রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন

দ্বীন রক্ষায় আলেমদের অবদান

খত্বীব : শাইখ ড. আব্দুল মুহসিন আল-কাসেম
-অনুবাদ : শাইখ হারুনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী*


[০৫ রবিঃ আখের. ১৪৪২ হি. মোতাবেক ২০ নভেম্বর, ২০২০ তারিখের ‘মসজিদে নববী, মদীনাতুল মুনাওয়ারা’-এর জুমু‘আর খুত্ববার বঙ্গানুবাদ]

মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর ছালাত ও সালামের পর মুহতারাম শায়খ বলেন,

আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা যথাযথভাবে আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করুন। কেননা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বনে রয়েছে চোখের জ্যোতি এবং এর মাধ্যমেই হৃদয় প্রাণবন্ত হয়।

হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য এমন একটি দ্বীনকে মনোনীত করেছেন, যা অবলম্বন করে তারা তাদের রবের ইবাদত করবে। তিনি অসংখ্য রাসূল প্রেরণ করেছেন, বান্দাদের কাছে এই দ্বীনকে পৌঁছে দেয়ার জন্য। বিজ্ঞ আলেম ও জ্ঞানীগণ একমত যে, মানুষের প্রয়োজনীয় মৌলিক পাঁচটি বস্তুর মধ্যে দ্বীন হেফাযতের বিষয়টি সবার শীর্ষে। ফলে জান, মাল, বিবেক ও সম্মান রক্ষার চেয়ে দ্বীন রক্ষা অগ্রাধিকারযোগ্য। পূর্ববর্তী জাতিদের মধ্যে নবীগণ ও তাঁদের অনুসারীদের উপর দ্বীন হেফাযতের গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, 

اِنَّاۤ  اَنۡزَلۡنَا التَّوۡرٰىۃَ فِیۡہَا ہُدًی وَّ نُوۡرٌ ۚ یَحۡکُمُ بِہَا النَّبِیُّوۡنَ الَّذِیۡنَ اَسۡلَمُوۡا لِلَّذِیۡنَ ہَادُوۡا وَ الرَّبّٰنِیُّوۡنَ وَ الۡاَحۡبَارُ بِمَا اسۡتُحۡفِظُوۡا مِنۡ کِتٰبِ اللّٰہِ وَ کَانُوۡا عَلَیۡہِ شُہَدَآءَ 

‘নিশ্চয় আমরা তাওরাত নাযিল করেছিলাম; যাতে ছিল হেদায়াত ও আলো; অনুগত নবীগণ তদনুযায়ী ইহুদীদেরকে আদেশ করতেন। আর আল্লাহওয়ালাগণ ও বিদ্বানগণও (তদানুসারে হুকুম দিতেন), কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের সংরক্ষণের আদেশ দেয়া হয়েছিল এবং তারা তা স্বীকার করেছিল’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৪৪)। অতঃপর তাদের অবর্তমানে তাদের ধর্মে বিকৃতি ও পরিবর্তন শুরু হয়।

পক্ষান্তরে এই উম্মতের দ্বীনের মূল উৎসকে আল্লাহ তা‘আলা সংরক্ষণ করার ওয়াদা করেছেন। এ মর্মে তিনি বলেন,  نَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ  وَ  اِنَّا  لَہٗ  لَحٰفِظُوۡنَ  ‘আমরাই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই এর সংরক্ষণকারী’ (সূরা আল হিজর : ৯)। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের শব্দ, অর্থ এবং এর ব্যাখ্যাকারী হাদীছও ক্বিয়ামত পর্যন্ত এই সংরক্ষণ ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তা‘আলা এটাকে সংরক্ষণ করার জন্য আশরাফুল মাখলূকাত তথা মানুষদেরকে নির্বাচিত করলেন এবং তাদেরকে এর মাধ্যমে সম্মানিত করলেন। আর তাঁর দ্বীনের হেফাযতের জন্য কাজ করাকে করলেন সর্বোচ্চ সম্মানের ও বিশেষ কৃতিত্বের বিষয়।

