শাসক নির্বাচন ও আনুগত্যের গুরুত্ব
- খত্বীব : শায়খ ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-বুয়াইজান
-অনুবাদ : হারুনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী*
[গত ২৪ মুহাররম ১৪৪৬ হি. মোতাবেক ১৯ আগষ্ট, ২০২৪ তারিখের ‘মসজিদে নববী, মদীনাতুল মুনাওয়ারা’-এর জুমু‘আর খুত্ববার বঙ্গানুবাদ]*
আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর ছালাত ও সালামের পরে সম্মানিত খত্বীব বলেছেন, আল্লাহর বান্দাগণ! আমি আপনাদেরকে আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বনের অছীয়ত করছি; কেননা তাক্বওয়াই হল ইহকাল ও পরকালের নাজাতের মাধ্যম। মহান আল্লাহ বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ حَقَّ تُقٰتِہٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন কর এবং তোমরা মুসলিম (পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারী) না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না’ (সূরা আলে ইমরান: ১০২)। তিনি আরো বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ قُوۡلُوۡا قَوۡلًا سَدِیۡدًا . یُّصۡلِحۡ لَکُمۡ اَعۡمَالَکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِیۡمًا.
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন কর এবং সঠিক কথা বল; তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে’ (সূরা আল-আহযাব: ৭০-৭১)।
হে মানবসকল! ইমামাত তথা রাষ্ট্রিয় সর্বোচ্চ শাসনভার হল এমন একটি ভিত্তি যার উপর ভর করে দ্বীনের মূলনীতিগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়, জাতির স্বার্থ নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এর মাধ্যমে শরী‘আতের বিধানগুলো সুবিন্যস্ত হয়। মহান আল্লাহ প্রত্যেক জাতির জন্য একজন ইমাম নিযুক্তের অনুমোদন দিয়েছেন যাকে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন, তার কাছে শাসনভার অর্পণ করেছেন, তার উপর ন্যায়বিচার করা আবশ্যক করেছেন এবং অধীনস্তদের উপর তার কথা শ্রবণ ও আনুগত্য করার অধিকার দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ ۚ فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡہُ اِلَی اللّٰہِ وَ الرَّسُوۡلِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ ذٰلِکَ خَیۡرٌ وَّ اَحۡسَنُ تَاۡوِیۡلًا.
‘হে ঈমাদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের, অতঃপর কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান এনে থাক। এ পন্থাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর’ (সূরা আন-নিসা: ৫৯)।
ইরবায বিন সারিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, (একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে আমাদের উদ্দেশ্যে মর্মস্পর্শী উপদেশ দিলেন, তাতে চোখগুলো অশ্রুসিক্ত হল এবং অন্তরগুলো বিগলিত হল। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এ যেন বিদায়ী ভাষণ! অতএব আপনি আমাদেরকে উপদেশ দেন। তিনি বললেন,
أُوْصِيْكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ عَبْدٌ حَبَشِىٌّ فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ، وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং শ্রবণ ও আনুগত্যের উপদেশ দিচ্ছি। কারণ তোমাদের মধ্যে আমার পরে যারা জীবিত থাকবে তারা অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাত অনুসরণ করবে, এমনকি তা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। আর সাবধান থাকবে (ধর্মে) নব আবিষ্কৃত প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে! কারণ প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয় বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা’।[১]
আল্লাহর বান্দাগণ! মানুষের মাঝে আল্লাহর নীতির দাবি হল, তাদের অবস্থা ও জীবন সংশোধন হবে না এমন একজন শাসকের উপস্থিতি ছাড়া যিনি তাদের নেতৃত্ব দিবেন, তাদের বিষয়গুলো সংগঠিত করবেন এবং তাদের অধিকার সংরক্ষণ করবেন। ফলে তার মাধ্যমে সম্ভ্রম ও রক্ত সংরক্ষিত হবে, হদ্দ ও শাস্তি কায়েম হবে, দ্বীন নিরাপদ থাকবে, তাদের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অন্যায়-জুলুম দূরীভূত হবে। তার উপস্থিতিতে আতঙ্কগ্রস্ত ব্যক্তি নিরাপদ বোধ করবে, দুর্বল শক্তিশালী হবে, অত্যাচারী-জালেম নিবৃত্ত হবে, বিশৃঙ্খলা রোধ হবে, সীমান্ত সংরক্ষিত হবে এবং মতৈক্য তৈরি হবে।
হে মানবসকল! নিশ্চয় আল্লাহ মুসলিমদের শাসকদেরকে জনগণের জন্য আমানতদারিতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে এবং ন্যায়বিচারের সাথে শাসন করতে আদেশ করেছেন। আর তিনি প্রজাদেরকে আদেশ দিয়েছেন, তারা যেন শাসকদের কথা শুনে এবং তাদেরকে যা আদেশ করে তা পালন করে বা যা থেকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকে- যতক্ষণ না তা স্রষ্টার অবাধ্যতামূলক হয়। কেননা তাদের আনুগত্যে রয়েছে দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণ এবং তাদেরকে অমান্য করার মধ্যে রয়েছে দ্বীন ও দুনিয়ার ক্ষতি। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন,
اَلسَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ ، فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ ، مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ ، فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ.
