উদাসীনতার কুফল এবং এর প্রতিকার
-খত্বীব : শায়খ আহমাদ বিন তালেব বিন হামীদ
-অনুবাদ : হারুনুর রশীদ ত্রিশালী আল-মাদানী*
[গত ২৯ জুমা. আখের ১৪৪৫ হি. মোতাবেক ১২ জানুয়ারী, ২০২৪ তারিখের ‘মসজিদে নববী, মদীনাতুল মুনাওয়ারা’-এর জুমু‘আর খুত্ববার বঙ্গানুবাদ]*
আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর ছালাত ও সালামের পরে সম্মানিত খত্বীব বলেছেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জীবন ও মরণ দান করেন, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। তাঁর নামসমূহ পবিত্র ও তার গুণাবলী মহিমান্বিত। তিনি ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই, তিনি প্রজ্ঞাময়, অভিজ্ঞ। তিনি কুরআন, উপদেশাবলী, হিকমত ও শোকরযোগ্য সৎআমলের মাধ্যমে হৃদয়গুলো পুনর্জীবিত করেন। হক্ব বিমূখ ব্যক্তিকে তিনি তার নিজের নিকট সোপর্দ করেন, ফলে সে ক্ষতি, উদাসীনতা ও ধোঁকায় নিপতিত হয়। আমি আমার রবের প্রশংসা করছি তাঁর সকল নে‘মতের জন্য এবং তাঁর মহা অনুগ্রহের জন্য তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নবী ও নেতা মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী ও উজ্জ্বল প্রদীপ। হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ), তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবীদের উপর ছালাত, সালাম ও বরকত অবতীর্ণ করুন । দ্বীনের বিষয়ে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রত্যেক মুমিনের জন্য তিনি ছিলেন আদর্শ ।
অতঃপর, আপনারা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করুন; তাঁর পছন্দনীয় আমল সম্পাদন এবং অপছন্দনীয় কাজ পরিহার করার মাধ্যমে। কেননা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বনে পার্থিব সুখ ও পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাত লাভের সফলতা নিহিত রয়েছে। সুতরাং সুসংবাদ তার জন্য যে তাক্বওয়া অবলম্বন করে। পক্ষান্তরে দুর্ভাগ্য তার জন্য যে তা থেকে দূরে থাকে ও তদানুযায়ী আমল করে না।
আল্লাহর বান্দাগণ! অন্তর সংশোধনকারী আমল দ্বারা আপনারা আপনাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করুন এবং সম্ভাব্য বিনষ্টকারী বিষয় থেকে এটাকে সংরক্ষণে রাখুন; কেননা অন্তর হচ্ছে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রক। এ মর্মে নবী (ﷺ) বলেছেন, أَلَا وَإِنَّ فِى الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ . أَلَا وَهِىَ الْقَلْبُ ‘জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি মাংসপিণ্ড রয়েছে, সেটি যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর সেটি যখন খারাপ হয়ে যায় গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে মাংসপিণ্ডটি হল কলব তথা অন্তর’।[১]
আপনারা কি জানেন অন্তরের সবচেয়ে বড় ব্যাধি সম্পর্কে, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়? অথবা তাতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কল্যাণের অসংখ্য দ্বার থেকে বঞ্চিত করা হয়? জেনে রাখুন, অন্তরের সবচেয়ে বড় ব্যাধিসমূহের অন্যতম হল গাফলতি। বস্তুত চরম গাফলতির কারণে কাফের ও মুনাফিক্বেরা হতভাগ্য হয়েছে এবং এটি তাদেরকে জাহান্নামে স্থায়ী হওয়াকে অবধারিত করেছে। মহান আল্লাহ বলেন,
مَنۡ کَفَرَ بِاللّٰہِ مِنۡۢ بَعۡدِ اِیۡمَانِہٖۤ اِلَّا مَنۡ اُکۡرِہَ وَ قَلۡبُہٗ مُطۡمَئِنٌّۢ بِالۡاِیۡمَانِ وَ لٰکِنۡ مَّنۡ شَرَحَ بِالۡکُفۡرِ صَدۡرًا فَعَلَیۡہِمۡ غَضَبٌ مِّنَ اللّٰہِ ۚ وَ لَہُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ . ذٰلِکَ بِاَنَّہُمُ اسۡتَحَبُّوا الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا عَلَی الۡاٰخِرَۃِ ۙ وَ اَنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡکٰفِرِیۡنَ . اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ طَبَعَ اللّٰہُ عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ وَ سَمۡعِہِمۡ وَ اَبۡصَارِہِمۡ ۚ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ .
