নবুওয়তের আলামতসমূহ
-খত্বীব : শায়খ আব্দুল মুহসিন আল কাসেম (হাফিযাহুল্লাহ)
-অনুবাদ : হারুনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী*
[গত ২০ রবি. আখের ১৪৪৩ হি. মোতাবেক ২৬ নভেম্বর, ২০২১ তারিখের ‘মসজিদে নববী, মদীনাতুল মুনাওয়ারা’-এর জুমু‘আর খুত্ববার বঙ্গানুবাদ]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর ছালাত ও সালামের পরে সম্মানিত খত্বীব বলেছেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা যথাযথভাবে আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করুন এবং গোপনে ও একান্তে তাঁকে ভয় করে চলুন।
হে মুসলিমগণ! মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদের প্রেরণ করেছেন। তাঁরা অহীর আলো দিয়ে ফেতরাত বা স্বাভাবিক রীতিকে (ইসলাম) পূর্ণাঙ্গ রূপদান করেছেন; তাঁরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত, সুন্দর আমল এবং উন্নত চরিত্র ও সদাচরণের দিকে আহ্বান করেছেন; কাজেই নবী-রাসূলদের প্রতি মানুষের প্রয়োজনীয়তা তাদের পানাহার ও শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের চেয়েও বেশি। তাছাড়া তাঁরা ব্যতীত সফলতা, বিজয় ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার কোনই পথ নেই।
একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই পূর্ণাঙ্গরূপে অভাবমুক্ত, সর্বময় ক্ষমতাবান ও সর্বজ্ঞানী। আর রাসূলগণ হচ্ছেন মানুষ, তাঁরা এই তিনটি গুণের মধ্যে ততটুকুর মালিক যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দান করেছেন। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলেন,
قُلۡ لَّاۤ اَقُوۡلُ لَکُمۡ عِنۡدِیۡ خَزَآئِنُ اللّٰہِ وَ لَاۤ اَعۡلَمُ الۡغَیۡبَ وَ لَاۤ اَقُوۡلُ لَکُمۡ اِنِّیۡ مَلَکٌ ۚ اِنۡ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا یُوۡحٰۤی اِلَیَّ
‘(হে নবী) আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভা-ারসমূহ আছে, আর আমি গায়েবও জানি না এবং তোমাদেরকে এও বলি না যে, আমি ফেরেশতা; আমার প্রতি যা অহীরূপে প্রেরণ করা হয়, আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি’ (সূরা আল-আন‘আম : ৫০)।
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে চমৎকার ও উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী দিয়ে সাহায্য করেছেন; বান্দাদের কাছে এটা প্রকাশ করার জন্য যে, তাঁরা আল্লাহর সত্য রাসূল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক নবীকে এমন কিছু মু‘জিযা দেয়া হয়েছে যা দেখে লোকেরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে।[১] যেমন, ছালেহ (আলাইহিস সালাম) নিজ জাতির কাছে এক বিশাল উটনী নিয়ে এসেছিলেন, যা প্রস্তরখণ্ড থেকে বের হয়েছিল। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে বিশাল অগ্নিকু-ে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, কিন্তু তা তাঁকে দগ্ধ করেনি। মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন দেয়া হয়েছিল, তিনি স্বীয় লাঠি দ্বারা সমুদ্রকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছিলেন, যার প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতের মত হয়েছিল। তিনিই হাতের লাঠিকে ছুড়ে ফেললে তা বিশাল আকৃতির অজগর সাপে রূপ নিয়েছিল। দাঊদ ও সুলায়মান (আলাইহিস সালাম)-কে পাখির ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল এবং সব কিছুই দেয়া হয়েছিল। আর ঈসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে নিরাময় এবং মৃতকে জীবিত করতেন, তিনি মায়ের কোলে শিশু থাকাবস্থায় কথা বলেছেন এবং নিজের মাকে অপবাদমুক্ত করেছেন ও আল্লাহর এককত্বের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের সত্যতার প্রমাণ বহনকারী নিদর্শনগুলোর অন্যতম হচ্ছে, তাঁদের সচ্চরিত্রতা, তাঁরা ও তাঁদের অনুসারীদের আল্লাহ কর্তৃক সাহায্যপ্রাপ্ত হওয়া, উত্তম পরিণতি লাভ করা ও তাঁদের বিরোধী ও মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের ধ্বংস ও আযাবপ্রাপ্ত হওয়া।