‘যতক্ষণ আল্লাহর নাফরমানীর নির্দেশ দেয়া না হয়, ততক্ষণ পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় সকল বিষয়ে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য নেতার কথা শোনা ও আনুগত্য করা অবশ্য কর্তব্য’।[২]
জেনে রাখুন, প্রজাদের যিম্মায় শাসকের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি ধার্য রয়েছে, মহান আল্লাহ তা ভঙ্গ ও প্রত্যাখান করা এবং এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও গাদ্দারী করাকে নিষিদ্ধ করেছেন। কাজেই আপনারা এ প্রতিশ্রুতি পূরণ করুন, নিশ্চয় প্রতিশ্রুত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِىَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا حُجَّةَ لَهُ وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِىْ عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ‘যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে ক্বিয়ামতের দিন দলীলবিহীন অবস্থায় আল্লাহর সাথে মিলিত হবে। আর যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল যে তার ঘাড়ে আনুগত্যের কোন শিকল নেই, তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু’।[৩] মহান আল্লাহ বলেন,
وَ اَوۡفُوۡا بِعَہۡدِ اللّٰہِ اِذَا عٰہَدۡتُّمۡ وَ لَا تَنۡقُضُوا الۡاَیۡمَانَ بَعۡدَ تَوۡکِیۡدِہَا وَ قَدۡ جَعَلۡتُمُ اللّٰہَ عَلَیۡکُمۡ کَفِیۡلًا ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُوۡنَ.
‘আর তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ কর যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর এবং তোমরা আল্লাহকে তোমাদের জামিন করে শপথ দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ জানেন, যা তোমরা কর’ (সূরা আন-নাহল: ৯১)।
দ্বিতীয় খুত্ববা
আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর ছালাত ও সালামের পরে সম্মানিত খত্বীব বলেছেন, আল্লাহর বান্দাগণ! নিশ্চয় আল্লাহ আপনাদের যাবতীয় বিষয়কে এক ধর্মে, এক রাসূলে, এক কিতাবে ও এক কিবলার অধীন একত্রিত করেছেন এবং আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, আর বিভেদ ও দলাদলি থেকে নিষেধ করেছেন। এ মর্মে তিনি বলেন, وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰہِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না’ (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)।
শাসকের কথা শোনা ও আনুগত্য ছাড়া কখনো ঐক্য ও সংহতি অর্জিত হবে না। শাসকের কথা শোনা ও আনুগত্য ছাড়া কখনই উম্মতের মধ্যে দ্বীনের বিষয় প্রতিষ্ঠিত হবে না। শাসকের কথা শোনা ও আনুগত্য ছাড়া কখনই নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। শাসকের কথা শোনা ও আনুগত্য ছাড়া সম্মান-মর্যাদা রক্ষা এবং সীমান্ত প্রতিরোধ অর্জন হবে না। শাসকের কথা শোনা ও আনুগত্য ছাড়া অত্যাচারীকে নিবারণ, মজলুমকে সহযোগিতা এবং শক্তিশালী থেকে দুর্বলের প্রতি ইনসাফ কায়েম সম্ভব হবে না। শাসকের কথা শোনা ও আনুগত্য ছাড়া উম্মত কখনই বিপ্লব ঘটাতে পারবে না। সুতরাং আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন, নিজেদের ঐক্য রক্ষা করুন, নেতৃবর্গের কথা শুনুন ও আনুগত্য করুন, আর নিজেরা বিবাদে জড়িত হবেন না, নচেৎ সাহস হারাবেন ও শক্তি চলে যাবে। নিজেদের দেশ ও নিরাপত্তা রক্ষায় সচেষ্ট হোন এবং দ্বীনকে আঁকড়ে ধরুন।
হে মানবসকল! নিশ্চয় অতীত ও বর্তমানে জাতি ও সভ্যতা ধ্বংসের সবচেয়ে বড় কারণ হল দলাদলি ও মতবিরোধ; আর এতে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। নিশ্চয় দলাদলি ও মতবিরোধ জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করে ও বন্ধনকে ছিন্ন করে। নিশ্চয় দলাদলি ও মতবিরোধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পথ, ধ্বংসযজ্ঞের অস্ত্র এবং ফেতনা ও যুদ্ধের জ্বালানি।