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দ্বীনের প্রচারের জন্য তিনি নিজের ও তাঁর রাসূলদের মাঝে জিবরীলকে দূত হিসাবে মনোনীত করেছেন। ফলে জিবরীল তা-ই যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেছেন যা তাঁর রব তাঁর কাছে অহী করেছেন। সেগুলো নিয়ে তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি প্রতি বছর একবার করে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কুরআনের সবক দিতেন, তবে যে বছর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকাল করেছেন সে বছর দু’বার তার কাছে কুরআন পেশ করেছেন ও শুনিয়েছেন। আর এভাবেই তিনি পরিপূর্ণভাবে তাঁর কাছে কুরআন পৌঁছে দিয়েছেন। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ  اِنَّہٗ   لَتَنۡزِیۡلُ  رَبِّ  الۡعٰلَمِیۡنَ  - نَزَلَ  بِہِ  الرُّوۡحُ  الۡاَمِیۡنُ  - عَلٰی قَلۡبِکَ لِتَکُوۡنَ مِنَ الۡمُنۡذِرِیۡنَ.

‘আর নিশ্চয় এটা (আল-কুরআন) সৃষ্টিকুলের রব হতে নাযিলকৃত। বিশ্বস্ত রূহ (জিবরীল) তা নিয়ে নাযিল হয়েছেন। আপনার হৃদয়ে, যাতে আপনি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন’ (সূরা আশ- শু‘আরা : ১৯২-১৯৪)।

দ্বীন সংরক্ষণে জিবরীল ছাড়াও অন্যান্য ফেরেশতারও অবদান রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আকাশের প্রহরায় নিয়োজিত রয়েছেন; ওঁতপেতে থাকা শয়তানদের থেকে অহীকে রক্ষা করার জন্য। তাদের মধ্যে অনেকেই মহা গুরুত্বপূর্ণ আয়াতসমূহের সাথে অবতরণ করেছেন, যখন সেগুলো নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর নাযিল করা হয়! আবার তাদের মধ্যে অনেকেই মুসলিমদের সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন; দ্বীন রক্ষা ও মুসলিমদের সহযোগিতা করার স্বার্থে।

আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবেই নবীগণ দ্বীনকে সংরক্ষণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে অসহ্য যন্ত্রণাও সহ্য করেছেন, যা অন্যদের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। তাঁদের কাউকে নির্যাতন করা হয়েছে, কাউকে দেশান্তর করা হয়েছে, কাউকে হত্যা করা হয়েছে, আবার তাঁদের মধ্যে এমনও রয়েছেন যাদের দা‘ওয়াত একজনও কবুল করেনি! আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاصۡبِرۡ کَمَا صَبَرَ اُولُوا الۡعَزۡمِ مِنَ الرُّسُلِ ‘অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, যেমন দৃঢ় প্রত্যয়ী রাসূলগণ ধৈর্য ধরেছিলেন’ (সূরা আল-আহক্বাফ : ৩৫)।

রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে বেশী আগ্রহী ও সচেতন ছিলেন। তিনি জিবরীলের সাথে কুরআনের প্রতিযোগিতা করতেন, যখন তিনি তা তাঁর উপর নাযিল করতেন; ভুলে যাওয়ার আশংকায়। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জন্য মুখস্ত করা সহজ করে দিয়েছেন। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  

لَا تُحَرِّکۡ بِہٖ لِسَانَکَ لِتَعۡجَلَ بِہٖ - اِنَّ عَلَیۡنَا جَمۡعَہٗ  وَ  قُرۡاٰنَہٗ  - فَاِذَا قَرَاۡنٰہُ  فَاتَّبِعۡ  قُرۡاٰنَہٗ -  ثُمَّ  اِنَّ عَلَیۡنَا بَیَانَہٗ

‘তাড়াতাড়ি অহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি তা নিয়ে আপনার জিহ্বাকে দ্রুত সঞ্চালন করবেন না। নিশ্চয় এর সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমাদেরই। কাজেই যখন আমরা তা পাঠ করি, আপনি সে পাঠের অনুসরন করুন। অতঃপর তার বর্ণনার দায়িত্ব নিশ্চিতভাবে আমাদেরই (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১৬-১৯)।

