সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন

প্রচলিত রাজনীতি ও মানবতার করুণ পরিণতি 


‘রাজনীতি’ পরিভাষার মধ্যে আভিজাত্যের ঘ্রাণ অনুভব করলেও এখন তা দেশের মানুষের জন্য অভিশাপ ও বিপদনীতিতে পরিণত হয়েছে। যারা এই দুর্গন্ধ নীতির সাথে জড়িত, সাধারণ মানুষ তাদেরকে ঘৃণা করে। কারণ তারা ব্যক্তি স্বার্থের জন্য জাতীয় স্বার্থকে লুণ্ঠন করে, মানবতাকে পৃষ্ঠ করে। গণতন্ত্রের শ্লোগান দিয়ে ধোঁকাতন্ত্রের রাজত্ব কায়েম করে, ভোটের কথা বলে ডাকাততন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাতন্ত্রকে স্থায়ী করার জন্য উন্মাদ হয়ে যায়। বিশ^ব্যাপী চলছে এই ধোঁকাতন্ত্রের দুর্বৃত্তায়ন। সেজন্য মেরুদণ্ডহীন এই নীতির প্রতি মানুষের কোন আগ্রহ নেই। তাই প্রচলিত রাজনীতি আদর্শহীন এক পচাতন্ত্র, স্বার্থতন্ত্র ও লুটপাটতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এটা অসৎ, অযোগ্য ও মেয়াদোত্তীর্ণ লোকদের আখড়া। তাই প্রবাদ হয়ে গেছে, রাজনীতি এখন গরীবের বউ।

দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদ চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, সূদখোর ও ঘুষখোর। তারা অসহায় গরীব-দুঃখীদের অর্থ আত্মসাৎ করে এবং বিদেশে পাচার করে। এই কালো রাজনীতির কারণে দেশ আজ গভীর সংকটে পড়েছে। পেশিশক্তি ব্যবহার করে দেশকে তারা তলাবিহীন ঝুড়িতে রূপান্তরিত করেছে। রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। নোংরা রাজনীতির হিংস্রতায় শিক্ষা ব্যবস্থা আজ নাস্তিকদের দখলে। প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যের অভিশাপ তো ওপেন সিক্রেট। ছাত্ররাজনীতির নামে দেশ এখন সন্ত্রাসকবলিত বিপন্ন নগরী। শিক্ষকরা অর্থের কাঙ্গাল আর শিক্ষার্থীরা অনৈতিকতার সাগরে ভাসমান। এভাবে সর্বস্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় ধস নেমেছে। তাই নব্য রাজনীতির অপর নাম দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস ও মিথ্যাচার।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ক্যাসিনো, মদ, জুয়া, পতিতাবৃত্তি ও অবৈধ টেন্ডারের একেকজন ডিলার হয়ে বসে আছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণকারী অবৈধ সিন্ডিকেট তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। জ্বালানী, বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি তারাই করে থাকে। আমদানী-রপ্তানী ও বৈদেশিক মুদ্রার নিয়ন্ত্রণ তাদেরই দখলে। গার্মেন্টস তথা পোশাক শিল্প, মাছ, ফল-ফলাদি উৎপাদন ও বিপননসহ সকল প্রকার বাণিজ্য ও ব্যবসা কালো রাজনীতির খাদে নিপতিত। অর্থনৈতিক লেনদেন ও ব্যাংক ব্যবস্থা পুঁজিপতীদের ভোগ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট, সেতু, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নয়ন বাঁশের কবলে নিমজ্জিত। পাসপোর্ট-ভিসা প্রক্রিয়া তো এখন দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমা। ট্রাক-বাস-সিএনজি মালিক সমিতি দুর্নীতির ভাগাড়।

