বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৫ অপরাহ্ন

আরাফাহর খুৎবাহ

-শাইখ ড. মুহাম্মাদ ইবনু হাসান ইবনু আব্দুর রহমান আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)

- শাইখ ড. মুহাম্মাদ মানজুরে এলাহী


[১৪৪০ হিজরী মোতাবেক ২০১৯ সাল। পবিত্র হজ্জের ‘আরাফার খুৎবাহ প্রদান করেন সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য এবং খাদেমুল হারামাইন আশ-শরীফাইন হাদীছ কমপ্লেক্স-এর সম্মানিত ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট শাইখ ড. মুহাম্মাদ ইবনু হাসান ইবনু আব্দুর রহমান আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)। উক্ত খুৎবাহ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন শাইখ ড. মুহাম্মাদ মানজুরে এলাহী খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইখলাছ’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হল। সম্পাদক]

মুহতারাম শাইখ হামদ ও ছানার পরে বলেন,

হে মুসলিমরা! আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন এবং আল্লাহর তাক্বওয়া অর্জন করুন। কেননা তাক্বওয়ার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ الۡاٰخِرَۃُ  عِنۡدَ  رَبِّکَ  لِلۡمُتَّقِیۡنَ ‘মুত্তাক্বীদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে আখেরাত (এর কল্যাণ)’ (সূরা আয-যুখরুফ : ৩৫)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَلَاۤ اِنَّ اَوۡلِیَآءَ اللّٰہِ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا  ہُمۡ  یَحۡزَنُوۡنَ- الَّذِیۡنَ  اٰمَنُوۡا  وَ کَانُوۡا  یَتَّقُوۡنَ- لَہُمُ الۡبُشۡرٰی فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ فِی الۡاٰخِرَۃِ  لَا  تَبۡدِیۡلَ  لِکَلِمٰتِ اللّٰہِ  ذٰلِکَ  ہُوَ  الۡفَوۡزُ  الۡعَظِیۡمُ

‘মনে রেখো, আল্লাহর ওলীদের (পরকালে) না কোন আশঙ্কা আছে, আর না তারা বিষণ্ হবে। তারা হচ্ছে সেই লোক যারা ঈমান এনেছে এবং (গুনাহ হতে) বেঁচে থাকে। তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও; আল্লাহর কথায় কোন পরিবর্তন হয় না; এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা’ (সূরা ইউনুস : ৬২-৬৪)। আল্লাহর তাক্বওয়ার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে তাওহীদকে অবলম্বন করা ও আঁকড়ে ধরা। তাঁর একত্বকে ধারণ করা আর সেটি হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ইবাদত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ  اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬)। কেন আমরা আল্লাহর ইবাদত করব না! অথচ তিনিই তো তাঁর রহমত দিয়ে সমস্ত কল্যাণ অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনিই সৃষ্টির সকল কিছুকে এককভাবে সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহর সকল বান্দা একদিন তাঁর সামনে দাঁড়াবে। অবশ্যই তাঁর সামনে দাঁড়াবে এবং তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ছাড়া রহমত করার ও রহমত দেয়ার আর কেউ থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ رَبُّکَ الۡغَنِیُّ ذُو الرَّحۡمَۃِ ‘এবং আপনার প্রতিপালক অমুখাপেক্ষী ও দয়াশীল’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৩৩)।

হে বুদ্ধিমানেরা! আপনারা লক্ষ্য করুন, এই যমীনে আল্লাহ তা‘আলার কত রহমত, রহমতের কত বিশাল প্রভাব এবং ফলাফল। আল্লাহর রহমতের মধ্যে রয়েছে যে, তিনি রাত এবং দিবসকে আপনাদের কল্যাণেই সৃষ্টি করেছেন, আসমানসমূহ এবং যমীন সৃষ্টি করেছেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ  قَالَ رضي الله عنه قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَضَى اللهُ الْخَلْقَ كَتَبَ كِتَابًا فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ عَرْشِهِ إِنَّ رَحْمَتِيْ سَبَقَتْ غَضَبِيْ وَفِيْ رِوَايَةٍ غَلَبَتْ غَضَبِيْ

