সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَا نَبِيَّ بَعْدَهُ

মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ : অমার্জনীয় ধৃষ্টতার আস্ফালন


মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত। আল্লাহ তাঁকে বিশ্ব নবীর মর্যাদা দিয়েছেন এবং সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করেছেন (সূরা সাবা : ২৮)। তাঁর উপর সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব ‘আল-কুরআন’ নাযিল করে তাঁকে শ্রেষ্ঠ রাসূল হিসাবে ভূষিত করেছেন। হাউযে কাওছার এবং মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী করেছেন। এ জন্য তাঁর শাফা‘আত ছাড়া উম্মতের কেউ আখেরাতে মুক্তি পাবে না এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আল্লাহ যেমন তাঁকে প্রশংসনীয় গুণাবলীর অধিকারী করেছেন, তেমনভাবে চারিত্রিক দিক থেকেও সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন’ (সূরা আল-কলাম : ৪)।

সর্ব দিক থেকে তিনিই সর্বোত্তম আদর্শের প্রতীক। তিনি জগদ্বাসীর জন্য রহমত স্বরূপ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)। মূলত আল্লাহ প্রেরিত সকল নবী-রাসূলই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। স্বয়ং আল্লাহ যাদের পবিত্রতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং সত্যবাদী হওয়ার সাক্ষী দিয়েছেন। তাই মুসলিম উম্মাহ নবী-রাসূলগণের মধ্যে কাউকে পার্থক্য করে না, বরং তাঁদের সকলের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এবং পরিপূর্ণ ঈমান পোষণ করে। তাই কোন কুচক্রী মহল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)সহ কোনও নবী-রাসূল সম্পর্কে কটূক্তি করলে মুসলিমরা এক মুহূর্তের জন্যও তা বরদাস্ত করতে পারে না।

যারা মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শেষ নবী হিসাবে বিশ্বাস করে না এমন অমুসলিম ও নাস্তিক মহল বিভিন্ন সময়ে তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে থাকে। এটা মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশ্ববিজয়ী চির অম্লান আদর্শের প্রতি চরম হিংসার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। সম্প্রতি ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে অমার্জনীয় ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। আমরা কঠোর ভাষায় এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তথাকথিক ‘ফ্রীডম অফ এক্সপ্রেশন’, ‘ফ্রীডম অফ স্পীচ’ বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বাক-স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা মিডিয়া ও তাদের বশংবদ নাস্তিকরা এভাবেই মুসলিমদের মৌলিক বিশ্বাসের প্রতি আঘাত করে থাকে।

‘ইনোসেন্স অফ মুসলিমস’ নামক সিনেমা, ‘শার্লি এবাদো’ ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন দেশের পত্র-পত্রিকা ও প্রতিষ্ঠান মাঝে মধ্যেই মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কটূক্তি করে এবং ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে। আর এই নিকৃষ্ট ও নির্লজ্জ কর্মের প্রতি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদ দিয়ে থাকে পশ্চিমা বিশ্ব। তারা মুখে কুলুপ এঁটে আনন্দের নীরবতা উদযাপন করে। এরা নির্বোধ পশু ও প্রতিবন্ধী অপবিত্র জানোয়ারের চেয়ে জঘন্য। এরা মানুষ নামের কলঙ্ক। জানা আবশ্যক যে, সীমাহীন মতপ্রকাশ ও বাক-স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। এটা কেবল ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষেত্রেই তারা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। কারণ অন্যের ধর্মবিশ্বাস ও মূল্যবোধকে কটাক্ষ করা, ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা বাক-স্বাধীনতা নয়, বরং বাকসন্ত্রাস ও মতিভ্রমের নামান্তর, যা ঘৃণ্য বর্ণবাদের জন্ম দেয় এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দেয়।

পবিত্র কুরআন এবং ছহীহ হাদীছের প্রচার ও প্রসারের কারণে বর্তমানে ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে আলোকরশ্মির গতিতে। ফলে বিধর্মীরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করছে, হাজার হাজার মসজিদ, মাদরাসা ও দাওয়া সেন্টার প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। দিন দিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে- আল-হামদুলিল্লাহ। মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রেখে যাওয়া চিরন্তন আদর্শ ও প্রশংসনীয় গুণাবলীর কাছে মাথা নত করা ছাড়া তাদের সামনে আর দ্বিতীয় কোন পথ নেই। পশ্চিমা বিশ্ব যান্ত্রিক সভ্যতায় এগিয়ে গেলেও আদর্শের কাছে তারা অসহায়। সে জন্য মুসলিম উম্মাহকে বিপথগামী করতে, তাদের মনোবলকে ভেঙ্গে দিতে যুগে যুগে মুসলিমের উপর এভাবেই আক্রমণ করেছে। কখনো বিশ্বনবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে ঘৃণা ছড়িয়েছে, ইসলামী নিদর্শন ধ্বংসে মেতে উঠেছে। কিন্তু তারা কখনই সফল হতে পারেনি। কারণ বিজ্ঞানের উৎকর্ষে কুরআন-সুন্নাহ্র বিধি-বিধান আরো বেশী প্রস্ফুটিত হচ্ছে। তাই মাতালরা যত বেশী সমালোচনা করবে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ তত বেশী বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে ইনশাআল্লাহ। বিগত যুগের ইতিহাস তাই বলে।

