শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন
উত্তর : ইসলামী দাওয়াতের স্বার্থে নবী (ﷺ) কখনো কখনো দুর্নাম বা লোকের কথার ভয়ে কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতেন। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘তখন উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এই মুনাফিকের (আব্দুল্লাহ্ ইবনু উবাই এর) গর্দান উড়িয়ে দিই। নবী (ﷺ) বললেন, دَعْهُ لَا يَتَحَدَّثُ النَّاسُ أَنَّ مُحَمَّدًا يَقْتُلُ أَصْحَابَهُ ‘উমার! তাকে ছেড়ে দাও, যাতে লোকেরা এমন কথা বলতে না পারে যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর সাথীদের হত্যা করছেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৫১৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৪)। নবী (ﷺ) লোকের কথা ও সমালোচনার ভয়ে মুনাফিক্বদের হত্যা করেননি। কারণ, তারা লোকেদের ইসলাম গ্রহণ করতে বাধা প্রদান করত। তারা বলত যে, ‘দেখো মুহাম্মাদ তার সাথীদের হত্যা করছে’। রাসূল (ﷺ)-এর মুক্ত ক্রীতদাস ছাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘... এমতাবস্থায় রাসূল (ﷺ) আসলেন। তখন ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর গলার হারটি তাঁর হাতে ছিল।

তিনি বললেন, ‘ফাতিমা! তুমি কি পসন্দ কর যে, লোক বলাবলি করবে যে, রাসূল (ﷺ)-এর কন্যা, অথচ তাঁর হাতে আগুনের হার রয়েছে। অতঃপর তিনি (ﷺ) বের হয়ে গেলেন, আর বসলেন না। ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তখনই হারখানা খুলে বাজারে পাঠিয়ে তা বিক্রি করালেন এবং তা দ্বারা একজন ক্রীতদাস ক্রয় করে আযাদ করে দিলেন। এ খবর শুনে রাসূল (ﷺ) বললেন, আল্লাহর শুকর, যিনি ফাতিমাকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করলেন’ (নাসাঈ, হা/৫১৪০, ৫১৫৫; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৪১১)।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, লোকের কথার ভয়ে বা মানুষ কি বলবে সেই ভয় যখন এমন কোন কাজ করা থেকে বিরত রাখে, যে কাজকে সাধারণ মানুষ অপসন্দ করে, তখন সেটি প্রশংসনীয়। সেটাকে আপনি হারাম মনে করে বর্জন করছেন না, বরং এটিকে মানুষ অপসন্দ করে তাই সমালোচনা থেকে বাঁচার জন্য বর্জন করছেন। যেমন, কেউ লোকলজ্জার কারণে নাইট ড্রেস পরে বা লুঙ্গি পরে বাজারে বাহির হয় না অথবা কেউ জনসম্মুখে খেতে বা চিবাতে অপসন্দ করে ইত্যাদি। পক্ষান্তরে যদি কেউ দুর্নামের ভয়ে হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে, এক্ষেত্রে তাকে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার কারণে কোন ছাওয়াব দেয়া হবে না। কেননা সে তো আল্লাহর ভয়ে হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে-নি, বরং সে মানুষের কথার ভয়ে বা সামাজিক পদমর্যাদা হারানোর ভয়ে বিরত থেকেছে।

আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ্ বলেন, আমার বান্দা কোন গুনাহর কাজ করতে চাইলে তা না করা পর্যন্ত তার গুনাহ লেখো না। আর যদি তা করেই ফেলে, তাহলে তা সমপরিমাণ লেখো। আর যদি আমার (মাহাত্ম্যের) কারণে তা ত্যাগ করে, তাহলে তার পক্ষে একটি নেকী লেখো...’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭৫০১; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৮)।

অনুরূপভাবে যদি কেউ দুর্নামের ভয়ে বা সমালোচনার ভয়ে শরী‘আত নির্দেশিত ভালো কাজ করে, আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই কাল ক্বিয়ামতের দিন সকলের সামনে প্রকাশ করে দেবেন। যেমন, যদি কেউ লোকের ভয়ে ছালাত আদায় করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা সকলের সামনে তা প্রকাশ করে দেবেন। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলার পায়ের নলা দেখা মাত্রই ঈমানদারগণ সবাই সাজদাহয় পড়ে যাবে। বাকি থাকবে তারা, যারা লোক-দেখানো এবং লোক-শোনানো সাজদাহ করেছিল। তবে তারা যখন সাজদাহর মনোভাব নিয়ে সাজদাহ করার জন্য যাবে, কিন্তু তাদের মেরুদণ্ড একটি তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে...।