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যান্য নবী-রাসূলের চেয়ে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মাঝে অধিক ও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মু‘জিযাসমূহ হাজারের অধিক। আর পৃথিবীতে খবরে মুতাওয়াতির পর্যায়ের এমন কোন ইলম নেই, যা রাসূলের নিদর্শন ও তাঁর দ্বীনের বিধি-বিধান সম্পর্কিত ইলমের চেয়ে বেশি সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী।’ মহান আল্লাহ বলেন,
ہُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَہٗ بِالۡہُدٰۦ وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡہِرَہٗ عَلَی الدِّیۡنِ کُلِّہٖ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰہِ شَہِیۡدًا
‘তিনিই তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, অন্য সমস্ত দ্বীনের উপর একে জয়যুক্ত করার জন্য। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট’ (সূরা আল-ফাত্হ : ২৮)।
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নবুওয়তের অন্যতম নিদর্শন হল, তাঁর আগমনের বহু পূর্বে অন্যান্য নবীর মাধ্যমে এ বিষয়ে সুসংবাদ প্রদান। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) বলেছেন,
رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡہِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡہُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتِکَ وَ یُعَلِّمُہُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ وَ یُزَکِّیۡہِمۡ
‘হে আমাদের রব! আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসূল পাঠান, যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১২৯)। আর ঈসা (আলাইহিস সালাম) বলেছেন, وَ مُبَشِّرًۢا بِرَسُوۡلٍ یَّاۡتِیۡ مِنۡۢ بَعۡدِی اسۡمُہٗۤ اَحۡمَدُ ‘এবং আমার পরে আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তার সুসংবাদদাতা’ (সূরা আছ-ছফ : ৬)।
মহানবী (ﷺ)-এর তাঁর শৈশবকালে ফেরেশতা এসে তাঁর বুক চিড়ে সেখান থেকে শয়তানের অংশ বের করে ফেলেন। তিনি নবী হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার আগেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জাহেলিয়াতের কদর্যতা থেকে হেফাযত করেছেন। ফলে তাঁর লজ্জাস্থান কারো কাছে প্রকাশ পায়নি। তিনি নিজ হাতে কোন মূর্তি স্পর্শ করেননি। কখনো মদ পান করেননি। এমনকি কোন অবৈধ লেনদেনও করেননি। তাঁর রিসালাতকে হেফাযত করার জন্য উল্কাপিণ্ড, যা দ্বারা শয়তানকে রজম মারা হত তা দ্বারা আসমানী প্রহরা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জিনেরা বলেছিল, وَ اَنَّا لَمَسۡنَا السَّمَآءَ فَوَجَدۡنٰہَا مُلِئَتۡ حَرَسًا شَدِیۡدًا وَّ شُہُبًا ‘এবং আমরা আকাশমণ্ডলীকে স্পর্শ (পর্যবেক্ষণ) করেছি আর আমরা সেটা পেয়েছি কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা পরিপূর্ণ’ (সূরা আল-জিন : ৮)।
তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে যা তাঁর জীবদ্দশায় ছিল এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবে তাহল, মহাগ্রন্থ আল কুরআন এবং অহীর জ্ঞান ও ঈমান, যা তাঁর অনুসারীরা বহন করছে। অনুরূপভাবে সেগুলোর মধ্যে তাঁর দ্বারা অতীত ও ভবিষ্যত বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত সংবাদ প্রদান যা তাঁকে আল্লাহই জানিয়েছেন। যেগুলো ছাড়া কারো পক্ষে অবগত হওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এসব গায়েবের সংবাদ আমরা আপনাকে অহীর দ্বারা অবগত করিয়েছি, যা এর আগে আপনি জানতেন না এবং আপনার সম্প্রদায়ও জানত না’ (সূরা হূদ : ৪৯)।
অতীত ঘটনাবলীর অন্যতম হল, আদম (আলাইহিস সালাম)-এর ঘটনা, তাঁকে ফেরেশতাদের সেজদা প্রদান এবং ইবলীস ও তার অহংকার প্রদর্শনের ঘটনা, নবী-রাসূল এবং আছহাবে কাহফ ও হস্তি বাহিনীর ঘটনা ইত্যাদি। আর ভবিষ্যত ঘটনাবলী সম্পর্কিত যেসব সংবাদ তিনি দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, যখন আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির সকলকে কুরআনের সূরার মত একটি সূরা রচনা করে আনতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন, তখন তিনি সংবাদ দিলেন যে, তারা ক্বিয়ামত অবধি চেষ্টা করেও এরূপ সূরা আনয়ন করতে পারবে না। অনুরূপভাবে তিনি মক্কায় দুর্বল থাকাকালে কাফেরদের ব্যাপারে বলেছিলেন, এ দল তো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পিঠ দেখিয়ে পালাবে (সূরা আল-কামার : ৪৫)। উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা কয়েক বছর পরেই প্রকাশ পায় এবং বদর যুদ্ধের আগের দিন তিনি কুরাইশ নেতাদের ধরাশয়ী (নিহত) হওয়ার স্থান মুসলিমদেরকে দেখিয়ে বলেন, (এটা অমুক ব্যক্তির ধরাশয়ী হওয়ার স্থান। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের নাম নিয়ে যে স্থানে হাত রেখেছিলেন, সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়েছে, এর সামান্যও ব্যতিক্রম হয়নি’।[২] তিনি খায়বার যুদ্ধে বের হয়ে তাকবীর ধ্বনী উচ্চারণ করলেন এবং বললেন, ‘খায়বার ধ্বংস হোক’। অতঃপর আল্লাহ তাঁকে বিজয় দান করলেন।[৩] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ছাহাবীদেরকে রোমানদের বিরুদ্ধে মুতার যুদ্ধে প্রেরণ করেন এবং সংবাদ পৌঁছার আগেই তাঁদের শাহাদত বরনের খবর জানিয়েছিলেন।[৪]
তিনি বলেছেন যে, তাঁর জীবদ্দশাতেই পারস্য শক্তির বিরুদ্ধে রোমক শক্তি বিজয়ী হবে। যখন পারস্য সম্রাটের দূত চিঠি নিয়ে তার কাছে আগমন করল, তখন তিনি তাকে বললেন, আমার রব তোমার মনিবকে আজ রাতেই হত্যা করবেন।[৫] তাবূকের যাত্রাপথে তিনি বলেছিলেন, ‘আজ রাতে তোমাদের উপর দিয়ে প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহ হবে। তাই তোমাদের কেউ যেন তার মধ্যে দাঁড়িয়ে না থাকে।[৬] তিনি নিজের আয়ু ঘনিয়ে আসা এবং উচ্চে সমুন্নত বন্ধু আল্লাহর নিকট ইন্তেকালের খবর দিয়েছেন। তার কিছুদিন পরেই তিনি দুনিয়া ত্যাগ করেন। তিনি বলেছেন, তাঁর ওফাতের একশ’ বছর পর পৃথিবীতে তার ছাহাবীদের কেউ জীবিত থাকবে না।[৭] উক্ত বিষয়গুলোতে তিনি যেমন খবর দিয়েছেন তেমনি ঘটেছে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সংবাদ দিয়েছেন যে, বাইতুল মাকদিস বিজয় হবে, অতঃপর প্লেগ রোগ এসে মুসলিমদের নিঃশেষ করে ফেলবে। তারপর সর্বত্র সম্পদের ছড়াছড়ি হবে কিন্তু কেউ তা গ্রহণ করবে না। পরে দেখা গেল তিনি যেমনটি বলেছেন তেমনি প্রতিফলিত হয়েছে; বাইতুল মাকদিস বিজয় হয়, সিরিয়ায় প্লেগ মহামারী শুরু হয়। এ দু’টোই ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর শাসনামলে সংঘটিত হয়। তারপর উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর আমলে সম্পদের প্রাচুর্যতা আসে, এমনকি তখন এক ব্যক্তিকে একশ’ দীনার দেয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকত।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘বিভিন্ন দেশ বিজয় হবে, তখন মদীনাবাসী সেসব এলাকায় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের আশায় চলে যাবে। অথচ মদীনাই তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা জানত’।[৮] তিনি আরো বলেছেন, ‘কিসরা ও কায়সার ধ্বংস হবে এবং এ দুই সা¤্রাজ্যের ধন-ভা-ার আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হবে। এই দুনিয়া তাঁর উম্মতের অধীনস্ত হবে। তখন তারা দুনিয়াবী প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে যেমন তাদের পূর্ববর্তীরা করেছিল। তাঁর উম্মত পূর্ববর্তী উম্মতের সাদৃশ্য ধারণ করবে, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, এমনকি তারা গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করলে এরাও প্রবেশ করবে।[৯]
তিনি অদূর ভবিষ্যতে ক্বিয়ামতের যেসব আলামত প্রকাশ পাবে তা বর্ণনা করেছেন। যেমন জ্ঞানের দৈন্যতা, অতি মূর্খতা, বিভিন্ন ফেতনার প্রাদুর্ভাব, হত্যাকা- বেড়ে যাওয়া, বড় বড় অট্টালিকা তৈরি ইত্যাদি। একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাহাবীদের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কী সংঘটিত হবে তা বর্ণনা করলেন। এ মর্মে হুযায়ফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সেসবের বর্ণনা দিলেন। সেগুলো যার স্মরণ রাখার সে স্মরণে রাখল, আবার যার ভুলে যাবার সে ভুলে গেল।[১০]
তিনি আকাশে সংঘটিত ঘটনাবলী যা তিনি অবলোকন করেছেন, তা ছাহাবীদের কাছে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সশরীরে মক্কা থেকে মসজিদে আক্বছায় ভ্রমণ করিয়েছেন। তারপর তাঁকে আসমানে উঠিয়ে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’-য় নিয়ে গেছেন। অতঃপর একই রাতে তাঁকে মক্কায় ফিরিয়ে এনেছেন। ফিরে এসে তিনি জান্নাত, জাহান্নাম, এ দু’য়ের অধিবাসী, সিদরাতুল মুনতাহা ইত্যাদি যা দেখেছেন এবং জগৎ নিয়ন্ত্রণে কলমের যে শব্দ শুনেছেন তা ছাহাবীদেরকে সংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে জাগতিক প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী দিয়েও সাহায্য করেছেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা চন্দ্রকে বিদীর্ণ করে দ্বি-খণ্ডিত করেছেন, যা মক্কা ও অন্যান্য এলাকার মানুষ স্বচক্ষে অবলোকন করেছিল।
মানুষের মাঝেও তাঁর নবুওয়তের আলামত প্রকাশ পেয়েছিল; ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিদায় হজ্জের ভাষণের সময় আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষের শ্রবণশক্তি খুলে দিয়েছিলেন। ফলে তাঁরা সকলেই রাসূলের ভাষণ শুনেছেন, অথচ সংখ্যায় তারা লক্ষাধিক ছিলেন’। ‘তিনি আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর জন্য অধিক ধনসম্পদ ও সন্তানাদি চেয়ে দু‘আ করেছিলেন। তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর বংশের শতাধিক ব্যক্তির দাফন-কাফন করেন’।[১১] তিনি আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও তাঁর মায়ের জন্য দু‘আ করেছিলেন যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু’জনকে মুমিনদের কাছে প্রিয়পাত্র করেন। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, তারপর যে মুমিন ব্যক্তিই আমাকে দেখে বা আমার সম্পর্কে শুনে, সেই আমাকে ভালোবাসে।[১২] তিনি উরওয়া আল বারেকী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ব্যবসায় বরকতের দু‘আ করেছিলেন। ফলে এমন অবস্থা হয়েছিল যে, যদি তিনি মাটিও বিক্রি করতেন তাতেও লাভবান হতেন’।[১৩]