আবুু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন মাখলূক্ব সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন, তখন একটি কিতাব লিখলেন, যা তাঁর নিকট তাঁর আরশের উপর আছে। নিশ্চয় আমার দয়া আমার ক্রোধ অতিক্রম করেছে। অপর বর্ণনায় আছে, আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে।[১]  আল্লাহর মহান রহমতের মধ্যে আরেকটি হল- তিনি ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং এই বিদায় হজ্জের মুহূর্তেই অবতীর্ণ হয়েছিল আল্লাহ তা‘আলার সেই অমোঘ বাণী। সেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ৩)। এ হচ্ছে মহান দ্বীন, যা পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। সেগুলো হচ্ছে, এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রাসূল, ছালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ করা এবং রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা। [২] 

শাহাদাতান : দু’টি শাহাদৎ অর্থাৎ  أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ এই সাক্ষ্য দেয়া। এই সাক্ষ্যের অর্থ হচ্ছে- আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই, অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না, অন্য কারো সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়া যাবে না এবং মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হচ্ছেন আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, তিনিই শেষ নবী, শেষ রাসূল, তাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না। এ হচ্ছে শাহাদতের মর্ম কথা। এরপর এসেছে, وَإِقَامُ الصَّلَاةِ ‘ছালাত কায়েম করা’ অর্থাৎ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাত প্রতিষ্ঠিত করা। তারপরে রয়েছে যাকাত প্রদান করা এবং রামাযানের ছিয়াম রাখা এবং সামর্থ্যবান মানুষদের জন্য বায়তুল্লায় হজ্জ করা।

এরপর খত্বীব ছাহেব ঈমানের ছয়টি রুকনের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ঈমানের রয়েছে ছয়টি রুকন। সেগুলো হচ্ছে

أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّه

‘ঈমান হল এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং বিশ্বাস স্থাপন করবে ভাগ্যের ভাল-মন্দের উপর’।[৩] ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দিকগুলো, ঈমানের এই রুকনগুলোর প্রতি ঈমান পোষণ করা ফরয।

আল্লাহ তা‘আলার আরেকটি বড় রহমত হল- তিনি নবী-রাসূলদেরকে মানুষের হেদায়াতের জন্য প্রেরণ করেছেন। শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও তিনি এই বিশ্ব জগতের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তার সেই ঘোষণা তিনি কুরআনে এভাবে পেশ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَاۤ  اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً  لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ‘আমরা তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি শুধু রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি’ (সূরা আল-আম্বিয়াহ : ১০৭)। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা অন্যান্য নবীদের প্রেরণের ব্যাপারে একে একে উল্লেখ করেছেন। তার বেশ কিছু বিষয় তিনি তার খুৎবায় পবিত্র কুরআনের আলোকে উপস্থাপন করেন।

মুহতারাম খত্বীব আরও বলেন, আল্লাহ তা‘আলার আরেকটি বিশেষ রহমত হল এই যে, তিনি নবীর অন্তরের মধ্যেও রহমত ঢেলে দিয়েছেন। ফলে তিনি হয়েছেন ‘নবীউর রহমাহ’ তথা রহমতের নবী। The Prophet of marcy. আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,

فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ لِنۡتَ لَہُمۡ وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ فَاعۡفُ عَنۡہُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ وَ شَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ

‘অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, আপনি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত; আর আপনি যদি কর্কশ ভাষী, কঠোর হৃদয় হতেন, তবে নিশ্চয় তারা আপনার সংসর্গ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত, অতএব আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কার্য সম্বন্ধে তাদের সাথে পরামর্শ করুন’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৫৯)।

আল্লাহর রহমতের আরও একটি বিশেষ দিক হচ্ছে, তিনি আসমানী অনেক গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে এবং বিভিন্ন উম্মতের চাহিদানুযায়ী বিভিন্ন শরী‘আত। আল্লাহ তা‘আলা অনেক কিতাবই অবতীর্ণ করেছেন যেমন তাওরাত, ইনজীল, যাবূর এবং সর্বশেষ কুরআন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর শরী‘আত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡکُمۡ  مَّوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ شِفَآءٌ لِّمَا فِی الصُّدُوۡرِ  وَ ہُدًی  وَّ رَحۡمَۃٌ   لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ- قُلۡ بِفَضۡلِ اللّٰہِ وَ بِرَحۡمَتِہٖ فَبِذٰلِکَ فَلۡیَفۡرَحُوۡا ہُوَ  خَیۡرٌ  مِّمَّا  یَجۡمَعُوۡنَ