‘কেউ তার ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফরী করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয় কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচলিত। এটা এ জন্য যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়। আর আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না। এরাই তারা, আল্লাহ যাদের অন্তর, কান ও চোখে মোহর মেরে দিয়েছেন। আর তারাই গাফিল’ (সূরা আন-নাহাল : ১০৬-১০৮)।
একজন মুসলিমের পক্ষে কল্যাণকর কোন কাজে এবং কল্যাণকর উপকরণ গ্রহণে ও অকল্যাণ হতে নাজাতের পথ অবলম্বনে গাফলতি হতে পারে। ফলে তার গাফলতির পরিমাণ অনুসারে কল্যাণমূলক কাজের সওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হয়। আর নাজাতের অবলম্বন পরিত্যাগ করার কারণে তার গাফলতির পরিমাণ অনুসারে দুর্ভাগ্য ও মন্দ দ্বারা তাকে শাস্তি দেয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَ لِکُلٍّ دَرَجٰتٌ مِّمَّا عَمِلُوۡا ۚ وَ لِیُوَفِّیَہُمۡ اَعۡمَالَہُمۡ وَ ہُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ ‘আর প্রত্যেকের জন্য তাদের আমল অনুসারে মর্যাদা রয়েছে এবং যাতে আল্লাহ প্রত্যেকের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না’ (সূরা আল-আহকাফ : ১৯)। তিনি আরো বলেন,
وَ اَنۡ لَّیۡسَ لِلۡاِنۡسَانِ اِلَّا مَا سَعٰی . وَ اَنَّ سَعۡیَہٗ سَوۡفَ یُرٰی . ثُمَّ یُجۡزٰىہُ الۡجَزَآءَ الۡاَوۡفٰی.
‘আর এই যে, মানুষ তাই পায় যা সে চেষ্টা করে। আর তার প্রচেষ্টার ফল শীঘ্রই দেখা যাবে। তারপর তাকে দেয়া হবে পূর্ণ প্রতিদান’ (সূরা আন-নাজম : ৩৯-৪১)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর রবের থেকে বর্ণনা করে বলেন, ‘তোমরা আমার অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ কর এবং তোমাদের আমল অনুপাতে নিজের অংশ গ্রহণ কর’।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেছেন, ‘একদল লোক সর্বদা পিছনে থাকবে ফলে মহান আল্লাহও তাদেরকে পিছনে ফেলে রাখবেন। যদিও তারা জান্নাতে প্রবেশ করে’।
নাজাতের উপকরণ গ্রহণে উদাসীনতার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَوَ لَمَّاۤ اَصَابَتۡکُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ قَدۡ اَصَبۡتُمۡ مِّثۡلَیۡہَا ۙ قُلۡتُمۡ اَنّٰی ہٰذَا ؕ قُلۡ ہُوَ مِنۡ عِنۡدِ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ .
‘কি ব্যাপার! যখন তোমাদের উপর মুছীবত আসল (ওহুদের যুদ্ধে) তখন তোমরা বললে, এটা কোত্থেকে আসল? অথচ তোমরা তো দ্বিগুণ বিপদ ঘটিয়েছিলে (বদরের যুদ্ধে)। বলুন, এটা তোমাদের নিজেদেরই কাছ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান’ (সূরা আলে-ইমরান : ১৬৫)। তিনি আরো বলেন, وَ مَاۤ اَصَابَکُمۡ مِّنۡ مُّصِیۡبَۃٍ فَبِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِیۡکُمۡ وَ یَعۡفُوۡا عَنۡ کَثِیۡرٍ ‘আর তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তোমাদের হাত যা অর্জন করেছে তার কারণে এবং অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন’ (সূরা আশ-শূরা : ৩০)। উক্ত আয়াতে মুসলিমদের ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে কাফেরদের নয়। কেননা কাফেরদের অপরাধ কুফুরী ত্যাগ করা ব্যতীত ক্ষমা করা হয় না।
গাফলতির অর্থ হল: ইচ্ছাকৃতভাবে কল্যাণ কামনা না করা ও তা পছন্দ না করা, সেই সাথে উপকারী জ্ঞান ও সৎকর্ম থেকে অন্তর শূন্য হওয়া। আর এটাই হল ধ্বংসকারী চরম গাফলতি। বস্তুত এ জাতীয় গাফলতী কাফের ও মুনাফিক্বদের মাঝে বিরাজ করে এবং এটা কারো মাঝে থাকলে সে আল্লাহর নিকট তাওবা করা ব্যতীত সফলকাম হবে না।
