমনি হাদীছও আল্লাহর অহী। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপরই দায়িত্ব ছিল তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে আল-কুরআনকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার এবং স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া (মা‘আলিমুত তানযীল, ৫/২১)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর আপনার প্রতি আমরা কুরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন’ (সূরা আন-নাহল : ৪৪)। কুরআনের যাবতীয় সংক্ষিপ্ত বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়ে মহান আল্লাহ হাদীছ নাযিল করেছেন। যেমন ছালাত, যাকাত, হজ্জ, ছিয়ামসহ ইত্যাদি (আল-জামিঊ লি-আহকামিল কুরআন, ১০/১০৯)। মুসলিম হওয়ার জন্য যে শাহাদা পাঠ করতে হয়, কুরআনে তা নেই। এটা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (বুখারী হা/৩৩২৯, ৩৫২২, ৪৩৭২)।

কুরআনে মুনাফিক্বদের জানাযার ছালাত না পড়ার নির্দেশ এসেছে (সূরা আত-তাওবা : ৮৪)। কিন্তু মুমিনদের জানাযার ছালাতের নির্দেশ নেই। বরং তা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬২)। কুরআনে এসেছে, মহান আল্লাহ ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে নিজের দিকে (উপরে) উঠিয়ে নিয়েছেন (সূরা আন-নিসা : ১৫৮); কিন্তু তিনি আবার আসবেন, তা কুরআনে নেই। বরং তা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৯৭)। কুরআনে ছালাত ক্বায়েম করার নির্দেশ এসেছে, কিন্তু কোন্ ছালাত কত রাক‘আত পড়তে হবে, কিভাবে পড়তে হবে তা কুরআনে নেই। এগুলো হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। এ রকম বহু বিধান আছে, যা হাদীছ ছাড়া বুঝা সম্ভব নয়।

আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাতের স্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীগণের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ (কুরআন) পাঠ করেন ও তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে কিতাব (কুরআন) ও হিকমত (সুন্নাত) শিক্ষা দান করেন’ (সূরা আলে ইমরান : ১৬৪)। সে জন্য যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশ অস্বীকার করবে তারা মুমিন নয়। আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের অন্তরে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়’ (সূরা আন-নিসা : ৬৫)।

আল্লাহ বলেন, ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর’ (সূরা আল-হাশর : ৭)। এই নির্দেশ দ্বীনের উছূল এবং শাখা-প্রশাখা সবকিছুকেই অন্তর্ভুক্ত করে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করা এবং তা অনুসরণ করা বান্দাদের জন্য বাধ্যতামূলক। এর বিপরীত করা বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিধান আল্লাহর বিধানের মতই, কারো জন্য এটি ত্যাগ করার কোন অজুহাত নেই এবং তাঁর কথার উপর কারো কথাকে প্রাধান্য দেয়াও বৈধ নয় (তাফসীরে সা‘দী, পৃ. ৮৫০)। তাই হাদীছ ছাড়া কুরআনুল কারীম বুঝা এবং তার উপর আমল করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সালাফে ছালিহীনের মানহাজ অনুযায়ী কুরআনুল কারীম বুঝার ও মানার তাওফীক্ব দান করুন এবং আহলে কুরআনের অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতা থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেদায়ত করুন-আমীন!!

 

 

 

 

 




প্রসঙ্গসমূহ »: সম্পাদকীয়
ইসলামের দৃষ্টিতে ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য - সম্পাদকীয়
অবৈধ সম্পর্কের পরিণাম - সম্পাদকীয়
সার্বিক নিরাপত্তা আবশ্যক - সম্পাদকীয়
শী‘আ প্রীতি ও সঊদী বিদ্বেষ - সম্পাদকীয়
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ : অমার্জনীয় ধৃষ্টতার আস্ফালন - সম্পাদকীয়
কুরআন মাজীদের হক্ব আদায় করুন! - সম্পাদকীয়
ত্বাগূতী রাজনীতি অভিশাপ ও করুণ পরিণতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
কুরআনে কারীমের মর্যাদা - সম্পাদকীয়
তাওহীদ সম্পর্কে জানা আবশ্যক কেন? - সম্পাদকীয়
মানুষের চরম সংকট! - সম্পাদকীয়
মহামারীর কারণ ও পরিত্রাণের উপায় - সম্পাদকীয়
তরুণদের মানহাজ বিভ্রান্তি ও তার কুফল - সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