সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَا نَبِيَّ بَعْدَهُ


মানহাজ সম্পর্কে জ্ঞানগত ত্রুটি থাকার কারণে একশ্রেণীর কথিত দাঈর মাধ্যমে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে মহামারির মত। কবরপূজারী বিদ‘আতী ওয়ায়েয ছাড়াও সুন্নাতের দাবীদার অনেক ব্যক্তিও সালাফদের বুঝ ও মূলনীতিকে অবজ্ঞা করে নিজেদের ধ্যান-ধারণা ও ভ্রষ্ট মতবাদ প্রচার করছে। কাদিয়ানী, খারেজী, শী‘আ, খানকাপূজারী, তরীকাপূজারী সবাই দলীল দিচ্ছে কুরআন-হাদীছ থেকে। অপরদিকে তারা সালাফী মানহাজের অনুসারী আহলেহাদীছ বা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। এতে অনেকের মধ্যে শরী‘আতের প্রতি অনীহা ও বিতৃষ্ণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। মোটকথা বিভ্রান্তি এখন চরম আকার ধারণ করেছে।

উক্ত অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম, তাবে-তাবেঈন-এর মানহাজের অনুসরণ করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। যাকে বলে ‘মানহাজুস সালাফিছ ছালেহ’ বা সালাফে ছালেহীনের মানহাজ। ‘মানহাজ’ শব্দটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে (ছহীহ মুসলিম হা/২৪৮৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৯২০, সনদ হাসান)। আর ‘মিনহাজ’ শব্দটি কুরআনেও এসেছে, হাদীছেও এসেছে (মায়েদাহ ৪৮; আহমাদ হা/১৮৪৩০, সনদ ছহীহ)। এর অর্থ সরল-সোজা পথ, স্পষ্ট রাস্তা, প্রশস্ত চলার পথ। ‘সালাফ’ শব্দটিও কুরআনে এসেছে এবং হাদীছেও এসেছে। কুরআনে এসেছে ‘অগ্রবর্তী’ বা গত হওয়া অর্থে এবং উপদেশ, শিক্ষা অর্থে (নিসা ২২, ২৩; মায়েদাহ ৯৫; যুখরুফ ৫২)। হাদীছে এসেছে, অগ্রগামী অর্থে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে বলেছিলেন, فَإِنِّى نِعْمَ السَّلَفُ أَنَا لَكِ ‘নিশ্চয় আমি তোমার জন্য কতই না উত্তম অগ্রগামী’ (বুখারী হা/৬২৮৬; মুসলিম হা/২৪৫০)। অর্থাৎ ‘সালাফে ছালেহীনের মানহাজ’ বলতে পূর্ববর্তী বা অগ্রগামী সৎবান্দাদের পথ, রীতি, পদ্ধতি ও মূলনীতিকে বুঝায়। আর তাঁরাই হলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈগণের যুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁদের যুগকেই রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণযুগ বলেছেন (বুখারী হা/২৬৫২; মুসলিম হা/২৫৩৫)। আল্লাহও তাঁদেরকেই শ্রেষ্ঠ উম্মত বলেছেন (আলে ইমরান ১১০)। তাঁদের অনুসরণ করলে আমরা হেদায়াত পাব, অন্যথা পরিণাম জাহান্নাম এ কথা আল্লাহ বলে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তারা যদি ঈমান আনে তোমাদের ঈমান আনার মত, তাহলে তারা হেদায়াত পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারাই হঠকারিতার মধ্যে রয়েছে’ (বাক্বারাহ ১৩৭)। অন্য আয়াতে এসেছে, একান্ত নিষ্ঠার সাথে যারা তাঁদের অনুসরণ করবে, আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবেন এবং চিরস্থায়ীভাবে জান্নাতে থাকার সুযোগ দিবেন (তওবা ১০০)। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবা ১১৯; হাশর ৮)। অন্যত্র বলেন, ‘হেদায়াত প্রকাশিত হওয়ার পর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের বিপরীত পথে চলে, সে যেদিকে চলতে চায়, আমরা তাকে সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত করব এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর এটা নিকৃষ্টতর প্রত্যাবর্তন স্থল’ (আন-নিসা ১১৫)।