যখন উদাসীনতা কোন ব্যক্তির উপর প্রাধান্য বিস্তার করে তখন সে কেবল ধারণা ও মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং এটাকে শয়তান তার নিকট সুশোভিত করে তোলে। আর তার চিত্ত নানা কুপ্রবৃত্তিকে ভালোবাসে। এ জাতীয় গাফলতির কারণেই আল্লাহ তা‘আলা কাফের এবং মুনাফিক্বদের দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি প্রদান করবেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ لَقَدۡ ذَرَاۡنَا لِجَہَنَّمَ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ ۫ۖ لَہُمۡ قُلُوۡبٌ لَّا یَفۡقَہُوۡنَ بِہَا ۫ وَ لَہُمۡ اَعۡیُنٌ لَّا یُبۡصِرُوۡنَ بِہَا ۫ وَ لَہُمۡ اٰذَانٌ لَّا یَسۡمَعُوۡنَ بِہَا ؕ اُولٰٓئِکَ کَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ ہُمۡ اَضَلُّ ؕ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ.
‘আর আমি তো বহু জিন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি; তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে তা দ্বারা তারা শুনে না; তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তার চেয়েও বেশী বিভ্রান্ত। তারাই হচ্ছে গাফেল’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৭৯)। তিনি আরো বলেন,
فَلَمَّا کَشَفۡنَا عَنۡہُمُ الرِّجۡزَ اِلٰۤی اَجَلٍ ہُمۡ بٰلِغُوۡہُ اِذَا ہُمۡ یَنۡکُثُوۡنَ . فَانۡتَقَمۡنَا مِنۡہُمۡ فَاَغۡرَقۡنٰہُمۡ فِی الۡیَمِّ بِاَنَّہُمۡ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ کَانُوۡا عَنۡہَا غٰفِلِیۡنَ.
‘আমি যখনই তাদের উপর থেকে শাস্তি দূর করে দিতাম এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যা তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল, তারা তখনই তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করত। কাজেই আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি এবং তাদেরকে অতল সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছি। কারণ তারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করত এবং এ সম্বন্ধে তারা ছিল গাফেল’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৩৫-১৩৬)। তিনি আরো বলেন, وَ اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ النَّاسِ عَنۡ اٰیٰتِنَا لَغٰفِلُوۡنَ ‘আর নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই আমার নিদর্শন সম্বন্ধে গাফিল’ (সূরা ইউনুস : ৯২)।
আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিক্বদের সম্পর্কে বলেন, ‘তারা বধির, বোবা, অন্ধ, কাজেই তারা বুঝে না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭১)৷ তিনি আরো বলেন, وَ اَنۡذِرۡہُمۡ یَوۡمَ الۡحَسۡرَۃِ اِذۡ قُضِیَ الۡاَمۡرُ ۘ وَ ہُمۡ فِیۡ غَفۡلَۃٍ وَّ ہُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ ‘আর তাদেরকে সতর্ক করে দিন পরিতাপের দিন সম্বন্ধে, যখন সব সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। অথচ তারা রয়েছে গাফলতিতে নিমজ্জিত এবং তারা ঈমান আনছে না’ (সূরা মারইয়াম : ৩৯)।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন জান্নাতের অধিবাসীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জাহান্নামের অধিবাসীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন মৃত্যুকে একটি ধুসর রঙের মেষের আকৃতিতে আনা হবে। তখন একজন সম্বোধনকারী ডাক দিয়ে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! তখন তারা মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে। সম্বোধনকারী বলবেন, তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, এতো মৃত্যু। কেননা