‘হে মানব জাতি! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে সমাগত হয়েছে এক নছীহত এবং অন্তরসমূহের সকল রোগের আরোগ্যকারী, আর মুমিনদের জন্য পথ প্রদর্শক ও রহমত। (হে নবী!) আপনি বলে দিন, আল্লাহর এই দান (ইসলাম) ও রহমতের (কুরআনের) প্রতি সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিত; এটা (পার্থিব সম্পদ) হতে বহুগুণ উত্তম যা তারা সঞ্চয় করেছে’ (সূরা ইউনুস : ৫৭-৫৮)। এভাবে আরও অনেক আয়াত দিয়ে খত্বীব ছাহেব বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

এরপর তিনি বলেছেন, উম্মাহর যারা সালাফ, উম্মাহর যারা পূর্ববর্তী ব্যক্তিবর্গ, সম্মানিত সদস্য ছাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে তাবেঈগণ, তাবেঈদের অনুসারী, সম্মানিত ইমামগণ, তারা প্রত্যেকেই মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সীরাতকে অনুসরণ করেছেন। এটা আল্লাহ তা‘আলার একটি বিশাল রহমত। ফলে উম্মাহর এই সালাফ তারাও প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে রহমশীল ছিলেন, নিজেদের প্রতি একে অন্যের প্রতি ভালবাসা পোষণ করতেন, মহব্বত পোষণ করতেন, রহমত এবং শ্রদ্ধা পোষণ করতেন। ঠিক একইভাবে আল্লাহর সকল নবীও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল রহমতের সম্পর্ক, ভালবাসার সম্পর্ক, মহব্বতের সম্পর্ক এবং ঈমানের সম্পর্ক। আর এজন্যই আমরাও সকল নবীর প্রতি মহব্বত পোষণ করি এবং তাঁদের প্রতি ঈমান রাখি।

খত্বীব ছাহেব বলেছেন, এভাবেই মুমিনদের মধ্যে সেই একই রহমত, একই ভালবাসা, একই মমতা, একই স্নেহ, শ্রদ্ধা, মহব্বত সেভাবেই চলমান করেছে। একের প্রতি অন্যের ভালবাসার শিক্ষা সেভাবেই মুমিনদের মধ্যে চলমান এবং আমরাও সেই ভালবাসা আজও পোষণ করে চলেছি। এরপর খত্বীব ছাহেব বলেছেন, শুধু মানুষদের মধ্যে, মুমিনদের মধ্যেই নয়, বরং এই রহমাহ আল্লাহর অন্য সকল সৃষ্টির প্রতি, এমনকি পরিবেশ, আবহাওয়া বা বন্য পশু-পাখিদের ক্ষেত্রেও চলমান রয়েছে। এভাবে ইসলাম এ সমস্ত ব্যাপারে সুন্দর দিক-নির্দেশনা আমাদেরকে দিয়েছে। তিনি সেখানে একজন পতিতা মেয়ের কথা দলীল হিসাবে তুলে ধরেছেন। ঐ মহিলা একটি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছেন। তাহলে ইসলামে সবার প্রতি, যে কোন পশু-পাখির প্রতি এবং পরিবেশ, উদ্ভিদজগৎ, নদ-নদী সব কিছুর প্রতি রহমত এবং সুন্দর নিয়ম-শৃংঙ্খলা পোষণ করা চলমান রয়েছে এবং এখানে কোন রকম উচ্ছেদ পড়েনি। সুতরাং এজন্যই উচিত হচ্ছে রহমাহ, ভালবাসা যেন মানুষের সমস্ত মু‘আমালাত, আচরণের ক্ষেত্রে আমাদের মূল ভিত্তি হয়। এটাই যেন আমাদের শুরু হয়। আমরা রহমত, ভালবাসা, শ্রদ্ধা, মমতা দিয়েই যেন প্রত্যেকটা মু‘আমালা শুরু করি। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّ لِلهِ مِائَةَ رَحْمَةٍ أَنْزَلَ مِنْهَا رَحْمَةً وَاحِدَةً بَيْنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ وَالْبَهَائِمِ وَالْهَوَامِّ فَبِهَا يَتَعَاطَفُوْنَ وَبِهَا يَتَرَاحَمُوْنَ وَبِهَا تَعْطُفُ الْوَحْشُ عَلٰى وَلَدِهَا وَأَخَّرَ اللهُ تِسْعًا وَّتِسْعِيْنَ رَحْمَةً يَرْحَمُ بِهَا عِبَادَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