আব্দুল্লাহ ইবনু আতীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পা ভেঙ্গে গেলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাতে হাত বুলিয়ে দিলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন।[১৪] আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর চোখ অসুখে বিবর্ণ হয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর দু’চোখে থুথু লাগিয়ে দেন। ফলে তাতে তিনি এমনভাবে আরোগ্য লাভ করেন যেন কোন ব্যথাই ছিল না।[১৫]
তাঁর নবুওয়তের নিদর্শন চতুষ্পদ জন্তুর মাঝেও প্রকাশ পেয়েছিল। একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জনৈক আনছারীর খেজুর বাগানে প্রবেশ করেন, সেখানে একটি উট ছিল। উটটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দেখে কাঁদতে লাগল। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে সে শান্ত হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উটের মালিককে বললেন,
أَفَلَا تَتَّقِى اللهَ فِى هَذِهِ الْبَهِيْمَةِ الَّتِىْ مَلَّكَكَ اللهُ إِيَّاهَا فَإِنَّهُ شَكَى إِلَىَّ أَنَّكَ تُجِيْعُهُ وَتُدْئِبُهُ
‘তুমি কি এই প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর না যিনি তোমাকে এর মালিক বানিয়েছেন? এটি আমার কাছে অভিযোগ করেছে যে, তুমি তাকে কষ্ট দাও ও তাকে ক্লান্ত রাখ’।[১৬]
নবী করীম (ﷺ)-এর আরও নিদর্শন হল, তাঁর জন্য উপস্থিত পানাহারকে প্রবৃদ্ধি করে দেয়া হত। হুদাইবিয়াতে অবস্থানের সময় তাঁর সাথে দেড় হাজার ছাহাবী ছিলেন। জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (ﷺ) চামড়ার তৈরি পানির পাত্রে হাত রাখলেন। তখনি তার আঙ্গুলগুলোর মাঝখান থেকে ঝর্ণার মত পানি উপচে উঠতে লাগল। তারপর আমরা সে পানি পান করলাম ও ওযূ করলাম। জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলা হল, আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, আমরা যদি এক লক্ষও হতাম তবুও আমাদের জন্য পানি যথেষ্ট হত, তবে সেদিন আমরা দেড় হাজার ছিলাম।[১৭] যাতুর রিকা‘ নামক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অল্প পরিমাণ পানি এক পাত্রে রাখেন, সেখান থেকে সকল সৈন্যরা নিজ নিজ পাত্র ভর্তি করে পানি নিয়ে যান।
খায়বারে অবস্থানকালীন খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাহাবীদের কাছে যা আছে তা জমা করতে বললেন। তারপর তিনি সেগুলোতে বরকতের দু‘আ করলেন; পরে সেনাবাহিনীর সকলেই সেখান থেকে তৃপ্তিসহ আহার করেন। তারা ছিলেন পনেরশ’ জন। তাবূকে তাঁর সাথে প্রায় ত্রিশ হাজার লোক ছিলেন, যারা পানি তালাশ করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোন একটি ঝর্ণায় ওযূ করলে সেখান থেকে প্রচণ্ডভাবে পানির ফোয়ারা বইতে লাগল। অবশেষে সেখান থেকে সকলেই পানি পান করলেন।[১৮]
সামুরা ইবনু জুনদুব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পালা করে একটি পাত্র হতে আহার গ্রহণ করতাম। দশজন আহার করে চলে যেত, আবার দশজন খেতে বসত। আমরা বললাম, আপনাদের এ সহযোগিতা কোথা থেকে আসত? সামুরা বললেন, কিসে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ? এদিক থেকেই সাহায্য আসত- এই বলে তিনি আকাশের দিকে হাতে ইশারা করলেন’।[১৯]
