প্রশ্ন (১) : যে সকল দেশে মানবরচিত বিধান দ্বারা বিচার কার্র্য পরিচিালিত হয়, সেখানে বিচারক হওয়া যাবে কি?
উত্তর : মানবরচিত আইন দ্বারা বিচার কার্য পরিচালিত হলে অসংখ্য হারাম ও অবৈধ জিনিসের পক্ষে রায় দিতে হয়। সেগুলো দেশের আইনে অপরাধ না হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্যতম অপরাধ। যেমন অবৈধ প্রেম, ব্যভিচার, পরকিয়া, সমকামিতা, লিঙ্গ পরিবর্তন, মাদকতা, সূদী মুনাফার বিধান ইত্যাদি। মানবরচিত আইনে ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করা হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘হুকুম বা শাসনের মালিক একমাত্র তিনি এবং তিনিই হচ্ছেন- উত্তম হুকুমদাতা বা শাসক’ (সূরা আল-গাফির : ১৩)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেয়ার অধিকার নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না’ (সূরা ইউসুফ : ৪০)। ঈমানদাররা সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আল্লাহর আইনের চেয়ে উত্তম কোন আইন নেই। আল্লাহর আইন বিরোধী সকল বিধান জাহিলী বিধান (সূরা আল-মায়িদাহ : ৫০)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, প্রথমতঃ একজন আদর্শ মুসলিমের উচিত ইসলামিক বিচারালয়ে ওয়াকালতি ও আইনজীবীর কাজ করা, যেখানে যাবতীয় বিচার-ফয়সালা ইসলামী আইন অনুযায়ী হবে। মানবরচিত আইনের আওতায় থেকে অনৈসলামিক পদ্ধতিতে বিচারব্যবস্থা পরিচালনা করা উচিত নয়। পরন্তু বিশেষ প্রয়োজনে জায়েয। যেমন যেখানে ইসলামী বা শারঈ বিচারব্যবস্থা নেই। দ্বিতীয়তঃ একজন আইনজীবী বা প্রসিকিউটর (prosecutor) হিসাবে কাজ করার ও মামলার তদন্ত করার উদ্দেশ্য যদি সত্যের পৃষ্ঠপোষকতা ও পক্ষপাতিত্ব করা এবং মিথ্যাকে প্রতিহত করা হয়; প্রকৃত মালিকের নিকট তার প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং মাজলুম ও নিপীড়িতদের সাহায্য করা হয়, তাহলে তা বৈধ। কারণ এটি সততা ও আল্লাহভীরুতায় সাহায্য করার অন্তর্ভুক্ত। এই কাজের জন্য ন্যায্য-ধর্মসংগত পারিশ্রমিক নেয়াও জায়েয (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১২/১৩৬-১৩৭ ও ২৩/৫০২ পৃ.)। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আইনজীবী বা ওয়াকালতি রাসূল (ﷺ)-এর যুগ থেকে শুরু করে আমাদের যুগ পর্যন্ত বিদ্যমান। আইনজীবী বা ওয়াকালতি করা দোষনীয় নয়। যদি আইনজীবী আল্লাহভীরু হয় এবং বাদী অথবা বিবাদীকে মিথ্যা, মনগড়া ও রচিত মামলা দ্বারা সাহায্য না করে, তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেয়। ওয়াকালতি করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা অপরিহার্য (আত-তুরুকুল হুকমিয়্যাহ, পৃ. ১৮৫; ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ৩/৫০৫ পৃ.; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ র্দাব, ইবনে বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট-https://binbay.org.sa/fatwas/10658)।
প্রশ্নকারী : গোলাম রাব্বী, বরিশাল।