বুঝা যাচ্ছে যে, আমাদেরকে সালাফদের মানহাজকেই আঁকড়ে ধরতে হবে, তাঁদের পথেই চলতে হবে। কারণ সেটাই ছিরাতে মুস্তাক্বীম, সেটাই জান্নাতের পথ। আর আল্লাহ সেই পথই আমাদেরকে চাইতে বলেছেন। তাই আল্লাহর কাছে আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ চাওয়া হল, ‘আপনি আমাদেরকে সোজা-সরল পথে পরিচালিত করুন, তাদের পথ- যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন’ (সূরা ফাতিহা ৬-৭)। আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তারা হলেন, নবীগণ, ছিদ্দীক্বগণ, শহীদগণ এবং সৎ বান্দাগণ। আর তাদের সান্নিধ্য কতই না উত্তম। এই অনুগ্রহ সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে (নিসা ৬৯-৭০)। বিশেষ করে বর্তমান বিভক্তি, বিভ্রান্তি ও মতানৈক্যের যুগে তাঁদের মানহাজের অনুসরণ করা আবশ্যক। একদা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইহুদীরা বিভক্ত হয়েছে ৭১ দলে, খ্রীস্টানরা বিভক্ত হয়েছে ৭২ দলে। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ দলে। একটি ব্যতীত সবই জাহান্নামে যাবে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)? ঐ জান্নাতী দল কোনটি? তিনি বলেন, আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপর আছি, তার উপর যারা থাকবে (তিরমিযী হা/২৬৪১; আবুদাঊদ হা/৪৫৯৬; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯২, সনদ ছহীহ)। অন্য হাদীছে ভবিষ্যদ্বাণী করতে গিয়ে বলেন, আমার পরে তোমাদের মধ্যে যে বেঁচে থাকবে, সে অচিরেই অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে থাকবে। তাকে শক্ত করে ধারণ করবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে তার উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে (আবুদাঊদ হা/৪৬০৭, সনদ ছহীহ)।

রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ছাহাবায়ে কেরামের মানহাজ থেকে ছিটকে পড়ার কারণে মুসলিমরা অসংখ্য দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছে। যেমন- (ক) একশ্রেণীর লোক আমলে, বক্তব্যে ও চলাফেরায় সালাফী, ইবাদতে খুবই পরহেযগার, কিন্তু আক্বীদায় পাক্কা খারেজী-চরমপন্থী। তারা মুসলিমদেরকে ঠুনকো কারণে কাফের-মুশরিক বলে ফৎওয়া দিতে দ্বিধা করে না।

(খ) কতিপয় দাঈ আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে সালাফী মানহাজে বিশ্বাসী, কিন্তু রাজনীতি ও সমাজ বিপ্লবের ক্ষেত্রে শী‘আ ও খারেজী মানহাজে বিশ্বাসী। তারা শিরকী গণতন্ত্রের নর্দমায় নিমজ্জিত এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে সূদী অর্থনীতির পৃষ্ঠপোষক। তারা রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে সালাফী মানহাজকে স্বীকার করতে রাযী নয়। পক্ষান্তরে আহলেহাদীছগণ শী‘আ রাজনীতিতে যেমন বিশ্বাসী নয়, তেমনি জাতীয়-বিজাতীয় জাহেলী মতবাদেও বিশ্বাসী নয়। এজন্য তারা আহলেহাদীছ বা সালাফীদের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। আহলেহাদীছ একটা রোগ, আহলেহাদীছরা শিরকে আকবারের সাথে জড়িত, তথাকথিত আহলেহাদীছ ইত্যাদি ভাষায় তারা গালমন্দ করে থাকে। ‘আহলেহাদীছ’ বলা যাবে না, ‘সালাফী’ বলে পরিচয় দেয়া যাবে না, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত উচ্চারণ করা যাবে না; বরং সবাই মুসলিম, মুসলিম বলেই পরিচয় দিতে হবে, কোন ভাগাভাগি করা যাবে না, শী‘আ-কাদিয়ানীরাও আমাদের ভাই (নাঊযুবিল্লাহ) ইত্যাদি মন্তব্য করে থাকে। বিশ্ববরেণ্য সালাফী বিদ্বানগণ সম্পর্কে চরম ঘৃণা প্রদর্শন করে বলে, তারা বাদশার গোলাম, রিয়ালের বিনিময়ে শরী‘আত বিক্রি করে, তারা ইক্বামতে দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, তারা জিহাদকে অবজ্ঞা করে ইত্যাদি। সঊদী আরবের শাসকগোষ্ঠীকে মুনাফিক, ইহুদী খ্রিস্টানদের দালাল বলে কটাক্ষ করে থাকে। ইমাম বুখারী, ইবনু তায়মিয়াহ, আলবানী প্রমুখ আপোসহীন যুগশ্রেষ্ঠ সংস্কারক এবং মুহাদ্দিছ উলামায়ে কেরামকে সহ্যই করতে পারে না। ইরান-ইয়ামানের শী‘আরা যখন সঊদী আরবে হামলা চালায়, তখন তারা আনন্দ উল্লাস করে। শী‘আরা যখন সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, বাহরাইন, ইয়ামানের সুন্নি মুসলিমদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে, সালাফী বিদ্বানদের পুড়িয়ে মারে, তখন তাদের হৃদয়ে এতটুকুও দাগ কাটে না। কিন্তু সঊদী জোট যখন পাল্টা হামলা চালায়, তখন তাদের বুক ফেটে যায়, মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় তুলে। যদিও তারাই আবার সঊদী আরবের টাকা নিয়ে এসে মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল তৈরি করে ধর্মের নামে জমজমাট ব্যবসা করছে।