তাঁর নবুওয়তের আরেকটি নিদর্শন হল, আল্লাহ তা‘আলা গাছপালা ও পর্বতমালাকে তাঁর অনুগত করে দিয়েছেন। যেমন, ‘একদা তিনি স্বীয় ছাহাবীদেরকে নিয়ে কোন এক উপত্যকায় অবতরণ করেন। তিনি দু’টি গাছ ধরে তাঁর অনুগত হতে নির্দেশ দিলে সে দু’টি তাঁর অনুগত হয়ে যায় এবং তাঁর নির্দেশে দু’টি গাছই সমবেত হয়ে একসাথে মিলে যায়’।[২০] ‘তিনি মক্কায় থাকাবস্থায় জিনেরা তাঁর কাছে সমবেত হয়ে কুরআন শুনছিল। তাদের উপস্থিতির এ খবরটি পাশে থাকা একটি গাছই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জানিয়েছিল’। তিনি মসজিদে নববীতে খেজুর গাছের একটি স্তম্ভের সাথে দাঁড়িয়ে খুত্ববা দিতেন। অতঃপর তাঁর জন্য মিম্বার প্রস্তত করা হলে তিনি যখন তাতে উঠে খুত্ববা দিলেন, তখন উক্ত খেজুর বৃক্ষের স্তম্ভটি বাচ্চাদের মত কাঁদতে লাগল। অবশেষে যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার উপর হাত রাখলেন তখন সেটি চুপ হয়ে গেল’।[২১]
তাঁর জন্য পর্বতমালা অনুগত হওয়ার অন্যতম নমুনা হল নিম্নোক্ত বাণী, إِنِّىْ لَأَعْرِفُ حَجَرًا بِمَكَّةَ كَانَ يُسَلِّمُ عَلَىَّ قَبْلَ أَنْ أُبْعَثَ إِنِّىْ لَأَعْرِفُهُ الْآنَ ‘আমি মক্কার এমন একটি পাথরকে চিনি যে, আমি নবী হওয়ার আগে থেকেই আমাকে সালাম করত। সেটিকে আমি এখনও চিনি’।[২২] একদা তিনি বিশিষ্ট কয়েকজন ছাহাবীকে নিয়ে উহুদ পাহাড়ে চড়লেন, তখন সেটি তাদেরসহ কাঁপতে লাগল। তারপর তিনি সেটিকে আঘাত করে বললেন, ‘তুমি শান্ত হও, তারপর সেটি স্থির হয়ে যায়’।[২৩]
তাঁর নবুওয়তের আরেকটি নিদর্শন হল, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করেছেন। মক্কায় কাফেরদের উপর দু’টি পাহাড় চাপিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য মালাকুল জিবাল বা পাহাড়ে নিযুক্ত ফেরেশতা অনুমতি চেয়েছিলেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে ছাড় দিতে বলেছিলেন। বদর যুদ্ধ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, اِذۡ یُوۡحِیۡ رَبُّکَ اِلَی الۡمَلٰٓئِکَۃِ اَنِّیۡ مَعَکُمۡ ‘স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদের প্রতি অহী প্রেরণ করেন যে, নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি (সূরা আল-আনফাল : ১২)। হিজরত সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি ছিলেন দু’জনের মধ্যে দ্বিতীয়জন, যখন তাঁরা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল। তিনি তখন তাঁর সঙ্গীকে বলেছিলেন, لَا تَحۡزَنۡ اِنَّ اللّٰہَ مَعَنَا ۚ فَاَنۡزَلَ اللّٰہُ سَکِیۡنَتَہٗ عَلَیۡہِ وَ اَیَّدَہٗ بِجُنُوۡدٍ لَّمۡ تَرَوۡہَا ‘চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ তো আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর উপর তাঁর প্রশান্তি নাযিল করেন এবং তাঁকে শক্তিশালী করেন এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা যা তোমরা দেখনি (সূরা আত-তাওবাহ : ৪০)। বদরে তাঁর সাথে শ্রেষ্ঠ ফেরেশতারা যুদ্ধ করেছেন।[২৪] আর উহুদ যুদ্ধে নবী (ﷺ)-কে দেখানো হয়েছে যে, তাঁর পক্ষ হয়ে জিবরীল ও মিকাঈল প্রচ-ভাবে যুদ্ধ করছেন।[২৫] খন্দক থেকে বনূ কুরাইযা পর্যন্ত জিবরীল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে ছিলেন।[২৬]
তাঁর নবুওয়তের আরেকটি নিদর্শন হল, আল্লাহ তা‘আলা শত্রুদের থেকে তাঁর নবুওয়তকালে তাঁকে হেফাযত করেছেন। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, وَ اللّٰہُ یَعۡصِمُکَ مِنَ النَّاسِ ‘আর আল্লাহ আপনাকে লোকদের থেকে রক্ষা করবেন’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৬৭)। ফলে তারা সংখ্যাধিক্য ও শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারেনি, বরং তিনি তাদের উপর বিজয়ী হয়েছেন। জনৈক ইহুদী তাঁকে যাদু করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের যাদুর বিষয়টি প্রকাশ করে দিয়ে তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেন। তারা বকরির মাংসে বিষ মিশিয়ে রাসূলের ক্ষতি করতে চেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিলেন।