ইসলামকে হেফাযত করতে এবং তা উম্মতের কাছে পৌঁছাতে গিয়ে নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নানাবিধ নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁকে মিথ্যুক ও গণক বলে অপবাদ দেয়া হয়েছে, তাঁর বিবেক-বুদ্ধি ও সম্মানেও আঘাত হানা হয়েছে, তাঁকে দেশান্তরও করা হয়েছে, তাঁর উপর যাদুমন্ত্র করা হয়েছে, শত্রুরা তাঁর উপর বর্বর আচরণ করেছে, স্বজাতি তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে; তারাই তাঁর মাথা রক্তাক্ত করেছে, তাঁর দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছে, এমনকি তাঁর সামনেই তাঁর সাথীদের হত্যা করেছে! রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ছাহাবীদেরকে কুরআন মুখস্ত করতে ও তার প্রতি যতœশীল হতে নির্দেশ দিতেন। সেই সাথে কুরআন এবং হাদীছসমূহ লিপিবদ্ধ করতেও অনুমতি দেন। তাদেরকে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবলীগ করতে আদেশ করে বলেন, بَلِّغُوْا عَنِّيْ وَلَوْ آيَةً ‘আমার পক্ষ হতে যদি একটি আয়াতও জানা থাকে, তাহলে তা পৌঁছে দাও’।[১]

ফলে ছাহাবায়ে কেরামগণ দ্বীন হেফাযতের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছেন, যার ধারে কাছেও কেউ পৌঁছতে পারবে না। তাঁরা কুরআনে কারীমকে সংরক্ষণ করার জন্য পশুর চামড়া, হাড্ডি ও পাথরে তা লিখে রেখেছেন, মুখস্ত করে তা বক্ষে ধারণ করেছেন, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা ঠিকঠাকভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁরা নবীর সুন্নাতকে বর্ণনা ও আমল করার মাধমে পৌঁছে দিয়েছেন। সাঈদ ইবনু যুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, كنت اكتب عند بن عباس في صحيفة واكتب في نعلي ‘আমি ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর কাছে বসে আমার খাতায় লিখতে লিখতে তা শেষ হয়ে গেলে আমার জুতার উপরের অংশে লেখতাম।[২] তারপর আমার হাতের তালুতেও লেখতাম’। এ কাজে তাঁরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে সতর্কতাবলম্বন করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

فكل خير فيه المسلمون إلى يوم القيامة من الإيمان والإسلام والقرآن والعلم والمعارف والعبادات ودخول الجنة والنجاة من النار فإنما هو ببركة ما فعله الصحابة الذين بلغوا الدين

‘ঈমান, ইসলাম, কুরআন, জ্ঞান, স্বাক্ষরতা, ইবাদতসমূহ, জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম হতে মুক্তি ইত্যাদি যত কল্যাণ মুসলিমরা ক্বিয়ামত অবধি লাভ করবে, তা মূলত ছাহাবায়ে কেরামের কর্মের বরকতেই লাভ করবে, যারা দ্বীনকে প্রচার করে গেছেন’।[৩]

তাদের পর আল্লাহ তা‘আলা ওলামায়ে কেরামকে দ্বীনের হেফাযতে নিয়োজিত করলেন; মানুষকে শিক্ষা প্রদান ও দ্বীন হেফাযতের বিষয়ে একনিষ্ঠতা সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। দেশ, জাতি, জাতীয়তা, বর্ণ ইত্যাদি নির্বিশেষে ছোট বড়, ধনী-গরীব, সম্ভ্রান্ত ও সাধারণ, সুস্থ ও অসুস্থ, অন্ধ, প্রতিবন্ধী সকলেই এদের অন্তর্ভুক্ত। তারা বিভিন্ন দেশে দ্বীনের দা‘ওয়াত নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছেন। তারা বিভিন্ন কিতাব রচনা করেছেন, মুখস্ত করেছেন, বিভিন্ন দেশে ইলম অর্জনের জন্য সফর করেছেন। দারিদ্র্যতা, ক্ষুধা, ভয় ও কষ্ট সহ্য করেছেন। তারা তাদের জান, মাল ও জীবনকে বিসর্জন দিয়েছেন; যা তাদেরকে দ্বীন হেফাযতের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা বাস্তবায়নের উজ্জল দৃষ্টান্ত বানিয়েছে।