(গ) আরেকশ্রেণীর ব্যক্তি আক্বীদা ও আমলে কোনটাতেই সালাফী নয়, কিন্তু জনগণের সামনে সালাফী বেশ ধারণ করে ভান ধরে এবং মুখে সালাফদের কথা বলে (মুতাসাল্লিফ)। এরা মানুষের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকে এবং কূট-কৌশলে আহলেহাদীছ সমাজের ক্ষতি করে থাকে। এরা মূলত মানহাজ গোপনকারী, মানসিকভাবে অন্ধ-কট্টর মাযহাবী আর চরম আহলেহাদীছ বিদ্বেষী। তারা সালাফী আক্বীদা ও আমল সম্পর্কে পরিষ্কার কোন কথা বলে না। সব সময় কৌশলে পাশ কাটিয়ে যায় এবং গোঁজামিল দিয়ে মিছরির ছুরির ন্যায় সুন্দর করে কথা বলে মানুষের মন জয় করে। এটাও ঠিক, ওটাও ঠিক বলে সবার কাছে ভাল থাকার চেষ্টা করে। এরা কোন্ মানহাজের তা ধরা দিতে চায় না। এরা মুসলিমদের জন্য বেশী ক্ষতিকর।

(ঘ) সমাজে উচ্চ শিক্ষিত একটি শ্রেণী রয়েছে, যাদেরকে আমলে সালাফী মনে হয় কিন্তু আক্বীদায় সালাফীও না আবার চরমপন্থীও না, বরং অতি সালাফী হতে গিয়ে আমলে মুরজিয়া ও আক্বীদায় খারেজীদের সূক্ষ্ম প্রভাব রয়েছে। এই শ্রেণীটাকে নিয়েই এখন মধ্যমপন্থীরা বিব্রতকর অবস্থায় আছে। সারা বিশ্বেই এদের প্রভাব আছে। তারা মূলত কুরআন-হাদীছ চর্চা করতে গিয়ে নিজেদের মত করে বুঝে থাকে। সালাফী মানহাজের যে গভীর উদারতা তা তারা উপলব্ধি করে না। সালাফী মানহাজের আলেমদেরকে তারা পসন্দ করে না। গোঁড়া, কট্টর, চরমপন্থী ইত্যাদি বলে অভিযোগ লাগিয়ে দেয়। সালাফী কোন দাঈর মাঝে সাধারণ ত্রুটি লক্ষ্য করলেই বিভিন্ন নামে চিত্রিত করে এবং সালাফী মানহাজ থেকে বের করে দেয়ার ফৎওয়া দেয়। এটা ভয়ঙ্কর। মু‘তাযেলীদের বিরোধিতা করতে গিয়ে যেমন মাতুরীদী আক্বীদার জন্ম হয়েছে, তেমনি বর্তমানে তারা বেশী বুঝতে গিয়ে নতুন মানহাজের আমদানি করেছে।

(ঙ) আরেকশ্রেণীর মানুষ আদব-আখলাক, স্বভাব-চরিত্র, আচার-ব্যবহারে, কথা-বার্তায় ভাল, কিন্তু আক্বীদা ও আমলে গোঁড়া বিদ‘আতী, সর্বদা মাযার ও কবর পূজায় ব্যস্ত থাকে। তারা পীর-ওলী-দরবেশ-বুযর্গের মুরীদ হয়ে তাদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে (নাঊযুবিল্লাহ)। তারা ঢোল-তবলা-একতারা নিয়ে খানকায় বসে গান-বাজনা করে এবং বিভিন্ন প্রকার যিকির ও অযীফা চর্চা করে। তারা অসংখ্য তরীকা ও শ্রেণীতে বিভক্ত। এদেরকে ব্রেলভী বললে সহজেই চেনা যায়।