আর আল্লাহ তা‘আলা দলাদলি ও মতবিরোধ থেকে নিষেধ করেছেন এবং এটাকে ব্যর্থতা ও দূর্বলতার কারণ বানিয়েছেন; এমনকি এটাকে আযাবের কারণ হিসাবেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, وَ اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ وَ لَا تَنَازَعُوۡا فَتَفۡشَلُوۡا وَ تَذۡہَبَ رِیۡحُکُمۡ ‘আর তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে’ (সূরা সূরা আল-আনফাল: ৪৬)। তিনি আরো বলেন, وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَہُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ‘আর তোমরা তাদের মত হয়ে না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি’ (সূরা আলে-ইমরান: ১০৫)।
নিশ্চয় সবচেয়ে বড় যে যুদ্ধ ও ফিতনার মাধ্যমে শত্রুরা ষড়যন্ত্র করে তাহল, জাতির মাঝে ফিতনা ও মতবিরোধের বীজ বপণ করা। জেনে রাখুন, এক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল, বিশ্বাসঘাতকতা, খিয়ানত ও আমানত বিনষ্ট করা। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عِمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبِيَّةٍ أَوْ يَدْعُوْ لِعَصَبِيَّةٍ أَوْ يَنْصُرُ عَصَبِيَّةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ وَمَنْ خَرَجَ عَلَى أُمَّتِيْ بِسَيْفِهِ يَضْرِبُ بَرَّهَا وَفَاجِرَهَا وَلَا يَتَحَاشَى مِنْ مُؤْمِنِهَا وَلَا يَفِيْ لِذِيْ عَهْدٍ عَهْدَهُ فَلَيْسَ مِنِّيْ وَلَسْتُ مِنْهُ.
‘যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে গোত্রপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্রের দিকে আহ্বান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন ব্যাপার থাকে না) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করে। যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের ভাল মন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করে, মুমিনকেও রেহাই দেয় না এবং যার সাথে সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় তার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করে না, সে আমার কেউ নয় আমিও তার কেউ নই’।[৪]
আরফাজা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, إِنَّهُ سَتَكُوْنُ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يُفَرِّقَ أَمْرَ هَذِهِ الأُمَّةِ وَهْىَ جَمِيْعٌ فَاضْرِبُوْهُ بِالسَّيْفِ كَائِنًا مَنْ كَانَ ‘তোমাদের সংঘবদ্ধ থাকা অবস্থায় যদি কেউ আসে আর সে তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য চেষ্টা করে, তবে তোমরা তাকে হত্যা কর।[৫] অপর বর্ণনায় এসেছে,مَنْ أَتَاكُمْ وَأَمْرُكُمْ جَمِيْعٌ عَلَى رَجُلٍ وَاحِدٍ يُرِيْدُ أَنْ يَشُقَّ عَصَاكُمْ أَوْ يُفَرِّقَ جَمَاعَتَكُمْ فَاقْتُلُوْهُ ‘অচিরেই নানা প্রকার ফিতনা-ফাসাদের উদ্ভব হবে। যে ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ উম্মতের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস চালাবে, তোমরা তরবারি দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দেবে, সে যে কেউ হোক না কেন’।[৬]
হে আল্লাহ! মুসলিমদের অবস্থার উন্নতি করুন, তাদেরকে নিজ নিজ দেশে নিরাপত্তা দিন, তাদের ঐক্যবদ্ধ করুন, তাদের কথাকে সত্যের উপর একত্রিত করুন এবং তাদের হৃদয়ের মিলন করুন এবং নিজেদের বিষয়গুলোকে সংশোধন করে দিন।
হে আল্লাহ! তাদেরকে প্রকাশ্য ও গোপনীয় উভয় মতবিরোধ ও কলহ থেকে রক্ষা করুন এবং তাদের থেকে বিশৃঙ্খলার সকল পথ বন্ধ করে দিন এবং তাদেরকে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় পূর্ণ রাখুন।
পরিশেষে খত্বীব মহোদয় আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ করেন। মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের জন্য দু‘আ চাওয়ার মাধ্যমে খুত্ববা সমাপ্ত করেন।
* পি-এইচ.ডি গবেষক, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব এবং বাংলা আলোচক ও জুমু‘আর খুৎবার লাইভ অনুবাদক, মসজিদে নববী।
[১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৮৫, সনদ ছহীহ।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৭১৪৪।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৫১।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৫২।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৫২।
প্রসঙ্গসমূহ »:
খুত্ববাতুল হারামাইন