আলেমগণ দ্বীনের বিভিন্ন শাখায় গভীর জ্ঞান অর্জন করলেন, তাদের অধিকাংশই দ্বীনের বিভিন্ন শাখাজ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি উপকারী পার্থিব জ্ঞানের সমন্বয়ও করেছেন। ফলে কুরআন ও তাফসীরবিদগণ কুরআনের শব্দ ও বর্ণমালার নৈপুণ্যতাকে আয়ত্ব করেছেন, প্রত্যেক শব্দের একক ও যুক্ত অর্থ বর্ণনা করেছেন, পঠন পদ্ধতি ও সাদৃশ্যপূর্ণ আয়াতসমূহকে জব্দ করেছেন। তেলাওয়াতের বিভিন্ন ধরন, এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ উচ্চারণ ভঙ্গিমা এবং শুদ্ধভাবে তেলাওয়াতের জন্য ইলমে তাজবীদও আয়ত্ব করেছেন। তারা কুরআনের জটিল শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন, তা থেকে বিভিন্ন হুকুম আহকাম বের করেছেন, প্রত্যেকটি আয়াত নাযিলের স্থান কাল ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। তেলাওয়াতের সময় কোন শব্দে ওয়াক্ফ হবে, কোথা থেকে শুরু করবে ইত্যাদি সবই তারা উল্লেখ করেছেন। কুরআনের ফযীলত, তেলাওয়াতের আদব ও নিয়ম, শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষা প্রদান পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়েও ব্যাখ্যা করেছেন। কুরআনের শব্দ ও অর্থ উভয়ই সংরক্ষণ করণার্থে ছোট বড় সব কিছুই তারা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। আলী ইবনু উবাইদুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, مكث محمد بن جرير في تفسيره أربعين سنة ‘মুহাম্মাদ ইবনু জারীর (রাহিমাহুল্লাহ) তার তাফসীর গ্রন্থটি রচনা করতে চল্লিশ বছর সময় ব্যয় করেছেন’।[৪]

হাদীছ বিশারদ ও বিশেষজ্ঞ আলেমগণ হাদীছ বর্ণনা ও তার সনদগত বিদ্যার মূলনীতি প্রণয়নে আত্মনিয়োগ করলেন। এজন্য তারা বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন, স্বজনবিহীন একাকীত্বের তিক্ততা ও বৈরি পরিবেশের যন্ত্রণাকে সহ্য করেছেন। ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) সারা দুনিয়া দু’বার ভ্রমণ করে হাদীছ সংগ্রহ করে মুসনাদ গ্রন্থটি সংকলন করেন! এভাবেই তারা রাসূলের বাণী, কর্ম এবং সম্মতিসূচক সুন্নাতকে মুখস্ত ও সংরক্ষণ করেছেন; সেগুলোর শব্দ, বর্ণনাসমূহ, বর্ণনাকারীদের ভিন্নমত ও ঐকমত্যসমূহ, একজনের চেয়ে অন্যজনের বর্ধিত অংশ ইত্যাদি এ সবই তারা পূর্ণ আয়ত্ব করেছেন। ফলে রাসূলের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত কোন বাণী, ঘটনা, খবর, কিচ্ছা-কাহিনী, কোন অবস্থা বা ধরন কিছুই বাদ যায়নি। ইমাম আবূ হাতেম রাযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

أول ما خرجت في طلب الحديث أقمت سبع سنين أحصيت ما مشيت على قدمي زيادة على ألف فرسخ، لم أزل أحصي فلما زاد على ألف فرسخ تركته

‘আমি হাদীছ শিক্ষা ও সংগ্রহের জন্য সর্বপ্রথম বের হয়ে সাত বছর সময় কাটাই। গণনা করে দেখেছি আমি এই সময়ে আট হাজার কিলোমিটারের চেয়ে বেশি রাস্তা পায়ে হেঁটেছি। তারপরে গণনা করা বাদ দিয়েছি!’।[৫] ফলে তাদের থেকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত ও হেদায়াতের কোন কিছুই ছুটে যায়নি’।

তারা হাদীছগুলোকে একত্রিত করেছেন; ছহীহ, মুসনাদ, সুনান, মু‘জাম, মুছান্নাফ ইত্যাদি আঙ্গীকে তারা হাদীছের পা-ুলিপি তৈরি করেছেন, হাজার হাজার রেওয়ায়েত ও বর্ণনা যাচাই বাছাই করে তারা এগুলো সন্নিবেশিত করেছেন। এদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হলেন ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি বলেন, صنفت الصَّحِيح فِي سِتّ عشرَة سنة وخرجته من سِتّ مائَة ألف حَدِيث وَجَعَلته حجَّة فِيمَا بيني وَبَين الله ‘আমি হাদীছের এই বিশুদ্ধ গ্রন্থটি (ছহীহ বুখারী) ১৬ বছরে রচনা করেছি। ৬ লক্ষ হাদীছ যাচাই করে সনদ প্রদান করেছি এবং এটাকে আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির মাঝে প্রমাণ স্বরূপ করেছি’।[৬] ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