তাঁর নবুওয়তের আরেকটি নিদর্শন হল, তাঁর পবিত্র ও পূর্ণাঙ্গ চরিত্র ও আচরণ। তাঁর লক্ষ্য পূরণ ও বিজয় লাভ এবং তাঁর প্রতি সৃষ্টির আনুগত্য ও জীবন উৎসর্গ সত্ত্বেও তিনি মৃত্যুকালে নিজের খচ্চর ও হাতিয়ার ছাড়া কোন দিনার দিরহাম, উট, ভেড়া কিছুই রেখে যাননি। তাঁর বর্মটি এক ইয়াহুদীর কাছে ত্রিশ ছা’ যবের বিনিময়ে বন্ধক রাখা ছিল, যা তিনি নিজ পরিবারের জন্য গ্রহণ করেছিলেন।
(খত্বীব বলেন) হে মুসলিমগণ! রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর জীবন-চরিত কেউ অধ্যয়ন করলে, সে জানতে পারবে যে, তিনি প্রকৃতই আল্লাহর প্রেরিত রাসূল (ﷺ)। তিনি এমন মহাসত্য বাণী নিয়ে এসেছেন যা পূর্বাপর কেউই এ রকম কিছু শ্রবণ করেনি। তিনি সর্বদা তাঁর উম্মতকে তাওহীদের নির্দেশ দিয়েছেন, কল্যাণের দিকনির্দেশ দিয়েছেন, অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জন্য অত্যাশ্চর্য নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন নিয়ে আগমন করেছেন এবং সকল উম্মতের ভাল গুণাবলীকে একত্রিত করেছেন; ফলে তাঁর উম্মত শ্রেষ্ঠত্বে ও সকল গুণে অন্যদের চেয়ে পরিপূর্ণ হয়েছে। তারা এই শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর মাধ্যমেই অর্জন করেছে এবং তাঁর কাছ থেকেই শিক্ষা নিয়েছে। এগুলোর প্রতি তিনিই তাদেরকে আহ্বান করেছেন; ফলে তারা জগতের সেরা শিক্ষিত, ধার্মিক, ন্যায়পরায়ণ ও মর্যাদার অধিকারী হতে পেরেছে। মহান আল্লাহ বলেন,
قُلۡ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ یُوۡحٰۤی اِلَیَّ اَنَّمَاۤ اِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ ۚ فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّہٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّہٖۤ اَحَدًا
‘(হে নবী!) আপনি বলুন! আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ, আমার প্রতি অহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র সত্য ইলাহ। কাজেই যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকাজ করে ও তার রবের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (সূরা আল-কাহফ : ১১০)।
দ্বিতীয় খুত্ববাহ
মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর ছালাত ও সালামের পর সম্মানিত খত্বীব বলেছেন, হে মুসলিমগণ! আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিদর্শনাবলী ও তাঁর সত্যতার প্রমাণ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা ঈমানকে বৃদ্ধি করে। তাঁর উজ্জ্বল সৎকর্ম, সৌন্দর্য্য এবং পবিত্র শরী‘আতের দিকে বারবার দৃষ্টি বুলালে মর্যাদা লাভ করা যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাড়া আল্লাহকে চিনার জন্য আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। আর যে ব্যক্তি তাঁর রিসালাতের সত্যতা ও সুস্পষ্ট প্রমাণ জানতে চায়, তার উচিত আল কুরআনের প্রতি মনোনিবেশ করা। যখন মানুষের জন্য অন্য সব বস্তুর চেয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সত্যায়ন করা অধিক যরূরী, তখন আল্লাহ তা‘আলা নবীগণের সত্যতার প্রমাণ বহণকারী নিদর্শনসমূহকে সহজতর করে দিয়েছেন। এছাড়াও সেগুলোকে সংখ্যায় অনেক এবং প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন, যেন তাঁর প্রতি ঈমান আনা থেকে কেবল অবাধ্য ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ পিছপা না হয়। অহংকারী ছাড়া আর কেউ সংশয় প্রকাশ না করে। বস্তুত যাবতীয় কল্যাণ বিদ্যমান রয়েছে নবুওয়তের সত্যায়ন ও তাঁর অনুসরণে অবিচল থাকার মাঝে। জেনে রাখুন যে, আল্লাহ তা‘আলা আপনাদেরকে তাঁর নবীর উপর ছালাত ও সালাম পাঠ করতে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,
