সমকামিতার ভয়ঙ্কর পরিণতি
সমকামিতা (Homosexuality) বলতে পুরুষে পুরুষে বা নারীতে নারীতে যৌন উত্তেজনা নিবারণের জন্য যেনায় লিপ্ত হওয়া বুঝায়। এটা অতি নিকৃষ্ট কর্ম। এই অপরাধের কারণে আল্লাহ তা‘আলা লূত্ব (আলাইহিস সালাম)-এর সম্প্রদায়কে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন (সূরা আন-নামল : ৫৪-৫৮)। বহু দেশ সমকামিতার জন্য অপরাধমূলক শাস্তির বিধান প্রবর্তন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী বিশ্বের অধিকাংশ দেশ সমকামীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। সঊদী আরব, আফগানিস্তান, ব্রুনাই, ইরান, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়ার কিছু অংশ, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়ামানে সমকামীদের বিরুদ্ধে শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদ- বা কারাদ-ের আইন রয়েছে। আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, কাতার, সোমালিয়া ও সিরিয়াতে এটি অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে সমকামিতা নামক প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও নিকৃষ্ট কাজের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত কিছু উন্মাদন বিভিন্নভাবে এর প্রচার-প্রসারে কাজ করছে। ইতিমধ্যে বহু যুবক-যুবতী তাদের খপ্পরে পড়ে তাদের জীবন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। অথচ মানবজাতির পরিবারতন্ত্রের স্বাভাবিক নিয়ম হল, একজন পুরুষ একজন নারীকে বৈধভাবে বিয়ে করার পর তারা সুখময় দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করবে। আর সমকামিতা হল, সমাজ ও পরিবেশ বিধ্বংসী বিকৃত লালসা, যা মানবজাতির বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে বড় বাধা। এজন্য জগদ্বিখ্যাত প-িত ফুযাইল ইবনু ই‘আয (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, لَوْ أَنَّ لُوْطِيًّا اغْتَسَلَ بِكُلِّ قَطْرَةٍ مِّنَ السَّمَاءِ لَقِيَ اللهَ غَيْرَ طَاهِرٍ ‘যদি কোন সমকামী আকাশের সমস্ত পানি দিয়ে গোসল করে, তবুও সে অপবিত্র অবস্থাতেই আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে’ (যাম্মুল লিওয়াত্ব, দুরী, পৃ. ১৪২; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-২৪৩৬৭৩)। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যেহেতু সমকামিতার অনিষ্টতা সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক, সেহেতু ইহকালে ও পরকালে এর শাস্তিও হবে সবচেয়ে ভয়াবহ’ (আল-জাওয়াবুল কাফী, ১/১৬৮ পৃ.)।
ইসলামী শরী‘আহ অনুযায়ী কোন পুরুষের ব্যাপারে সমকাম বা পায়ুগমন প্রমাণিত হলে তাকে ও তার সমকামী সঙ্গীকে হত্যা করতে হবে। রাসূল (ﷺ) বলেন, مَنْ وَجَدْتُمُوْهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ فَاقْتُلُوْا الْفَاعِلَ وَالْـمَفْعُوْلَ بِهِ ‘তোমরা যে মানুষকে লূত্ব সম্প্রদায়ের কুকর্মে (সমকামিতায়) নিয়োজিত পাবে, সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাদের উভয়কেই হত্যা করবে’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৪৬২, সনদ হাসান)। রাসূল (ﷺ) লূত্ব জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, اُرْجُمُوْا الْأَعْلَى وَالْأَسْفَلَ اُرْجُمُوْهُمَا جَمِيْعًا ‘তোমরা উপরের এবং নিচের উভয় ব্যক্তিকেই রজম করে অর্থাৎ প্রস্তরাঘাতে হত্যা কর’ (ইবনু মাজাহ, হা/২৫৬২, ২০৯২, সনদ হাসান)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আরো বলেন, فِي الْبِكْرِ يُؤْخَذُ عَلَى اللُّوْطِيَّةِ قَالَ يُرْجَمُ ‘অবিবাহিতদের পায়ুকামে বা সমকামিতায় লিপ্ত পাওয়া গেলে রজম করা হবে অর্থাৎ পাথর মেরে হত্যা করা হবে’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৪৬৩, সনদ ছহীহ)। এ ব্যাপারে ছাহাবীগণ এবং আলেমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন। যেমন ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, উভয় সমকামীকেই রজম তথা পাথর মেরে হত্যা করতে হবে, চায় সে বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত হোক। এই মতের পক্ষে রয়েছেন ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল ও ইসহাক। পক্ষান্তরে তাবিঈদের মধ্য হতে হাসান আল-বাছরী, ইবরাহীম নাখঈ, ‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ সহ অন্যান্য বিদ্বান বলেছেন, সমকামীর শাস্তি ব্যভিচারীর শাস্তির মতই। একই মত পোষণ করেছেন সুফিয়ান ছাওরী ও কূফাবাসীরা’ (তিরমিযী, হা/১৪৫৬, সনদ ছহীহ)। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘উভয় সমকামীকেই হত্যা করার ব্যাপারে ছাহাবীগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ছাহাবী বলেছেন, পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। আবার কিছু সংখ্যক ছাহাবী বলেছেন, সমকামীকে মহল্লার সর্বোচ্চ প্রাসাদের ছাদ থেকে উপুড় করে নিক্ষেপ করতে হবে। অতঃপর তার উপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে হবে। আর কিছু সংখ্যক ছাহাবী বলেছেন, তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে হবে। তবে জমহূর সালাফ ও ফিক্বাহবিদদের মতানুযায়ী উভয় সমকামীকেই রজম তথা পাথর মেরে হত্যা করতে হবে, চায় সে বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত হোক’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনি তাইমিয়্যাহ, ১১/৫৪৩ পৃ.; যাদুল মা‘আদ, ৫/৪০ পৃ.; আজওয়াউল বায়ান, ৩/৩৫ পৃ.)।
আবূ বকর, আলী, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) এবং হিশাম ইবনু আব্দুল মালিক (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মত ব্যক্তিগণ সমকামীদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। যেমন মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একদা আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকট এ মর্মে একটি চিঠি পাঠালেন যে, তিনি আরবের কোন এক উপশহরে এমন এক ব্যক্তিকে ধরেছেন যাকে দিয়ে যৌন উত্তেজনা নিবারণ করা হয় যেমনিভাবে নিবারণ করা হয় মহিলা দিয়ে। তখন আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সকল ছাহাবীকে একত্রিত করে এ ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শ চেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)ও তখন উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, এটি এমন একটি গুনাহ যা বিশ্বে শুধু একটি জাতি-ই সংঘটন করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই অবগত। অতএব আমার মত হচ্ছে, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হোক। উপস্থিত সকল ছাহাবীও উক্ত মতের সমর্থন করেন। তখন আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ জারি করেন’ (বাইহাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৫৩৮৯; জামিঊল ঊলূম ওয়াল হিকাম, ১/৩৮৭ পৃ.)।
সরকার কর্তৃক ইসলাম বিরোধী আইন প্রণয়ন করার জন্য সমকামী দুনিয়াবী শাস্তি থেকে রক্ষা পেলেও আত্মঘাতি ভয়াবহ রোগ থেকে রক্ষা পাবে না। ১৯৮৫ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৪,৭৩৯ জন এইড্স রোগে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১০,৬৫৩ জন রোগীই পুরুষ সমকামী। আর পরকালের শাস্তি তো রেডি আছে। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা সমকামীদের প্রতি করুণার দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেন, لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى رَجُلٍ أَتَى رَجُلًا أَوِ امْرَأَةً فِيْ الدُّبُرِ ‘আল্লাহ তা‘আলা এমন ব্যক্তির প্রতি কখনো দয়া ও করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না, যে সমকামে লিপ্ত হয় অথবা কোন স্ত্রীলোকের মলদ্বারে সংগম করে’ (তিরমিযী, হা/১১৬৫; মিশকাত, হা/৩১৩১, সনদ হাসান)। অতএব আমাদের যুব সমাজ এবং তরুণ-তরুণীদের অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে এ বিষয়ে সচেতনতা খুবই যরূরী। আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে সকল প্রকার পাপাচার ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে রক্ষা করুন- আমীন!
رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ
প্রসঙ্গসমূহ »:
সম্পাদকীয়