اتفق العلماء رحمهم الله على أن أصح الكتب بعد القرآن العزيز الصحيحان  البخاري ومسلم وتلقتهما الأمة بالقبول

‘আলেমগণ একমত যে, কুরআনের পরে সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ হচ্ছে ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিম। উম্মত এদু’টি কিতাবকে নির্ধিদ্বায় গ্রহণ করেছে’।[৭]  

বিশেষজ্ঞ ‘আলেমগণ হাদীছের ভাবার্থ বর্ণনা করেছেন, বর্ণনাকারী রাবীদের অবস্থা বিশ্লেষণ করে তাদের স্তর বর্ণনা করেছেন। রাবীদের নামের জটিলতা, সাদৃশ্যতা, অস্পষ্টতা ও বিকৃতি সংশ্লিষ্ট সব কিছুই তারা পরিষ্কার করেছেন। তারা ছিলেন সুন্নাতের অতন্দ্রপ্রহরী; তা থেকে তারা মিথ্যা ও বিকৃতিকে দূরীভূত করেছেন। ফলে তারা রাসূলের নামে একটি হরফও মিথ্যা প্রচারণা হতে দেননি। সকল উম্মতের মধ্যে এই মুসলিম উম্মত ‘হাদীছের এই বর্ণনাসূত্র বা সনদ ও ছহীহ-যঈফ নির্ণয়ের’ একক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। পূর্ববর্তী কোন উম্মতের কাছে বর্ণনাসূত্র বা সনদ ছিল না, ছিল না কোনটা তাদের নবীর উক্তি আর কোনটা তাতে সংযোজন করা হয়েছে- তার পার্থক্য নিরূপণকারী মাপকাঠি! সুফিয়ান সাওরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ফেরেশতারা আসমানের পাহাদার, আর হাদীছ বিশারদ মুহাদ্দিছগণ যমীনের পাহারাদার’।

আক্বীদার আলেমগণ আক্বীদাগত মাসআলাগুলো বর্ণনা করেছেন, সেগুলোকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং প্রত্যেক মাসআলার দলীলসমূহ জমা করে তা মানুষের জন্য উন্মুক্ত করেছেন। আল্লাহর রুবূবিয়্যাত এবং তাঁর সুন্দর নাম ও গুণাবলী তাদের সামনে পেশ করে সুস্পষ্ট করেছেন যে, এগুলোর জন্য তাঁর উলূহিয়্যাতে বিশ্বাস করা আবশ্যক, অর্থাৎ একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা আবশ্যক। বিভিন্ন যুক্তি ও উক্তির মাধ্যমে যারা সংশয় তৈরি করে ও সাদৃশ্য স্থাপন করে, আক্বীদার বিজ্ঞ আলেমগণ সেগুলো অপনোদন ও নিরসন করেছেন।

ফক্বীহগণ তাদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তীক্ষ্ম মেধা ও বুঝ দ্বারা কুরআন ও হাদীছ থেকে মাসয়ালা-মাসায়েল গ্রহণের পদ্ধতি ও পথ সুগম করে গেছেন। ফিক্বহী বিষয়ের জন্য উসূল ও ব্যাপক মর্মার্থ জ্ঞাপক মূলনীতি প্রণয়ন করেছেন। সেগুলোই হল কুরআন-সুন্নাহ হতে হুকুম আহকাম গ্রহণ করার সঠিক মাধ্যম এবং সঠিক বুঝ ও ব্যাখ্যার মানদণ্ড। যাদের উপর শরী‘আতের দায়িত্ব বর্তায় তাদের করণীয় বিধি-বিধানও ফক্বীহগণ উল্লেখ করে সেগুলোর ধারা-উপধারাও বর্ণনা করেছেন; যেন সহজেই তা জানা যায়। দলীলের উপর ক্বিয়াস করে সমসাময়িক বিষয়েও তারা সমাধান বের করেছেন এবং ইবাদত ও লেনদেন সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরেছেন।