প্রত্যেকেই তাকে দেখেছে। তারপর সম্বোধনকারী আবার ডেকে বলবেন, হে জাহান্নামবাসী! জাহান্নামীরা মাথা উঁচু করে দেখতে থাকবে। তখন সম্বোধনকারী বলবে, তোমরা কি একে চিন? তারা বলবে, হ্যাঁ, এতো মৃত্যু। কেননা প্রত্যেকেই তাকে দেখেছে। তারপর (সেটি) যবেহ করা হবে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে। অতঃপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসী! স্থায়ী ভাবে এখানে থাক। তোমাদের আর কোন মৃত্যু নেই। আর হে জাহান্নামবাসী! চিরদিন এখানে থাক। তোমাদের আর মৃত্যু নেই। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ আয়াতটি পাঠ করলেন, ‘তাদের সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিবস সম্বন্ধে যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে অথচ এখনও তারা গাফলতিতে নিমজ্জিত’।[২]
কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, (আল্লাহ তা‘আলা যদি জান্নাতের অধিবাসীদের জন্য চিরস্থায়ী জীবন নির্ধারণ না করতেন তাহলে তারা আনন্দের অতিশয্যে মারা যেত। আর তিনি যদি জাহান্নামের অধিবাসীদের জন্য চিরস্থায়ী জীবন নির্ধারণ না করতেন তাহলে তারা অনুতাপ ও অনুশোচনা করতে করতে মারা যেত।[৩]
আল্লাহ তা‘আলার বাণী ‘তারা গাফলতিতে নিমজ্জিত’ থেকে উদ্দেশ্য হল: দুনিয়াতে তারা গাফলতিতে নিমজ্জিত; কেননা আখেরাতে কোন ধরণের গাফলতির সুযোগ নেই।
কাফের এবং মুনাফিক্বদের গাফলতি হল পরিপূর্ণ চরম গাফলতি যা তার অধিকারীকে জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা করে দেয়। আর তাহল ইচ্ছাকৃতভাবে কল্যাণ কামনা না করা, তাকে মহব্বত না করা, উপকারী জ্ঞান ও সৎকর্ম থেকে অন্তর শূন্য হওয়া এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَہٗ عَنۡ ذِکۡرِنَا وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ وَ کَانَ اَمۡرُہٗ فُرُطًا ‘আর আপনি তার আনুগত্য করবেন না যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছে ও যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে’ (সূরা আল-কাহফ : ২৮)।
মুফাসসিরগণ বলেন, ‘আপনি তার আনুগত্য করবেন না, যার চিত্তকে আমি কুরআন এবং ইসলাম থেকে অমনোযোগী করে দিয়েছি। আর তার কর্ম বিনষ্ট ও বাতিল হয়েছে’।
অপরপক্ষে মুসলিম ব্যক্তির গাফলতি হল, এমন কিছু সৎকর্ম থেকে উদাসীন হওয়া যা ত্যাগ করলে ইসলামের বিরুদ্ধে চলে যায় না। অথবা কুফরী নয় এমন গুনাহে লিপ্ত হওয়া এবং তার শাস্তি সম্বন্ধে উদাসীন থাকা।
মুসলিম ব্যক্তির গাফলতিও তার জন্য গুরুতর মন্দ ও ভয়াবহ ক্ষতির কারণ যা তার জন্য ধ্বংস ডেকে আনে এবং কল্যাণের পথসমূহ রুদ্ধ করে দেয়। গাফলতির অসংখ্য ক্ষতিকারক ও ব্যাপক অনিষ্টকর দিক রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ نَسُوا اللّٰہَ فَاَنۡسٰہُمۡ اَنۡفُسَہُمۡ ؕ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ ‘আর তোমরা তাদের মত হয়ে না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে; ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করেছেন। তারাই তো ফাসিক’ (সূরা আল-হাশর : ১৯)। তিনি আরো বলেন, نَسُوا اللّٰہَ فَنَسِیَہُمۡ ؕ اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ ہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ ‘তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে তিনিও তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন; মুনাফিক্বরা তো ফাসিক্ব’ (সূরা আত-তাওবা : ৬৭)। তিনি আরো বলেন,
وَ اذۡکُرۡ رَّبَّکَ فِیۡ نَفۡسِکَ تَضَرُّعًا وَّ خِیۡفَۃً وَّ دُوۡنَ الۡجَہۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَالِ وَ لَا تَکُنۡ مِّنَ الۡغٰفِلِیۡنَ .
