উত্তর : বিশেষ প্রয়োজনে এমন করা দোষনীয় নয়। বরং করাটাই অপরিহার্য। শরী‘আতসম্মত কারণে সাময়িক গর্ভনিরোধক মাধ্যম গ্রহণ করা জায়েয। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ ‘নিজের কোন অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং পরস্পরে কারোর ক্ষতি করা যাবে না’ (ইবনু মাজাহ, হা/২৩৪০-২৩৪১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৫০; ইবনু বায, মাজমূউ ফাতাওয়া, ২১তম খণ্ড, পৃ. ১৯৭-১৯৮, ৯ম খণ্ড, পৃ. ৪৩৪)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ডাক্তার বিপদের আশঙ্কা করেন, তবে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী এবং স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা দোষনীয় নয় (ফাতাওয়া আল-মার’আতুল মুসলিমাহ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৯৭৮)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটিকে একই প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তাঁরা বলেন, ‘প্রশ্নে উল্লেখিত বর্ণনা অনুযায়ী ঝুঁকি প্রতিরোধে ও আগত বিপদ দূরীকরণার্থে জরায়ু অপসারণ করা বা বন্ধ্যাত্বকরণ অনুমোদিত। আল্লাহই সর্ব শক্তিমান ও সাফল্য দানকারী’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ, ১৯তম খণ্ড, পৃ. ৩১৬-৩১৭)। ‘ইসলাম ওয়েব’-এর আলেমগণ বলেন, ‘বিশেষ প্রয়োজন ও শরী‘আতসম্মত কারণ ব্যতীত অপারেশনের মাধ্যমে চিরতরের জন্য সন্তান ধারণের ক্ষমতা বিনষ্ট করা বা বন্ধ্যাত্বকরণ হারাম। ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলে এবং জরায়ু অপসারণ ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা সম্ভবপর না হলে বিশ্বস্ত ও ঈমানদার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জরায়ু অপসারণ করা বৈধ’ (মাজাল্লাতুল মাজমা‘আ, সমাবেশ নং-৪, ১ম খণ্ড, পৃ. ৭৩; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৫৪৫৭৩, ৩৬৭৬৮, ১৭৫৫৩)।
দ্বিতীয়তঃ এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা উচিত। আমরা যেন বৈধতার অন্তরালে নিজেদের মনস্কামনাকে চরিতার্থ না করি। ব্যক্তি তার নিজস্ব স্থানে কতটা অসহায় নিশ্চয় সে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত। তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের অন্তরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কেটে ফেলে দেয়া বা ফেলে দিতে বাধ্য করা কোন সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা কর না, কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকার দিয়েছি। সুতরাং হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে, নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৩৩)। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যথার্থ ও সংগত কারণ ছাড়া সন্তান হত্যার ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এখন কেউ যদি সামান্য কারণে বা বাহানায় সন্তান প্রজননের ক্ষমতাই চিরতরে নষ্ট করে দেয়, তাহলে তা কত বড় অপরাধ হবে! একবার তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান, মোল্লাহাট, বাগেরহাট।