ভাষাজ্ঞান হল জ্ঞানার্জনের একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমেই বুঝ ও অনুধাবন করা যায় এবং অন্যের কাছে তা পৌঁছানো সম্ভব হয়। ফলে আলেমগণ অহীকে প্রথম উৎস হিসাবে গ্রহণ করেছেন, তারপর আরবদের ব্যবহৃত শব্দগুচ্ছ খুঁজে খুঁজে তা জমা করেছেন, অতঃপর তা বিন্যস্ত করে সেগুলোর অর্থ-ভাবার্থ বর্ণনা করেছেন, বিশুদ্ধ ও ভুল নির্ণয় করেছেন। এজন্য তারা কিছু মূলনীতি/কায়দা প্রণয়ন করেছেন; যা দ্বারা আরবী ইবারত জব্দ করা যায় ও ভুল সংশোধন করা যায় এবং যেন ভাষার সুস্পষ্টতা ও অলংকার রক্ষা পায়।

ইতিহাস হচ্ছে অতীত সম্ভার এবং সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর রীতির নির্দেশনা প্রদানকারী। ইতিহাসের সবচেয়ে সম্মানজনক বিষয়বস্তু হচ্ছে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনী। ইতিহাসবীদ আলেমগণ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনী, তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী ও আচার-আচরণ এবং তাঁর শারীরীক গঠন ও অবস্থার কথা সংকলন করেছেন। তাঁর নাম ও বংশধারা, বয়স ও জন্ম-মৃত্যু, নবী হিসাবে আবির্ভাব ও মদিনায় হিজরত, তাঁর স্ত্রীসমূহ ও সন্তানাদি, তাঁর সাথী ও সমর্থকবৃন্দ, তাঁর শারীরীক ও চারিত্রিক বর্ণনা, তাঁর অভিযান ও যুদ্ধসমূহ, তাঁর ব্যবহৃত পাত্র, তলোয়ার, ধনুক, বাহনের প্রাণী, কাপড়ের রং, জুতার বৈশিষ্ট্য, সুগন্ধি যা তিনি ব্যবহার করতেন, ঘুমানোর বিবরণ, কয় নিঃশ্বাসে তিনি পানি পান করতেন, কীভাবে খেতেন এবং কী খেতে পসন্দ করতেন, তার হাঁটা চলা, হাসি ও কান্নার ধরন, দাড়ি ও মাথার কতটি চুল সাদা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি খুটিনাটি সব কিছুই ইতিহাসের পাতায় আলেমগণ সংকলন করেছেন!

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আলেমগণ এভাবেই দ্বীনকে সংরক্ষণ করে চলেছেন এবং তা পরবর্তী জেনারেশনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। তারা জ্ঞানার্জন ও ইবাদত করার মাঝে সমন্বয় করেছেন। শাইখুল ইসলাম (রাহিমাহুল্লাহ) ফজর পড়ে অর্ধ দিন পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে মগ্ন থাকতেন। তারা কিতাব রচনা করেছেন ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য তারা প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন। ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) স্বহস্তে দু’হাজারেরও বেশি খণ্ডের কিতাবাদি লিখেছেন! ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) তার ‘জামেউল মাসানীদ’ নামক গ্রন্থে বলেন, ‘আমি রাতভর লিখতাম, প্রদীপ নিভু নিভু হয়ে গেলেও লেখা চালিয়ে যেতাম। অবশেষে আমার দৃষ্টিশক্তিও নিভে গেল!’  তারা অনেক কষ্ট ও প্রতিবন্ধকতাও সহ্য করেছেন। ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) জ্ঞান অন্বেষণে, হাদীছের ইলম অর্জনের জন্য এমন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন যে, অবশেষে তাকে নিজের বাড়ীর ছাদ ভেঙ্গে তার কাঠগুলো বিক্রি করতে হয়েছে! ইমাম শা’বী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি এত জ্ঞান আয়ত্ব করলেন কীভাবে? তিনি বললেন, ‘দেশ বিদেশ সফর করে এবং পর্বতসম ধৈর্য ধারণ করে’!