‘আল্লাহর একশ’ রহমত রয়েছে, যা হতে একটি মাত্র রহমত তিনি জিন, মানুষ, পশু ও কীট-পতঙ্গের মধ্যে বণ্টন করেছেন। এটা দ্বারাই তারা একে অন্যকে মায়া করে। এর মাধ্যমেই তাদের একে অন্যকে দয়া করে এবং এর মাধ্যমেই বন্য প্রাণীরা তাদের সন্তানদেরকে ভালবাসে। বাকী নিরানব্বইটি রহমত ক্বিয়ামতের দিনের জন্য রেখে দিয়েছেন। যা দ্বারা তিনি ক্বিয়ামতের দিন আপন বান্দাদের প্রতি রহম করবেন’।[৪]

খত্বীব ছাহেব আরো বলেন, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যে রহমাহ আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করে দিয়েছেন, তার চমৎকার সব ফলাফল এবং তার সুন্দর একটি পরিণতি আমরা লক্ষ্য করি। এসব পরিণতির মধ্যে রয়েছে, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা জন্ম নেয়া এবং একে অপরকে ক্ষমা করার মাধ্যমে তাদের মধ্যে ভালবাসা, সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়। সম্প্রীতিতে সমাজ ছেয়ে যায়। এমনকি তাদের মধ্যে যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মীতা, একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসার বিষয়টিও প্রচলিত হয় এই রহমতেরই কারণে।

এরপর খত্বীব ছাহেব বলেছেন, আমাদের বর্তমান জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রহমতের অনেকগুলো ক্ষেত্র রয়েছে। চাই সেটা নিয়ম-নীতি আঁকড়ে ধরে হোক, সেটা কোন নীতিমালাকে আঁকড়ে ধরে হোক অথবা সেটা আমাদের জীবনের প্রাত্যহিক যে কোন দিক হোক, আমাদের মু‘আমালাত, চলাফেরা এমনকি প্রচার মাধ্যমে একে অন্যের সাথে ভাব বিনিময় প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে রহমতের রয়েছে এক একটি চমৎকার ক্ষেত্র। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে রহমতকে স্থান দেয়া উচিত। রহমত, সম্প্রীতি, ভালবাসা এগুলোর মধ্য দিয়েই আমাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। তাহলে প্রত্যেকটা ক্ষেত্র সুন্দর হয়ে উঠবে। তিনি আরও বলেছেন, তিনি হজ্জের মধ্যে এই রহমতের বহিঃপ্রকাশ বা চিহ্ন উল্লেখ করেছেন। সেখানকার প্রশাসনিক ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে যারা নিয়োজিত, মক্কা, মিনা, মুযদালিফা, ‘আরাফাসহ বিভিন্ন স্থানে যেখানে আজ লক্ষ লক্ষ আদম সন্তান হজ্জের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছে, সেখানে আমরা এই সুশৃংঙ্খল নিয়মানুবর্তিতা লক্ষ্য করছি। রহমতের আরেকটি চমৎকার নিদর্শন যে, সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা কর্মী থেকে শুরু করে প্রশাসন যন্ত্রের বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকেরা চমৎকারভাবে তাদের দায়িত্ব পালনের ফলে আমাদের জন্য হজ্জ করা সহজ হয়ে যাচ্ছে। হাজীদের মধ্যে যারা সেখানে একত্রিত হয়েছেন বড়, ছোট বা অক্ষম কিংবা সক্ষম তাদের প্রত্যেকের জন্য সুন্দর একটি তাওযীহাত কারীমাহ, কী করণীয়, কোন্ দিকে যাবেন, কিভাবে অবস্থান করবেন, তাদের নিরাপত্তা সহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যে আজকে সেখানে পালন করা হচ্ছে, এটি রহমতেরই একটি নিদর্শন।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি সঊদী আরব রাষ্ট্রের হুকুমতের প্রশংসা করেন এবং তারা যে হাজীদের জন্য, ওমরাকারীদের জন্য যে খেদমত পেশ করেছেন, সে জন্য তিনি শুকরিয়া আদায় করলেন। বিশেষ করে হারামাইন ও শরীফাইনের যে এক্সটেনশন বা তাওসীয়া, এটা বাদশা আব্দুল আযীয (রহিমাহুল্লাহ) থেকে আরম্ভ করে এবং তাঁর সন্তানদের মাধ্যমে যে খেদমতটুকু হয়ে আসছে যার ফলে আজকের মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা হজ্জ, ওমরাহ কিংবা যিয়ারতে আসেন, তারা তা থেকে উপকৃত হচ্ছেন। তিনি এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবার শুকরিয়া আদায় করেছেন এবং সে বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, সবগুলো বিষয় মহান রাব্বুল আলামীনের দেয়া সেই রহমতের বহিঃপ্রকাশ। যার ফলে মুসলিম উম্মাহ একে অপরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এরপর তিনি সবার জন্য দু‘আ করেন।