‘আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন সবিনয়ে, সশংকচিত্তে ও অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়। আর উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ২০৫)।
পরিপূর্ণ তাওহীদের জ্ঞান সম্পর্কে উদাসীনতার কারণে একজন মুসলিম পূর্ণ তাওহীদের বিষয়ে ত্রুটি করে। মহান আল্লাহ বলেন, وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُہُمۡ بِاللّٰہِ اِلَّا وَ ہُمۡ مُّشۡرِکُوۡنَ ‘তাদের বেশীর ভাগই আল্লাহর উপর ঈমান রাখে, তবে তার সাথে শিরক করা অবস্থায়’ (সূরা ইউসুফ : ১০৬)।
ছালাতের রুকন ও ওয়াজীবসমূহ জানার ব্যাপারে উদাসীনতার কারণে ছালাতে ত্রুটি ঘটে; যেমন আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছে এসেছে, নবী (ﷺ) একজন ব্যক্তিকে তাড়াহুড়া করে ছালাত আদায় করতে দেখলেন। লোকটি ছালাত আদায় করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সালাম প্রদান করলে তিনি বললেন, (ফিরে গিয়ে তুমি আবার ছালাত আদায় কর; কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি।) এরূপ সে তিনবার করলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে ছালাতের কর্মে ধীরস্থিরতা অবলম্বনের শিক্ষা দিলেন।[৪]
জামা‘আতের সাথে ছালাতের স্মরণ থেকে উদাসীনতা ব্যক্তিকে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে শিথিলতার দিকে নিয়ে যায়। নবী (ﷺ) বলেছেন, মুনাফিক্বদের নিকট সবচেয়ে কষ্টকর ছালাত হল, এশা এবং ফজরের ছালাত। যদি তারা জানত এ দু‘টি ছালাতে কী মর্যাদা রয়েছে তাহলে অবশ্যই তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হত।[৫]
যাকাতের প্রতিদান সম্পর্কে উদাসীনতা এবং যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতির শাস্তি সম্পর্কে গাফলতির দরুন তা আদায়ে অবহেলার সৃষ্টি হয়। অথচ হাদীছে রয়েছে, (বিত্তশালী যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত আদায় করবে না ক্বিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করা হবে। সাপটি তার মুখের দু‘পাশ কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ, আমি তোমার মাল।[৬]
মাতা-পিতার অবাধ্যচরণের শাস্তি সম্পর্কে গাফলতির কারণে সন্তান অবাধ্যচরণে লিপ্ত হয়; ফলে তার উপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাণী অবধারিত হয়। তাহল তিন শ্রেণীর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না; মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ুস এবং পুরুষের বেশধারিনী নারী।[৭]
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি সম্পর্কে উদাসীনতার কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর উপর শাস্তি পতিত হয়। যুবাইর ইবনু মুতইম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।[৮]
যুলুমের শাস্তি সম্বন্ধে গাফলতির কারণে যমীনে যুলুম বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তপাত ঘটে, অন্যের সম্পদ ছিনতাই করা হয়, সম্ভ্রমহানি ঘটে, বসতি বিরান হয়, যমীন জনশূন্য হয়, শস্যক্ষেত্র ও প্রাণী ধ্বংস করা হয় এবং সর্বত্র ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর যালিমের উপর শাস্তি অবতীর্ণ হয়। যেমন নবী (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাকে ধরেন, তখন আর তাকে ছাড়েন না। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেন, অর্থাৎ ‘তোমার পতিপালকের ধরা এরূপ যে, যখন তিনি অত্যাচারী জনপদকে ধরেন...’ আয়াতের শেষ পর্যন্ত।[৯]
সুতরাং গাফলতি হল সকল অনিষ্টের মূল এবং এর কারণে একজন মুসলিম প্রভূত প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হয়। মুসলিম ব্যক্তির মাঝে ত্রুটি-বিচ্যুতি উদাসীনতার দ্বার দিয়েই প্রবেশ করে। কাজেই তা থেকে নাজাতই হল পরম সৌভাগ্য, তা থেকে দূরে থাকার অর্থ হল ইবাদতের স্তরে উন্নতি এবং তা থেকে সতর্ক থাকা হল এই দুনিয়াতে শাস্তি থেকে রক্ষাকবচ গ্রহণ ও মৃত্যুর পরে চিরস্থায়ী নে‘মত অর্জন ।