‘ছহীহ মুসলিম’-এর বর্ণনায় এসেছে, তখন পৃথিবীতে যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশে সাজদাহ করত, সে মুহূর্তে তাদেরকে আল্লাহ সাজদাহ করতে অনুমতি দিবেন এবং তারা সবাই সাজদাহবনত হয়ে পড়বে। আর যে কারো ভয়-ভীতি কিংবা লোক দেখানোর জন্য সাজদাহ করতো তার মেরুদণ্ড শক্ত ও অনমনীয় করে দেয়া হবে। যখনই তারা সাজদাহ করতে ইচ্ছা করবে তখনই তারা চিত হয়ে পড়ে যাবে....’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭৪৩৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩)।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, লোকের কথার ভয়ে বা মানুষ কী বলবে সেই ভয়ে যখন আপনি এমন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকছেন, যে কাজকে ইসলাম হারাম করেছে, অথবা এমন কোন কাজ করছেন যে কাজ করতে ইসলাম আদেশ করেছে, তখন সেটি নিন্দনীয়। অতএব মোদ্দাকথা হল- দুর্নামের ভয়ে ভালো কাজ করলে বা দান করলে সেটি রিয়া হিসাবে গণ্য হবে।


প্রশ্নকারী : হৃদয়, বকশিবাজার, ঢাকা।





প্রশ্ন (৩৪) : জনৈক ব্যক্তির পিতা-মাতা ও অন্যান্য আত্মীয়রা পীরতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এমনকি কালেমার ভিতরে পীরের নামযুক্ত করে যিকির করে। তারা মাজারপূজা করে। প্রশ্ন হল- তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : ইসলামে হিল্লা বিয়ে কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : ইংরেজি ভাষা শিক্ষা দেয়াকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করা যাবে কি? কারণ এর মাধ্যমে বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, নোংরামি ইত্যাদি প্রচার হচ্ছে। দ্বীনের প্রচারের উদ্দেশ্যে ইংরেজী ভাষা শিক্ষা করা ও শিখানো বৈধ হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৮) : স্বর্ণের নিছাব টাকা দিয়ে পূরণ করা যাবে কি? কারো স্বর্ণ আছে ৫ ভরি এবং টাকা আছে ২,০০,০০০। এ ক্ষেত্রে স্বর্ণের যাকাতের বিধান কী হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪৩) : কোন্ কোন্ সময় সালাম দেয়া নিষিদ্ধ এবং অপসন্দনীয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : হিন্দুর সাথে পাটনার ব্যবসা করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : প্রতিবেশীরা বিভিন্ন হারাম কাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের কিছু হালাল উপার্জন থাকলেও তা হারাম মিশ্রিত। তারা অনেক সময় খাবার হাদিয়া পাঠায়। কিন্তু সেটা হালাল না হারাম থেকে দিয়েছে তা বুঝা যায় না। তাদের দেয়া উক্ত খাবার খাওয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : অন্যান্য ধর্মের পূজা, মন্দির বা গির্জা দেখার জন্য যাওয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : বর্তমানে ওয়াকালতি বা আইন পেশায় কাজ করা কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : আমি একজন দোকানদার। বিক্রিত পণ্যগুলোর গায়ে অনেকসময় মানুষের ছবি থাকে। প্রশ্ন হল- এই ছবিযুক্ত পণ্য বিক্রি করা যাবে কি, যদিও সেই পণ্য হালাল এবং উক্ত দোকানে কি ছালাত আদায় করা যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : আমি বিবাহিত। কিন্তু স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরণে আমি পুরোপুরি অক্ষম। অনেক চিকিৎসা করেছি। কিন্তু উপকার হয়নি। প্রশ্ন হল- স্ত্রীর যৌনাঙ্গে হাত দিয়ে তার চাহিদা পূরণ করা যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : জনৈক বক্তা বলেন, ইসলাম ধর্মে এমন একটি নফল ছালাত আছে যা সফর মাসের শেষ বুধবার পূর্বাহ্নের প্রথম প্রহরে এক সালামে চার রাক‘আত আদায় করা খুবই ফযীলতপূর্ণ। পদ্ধতি হল, প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে ১৭ বার সূরা কাওছার, ৫০ বার সূরাহ ইখলাছ এবং একবার করে সূরা নাস ও ফালাক্ব পাঠ করে। সালাম ফিরানোর পর সূরা ইউসুফের ২১ নং আয়াতের শেষাংশ ৩৬০ বার পাঠ করবে। শেষে সূরা আস-সাফফাতের ১৮০-১৮২ নং আয়াত পাঠ করে শেষ করবে। অতঃপর ফক্বীর মিসকীনদের মাঝে কিছু রুটি ছাদাক্বাহ করবে। এর মাধ্যমে বুধবার নাযিল হওয়া সমস্ত বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করবে। কারণ প্রত্যেক বছর এই দিন ২০ হাজার ৩০০ শত বালা-মুছীবত নাযিল হয়। প্রশ্ন হল, উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