উত্তর : অধিকাংশ আলেমের মতে শিরককারী, ছালাত ত্যাগকারী, সূদী কারবারের সাথে যুক্ত বা অন্য কোন কাবীরা গুনাহে লিপ্ত পুরুষ বা নারীর সঙ্গে তওবাহের পূর্বে বিবাহের সম্পর্ক জায়েয নয় (ফাতাওয়া ইবনে বায, ২০/১৪৯-১৫১, ১৫৪-১৫৭, ১৫৯-১৬০, ২০৯-২১১, ৩৮২-৩৮৪ পৃ.; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ১৮/১২৫-১২৬ পৃ.)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন, ‘সূদভিত্তিক ব্যাংকে চাকরী করা হালাল নয়। এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ ভক্ষণ করা হারাম। এই রকম ছেলের সঙ্গে বিবাহ দেয়া অনুচিত। বিবাহের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দেয়া ধর্মীয় দায়িত্ব (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ১৮/১৯৫-১৯৬ পৃ.)। শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে আদর্শ পাত্র-পাত্রীর যোগ্যতার মাপকাঠি তার দ্বীনদারিতা ও উত্তম চরিত্র। বিবাহের ক্ষেত্রে আল্লাহভীরুতা, ন্যায়পরায়ণতা ও ধার্মিকতাই মূখ্য বিষয়। বাকী ধনসম্পদ, বংশ পরিচয়, বংশ মর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এগুলো গৌণ বিষয়’ (লিক্বা আশ-শাহরী, লিক্বা নং-৪৬)। শায়খ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পাপিষ্ঠ, অধর্মচারী ও কাবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব পাঠালে, তাওবাহ না করা পর্যন্ত তাকে বর্জন করতে হবে’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২১/৪৮ পৃ.)। নিঃসন্দেহে সূদ কাবীরা গুনাহ বা মহাপাপের অন্তর্ভুক্ত (সূরা আলে ইমরান : ১৩০)। নবী (ﷺ) সূদখোর, সূদদাতা, তার সাক্ষীদাতা ও তার লেখককে অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, ‘ওরা সবাই সমান’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৭-১৫৯৮)।
দ্বিতীয়তঃ কোন পিতা যদি সূদী কারবার, হারাম উপার্জন, মদ্যপান বা অন্যান্য পাপাচার করে, কিন্তু তার মেয়ে যদি ভালো, সৎ ও দ্বীনদার হয় তাহলে তাকে বিয়ে করতে কোন বাধা নেই ইনশাআল্লাহ। কারণ ‘ফক্বীহগণ বলেছেন, হারাম পন্থায় উপার্জিত অর্থ শুধু উপার্জনকারীর জন্যই হারাম। সন্তান হিসাবে পিতা যদি তাকে উপহার স্বরূপ ঐ মাল থেকে কিছু দেয়, তবে তা গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ হবে। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে পিতার ঐ উপহার বর্জন করাই উত্তম হবে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪৫০১৮; আহকামুল কুরআন, ১/৩২৪ পৃ.; আল-মাজমূঊ, ৯/৪৩০ পৃ.; ফাতাওয়া ফিক্বহিয়্যাহ আল-কুবরা, ২/২৩৩ পৃ.; কাশশাফুল ক্বিনা‘, ৩/৪৯৬ পৃ.)। শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি পিতা হারাম পন্থায় উপার্জন করে, সেক্ষেত্রে সন্তানের উপর অপরিহার্য পিতাকে সদুপদেশ দেয়া। যদি সন্তানের পক্ষে পিতাকে হারাম উপার্জন সম্পর্কে উপদেশ দেয়া এবং বিরত রাখা সম্ভব না হয়, তবে তার বিষয়টি এমন কারোর নিকট উপস্থাপন করা অথবা এমন কারোর সাহায্য নেয়া যে বা যারা তাকে হারাম উপার্জনে বাধা প্রদান করতে পারবে। এর পরেও যদি পিতা হারাম উপার্জন পরিহার না করে, এমতাবস্থায় সন্তানেরা প্রয়োজন অনুযায়ী ঐ টাকা ভক্ষণ করলে তাদের কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিতে পারবে না। এক্ষেত্রে হারাম উপার্জনকারীই প্রকৃত গুনাহগার। সে ছাড়া অন্য কারো জন্য তা হারাম নয়। যেমন রাসূল (ﷺ) ইহুদীদের সঙ্গে আদান-প্রদান করেছেন এটি জানার পরও যে তারা সূদী কারবারের সঙ্গে যুক্ত এবং হারাম ভক্ষণ করে। সুতরাং এটি প্রমাণ করে যে, তা উপার্জনকারী ব্যতীত অন্য কারো জন্য হারাম নয় (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, ৩/৪৫২; তাফসীরু সূরাতিল বাক্বারাহ, ১/১৯৮; আল-ক্বাউলুল মুফীদ আলা কিতাবিত তাওহীদ, ৩/১১২ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : ওয়াহীদুযযামান, ঢাকা।