বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَا نَبِيَّ بَعْدَهُ

ধর্ষণ, খুন, গুম, নারী নির্যাতন : মধ্যযুগীয় বর্বরতার নব-সংস্করণ


ধর্ষণ, গণধর্ষণ, গুম, খুন ও নারী নির্যাতন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। কথিত আধুনিক সভ্যতার গগনচুম্বি ছোঁয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারেও চরম ঘৃণিত, অসভ্য, নোংরা, কুরুচিপূর্ণ ও জিঘাংসু ঘটনা মহামারির মত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গণধর্ষণের যে হিংস্র থাবা এবং হত্যার যে বিবর্ণ চিত্র তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ছেলের বয়সী ধর্ষকদেরকে শতবার ‘বাবা’ ডেকেও মুক্তি মিলেনি অসহায় মহিলার। তিন বছরের শিশু থেকে সত্তোর্দ্ধ বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী পাগলী পর্যন্ত ধর্ষক হায়েনাদের লালসার শিকার হচ্ছে। পিতার নিকট কন্যা, চাচার নিকট ভাতিজি এবং শ্বশুরের নিকট পুত্রবধুও রক্ষা পায়নি। স্বামীর সাথে থেকেও স্ত্রী ধর্ষকদের থেকে নিরাপদ নয়। কোথাও নারীর নিরাপত্তা নেই। সর্বত্র আতঙ্ক। ধর্ষণের একেকটি চিত্র এতই লোমহর্ষক যে, তা শুনে বা পত্রিকায় পড়ে শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এ জন্য ইসলামী শরী‘আত এ সমস্ত মানবরূপী জানোয়ারকে কালবিলম্ব না করে সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিয়েছে এবং শূলে চড়াতে বলেছে (সূরা আল-মায়িদাহ : ৩৩)।

একদিকে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের জোয়ার, অন্যদিকে অশ্লীলতা ও নগ্নতার ঢেউ। যেমন নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড, ম্যাগাজিন, মুভি, মিউজিক, আটটেম সং, নোংরা সাহিত্য, কবিতা, সবকিছুই চরম যৌন উত্তেজক। নারীর নগ্ন পোশাক, বেহায়ার মত বেপরওয়া চলাফেরা, গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ডের মত জঘন্য যৌন সংস্কৃতি, পর্নোগ্রাফি, ব্লু ফিল্মসহ বিভিন্ন মিডিয়া ধর্ষণকে উস্কে দিচ্ছে। ফলে নারী-পুরুষ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় জোরপূর্বক যৌনকর্ম জড়িয়ে যাচ্ছে। সুযোগ পেলেই নৈতিকতা হারিয়ে মাদকসন্ত্রাসে মাতাল হয়ে যৌনক্ষুধায় রাক্ষসের রূপ ধারণ করে ঝাপিয়ে পড়ছে। আইন বা বিচার-ব্যবস্থা দিয়ে তাদের লাগামহীন গতিকে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অভিভাবকরা সর্বদা আতঙ্কে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। সর্বোচ্চ সম্মানের (মা) জাতি আজ মানবরূপী হিংস্র পশুদের নগ্ন থাবায় ভীত সন্ত্রস্ত। ধর্ষিতা শিশু, কিশোরী, তরুণী, যুবতী ও বৃদ্ধার করুণ আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, প্রভাবশালীদের কৃষ্ণ থাবা ও আইনের নানা ফাঁকফোকরের কারণে ন্যায়বিচার নীরবে-নিভৃতে গুমরে মরছে। এহেন নাজুক পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য আজ লক্ষ-কোটি জনতা ধর্ষণ বিরোধী আন্দলোনে শামিল হয়েছে। অজস্র কণ্ঠে আজ ধ্বনিত হচ্ছে ধর্ষকের চূড়ান্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হোক। অথচ দেড় হাজার বছর আগেই ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের ফায়ছালা দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন হল, ধর্ষণ, ব্যভিচার ও যৌন নির্যাতন এত বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? তা প্রতিরোধের উপায় কী? রাষ্ট্রসহ সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকেই প্রথমেই এগুলো বৃদ্ধির কারণ উদঘাটন করতে হবে এবং তা প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে যেমন-
১). দ্বীনি শিক্ষার অভাব,
২). অবাধ যৌনাচার,
৩). নারীদের অমার্জিত ও যৌন উত্তেজক পোশাক, 
৪). পর্নোগ্রাফির আসক্তি,
৫). অপসংস্কৃতি তথা অশ্লীল নাচ-গান, যৌন উত্তেজক বই-ম্যাগাজিন, অশ্লীল নাটক-সিনেমার কুপ্রভাব,
৬). নানা শর্তের বেড়াজালে বিয়ের চেয়ে ব্যভিচারের পথ সহজ হওয়া ,
৭). রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক কিংবা বিভিন্ন প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতা,
৮). অভিভাবকদের সন্তানের সুষ্ঠু দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা,
৯). কামোত্তেজনা সৃষ্টিকারী উপকরণ।
বলা বাহুল্য, প্রবল কামোত্তেজনা মানুষকে পশুতুল্য করে তুলে।