যে ব্যক্তি তাদের এসব জীবনী পড়বে, তার কাছে কাল্পনিক বা অতিরঞ্জন মনে হতে পারে; কিন্তু এটাই বড় বড় আলেমদের জীবনের বাস্তব চিত্র। তাদের হাতেই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই বাণী বাস্তব রূপ লাভ করেছে,

لَيَبْلُغَنَّ هَذَا الأَمْرُ مَا بَلَغَ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَلَا يَتْرُكُ اللهُ بَيْتَ مَدَرٍ وَلَا وَبَرٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللهُ هَذَا الدِّيْنَ

‘নিশ্চয় এই দ্বীন ততদূর পৌঁছবে, যতদূর দিনের আলো ও রাতের অন্ধকার পৌঁছে! আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন শহর বা গ্রামাঞ্চল বাকী রাখবেন না যেখানে তিনি এই দ্বীন পৌঁছাবেন না’।[৮]

অতঃপর হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তা‘আলা বহু শতাব্দী যাবৎ ইসলামকে হেফাযত করার মাধ্যমে আমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন। ফলে এই ইসলাম আমাদের কাছে একেবারে সতেজ অবস্থায় পৌঁছেছে, যেন তা এখনই নাযিল হয়েছে এবং তা ক্বিয়ামত অবধি অক্ষত থাকবে; তার একটি প্রতিকও বিলুপ্ত করা যাবে না, কুরআনের একটি হরফও গায়েব হবে না! কালের বিবর্তনে যুদ্ধ বিগ্রহ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতা, ঝগড়া বিবাদ, দলাদলি, ধর্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, শরী‘আতের হুকুম-আহকামের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও বিদ্রুপ ইত্যাদি সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের কিছুই নিঃশেষ হবে না!

একজন মুমিন বান্দা তাদের মত হতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, যারা ইসলামকে হেফাযতের জন্য অবদান রেখেছেন। তিনি সঠিক জ্ঞান অর্জন করে অন্যের কাছে পৌঁছাতে, সে দিকে অন্যদেরকে উৎসাহিত করতে এবং নিজেদের সন্তানদেরকে দ্বীনের প্রতি মহব্বত, তা সংরক্ষণ করা ও নিজেরা শিখে তা অন্যদের শিক্ষাদান করার নীতির উপর লালন-পালন করতে পূর্ণ প্রচেষ্টা করেন। সেই সাথে উম্মতের সালাফে ছালেহীন আলেমেরও অনুসরণ করেন। মহান আল্লাহ বলেন,

مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ رِجَالٌ صَدَقُوۡا مَا عَاہَدُوا اللّٰہَ عَلَیۡہِ ۚ فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ قَضٰی نَحۡبَہٗ  وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّنۡتَظِرُ ۫ۖ وَ مَا بَدَّلُوۡا تَبۡدِیۡلًا

‘মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ (অঙ্গীকার পূর্ণ করে) মারা গেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি’ (সূরা আল-আহযাব : ২৩)।

ছানী খুত্ববাহ

দ্বিতীয় খুত্ববাহতে সম্মানিত খত্বীব মহান আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া এবং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরূদ, ছালাত ও সালামের পরে বলেছেন,

হে মুসলিমবৃন্দ! বান্দাদের উচিত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা; কেননা তিনি তাদের জন্য ইসলামকে হেফাযত করেছেন এবং এর অনুসরণের সুযোগ দিয়েছেন। এতেই তাদের জন্য উভয়কালের কল্যাণ রয়েছে। আলেমদেরকে সম্মান করা মূলত আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনকে সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত। কেননা তারাই তো আমাদের কাছে নবীর মীরাছ দ্বীনের ইলমকে নিয়ে এসেছেন। আল্লাহই তাঁদেরকে উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন। এ মর্মে তিনি বলেন,

یَرۡفَعِ اللّٰہُ  الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ ۙ وَ الَّذِیۡنَ  اُوۡتُوا  الۡعِلۡمَ دَرَجٰتٍ

‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন’ (সূরা আল-মুজাদালা : ১১)।

ইমাম আবূ হানীফা ও শাফেঈ (রাহিমাহুমাল্লাহ) বলেন,إن لم يكن العلماء هم الأولياء فليس لله ولي ‘উলামায়ে কেরাম যদি আল্লাহর অলী না হন, তাহলে আল্লাহর কোন অলীই নেই!’[৯] আলেমদের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা তাই, যা ইমাম ত্বাহাভী (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,

وعلماء السلف من السابقين ومن بعدهم من التابعين أهل الخير والأثر وأهل الفقه والنظر لا يذكرون إلا بالجميل ومن ذكرهم بسوء فهو على غير السبيل