ট্রেন-বাস ও বিমানের টিকিট ক্ষমতাসীনদের কবজায় বন্দি। সরকারী, আধা সরকারী, বেসরকারী ও স্বায়ত্ব শাসিত সেক্টরে জনগণের চাকুরী ও ক্যারিয়ার বিল্ডাব সবই রাজনৈতিক নেতাদের মতি-মর্জির উপর নির্ভরশীল। দেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আইন, প্রশাসন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের বেহাল দশা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে একদিকে যেমন দমন-পীড়ন, হুমকি-ধমকি, জেল-যুলুম-জরিমানা, অপহরণ, হত্যা-গুম-খুন করা হচ্ছে; অন্যদিকে পেট্রোলবোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে মানব সভ্যতাকে করা হচ্ছে অগ্নিদদ্ধ। কোথাও যেন কোন নিরাপত্তা নেই। রাজনীতির এই খুনরাঙ্গা মঞ্চে রক্তের যে হোলিখেলা সেটা কেবল একশ্রেণীর কায়েমী স্বার্থবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ক্রীড়নকদের ক্ষমতা দখল ও তা স্থায়ীকরণের পায়তারা ছাড়া কিছুই নয়। সামান্য ও ঠুনকো কারণে খুনাখুনি হচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের অসম্মানজনক কাজ ও কথায় ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার অযুহাতে দলের অন্ধ পূজারী, দলীয় চামচা ও সেবাদাস কূপমণ্ডকেরা অবৈধ ক্ষমতা জাহির করছে। এই রাজনীতির কারণে হাজার হাজার মানুষ গুম, খুন ও অপহরণের শিকার হচ্ছে। সাধারণ জনগণ সর্বত্র এই অপরাজনীতির শিকার হচ্ছে। 

এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির জন্য প্রচলিত গণতান্ত্রিক রাজনীতিই দায়ী। এ পদ্ধতিতে তাত্ত্বিক সূত্রাবলী যেমন ত্রুটি-বিচ্যুতিতে ভরপুর, তেমনি এর ফলাফল হল গুম, খুন ও সন্ত্রাস। এমতাবস্থায় বিশ^ মডেল মুহাম্মাদ (ﷺ) ও খোলাফায়ে রাশেদার রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির উন্মেষ সাধন, এর সম্প্রসারণ ও পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠাকরণ ছাড়া মুক্তির আর কোন পথ নেই। এখানেই রয়েছে ইনসাফ ও ন্যায়নীতিপূর্ণ উন্নত ব্যবস্থা, আইন-বিচার ও নির্বাহী বিভাগের সততা এবং পরকালে জবাবদিহিতার উন্নত চেতনা। অতএব স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে ইসলামী রাজনীতির মূলনীতিগুলো অনুসরণ করা আবশ্যক। যেমন-

(ক) রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের পদ্ধতি অনুসরণ করা। এক্ষেত্রে মানব রচিত প্রাচীন বা আধুনিক কোন পদ্ধতি বা মতবাদকে স্থান দেয়া যাবে না (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭, সনদ ছহীহ)।

(খ) আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সর্বদা শারঈ আইন প্রয়োগ করা। আল্লাহ প্রদত্ত আইনের বিরোধী কোন আইন রচনা করা যাবে না (সূরা আশ-শূরা : ২১; সূরা আল-মায়িদাহ : ৪৫-৪৭)।

(গ) মুসলিম ব্যক্তি মাত্রই যেন সালাত আদায় করে সে জন্য বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা (সূরা আল-হজ্জ : ৪১)।

(ঘ) শরী‘আত বিরোধী যাবতীয় মতবাদ ও দর্শন, নিয়ম-নীতি বাতিল করা (সূরা আছ-ছফ্ফ : ৯)। আল্লাহ তা‘আলা যেন আমাদেরকে কালো রাজনীতির ছোবল থেকে হেফাযত করেন এবং সোনালী রাজনীতির দ্বারকে উন্মুক্ত করে দেন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّیۡعُ الۡعَلِیۡمُ





প্রসঙ্গসমূহ »: সম্পাদকীয়

ফেসবুক পেজ