উক্ত অবস্থা থেকে পরিবার ও সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পদক্ষেপসমূহ নিম্নরূপ-
১). দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করা (সূরা আল-হুজরাত : ১৩)।
২). অশ্লীলতা, নগ্নতা ও অবাধ যৌনাচারের সকল মাধ্যম, পথ ও পন্থা নিষিদ্ধ করা (সূরা আল-আন‘আম : ১৫১; সূরা আল-আ‘রাফ : ৩৩)।
৩). ধর্ষণ বা ব্যভিচারে লিপ্ত ব্যক্তির উপর সত্বর শাস্তি কার্যকর করা (সূরা আল-ফুরক্বান : ৩২)।
৪). গান ও বাদ্যযন্ত্র থেকে বিরত থাকা। এগুলো অশ্লীলতার অন্যতম মাধ্যম এবং ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী (ইগাছাতুল লাহফান মিন মাসাইদিশ শায়তান, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৪০)।
৫). নারীদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ করা ও বল্গাহীনভাবে চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা (সূরা আল-আহযাব : ৩৩; তিরমিযী, হা/১১৭৩)।
৬). দৃষ্টিকে অবনত রাখা ও লজ্জাস্থানের হিফাযত করা (সূরা আন-নূর : ৩০-৩১)।
৭). রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা।
৮). বিবাহকে সহজ করা এবং সামর্থ্যবানদের বিবাহ করা (ছহীহ বুখারী, হা/৫০৬৫)।

মনে রাখা উচিত যে, ব্যভিচার এমন একটি ভয়ানক পাপ, যে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশি ভয় করতেন (আত-তারগীব, হা/২৩৯০)। কারণ কেউ যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন তার মধ্যে ঈমান থাকে না (ছহীহ বুখারী, হা/২৪৭৫)। যে এলাকায় ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ে সেখানে আসমানী শাস্তি আসতে আর কোন বাধা থাকে না (হাকেম, হা/২২৬১)। এগুলো হল দুনিয়াবী শাস্তি। আখেরাতে এরূপ ব্যক্তিদের জাহান্নামের আগুনে উলঙ্গ অবস্থায় দগ্ধিভূত করা হবে (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৮৬)।

নারী নির্যাতন, ব্যভিচার ও ধর্ষণ প্রতিরোধে উপরিউক্ত কার্যকরী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য কর্তব্য। দেশের দায়িত্বশীলদের এ বিষয়ে সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। অন্যথা ইহকালে আল্লাহর গযবের নির্মম শিকার হতে হবে আর পরকালে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় পাপাচার থেকে হেফাযত করুন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ





সালাফী দাওয়াত ও বিদ‘আতীদের সন্ত্রাসী আগ্রাসন - সম্পাদকীয়
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ : অমার্জনীয় ধৃষ্টতার আস্ফালন - সম্পাদকীয়
মানুষের চরম সংকট! - সম্পাদকীয়
আলেমের মর্যাদা - সম্পাদকীয়
প্রতারণার পরিণাম - সম্পাদকীয়
প্রচলিত কুসংস্কার : মুসলিমদের জন্য মরণব্যাধি ক্যান্সার - সম্পাদকীয়
আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিষোদগার : চরম অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ - সম্পাদকীয়
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের পরিচয় - সম্পাদকীয়
বাবরি মসজিদের রায় : ইতিহাসের জঘন্য অধ্যায় - সম্পাদকীয়
ইসলামের দৃষ্টিতে ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য - সম্পাদকীয়
নারী পোশাকের স্বাধীনতা ও প্রগতিবাদীদের ভ্রান্তি বিলাস - সম্পাদকীয়
রাহুমুক্ত বাংলাদেশ: সর্বত্র সংস্কার প্রয়োজন - সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