اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَا نَبِيَّ بَعْدَهُ
ধর্ষণ, খুন, গুম, নারী নির্যাতন : মধ্যযুগীয় বর্বরতার নব-সংস্করণ
ধর্ষণ, গণধর্ষণ, গুম, খুন ও নারী নির্যাতন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। কথিত আধুনিক সভ্যতার গগনচুম্বি ছোঁয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারেও চরম ঘৃণিত, অসভ্য, নোংরা, কুরুচিপূর্ণ ও জিঘাংসু ঘটনা মহামারির মত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গণধর্ষণের যে হিংস্র থাবা এবং হত্যার যে বিবর্ণ চিত্র তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ছেলের বয়সী ধর্ষকদেরকে শতবার ‘বাবা’ ডেকেও মুক্তি মিলেনি অসহায় মহিলার। তিন বছরের শিশু থেকে সত্তোর্দ্ধ বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী পাগলী পর্যন্ত ধর্ষক হায়েনাদের লালসার শিকার হচ্ছে। পিতার নিকট কন্যা, চাচার নিকট ভাতিজি এবং শ্বশুরের নিকট পুত্রবধুও রক্ষা পায়নি। স্বামীর সাথে থেকেও স্ত্রী ধর্ষকদের থেকে নিরাপদ নয়। কোথাও নারীর নিরাপত্তা নেই। সর্বত্র আতঙ্ক। ধর্ষণের একেকটি চিত্র এতই লোমহর্ষক যে, তা শুনে বা পত্রিকায় পড়ে শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এ জন্য ইসলামী শরী‘আত এ সমস্ত মানবরূপী জানোয়ারকে কালবিলম্ব না করে সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিয়েছে এবং শূলে চড়াতে বলেছে (সূরা আল-মায়িদাহ : ৩৩)।
একদিকে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের জোয়ার, অন্যদিকে অশ্লীলতা ও নগ্নতার ঢেউ। যেমন নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড, ম্যাগাজিন, মুভি, মিউজিক, আটটেম সং, নোংরা সাহিত্য, কবিতা, সবকিছুই চরম যৌন উত্তেজক। নারীর নগ্ন পোশাক, বেহায়ার মত বেপরওয়া চলাফেরা, গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ডের মত জঘন্য যৌন সংস্কৃতি, পর্নোগ্রাফি, ব্লু ফিল্মসহ বিভিন্ন মিডিয়া ধর্ষণকে উস্কে দিচ্ছে। ফলে নারী-পুরুষ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় জোরপূর্বক যৌনকর্ম জড়িয়ে যাচ্ছে। সুযোগ পেলেই নৈতিকতা হারিয়ে মাদকসন্ত্রাসে মাতাল হয়ে যৌনক্ষুধায় রাক্ষসের রূপ ধারণ করে ঝাপিয়ে পড়ছে। আইন বা বিচার-ব্যবস্থা দিয়ে তাদের লাগামহীন গতিকে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অভিভাবকরা সর্বদা আতঙ্কে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। সর্বোচ্চ সম্মানের (মা) জাতি আজ মানবরূপী হিংস্র পশুদের নগ্ন থাবায় ভীত সন্ত্রস্ত। ধর্ষিতা শিশু, কিশোরী, তরুণী, যুবতী ও বৃদ্ধার করুণ আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, প্রভাবশালীদের কৃষ্ণ থাবা ও আইনের নানা ফাঁকফোকরের কারণে ন্যায়বিচার নীরবে-নিভৃতে গুমরে মরছে। এহেন নাজুক পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য আজ লক্ষ-কোটি জনতা ধর্ষণ বিরোধী আন্দলোনে শামিল হয়েছে। অজস্র কণ্ঠে আজ ধ্বনিত হচ্ছে ধর্ষকের চূড়ান্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হোক। অথচ দেড় হাজার বছর আগেই ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের ফায়ছালা দেয়া হয়েছে।
মনে রাখা উচিত যে, ব্যভিচার এমন একটি ভয়ানক পাপ, যে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশি ভয় করতেন (আত-তারগীব, হা/২৩৯০)। কারণ কেউ যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন তার মধ্যে ঈমান থাকে না (ছহীহ বুখারী, হা/২৪৭৫)। যে এলাকায় ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ে সেখানে আসমানী শাস্তি আসতে আর কোন বাধা থাকে না (হাকেম, হা/২২৬১)। এগুলো হল দুনিয়াবী শাস্তি। আখেরাতে এরূপ ব্যক্তিদের জাহান্নামের আগুনে উলঙ্গ অবস্থায় দগ্ধিভূত করা হবে (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৮৬)।
নারী নির্যাতন, ব্যভিচার ও ধর্ষণ প্রতিরোধে উপরিউক্ত কার্যকরী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য কর্তব্য। দেশের দায়িত্বশীলদের এ বিষয়ে সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। অন্যথা ইহকালে আল্লাহর গযবের নির্মম শিকার হতে হবে আর পরকালে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় পাপাচার থেকে হেফাযত করুন-আমীন!!