শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন
উত্তর : এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, আদম (আলাইহিস সালাম) পৃথিবীর প্রথম মানুষ এবং ভাষা, স্থান, কাল, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানব জাতির আদি পিতা তিনিই (সূরা আন-নিসা : ১)। এখানে ‘একটি প্রাণ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আদম (আলাইহিস সালাম) আর ‘তাঁর সঙ্গিনী’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মা হাওয়া (ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৪০, ৪৭১৩)।

দ্বিতীয়তঃ ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) হলেন ‘আবুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের পিতা। কারণ তাঁর যুগ থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ (ﷺ) পর্যন্ত যত নবী এসেছেন সমস্ত নবী-ই তাঁর বংশোদ্ভূত এবং তিনি হলেন তাঁর পরবর্তী সময়ের মুসলিম জাতির পিতা, বিশেষ করে আরবীয়দের। সমগ্র মানব জাতির পিতা বলাটা উচিত নয়। কারণ তিনি তাঁর পূর্বের লোকেদের পিতা কিভাবে হবেন? তাঁর পক্ষে তো আদাম (ﷺ)-এর পিতা হওয়াটা অসম্ভব। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, مِلَّۃَ  اَبِیۡکُمۡ اِبۡرٰہِیۡمَ ؕ ہُوَ سَمّٰىکُمُ الۡمُسۡلِمِیۡنَ ‘তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত (ধর্মাদর্শ মেনে চল), তিনিই তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ (সূরা আল-হাজ্জ : ৭৮)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

وإبراهيم هو أبو العرب قاطبة. وقيل الخطاب لجميع المسلمين وإن لم يكن الكل من ولده؛ لأن حرمة إبراهيم على المسلمين كحرمة الوالد على الولد

‘ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) হলেন সমগ্র আরব জাতির পিতা এবং কোন কোন মুফাসসির বলেন, সকল মুসলিমকে উদ্দেশ্য করেই তাঁকে ‘পিতা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে যদিও সকল মুসলিম তার সন্তান নয়। এর কারণ হল, মুসলিমদের নিকট ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর মর্যাদা পুত্রের নিকট পিতার মর্যাদা সমতুল্য’ (তাফসীরে কুরতুবী, ১২/১০১ পৃ.)। ইমাম বাগাভী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

فإن قيل : فما وجه قوله : ( ملة أبيكم ) فَإِنْ قِيلَ: فَمَا وَجْهُ قَوْلِهِ: {مِلَّةَ أَبِيكُمْ} وَلَيْسَ كُلُّ الْمُسْلِمِينَ يَرْجِعُ نَسَبُهُمْ إِلَى إِبْرَاهِيمَ؟ قِيلَ خَاطَبَ بِهِ الْعَرَبَ وَهُمْ كَانُوا مِنْ نَسْلِ إِبْرَاهِيمَ. وَقِيلَ: خَاطَبَ بِهِ جَمِيعَ الْمُسْلِمِينَ، وَإِبْرَاهِيمُ أَبٌ لَهُمْ، عَلَى مَعْنَى وُجُوبِ احْتِرَامِهِ وَحِفْظِ حَقِّهِ كَمَا يَجِبُ احْتِرَامُ الْأَبِ، وَهُوَ كَقَوْلِهِ تَعَالَى: { وَ اَزۡوَاجُہٗۤ  اُمَّہٰتُہُمۡ } (الْأَحْزَابِ: ৬) وَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ "إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ مِثْلُ الْوَالِدِ

‘যদি প্রশ্ন করা হয় যে, এই আয়াতে ‘তোমাদের পিতা’ বলার কারণ কী অথচ সকল মুসলিমের বংশ পরম্পরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) পর্যন্ত পৌঁছে না? এর উত্তরে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের পিতা’ এ বাক্যটি দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা আরবদেরকে উদ্দেশ্য করেছেন। কারণ তারাই ছিল ইবরাাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর বংশধর। অথবা এ কথা দ্বারা সকল মুসলিমই উদ্দেশ্য। তিনি মুসলিম জাতির পিতা এই মর্মে যে, তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাঁর অধিকার সংরক্ষণ করা ঠিক তেমনিভাবে অপরিহার্য যেমনিভাবে পিতার সম্মান রক্ষা করা অপরিহার্য। উক্ত আয়াতটি আল্লাহর এই বাণীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যেখানে তিনি বলেছেন, وَ اَزۡوَاجُہٗۤ  اُمَّہٰتُہُمۡ ‘আর তাঁর অর্থাৎ নবী (ﷺ)-এর স্ত্রীগণ তাদের অর্থাৎ মুসলিমদের ‘মা’ (সূরা আল-আহযাব : ৬) এবং নবী (ﷺ) বলেছেন, إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ مِثْلُ الْوَالِدِ ‘আমি তো তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য’ (নাসাঈ, হা/৪০; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৩৬৮, ৭৪০৯; তাফসীরে বাগাভী, ৫/৪০৩-৪০৪ পৃ.)। ওয়াছিলাহ ইবনুল আসক্বা‘ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর সন্তানদের মধ্য হতে ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে বেছে নিয়েছেন এবং ইসমাঈল-এর বংশে কিনানাহ গোত্রকে বংশ বেছে নিয়েছেন, কিনানাহ গোত্র হতে কুরাইশ বংশকে বেছে নিয়েছেন, কুরাইশ বংশ থেকে হাশিম উপগোত্রকে বেছে নিয়েছেন এবং বানী হাশিম হতে আমাকে বেছে নিয়েছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/২২৭৬; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩০২)।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে যে কয়েকটি বিষয় প্রতিভাত হয় তা নিম্নরূপ : (১) মূলত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) হলেন রাসূল (ﷺ) ও কুরাইশ বংশ তথা আরব জাতির পিতা। কেননা আরব জাতি ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম)-এর বংশধর ছিল। সেই হিসাবে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) হলেন আরববাসীর পিতা। অতঃপর কুরাইশদের অনুগামী হয়ে সমস্ত মুসলিম-ই এই সম্মানে ভূষিত হয়েছে। যেমন আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘সব মানুষ-ই দ্বীনের ব্যাপারে কুরাইশদের অনুগামী। মুসলিমরা মুসলিম কুরাইশদের অনুগামী এবং কাফিররা কাফির কুরাইশদের অনুগামী’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৯৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮, ১৯, ৭৩০৬, ৭৫৫৬, ৮২৪৩, ৯১৩২, ৯৫৯৩)। (২) যেহেতু অনারবরাও ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে একজন উচ্চ সম্মানীয় নবী হিসাবে শ্রদ্ধা করে। কারণ আল্লাহ‌ তা‘আলা সমগ্র মানব জাতির জন্য ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে তাঁর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে নেতা হিসাবে মনোনীত করেন। তিনি আনুগত্যের চরম পারাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। সুতরাং সমস্ত আনুগত্যকারীদের তিনি পিতা। তাছাড়া ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর সম্মান করা তেমনি অপরিহার্য যেমনি সন্তান তার পিতার সম্মান করা একান্ত কর্তব্য। কারণ তিনি হলেন ইসলামের নাবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর বংশ পরম্পরায় পিতা। আর এই জন্যই তিনি হলেন সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পিতা। অর্থাৎ তিনি যদিও বংশ পরম্পরায় সকল মুসলিমের পিতা নন, কিন্তু সম্মানের দিক দিয়ে সকলের নিকট পিতৃতুল্য (আহকামুল কুরআন লিল জাছ্ছাছ, তাফসীরে কুরতুবী, ফাৎহুল ক্বাদীর)।


