বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন

যালিমের পতন ও মযলুমের বিজয় অবধারিত 

-খত্বীব : শায়খ ছালাহ বিন মুহাম্মাদ আল-বুদাইর 
-অনুবাদ : হারুনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী* 


[গত ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হি. মোতাবেক ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখের ‘মসজিদে নববী, মদীনাতুল মুনাওয়ারা’-এর জুমু‘আর খুত্ববার বঙ্গানুবাদ]

আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর ছালাত ও সালামের পরে সম্মানিত খত্বীব বলেছেন, হে মুসলিমগণ! আপনারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করুন। আর যারা শৈথিল্য প্রদর্শন করে, মন্দ আমল করে এবং যারা দুর্ভাগা, আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত তাদের মত হবেন না। মহান আল্লাহ বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ حَقَّ تُقٰتِہٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ  اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ  مُّسۡلِمُوۡنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন কর এবং মুসলিম না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১০২)।

হে মুসলিমগণ! যামানা পরিবর্তনশীল, বিপদাপদ পর্যায়ক্রমে আবর্তনশীল, আর এর সাথে শান্তি ও যুদ্ধ, তিক্ততা ও মিষ্টতা, প্রাচুর্য ও দুর্ভিক্ষ জড়িত। একজন মুমিনের নিকট যত বড় বিপদ ও সীমাহীন পরীক্ষা আসুক না কেন, সে জানে যে আল্লাহর লিখিত ফয়সালা ও নির্ধারিত তাক্বদীরের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনি যা ফয়সালা করে রেখেছেন তা সংঘটিত হবেই, যা নির্ধারণ করেছেন তা আসবেই এবং যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অপেক্ষমাণ। আল্লাহ যা চান তা-ই হয়, তিনি যে হুকুম করেন তা-ই বাস্তবায়িত হয়। তিনি যা প্রবর্তন করেন তার কোন প্রতিরোধকারী নেই, আর যা প্রতিরোধ করেন তার কোন প্রবর্তনকারী নেই। তিনি যা দেন তা রোধ করার কেউ নেই আর যা রোধ করেন তা দেবার কেউ নেই। আমাদের রব যা চান তা-ই করেন। সুতরাং অস্থিরতা ও উদ্বেগের কোন কারণ নেই; বরং ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে এবং এই সুধারণা রাখতে হবে যে, মুসলিম ও মুমিনদের অবশ্যই বিজয় আসবে, আর যালিম ও সীমালঙ্ঘনকারীরা অবশ্যই লাঞ্ছিত, অপদস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَ اللّٰہُ غَالِبٌ عَلٰۤی اَمۡرِہٖ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا  یَعۡلَمُوۡنَ ‘আল্লাহ নিজ কর্ম সম্পাদনে প্রবল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না’ (সূরা ইউসুফ : ২১)।

হে মুসলিমগণ! আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম গাজাবাসীদের উপর ইতিহাসে নজিরবিহীন যে বিপদ ও দুর্যোগ নেমে এসেছে তার ব্যাথা ও বেদনায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। শত্রুর ষড়যন্ত ও অত্যাচার চরম সীমায় পৌঁছেছে। তবে যুলুম-অত্যাচার দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তা অচিরেই নিশ্চিহ্ন ও বিলীন হবে । যুগ পরিবর্তনশীল, আর অচিরেই অত্যাচারীরা দাম্ভিকতার পরিণতি জানতে পারবে।

عَنْ أَبِىْ مُوسَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ لَيُمْلِىْ لِلظَّالِمِ حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ. قَالَ ثُمَّ قَرَأَ (وَ کَذٰلِکَ اَخۡذُ رَبِّکَ اِذَاۤ اَخَذَ الۡقُرٰی وَ ہِیَ  ظَالِمَۃٌ  اِنَّ  اَخۡذَہٗۤ اَلِیۡمٌ شَدِیۡدٌ ) .

আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যালিমদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাকে পাকড়াও করেন, তখন আর ছাড়েন না। এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন ‘‘এবং এরূপই আপনার রবের শাস্তি। তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূকে যখন তারা যুলুম করে থাকে। তার শাস্তি মর্মন্তুদ, কঠিন’’ (সূরা হূদ : ১০২)।[১]

হে মুসলিমগণ! অত্যাচারী আগ্রাসীরা কতটা প্রতিরক্ষা শক্তি, নিখুঁত আক্রমণ এবং ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিল! কিন্তু নিপিড়ীত-মজলুমদেরকে আল্লাহ যে ধৈর্য ও শুভ পরিণাম দান করেন তারা সে সম্পর্কে গাফেল ছিল। যালিম যতই শক্তিশালী এবং মযলুম যতই অসহায় হোক; নিঃসন্দেহে যালিম পরাজিত, অপদস্থ ও শৃংখলিত হবে। যালিমের পরাজয় অত্যাসন্ন, আর সবচেয়ে কার্যকর তীর হল নির্যাতিতদের দু‘আ; চিরঞ্জীব সর্বসত্ত্বার ধারক তা ঊর্ধ্বাকাশে উত্তোলন করেন। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمُ الإِمَامُ الْعَادِلُ وَالصَّائِمُ حِيْنَ يُفْطِرُ وَدَعْوَةُ الْمَظْلُوْمِ يَرْفَعُهَا فَوْقَ الْغَمَامِ وَتُفَتَّحُ لَهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَيَقُوْلُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ وَعِزَّتِىْ لَأَنْصُرَنَّكِ وَلَوْ بَعْدَ حِيْنٍ.

তিন ব্যক্তির দু‘আ রদ হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসক, ছিয়ামপালনকারী যতক্ষণ না ইফতার করে এবং মযলুমের দু‘আ। ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার দু‘আ মেঘমালার উপরে তুলে নিবেন এবং তার জন্য আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং আল্লাহ বলবেন, আমার মর্যাদার শপথ! কিছুকাল পরে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব, একটু বিলম্বেই হোক না কেন।[২]

সুতরাং তিনি কতই না মহান যিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্তের আর্তনাদ শ্রবণ করেন, বিপদগ্রস্তের ডাক শুনেন! অতঃপর তিনি মযলুমের সম্মান বৃদ্ধি করেন ও যালিমকে ধ্বংস করেন; ফলে যালিম অপদস্ত হয়।

হে মুসলিমগণ! নিশ্চয় সীমালঙ্ঘনকারী যালিম ঘৃণা, শত্রুতা এবং হিংসা-বিদ্বেষের অনুভূতির মাঝে বেষ্টিত থাকে; ফলে সে শান্তিতে থাকে না এবং নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারে না। বরং তার জীবন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং বিপদাপদ ও নিদ্রাহীনতায় পূর্ণ থাকে- যতই না সে মিথ্যাকে ঢাল হিসাবে গ্রহণ করুক, ছলনার আশ্রয় নিক এবং নিজেকে অত্যাচারিত, নিপীড়িত ও আক্রান্ত হিসাবে জাহির করুক। কেননা যুলুম হল শত্রুতা আনায়নকারী এবং কষ্ট-ক্লেশের কারণ। আর অন্যায় নে‘মত ছিনিয়ে নেয় এবং প্রতিশোধ পরায়ন করে তোলে।

হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তা‘আলা কখনো কাফেরদের উপর কল্যাণ অথবা প্রতিরক্ষা বা মর্যাদার নে‘মত দিয়ে থাকেন। তবে এটা তাঁর পক্ষ থেকে নে‘মত ও দানের আদলে তাদেরকে ধীরে ধীরে পাকড়াও করার প্রক্রিয়া। আল্লাহ বলেন,

وَ لَا یَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنَّمَا نُمۡلِیۡ لَہُمۡ خَیۡرٌ لِّاَنۡفُسِہِمۡ ؕ اِنَّمَا نُمۡلِیۡ لَہُمۡ لِیَزۡدَادُوۡۤا اِثۡمًا ۚ وَ لَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ.

‘কাফিরগণ যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাদের মঙ্গলের জন্য, আমি অবকাশ দিয়ে থাকি যাতে তাদের পাপ বৃদ্ধি পায়। আর তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৭৮)। তিনি আরো বলেন, وَ  اُمۡلِیۡ   لَہُمۡ ؕ۟ اِنَّ  کَیۡدِیۡ مَتِیۡنٌ ‘আর আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি; নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৮৩)। তিনি আরো বলেন,

اَیَحۡسَبُوۡنَ اَنَّمَا نُمِدُّہُمۡ بِہٖ مِنۡ مَّالٍ وَّ بَنِیۡنَ . نُسَارِعُ  لَہُمۡ فِی الۡخَیۡرٰتِ ؕ بَلۡ لَّا یَشۡعُرُوۡنَ.