পরে আবারও তিনি মুসলিমদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন, হে মুসলিম ভাই-বোনেরা! আল্লাহর রহমতে মানুষের মন, হৃদয় পরিশুদ্ধ হয়ে উঠে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পরিশুদ্ধ করেন। সেজন্য তিনি স্মরণ করে দিতে চাচ্ছেন যে, আজকের এই মহান হজ্জে এসে আমরাও যেন পরিশুদ্ধিতা অর্জন করি। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَنْ يُدْخِلَ أَحَدًا عَمَلُهُ الْجَنَّةَ قَالُوْا وَلَا أَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ لَا وَلَا أَنَا إِلَّا أَنْ يَتَغَمَّدَنِى اللهُ بِفَضْلٍ وَرَحْمَةٍ

‘তোমাদের কোন ব্যক্তিকে তার নেক আমাল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। লোকজন প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনাকেও নয়? তিনি বললেন, আমাকেও নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে তাঁর করুণা ও দয়া দিয়ে আবৃত না করেন’।[৫] খত্বীব ছাহেব এই হাদীছটি উল্লেখ করে দলীল হিসাবে তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, আমার প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আপনারা সঠিক কাজ করুন, সঠিক কাজের নিকটবর্তী হোন, সঠিক কাজকে অনুসরণ করুন, সঠিক কাজই করুন, ভুল কাজ থেকে সরে আসুন। তাহলেই আমরা সঠিক পথে থাকতে পারব, আমরা পাপ থেকে দূরে থাকতে পারব। এরপর তিনি যে সমস্ত কাজ করলে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায় বা আল্লাহর রহমত অর্জন করা যায়, সেগুলো উল্লেখ করেছেন। যেমন,

১. তাক্বওয়া। এটিই আল্লাহর রহমত লাভের সবচেয়ে প্রধান উপায়। অতঃপর তিনি তাক্বওয়ার পক্ষে কিছু আয়াত উল্লেখ করেন।

২. পারস্পরিক মু‘আমালাতের ক্ষেত্রে একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহনশীল আচরণ করা এবং ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা। তিনি বলেছেন, হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,رَحِمَ اللهُ رَجُلًا سَمْحًا إِذَا بَاعَ وَإِذَا اشْتَرَى وَإِذَا اقْتَضَى ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন, যে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এবং নিজের প্রাপ্য আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হয়’।[৬]

৩. কুরআন তেলায়াত। একে অন্যের সাথে কুরআনের বুঝ আদান-প্রদান করতে হবে, কুরআনের প্রতি মনযোগী হয়ে এর বক্তব্য শুনতে হবে এবং কুরআনের ম্যাসেজটুকু বুঝতে হবে।

৪. সকল সৃষ্টির প্রতি ইহসান করা। সকল সৃষ্টির প্রতি সুন্দর আচরণ করা। এটি একটি বড় বিষয়। শুধু নিজের ধর্মের অনুসারী মুসলিম নয়, বরং মুসলিমদের বাইরে সকল মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ এবং তার বাইরে উদ্ভিদ জগৎ, বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশ সহ সকলের সাথে সুন্দর আচরণ করা।