দ্বিতীয় খুত্ববা
আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর ছালাত ও সালামের পরে সম্মানিত খত্বীব বলেছেন, আপনারা যথাযথভাবে আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করুন এবং ইসলামের রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরুন।
আল্লাহর বান্দাগণ! গাফলতি হতে মুক্তি ও বাঁচার উপায় হল, তার উপকরণ হতে বিরত থাকা, দুনিয়ার প্রতি পরিপূর্ণ ঝুঁকে না পড়া; যা ব্যক্তিকে আখেরাত বিমুখ করে দেয়। গাফলতি এড়িয়ে চলতে মুমিনের অন্যতম সহায়ক হল,
১. আল্লাহর ভয় ও একাগ্রতার সাথে জামা‘আতে ছালাত আদায় করা : কেননা ছালাত হৃদয়ের জীবনকে প্রাণবন্ত করে, কারণ এতে বিদ্যমান আছে মহান তাৎপর্য। মহান আল্লাহ বলেন, وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِذِکۡرِیۡ ‘এবং আমার স্মরণার্থে ছালাত কায়েম করুন’ (সূরা ত্ব-হা : ১৪)।
২. যিকির করা : সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করা। কেননা যিকির অন্তরকে জীবিত রাখে, শয়তানকে বিতাড়িত করে, আত্মাকে পবিত্র রাখে, ইবাদত পালনে শরীরকে শক্তিশালী করে, ভ্রমের নিদ্রা থেকে জাগ্রত করে এবং নিয়মিত যিকির বান্দাকে পাপের কাজ থেকে রক্ষা করে। আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, যে তার প্রতিপালকের যিকির করে, আর যে যিকির করে না, তাদের উপমা হল জীবিত ও মৃত ব্যক্তি।[১০]
৩. কুরআন তেলাওয়াত করা : গাফলতি হতে বান্দাকে রক্ষা করতে পারে কুরআন তেলাওয়াত, কেননা এতে রয়েছে অনেক বিস্ময়কর ও আকর্ষণীয় বস্তু, আছে অন্তরের আরোগ্য, ভাল কাজে উৎসাহ প্রদান এবং মন্দ কাজ হতে বারণ। মহান আল্লাহ বলেন, وَ نُنَزِّلُ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ مَا ہُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ‘আর আমি নাযিল করি কুরআন, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত’ (সূরা আল-ইসরা : ৮২)।
৪. আলেম ও সৎ লোকের সাহচর্য লাভ করা : গাফলতি হতে বান্দাকে রক্ষার আরেকটি মাধ্যম হল, আলেম ও সৎ লোকের সাহচর্য। কেননা তারা আল্লাহর বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেন এবং শারঈ ইলম শিক্ষা দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ اصۡبِرۡ نَفۡسَکَ مَعَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّہُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ وَ الۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَہٗ وَ لَا تَعۡدُ عَیۡنٰکَ عَنۡہُمۡ ۚ تُرِیۡدُ زِیۡنَۃَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَہٗ عَنۡ ذِکۡرِنَا وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ وَ کَانَ اَمۡرُہٗ فُرُطًا.
‘আর আপনি নিজকে ধৈর্যশীল রাখুন তাদের সাথে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। পার্থিব জীবনের শোভা ও চাকচিক্য কামনায় আপনি তাদের থেকে আপনার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না’ (সূরা কাহাফ : ২৮)।
৫. অবান্তর ও অনৈতিক বৈঠকে অংশগ্রহণ এবং খারাপ বন্ধুর সংশ্রব হতে বিরত থাকা : গাফলতি হতে মুক্তি পাওয়ার আরেকটি উপায় হল, অবান্তর ও অনৈতিক বৈঠকে অংশগ্রহণ এবং খারাপ বন্ধুর সংশ্রব হতে বিরত থাকা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ قَدۡ نَزَّلَ عَلَیۡکُمۡ فِی الۡکِتٰبِ اَنۡ اِذَا سَمِعۡتُمۡ اٰیٰتِ اللّٰہِ یُکۡفَرُ بِہَا وَ یُسۡتَہۡزَاُ بِہَا فَلَا تَقۡعُدُوۡا مَعَہُمۡ حَتّٰی یَخُوۡضُوۡا فِیۡ حَدِیۡثٍ غَیۡرِہٖۤ ۫ۖ اِنَّکُمۡ اِذًا مِّثۡلُہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ جَامِعُ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَ الۡکٰفِرِیۡنَ فِیۡ جَہَنَّمَ جَمِیۡعَۨا.