اِنَّ اللّٰہَ وَ مَلٰٓئِکَتَہٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡہِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا
‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতামণ্ডলী নবীর উপর দরূদ (রহমত) প্রেরণ করেন। (অতএব) হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর উপর দরূদ ও সালাম পেশ কর’ (সূরা আল-আহযাব : ৫৬)।
পরিশেষে খত্বীব মহোদয় আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ করেন। মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের জন্য দু‘আ চাওয়ার মাধ্যমে খুত্ববাহ সমাপ্ত করেন।
* পি-এইচ.ডি গবেষক, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব এবং বাংলা আলোচক ও জুমু‘আর খুৎবার লাইভ অনুবাদক, মসজিদে নববী।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯৮১, ৭২৭৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৯।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৪১৯৭, ৪১৯৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৫।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৪২৬১।
[৫]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৪৫৫।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪৮১।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৯০৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৮২।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৭৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৮৮।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৩২০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৯।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৬০৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৯১।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৩৭৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৮১।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৯১।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৪২।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৪০৩৯।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৭০১।
[১৬]. আবূ দাঊদ, হা/২৫৪৯, সনদ ছহীহ।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৫৭৬।
[১৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭০৬।
[১৯]. তিরমিযী, হা/৩৬২৫, সনদ ছহীহ।
[২০]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩০১২।
[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৫৮৩।
[২২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৭৭।
[২৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৭৫।
[২৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৯৯২।
[২৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৪০৪১, ৪০৫৪।
[২৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৪১১৭।
প্রসঙ্গসমূহ »:
খুত্ববাতুল হারামাইন