‘তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে যে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সহযোগিতা করছি, তার মাধ্যমে তাদের জন্য সকল মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা উপলব্ধি করে না’ (সূরা আল-মুমিনূন : ৫৫-৫৬)। তাদের এ সমৃদ্ধি নানাবিধ মুছীবত ও বিপদ দ্বারা পরিবেষ্টিত, রোগ ও দুর্দশায় ভরা এবং আতঙ্ক ও তৃপ্তির অভাব দ্বারা পরিপূর্ণ। আল্লাহ বলেন,

وَ لَا یَزَالُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا تُصِیۡبُہُمۡ بِمَا صَنَعُوۡا قَارِعَۃٌ  اَوۡ  تَحُلُّ قَرِیۡبًا مِّنۡ دَارِہِمۡ حَتّٰی یَاۡتِیَ  وَعۡدُ  اللّٰہِ ؕ اِنَّ  اللّٰہَ  لَا یُخۡلِفُ  الۡمِیۡعَادَ.

‘আর যারা কুফর করেছে তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে, অথবা বিপর্যয় তাদের আবাসের আশেপাশে আপতিত হতেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এসে পড়বে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না’ (সূরা আর-রা‘দ : ৩১)। তিনি আরো বলেন, لَا یَغُرَّنَّکَ تَقَلُّبُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فِی الۡبِلَادِ  ‘যারা কুফরী করেছে, দেশে দেশে তাদের অবাধ বিচরণ যেন কিছুতেই আপনাকে বিভ্রান্ত না করে’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৯৬)। তাদের প্রস্তুতি ও রসদ যেন আপনাকে বিচলিত না করে, তাদের দাম্ভিকতা ও স্বেচ্ছাচারিতা যেন বিভ্রান্ত না করে এবং তাদের শক্তি, অস্ত্র ও সরঞ্জাম যেন চিন্তিত না করে। মহান আল্লাহ বলেন,مَتَاعٌ قَلِیۡلٌ ۟ ثُمَّ مَاۡوٰىہُمۡ جَہَنَّمُ ؕ وَ بِئۡسَ الۡمِہَادُ ‘এ তো স্বল্পকালীন ভোগ মাত্র; তারপর জাহান্নাম তাদের আবাস; আর ওটা কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল! (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৯৭)। আল্লাহ আরো বলেন,

اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَہُمۡ لِیَصُدُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ فَسَیُنۡفِقُوۡنَہَا ثُمَّ تَکُوۡنُ عَلَیۡہِمۡ حَسۡرَۃً  ثُمَّ یُغۡلَبُوۡنَ ۬ؕ وَ الَّذِیۡنَ  کَفَرُوۡۤا اِلٰی  جَہَنَّمَ  یُحۡشَرُوۡنَ.

‘নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে, তারা আল্লাহর পথ থেকে লোকদেরকে নিবৃত্ত করার জন্য তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, অচিরেই তারা তা ব্যয় করবে; তারপর সেটা তাদের আফসোসের কারণ হবে, এরপর তারা পরাভূত হবে। আর যারা কুফরী করেছে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে’ (সূরা আল-আনফাল : ৩৬)।

দ্বিতীয় খুত্ববা

আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর ছালাত ও সালামের পরে সম্মানিত খত্বীব বলেছেন, হে মুসলিমগণ! আপনারা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করুন। কেননা তাঁর তাক্বওয়া সর্বাধিক শক্তিশালী ও পূর্ণাঙ্গ সাহায্যকারী। সকল বিষয় তাঁর জন্য সহজ, সকল বস্তু তাঁর মুখাপেক্ষী ও সকলকে তাঁর নিকটেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। মুসলিমদের উপর সংঘটিত সীমাহীন যুলুম ও অবিচার তাঁর নিকট গোপন নয়, আর নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম। তিনি বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ کُوۡنُوۡا مَعَ  الصّٰدِقِیۡنَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (সূরা আত-তাওবা : ১১৯)।

হে মুসলিমগণ! কালের দু’টি রূপ মিষ্টতা ও তিক্ততা এবং যুগের রয়েছে কঠিন ও সহজ আবর্তন। প্রত্যেক দুর্দশার পরই স্বাচ্ছন্দ্য আসে, সকল কষ্টই একসময় দূরীভূত হবে। নিশ্চয় পঙ্কিলতার পরে স্বচ্ছতা আসে, বৃষ্টির পরে আকাশ পরিস্কার হয়, সূর্য অস্তমিত হয়ে আবার উদিত হয় এবং বাগান কৃশকায় হওয়ার পর আবার প্লাবিত হয়। আর আল্লাহ একদিন অত্যাচারী থেকে প্রতিশোধ নিবেন এবং সীমালঙ্ঘনকারী থেকে বদলা নিবেন।