‘কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি তো নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে, আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রুপ করা হচ্ছে, তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে তোমরা তাদের সাথে বসো না, নয়তো তোমরাও তাদের মত হবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক্ব ও কাফিরদের সকলকেই জাহান্নামে একত্রিত করবেন’ (সূরা আন-নিসা : ১৪০)।
৬. তা বাঁচার অন্যতম উপায় হল: দুনিয়ার তুচ্ছতা ও বিলুপ্তির কথা স্মরণে রাখা এবং দুনিয়ার সৌন্দর্য ও চাকচিক্যে আখেরাত বিমুখ না হওয়া। কেননা তা অধিকাংশ মানুষকে আখেরাত ও সঠিক পথ অনুসরণ হতে নিবৃত রেখেছে।
৭. গাফলতি হতে মুক্তির অন্যতম পথ হল: গুনাহ ও পাপের কাজ থেকে বিরত থাকা, কেননা গাফলতির কারণেই বান্দা সকল ধরণের পাপে পতিত হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا اِذَا مَسَّہُمۡ طٰٓئِفٌ مِّنَ الشَّیۡطٰنِ تَذَکَّرُوۡا فَاِذَا ہُمۡ مُّبۡصِرُوۡنَ . وَ اِخۡوَانُہُمۡ یَمُدُّوۡنَہُمۡ فِی الۡغَیِّ ثُمَّ لَا یُقۡصِرُوۡنَ.
‘নিশ্চয় যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করছে, তাদেরকে শয়তান যখন কুমন্ত্রনা দেয় তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং সাথে সাথেই তাদের চোখ খুলে যায়। তাদের সঙ্গী-সাথীরা তাদেরকে ভুলের দিকে টেনে নেয়। তারপর এ বিষয়ে তারা কোন ত্রুটি করে না’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ২০১-২০২)।
৮. একজন মুসলিমকে গাফলতি এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে বড় একটি বিষয় হল, মৃত্যু ও তৎপরবর্তী অবস্থার স্মরণ। কেননা এটা উত্তম উপদেশদাতার ন্যায়, এটা এমন যা প্রত্যক্ষ ও শ্রুত, যার স্বাদ আস্বাদন সুনিশ্চিত, সাক্ষাৎ লাভ নিকটবর্তী এবং যা অবশ্যম্ভাবী। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জীবনের স্বাদ হরণকারী বিষয়কে অর্থাৎ মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ কর।[১১]
যে ব্যক্তি বারবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে, তার অন্তর পরিশুদ্ধ হবে, আমল হবে পবিত্র এবং সে গাফলতি থেকে মুক্ত হবে। মৃত্যুর সময় মুমিন ব্যক্তি আনন্দিত হয়, আর ফাসেক্ব অনুশোচনা করে ও পুনরায় ফিরে আসতে চায়, তবে তার প্রত্যাশা কবুল হওয়া অসম্ভব। মহান আল্লাহ বলেন,
حَتّٰۤی اِذَا جَآءَ اَحَدَہُمُ الۡمَوۡتُ قَالَ رَبِّ ارۡجِعُوۡنِ . لَعَلِّیۡۤ اَعۡمَلُ صَالِحًا فِیۡمَا تَرَکۡتُ کَلَّا ؕ اِنَّہَا کَلِمَۃٌ ہُوَ قَآئِلُہَا ؕ وَ مِنۡ وَّرَآئِہِمۡ بَرۡزَخٌ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ.
‘অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, সে বলে, হে আমার রব! আমাকে আবার ফেরত পাঠান। যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি আগে করিনি। না, এটা হবার নয়। এটা তো তার একটি বাক্য মাত্র যা সে বলবেই। তাদের সামনে বারযাখ থাকবে উত্থান দিন পর্যন্ত’ (সূরা আল-মুমিনুন : ৯৯-১০০)।
পরিশেষে খত্বীব মহোদয় আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ করেন। মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের জন্য দু‘আ চাওয়ার মাধ্যমে খুত্ববা সমাপ্ত করেন।
* পি-এইচ.ডি গবেষক, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব এবং বাংলা আলোচক ও জুমু‘আর খুৎবার লাইভ অনুবাদক, মসজিদে নববী।
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৯।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৪৪, ৬৫৪৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮১।
[৩]. তিরমিযী, হা/৩১৫৬, সনদ ছহীহ।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৭।
[৫]. ইবনু মাজাহ, হা/৭৯৭।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৬৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৮৮।
[৭]. নাসাঈ, হা/২৫৬২, সনদ হাসান ছহীহ।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৮৪।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৬৮৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৩।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪০৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৭৯।
[১১]. তিরমিযী, হা/২৩০৭, সনদ হাসান ছহীহ।
প্রসঙ্গসমূহ »:
খুত্ববাতুল হারামাইন