প্রশ্নকারী : আল-মামুন, শিবগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।





প্রশ্ন (১) : প্রবাসী ব্যক্তি ফিতরা কি প্রবাসেই আদায় করবে? না-কি দেশে পরিবারের মাধ্যমে আদায় করবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৮) : ঈদের ছালাত শেষে পরস্পরে কোলাকুলি করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : নবী (ﷺ) জনৈক ছাহাবীর দাফন শেষে ফিরে আসছিলেন। তখন উক্ত ‘মাইয়েতের স্ত্রী’ তাঁকে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন এবং রাসূল (ﷺ) দাওয়াত গ্রহণপূর্বক উক্ত মহিলার বাড়িতে গিয়েছিলেন। অতঃপর খাবার উপস্থিত করা হলে তিনি এবং উপস্থিত অন্যান্য লোকজন খাবার গ্রহণ করলেন। এর আলোকেই মাইয়েতকে কেন্দ্র করে খাবারের আয়োজন করা হয়। তাই উক্ত বর্ণনাটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : সমাজে অনেক নামধারী ফকীর দেখা যায়। যারা বিত্তশালী। এদের কেউ সূদের উপর টাকা দেয়। টাকা নিয়ে নেশা করে। এদেরকে ভিক্ষা দেয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : ছাদাক্বাহ করার ফযীলত বর্ণনায় বলা হয় যে, দান সম্পদকে হ্রাস করে না। আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমার মাধ্যমে বান্দার সম্মান বৃদ্ধি করেন এবং যে আল্লাহর জন্য বিনয় প্রকাশ করে আল্লাহ তাকে উন্নত করেন। এ বর্ণনাটি সঠিক! - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭): যাকাতুল ফিতর কখন আদায় করতে হয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৯) : প্রচলিত রয়েছে যে, শু‘আইব (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর শ্বশুর ছিলেন। কথাটি কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : এক ব্যক্তি ইবাদত-বন্দেগীতে খুব ভাল এবং সুন্নাত অনুসরণে অধিক আগ্রহী। কিন্তু কিছু ওযর থাকার কারণে সে বিয়ে করতে চাচ্ছে না। বরং বিয়ে করলে কাবীরা গুনাহ করার সম্ভাবনা বেশি। এখন এই ভাইয়ের চেয়ে যিনি বিয়ে করেছেন তিনিই কি আল্লাহর কাছে উত্তম হবেন? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : কেউ ইসরা অস্বীকার করলে কাফির কিন্তু বাইতুল মাক্বদিস থেকে মি‘রাজ বা ঊর্ধ্বগমন অস্বীকার করলে কাফির হবে না বরং বিদ‘আতী হবে। এ ফৎওয়া কতটুকু সঠিক? কুরআন দ্বারা প্রমাণিত বিষয় অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যায় কিন্তু হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত বিষয় অস্বীকার করলে কাফির হয় না। এমন আক্বীদা কি বিশুদ্ধ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : নেকির আশায় হাতের আঙ্গুলে গুণে গুণে দু‘আ ও যিকির করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : কোন পাপ কাজ হতে দেখলে কেউ যদি মনে মনে ঘৃণা করে তাহলে তাকে দুর্বল স্তরের মুমিন বলে। এক্ষণে কেউ যদি পাপ কাজকে ঘৃণা না করে, তাহলে কি তাকে মুসলিম বলা যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩) : বর্তমানে মেয়ের অভিভাবক চাকুরিহীন দ্বীনদার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চায় না। এতে অনেকে পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। প্রশ্ন হল, কর্মহীন দ্বীনদার ছেলের সাথে মেয়েকে বিবাহ দেয়ার জন্য অভিভাবক কী কী বিষয় বিবেচনা করবেন? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