সুতরাং আপনারা আল্লাহর আনুগত্য করুন ও মুসলিম জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরুন, বিভেদ ও সংঘাত পরিহার করুন এবং বিতর্ক ও বিরোধিতা পরিত্যাগ করুন। জেনে রাখুন! যে ব্যক্তি মনগড়া কাজ করে সে কষ্টের সম্মুখীন হয়। আর যে তার মন্দ বিষয় সংশোধন করে নেয় সে তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীকে ধ্বংস করে দেয়। সর্বাধিক সংরক্ষিত ঢাল হল উম্মাহর সালাফদের পথ অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা।

হে মুসলিমগণ! এক আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহণ ব্যতীত যন্ত্রণা প্রশমিত হয় না ও ভীতি দূরীভুত হয় না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায়; তার ব্যাথা থেমে যায় ও দুঃখ নিঃশেষ হয়।

অস্থিরতা তাক্বদীর প্রতিহত করতে পারে না। যখন মৃত্যু পরিবেষ্টন করে ও ভীতিকর বিষয় নেমে আসে তখন আপনারা মাওলার নিকট আশ্রয় গ্রহণ করুন, তাঁর নিকট আপনাদের চাহিদা ও অভিযোগ ব্যক্ত করুন এবং তাঁর নিকট বিপদমুক্তির দু‘আ করুন। আপনারা মিনতি ও দু‘আর মাধ্যমে বিপদ মুক্তি কামনা করুন। কেননা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হল দু‘আ। সবচেয়ে অক্ষম ব্যক্তি সেই যে দু‘আ করতে অক্ষম। একমাত্র দু‘আই তাক্বদীরের পরিবর্তন করতে পারে। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তি রহমত থেকে বঞ্চিত এবং তাকে ব্যতীত অন্যের দিকে মনোনিবেশকারী ব্যক্তি সর্বহারা ও বিতাড়িত।

অতঃপর, আপনারা দরূদ ও সালাম পাঠ করুন পথপ্রদর্শক ও সমগ্র মানবজাতির সুপারিশকারী আহমদ (ﷺ)-এর উপর। কেননা যে ব্যক্তি তার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ সে ব্যক্তির উপর দশটি রহমত নাযিল করেন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী ও নেতা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর ছালাত ও সালাম নাযিল করুন; যিনি রহমত ও সওয়াবের সুসংবাদদাতা, আযাব ও শাস্তির ব্যাপারে সতর্ককারী এবং ক্বিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী ও তাঁর সুপারিশ গৃহিত হবে। হে আল্লাহ! আপনি ছালাত ও সালাম বর্ষণ করুন তাঁর উপর ও তাঁর পরিবারবর্গ সহ সকল সহচরবৃন্দের উপর। তাঁদের সঙ্গে আমাদের প্রতিও সন্তুষ্ট হয়ে যান হে মহানুভব, মহাদাতা আল্লাহ!

পরিশেষে খত্বীব মহোদয় আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ করেন। মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের জন্য দু‘আ চাওয়ার মাধ্যমে খুত্ববা সমাপ্ত করেন।


* পি-এইচ.ডি গবেষক, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব এবং বাংলা আলোচক ও জুমু‘আর খুৎবার লাইভ অনুবাদক, মসজিদে নববী।

[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৬৮৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৩।

[২]. তিরমিযী, হা/২৫২৬, সনদ ছহীহ।




প্রসঙ্গসমূহ »: খুত্ববাতুল হারামাইন
সদাচরণ-ই হচ্ছে দ্বীন - অনুবাদ : শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
কোমল ও নম্র আচরণ - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
যালিমের পতন ও মযলুমের বিজয় অবধারিত - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
নেক কাজে অটলতা - অনুবাদ : শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
ফিতনার সময় রাসূূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মানহাজ - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
তাক্বওয়া ও তার বহিঃপ্রকাশ - অনুবাদ : শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
শাসক নির্বাচন ও আনুগত্যের গুরুত্ব - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
ইসলামী শরী‘আহর সৌন্দর্য - অনুবাদ : শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
মহান আল্লাহর গুণাবলীর প্রভাব - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
উদাসীনতার কুফল এবং এর প্রতিকার - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
দ্বীন মানেই হচ্ছে শুভকামনা - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী
কষ্টের পরেই সুখ আছে - অনুবাদ : হারূনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী

ফেসবুক পেজ