(চ) সমাজের বড় একটি শ্রেণী আক্বীদায় মাতুরীদী আবার আমলে হানাফী মাযহাবের অনুসারী। এটা তাদের প্রকাশ্য ঘোষণা। তাদের আলেমরা আহলেহাদীছদেরকে কাদিয়ানী, শী‘আ ইত্যাদি বাজে নামে সম্বোধন করে থাকে এবং আহলেহাদীছ মসজিদগুলোকে কাদিয়ানী মসজিদ, শী‘আ মসজিদ বলে প্রচার করে থাকে। কিন্তু তাদের অন্তর ঠিকই জানে যে আহলেহাদীছগণ কাদিয়ানী, শী‘আদেরকে অমুসলিম, কাফের মনে করে। তাদের কাছে সালাফী মানহাজের কোন মূল্যই নেই। মূলত তারা দেওবন্দী মানহাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। তারা প্রচলিত কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নখশাবন্দিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া এই চার তরীকার বায়‘আত নিয়ে এর অসীলায় মুক্তি পেতে চায়। উক্ত দুই শ্রেণীর লোকই হানাফী বলে দাবী করে। কিন্তু তাদের মধ্যে ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর আক্বীদা-আমলের লেশমাত্র নেই। শুধু তাঁর নাম ভাঙ্গিয়ে খাচ্ছে এবং তার উপর নানা মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে ধর্মীয় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী (১২৬৪-১৩০৪ হিঃ) বলেন, ‘অনেক হানাফী শাখা-প্রশাখায় হানাফী আর আক্বীদায় মু‘তাযেলী। … আবার অনেকে শাখা-প্রশাখায় হানাফী। কিন্তু মূলে তারা মুরজিয়া অথবা ‘যায়দী’ (শী‘আদের একটি উপদল)। মোট কথা আক্বীদাগত পার্থক্যের কারণে হানাফীরা বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত। তাদের মধ্যে কেউ শী‘আ, কেউ মু‘তাযেলী, কেউ মুরজিয়া। … তবে এখানের আলোচ্য বিষয় হল মুরজিয়া হানাফী, যারা শাখা-প্রশাখায় আবু হানীফার অনুসরণ করে এবং আক্বীদায় তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে। বরং আক্বীদার দিক থেকে তারা খাঁটি মুরজিয়াদের মতো’ (আর-রাফউ ওয়াত-তাকমীল, পৃঃ ২৭, ৩৮৫-৮৬)।

সালাফদের মানহাজকে প্রধান্য না দেয়ার কারণেই মুসলিম উম্মাহ এই মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হয়েছে। সেজন্য কুরআন-সুন্নাহ বুঝার ক্ষেত্রে প্রধান মূলনীতি হল, ‘সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণ করা ওয়াজিব’ (وُجُوْبُ اِتِّبَاعِ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ عَلٰى فَهْمِ سَلَفِ الْأُمَّةِ) ইমাম আওযাঈ (৮৯-১৫৮ হিঃ/৭০৭-৭৭৪ খৃঃ) বলেন, ‘সুন্নাতের উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখুন, সালাফগণ যেখানে থেমেছেন, আপনিও সেখানে থামুন, তারা যা বলেছেন, আপনিও তাই বলুন, তারা যা থেকে বিরত থেকেছেন, আপনিও তা থেকে বিরত থাকুন। আপনি আপনার অগ্রবর্তী সালাফে ছালেহীনের পথে চলতে থাকুন’ (লালকাঈ (মৃ. ৪১৮ হিঃ), শারহু উছূলিল ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জাম‘আহ, পৃঃ ১৫৪, নং ৩১৫)। তাই শুধু আক্বীদা ছহীহ হলেই হবে না, বরং মানহাজ ছহীহ হতে হবে। অর্থাৎ আক্বীদা, আমল, আদব-আখলাক্ব, সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতিসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে সালাফে ছালেহীনের মানহাজের অনুসরণ করতে হবে। তবেই হেদায়াত পাওয়া যাবে এবং জান্নাতের পথ সুগম হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের উপর বিশেষ রহমত নাযিল করুন, ছিরাতে মুস্তাক্বীমে চলা সহজ করে দিন, সালাফে ছালেহীনের মানহাজ বুঝার তাওফীক্ব দান করুন এবং তাঁদের সাথে জান্নাতে একত্রিত করুন-আমীন!!

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ





ফেসবুক পেজ