‘পূর্ববর্তী আলেমগণ তথা ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈগণ এবং তাদের পরে যারা হাদীছ বিশারদ ও ফক্বীহ ছিলেন- তাদেরকে সম্মানের সাথে উল্লেখ করতে হবে। যে ব্যক্তি তাদের সমালোচনা করে তাদেরকে মন্দভাবে উপস্থাপন করে, সে মূলত পথভ্রষ্ট’।[১০]

অতঃপর জেনে রাখুন যে, নিশ্চয় আল্লাহ আপনাদেরকে তাঁর নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পরিশেষে খত্বীব আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ পাঠ করেন। ছাহাবীদের মর্যাদা বর্ণনা করেন এবং ইসলাম ও সকল মুসলিমের জন্য দু‘আ ও ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে খুত্ববাহ সমাপ্ত করেন।

* পি-এইচ.ডি গবেষক, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব এবং বাংলা আলোচক ও জুমু‘আর খুৎবার লাইভ অনুবাদক, মসজিদে নববী।

তথ্যসূত্র : 
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১; তিরমিযী, হা/২৬৬৯; মিশকাত, হা/১৯৮।
[২]. দারেমী, হা/৫০০; আহমাদ ইবনু হাম্বল, আল-‘ইলাল ওয়া মা‘রেফাতুল রিজাল (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৮ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ২৩১, হা/২৮৯।
[৩]. ইবনু তাইমিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাতিন নবুবিয়্যাহ (মুওয়াস্সাসাতু কুরতুবাহ, তা.বি.), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৫৩।
[৪]. আব্দুর রহমান ইবনু আব্দুস সালাম আছ-ছাফওয়ারী, নুযহাতুল মাজালি ওয়া মুনতাখাবুল নাফাইস, পৃ. ৯০ ; আরশীফু মুলতাক্ব আহলুল হাদীছ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩০৮।
[৫]. মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, দুরূসু লিশ শায়খ মুহাম্মাদ আল-মুনাজ্জিদ, ‘রিহলাতু ইমাম আবূ হাতিম আর-রাযী’ অনুচ্ছেদ, পৃ. ৯ ; আল-জামি‘আতুল ইসলামিয়্যাহ বিল মাদীনতিল মুনওয়্যারা, মাজাল্লাতুল জামি‘আতিল ইসলামিয়্যাহ বিল মাদীনাতিল মুনওয়্যারা, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৪০।
[৬]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাগলীকুত তা‘লীক্ব ‘আলা ছহীহিল বুখারী (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৫ হি.), ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪২১।
[৭]. আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-গনীমান, শারহু কিতাবিত তাওহীদ মিন ছহীহিল বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৫ ; মাহমূদ আব্দুর রাযযাক আর-রিযওয়ানী, আসমাউল্লাহিল হুসনা আছ-ছাবিতাতু ফীল কিতাবি ওয়াস সুন্নাতি, ৩১তম খণ্ড, পৃ. ২৯।
[৮]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৯৯৮, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩।
[৯]. ইমাম নববী, মুখতাছারুত তিবইয়ান ফী আদাবী হামলাতিল কুরআন, পৃ. ৫।
[১০]. আবূ জা‘ফর আত-ত্বাহাবী, আল-‘আক্বীদাতুত ত্বাহাবী, পৃ. ৫৭।




প্রসঙ্গসমূহ »: শিক্ষা ও সংস্কৃতি
ফিতনার সময় রাসূূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মানহাজ - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
নেক কাজে অটলতা - অনুবাদ : শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
প্রতারণা করা ও ধোঁকা দেয়া হারাম - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
মানব জীবনে সফলতার উপায় - অনুবাদ : শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
হৃদয়ের আমলসমূহ ও তার সুস্থতা - অনুবাদ : শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
আরাফাহর খুৎবাহ - অনুবাদ : ড. মুহাম্মাদ মানজুরে এলাহী
দ্বীন রক্ষায় আলেমদের অবদান - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
কোমল ও নম্র আচরণ - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
দ্বীন মানেই হচ্ছে শুভকামনা - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
আল্লাহর অস্তিত্বে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
শয়তানের চক্রান্ত এবং তার প্রতিকার - অনুবাদ : শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
সর্বত্রই আল্লাহকে ভয় করুন - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী

ফেসবুক পেজ