উত্তর : ফের্কায়ে নাজিয়া বা মুক্তিপ্রাপ্ত দলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল আক্বীদা, ইবাদত, চরিত্র ও আচার ব্যবহারে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা। যেমন,
আক্বীদার ক্ষেত্রে : আক্বীদার ক্ষেত্রে ফের্কা নাজিয়ার অন্তর্ভুক্ত লোকেরা আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের অনুসারী। উলূহিয়্যাহ তথা ইবাদতে আল্লাহর একত্ব, রুবূবিয়্যাহ তথা প্রতিপালনে আল্লাহর একত্ব এবং আসমা ওয়া ছিফাত তথা সুন্দর নামসমূহ ও গুণাবলীতে আল্লাহর একত্বের ক্ষেত্রে তারা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সঠিক বিশ্বাস পোষণ করে থাকেন (শায়খ উছায়মীন, ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম (রিয়ায, সঊদী আরব : দারুছ ছুরইয়া, ১ম সংস্করণ, ১৪২২ হি.), পৃ. ২২-২৩, প্রশ্ন নং-৬; মাজমঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৮)।
ইবাদতের ক্ষেত্রে : এ ক্ষেত্রে তারা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নকারী। ইবাদতের প্রকার, পদ্ধতি, পরিমাণ, সময়, স্থান এবং ইবাদতের কারণ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহর অনুসরণ করাই তাদের বৈশিষ্ট্য। তাদের নিকট দ্বীনের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে বিদ‘আত খোঁজে পাবেন না। তারা আল্লাহ এবং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সর্বোচ্চ আদব বা শিষ্টাচার রক্ষা করে চলেন। আল্লাহ অনুমতি দেননি, ইবাদতের ক্ষেত্রে এমন বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অগ্রগামী হয় না (ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃ. ২৩, প্রশ্ন নং-৬; মাজমঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৯)।
আখলাক্ব বা চরিত্রের ক্ষেত্রে : এক্ষেত্রেও তারা অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মুসলিমদের কল্যাণ কামনা, অপরের জন্য উদার মনের পরিচয় দেয়া, মানুষের সাথে হাসিমুখে উত্তম কথা বলা, বদান্যতা, বীরত্ব এবং অন্যান্য মহান গুণাবলী তাদের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য (ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃ. ২৩, প্রশ্ন নং-৬; মাজমঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৯)।
পার্থিব বিষয়ের ক্ষেত্রে : এক্ষেত্রে তারা সততার সাথে সকল প্রকার লেনদেন সম্পন্ন করে থাকেন। কাউকে ধোঁকা দেন না। ক্রয়-বিক্রয়ের সময় তারা দ্রব্যের আসল অবস্থা বর্ণনা করে দেন (ছহীহ বুখারী, হা/২০৭৯, ২০৮২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৩২; মিশকাত, হা/২৮০২)।
ঐক্যবদ্ধ থাকার ক্ষেত্রে : এটি তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। তবে চরিত্রর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল পরস্পরে একতাবদ্ধ থাকা এবং আল্লাহ তা‘আলা যে হক্বের উপর ঐক্যবদ্ধ থাকার আদেশ দিয়েছেন, তার উপর অটুট থাকা (সূরা আশ-শূরা : ১৩)। এছাড়া আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিয়েছেন যে, যারা নিজেদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়েছে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍ ‘নিশ্চয় যারা দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে আপনি কোন ব্যাপারেই তাদের অন্তর্ভুক্ত নন’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫৯)।
উক্ত গুণাবলীগুলোর মধ্যে যদি কোন একটি গুণাবলী কোন ব্যক্তির মাঝে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে এ কথা বলা যাবে না যে, যে মুক্তিপ্রাপ্ত দল হতে বের হয়ে গেছে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ আমল অনুযায়ী মর্যাদা লাভ করবে। তবে তাওহীদের ক্ষেত্রে ত্রুটি করলে মুক্তিপ্রাপ্ত দল হতে বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ‘আতের বিষয়টিও অনুরূপ। কিছু কিছু বিদ‘আত এমন আছে, যা মানুষকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল থেকে বের করে দেয়। তবে চরিত্র ও লেন-দেনের ভিতরে কেউ ত্রুটি করলে সে মুক্তিপ্রাপ্ত দল থেকে বের হবে না। বরং মর্যাদা কমিয়ে দিবে (ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃ. ২৩-২৪, প্রশ্ন নং-৬)।
প্রশ্নকারী : আহমাদ আশ-শারীফ, সাতক্ষীরা।