এক্ষণে মুসলিম বিশ্বের করণীয় হল, মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুমহান আদর্শ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগতভাবে তাদের এই ধৃষ্টতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো (আবূ দাঊদ, হা/৪৩৬১)। তাদের সাথে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ বজায় রাখা (সূরা আল-মুমতাহিনাহ : ৪)। ধৈর্য ধারণপূর্বক হিকমতের সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা। কারণ এই সুযোগে অমুসলিম গোষ্ঠী যেন উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে। সেই সাথে বিশ্বনবীকে কটূক্তি করা, তাঁর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা, গালি দেয়া, ভর্ৎসনা করা ও সমালোচনা করার যে পরিণাম, তা শান্তিপূর্ণভাবে তুলে ধরা। এক্ষেত্রে ইসলামের পরিষ্কার বক্তব্য হল, যারা এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত হবে, তাদের উপর হত্যার বিধান অর্পিত হবে। কোন মুসলিম যদি এই অপরাধ করে তাহলে সে কাফির, মুরতাদ হয়ে যাবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের শাস্তি কার্যকর করতে হবে। অর্থাৎ তার পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন সুযোগই নেই। আর আখেরাতে সে হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী (সূরা তওবা : ৬৫-৬৬; সূরা আল-বাক্বারাহ : ২১৭; ছহীহ বুখারী, হা/৬৮৭৮; আবূ দাঊদ, হা/৪৩৬১, ৪৩৬৩, ২৬৮৩)।

উল্লেখ্য, তারা তওবা করতে চাইলেও দুনিয়াতে তাদের তওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। হত্যাই চূড়ান্ত ফায়ছালা। তবে আল্লাহ চাইলে ক্বিয়ামতের দিন তার তওবা উপকারে আসতে পারে (আবুদাঊদ হা/২৬৮৩; ইবনু তায়মিয়াহ, আছ-ছারেমুল মাসলূল ‘আলা শাতিমির রাসূল, পৃঃ ২৪৩)। তাই বিষয়টি হালকা নয়। অমুসলিম রাষ্ট্র শাস্তি কার্যকর না করলে বা পৃষ্ঠপোষকতা দিলে মুসলিম বিশ্বের ঈমানী দায়িত্ব হল, ঐ রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং অথনৈতিক যাবতীয় লেনদেন বন্ধ করা (ছহীহ বুখারী, হা/৪৩৭২)।

তাছাড়া কুচক্রী মহলের উস্কানীতে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না এবং কোন রকম চরমপন্থা অবলম্বন করা যাবে না। কারণ মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপারে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। আল্লাহ বলেন, ‘বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে আমরাই আপনার জন্য যথেষ্ট’ (সূরা হিজর : ৯৫)। হাদীছে এসেছে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও ব্যঙ্গ করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হবে (ছহীহ বুখারী, হা/৫২০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘তোমরা কি আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ যে, আল্লাহ তা‘আলা কিভাবে কুরাইশদের গালমন্দ ও অভিসম্পাতকে আমার উপর থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। তারা মুযাম্মাম (নিন্দিত) নামে গালমন্দ করে এবং অভিসাপ দেয়, অথচ আমি মুহাম্মাদ অর্থাৎ চির প্রশংসিত (ছহীহ বুখারী, হা/৩৫৩৩)। আল্লাহ তা‘আলা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদা চির অক্ষুণ্ন রাখুন, মুসলিম উম্মাহকে হেফাযত করুন এবং যাবতীয় শক্তি ও সামর্থ্যের অধিকারী করুন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ





প্রচলিত রাজনীতি ও মানবতার করুণ পরিণতি - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামী শিক্ষা : উন্নত জাতি গঠনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম - সম্পাদকীয়
সালাফী মানহাজ : পরিচিতি ও অনুসরণের আবশ্যকতা - সম্পাদকীয়
নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আলেম সমাজের ভূমিকা - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
আলেমের মর্যাদা - সম্পাদকীয়
মানহাজের বিরোধিতা ও তার পরিণাম - সম্পাদকীয়
খ্রিষ্টান মিশনারী : হুমকির মুখে ইসলাম ও বাংলাদেশ - সম্পাদকীয়
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পরিচয় - সম্পাদকীয়
তাওহীদ সম্পর্কে জানা আবশ্যক কেন? - সম্পাদকীয়
শৃঙ্খলাপূর্ণ উন্নত সমাজ কাঠামো কাম্য - সম্পাদকীয়
ইসলামী দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি ও ফলাফল - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
অর্থ সংকট ও মূল রহস্য - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন

ফেসবুক পেজ