৫. বিবদমান বিভিন্ন মানুষের মধ্যে, বিভিন্ন গ্রুপের লোকদের মধ্যে ইছলাহ করে দেয়া, সংশোধন করে দেয়া এবং মিলিয়ে দেয়া। মানুষের মধ্যে যখনই কোন বিবাদ উপস্থিত হয়, তাদের মধ্যে যেন আবার মিল হয়ে যায় সেজন্য চেষ্টা করা।

৬. আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করা।

৭. ধৈর্যধারণ করা।

৮. মুমিনরা পরস্পর বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে। এটাও রহমতের অন্যতম একটি কারণ। মুমিনরা বিভক্ত থাকবে না। তারা একে অন্যের প্রতি কাদা ছুড়াছুড়ি করবে না। বরং তারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের প্রতি হবে একে অন্যের বন্ধু। বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে তারা আল্লাহর রহমত অর্জন করতে পারে।

৯. সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ।

১০. যাকাত ও ছাদাক্বাহ প্রদান করা। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও আল্লাহর রহমত তৈরি হতে পারে।

১১. বেশী বেশী আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া। ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে আসলে মানুষ তার দোষ-ত্রুটিগুলো দেখতে পারে ও চিহ্নিত করতে পারে। পাশাপাশি তার অনুভূতি তৈরি হয় যে, আমি অনেক পাপ করেছি। তখন তার মধ্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রাপ্তির আকাক্সক্ষা জেগে উঠে, তখনই সে সৎ মানুষ হয়ে যেতে পারে। ফলে বেশি বেশি ইস্তেগফারের মাধ্যমেও আল্লাহর রহমত অর্জন করা যায়।

এরপর তিনি বলেছেন, হে মুসলিম! তোমার পাপ যতই বেড়ে যাক, তুমি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। কারণ তওবার দরজা উন্মুক্ত রয়েছে। এটা ক্বিয়ামত পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلۡ یٰعِبَادِیَ  الَّذِیۡنَ  اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ  لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰہِ اِنَّ اللّٰہَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا  اِنَّہٗ  ہُوَ  الۡغَفُوۡرُ  الرَّحِیۡمُ

‘(হে নবী!) আপনি বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আয-যুমার : ৫৩)।

অতঃপর খত্বীব ছাহেব পাপ ক্ষমা করার কারণগুলো উল্লেখ করেছেন। সেটা হল- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট বেশী বেশী দু‘আ করা। কেননা পাপের ক্ষমা আল্লাহর নিকট থেকেই চাইতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বিভিন্ন নবী-রাসূলদের দু‘আ উল্লেখ করেন। বিখ্যাত সব দু‘আ। মূসা (আলাইহিস সালাম), সুলাইমান (আলাইহিস সালাম), ফেরেশতাদের দু‘আ, আদি পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) ও মা হাওয়ার দু‘আ উল্লেখ করেন। আছহাবে কাহাফের দু‘আও তিনি উল্লেখ করেন। কিভাবে তারা আল্লাহর নিকট দু‘আ করেছেন, তিনি সবগুলো উল্লেখ করেন।

এরপর তিনি বলেন, আজকে যারা আল্লাহর ঘরে হাজী হিসাবে উপস্থিত হয়েছেন। আপনারা জেনে রাখুন! আপনারা এমন একটি স্থানে আজকে একত্রিত হয়েছেন, যেখানে দু‘আ কবুল হয়। অতএব আপনারা বেশি বেশি দু‘আ করুন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيْهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُوْ ثُمَّ يُبَاهِىْ بِهِمُ الْمَلَائِكَةَ فَيَقُوْلُ مَا أَرَادَ هَؤُلَاءِ.

‘আরাফার দিন আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দান করে থাকেন এবং তিনি নিকটবর্তী হন ও ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করে বলেন, দেখ ওরা কি চায়?’[৭] এভাবেই আরাফার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব আমরা দেখতে পাই। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে এদিনের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। আপনারা এদিনে অবস্থান করছেন। অতএব বেশী বেশী দু‘আ করুন। বেশি বেশি দু‘আ করে নিজের পাপকে ক্ষমা করে নিন এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন।

পরিশেষে তিনি বলেছেন, হে হাজীগণ! আল্লাহ তা‘আলার রহমতের আরেকটি বিষয় হচ্ছে এই যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জের বিভিন্ন আহকাম বর্ণনা করে দিয়েছেন ‘আরাফার এই খুৎবার মধ্যেই। এরপর খত্বীব ছাহেবও হজ্জের পরবর্তী করণীয়গুলো যা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদায় করেছিলেন তা বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফার এই ময়দানে এসে খুৎবাহ দিলেন। নামিরায় তিনি অবস্থান করেছেন এবং তার পাশেই কুব্বা স্থাপন করে তিনি সেখানেই খুৎবা দিলেন। এক আযান দুই ইক্বামতে যোহর এবং আছর জমা ও কসর করে ছালাত আদায় করলেন। এরপর তিনি তাঁর উটে চড়ে ‘আরাফার ভিতরে অবস্থান করলেন। তিনি অকূফে ‘আরাফায় অবস্থান করলেন। তিনি সেখানে লম্বা সময় অবস্থান করলেন এবং দু‘আ করলেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনি ‘আরাফায় অবস্থান করলেন। সুর্যাস্তের সাথে সাথে তিনি রওনা করে মুযদালিফায় গেলেন। আর মানুষকে বলতে থাকলেন, হে মানুষেরা! তোমাদের উপর ওয়াজিব হল তোমরা ধীরে ধীরে যাবে, তাড়াহুড়া করবে না। এরপর তিনি মুযদালিফায় গিয়ে এক আযানে দুই ইক্বামতে মাগরিব তিন রাক‘আত এবং এশা দুই রাক‘আত ছালাত জমা ও কছর করলেন। এরপর তিনি মুযদালিফায় অবস্থান করেন এবং সেখানে ঘুমান। তারপর ফজরে উঠে ফযরের ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর মাশ‘আরে হারামে অবস্থান করলেন এবং লম্বা দু‘আ করলেন। অতঃপর সূর্য উঠার আগেই তিনি মাশ‘আরে হারাম থেকে মিনার দিকে রওনা হলেন এবং জামরায়ে কুবরাতে এসে তিনি সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন। পরবর্তীতে তিনি ঐ দিনে কুরবানী করে হালাল হলেন। ত্বাওয়াফ ও সাঈ করে আবার মিনায় ফিরলেন। মিনায় একাধারে তিনদিন অবস্থান করলেন। যদিও তিনি দুই রাত্রী অবস্থান করার পর মানুষকে মিনা থেকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি মিনাতে অবস্থান করা অবস্থায় জামরায়ে ছুগরা ও বুসতায় পাথর মারার পর লম্বা দু‘আ করেছিলেন এবং জামরায়ে কুবরায় পাথর মারার পর তিনি দু‘আ করেননি। তিনি ১১, ১২, ১৩ তারিখ মিনায় অবস্থান করে পাথর নিক্ষেপ করেন। যারা অক্ষম ছিলেন তিনি তাদেরকে মিনায় থাকা ছাড় দিয়েছিলেন। এভাবে তিনি হজ্জের কর্ম সম্পাদন করেন। অতঃপর খত্বীব ছাহেব সবার জন্য, মুসলিম উম্মার জন্য দু‘আ করেন এবং তার খুৎবাহ শেষ করেন।

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ

[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৪২২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৫১।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৮, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫।
৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮; ছহীহ বুখারী, হা/৫০; তিরমিযী, হা/২৬১০; আবু দাঊদ, হা/৪৬৯৫; ইবনু মাজাহ, হা/৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯১; মিশকাত, হা/২।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৫২।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৭৩।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৭৬।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৪৮; মিশকাত হা/২৫৯৪।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল জুম‘আ ও ঈদ
আল-কুরআন নাজাত লাভের মাধ্যম - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
তাক্বওয়া ও তার বহিঃপ্রকাশ - অনুবাদ : শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
আরাফাহর খুৎবাহ - অনুবাদ : ড. মুহাম্মাদ মানজুরে এলাহী
ফিতনার সময় রাসূূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মানহাজ - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
দ্বীনি ইলম অর্জনের গুরুত্ব - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
প্রতারণা করা ও ধোঁকা দেয়া হারাম - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
যালিমের পতন ও মযলুমের বিজয় অবধারিত - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায়ের ফযীলত - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
কোমল ও নম্র আচরণ - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
হৃদয়ের আমলসমূহ ও তার সুস্থতা - অনুবাদ : শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখার গুরুত্ব - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
ক্রোধ সংবরণ করার গুরুত্ব - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী

ফেসবুক পেজ