উত্তর : স্বামীর আনুগত্যকেই প্রাধান্য দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন স্বামী উপস্থিত থাকবে, তখন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত মহিলার জন্য নফল ছিয়াম পালন বৈধ নয় এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না (ছহীহ বুখারী, হা/৫১৯৫; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪৩১২৩)। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে মহিলার স্বামী ও অসুস্থ মা আছে, এক্ষেত্রে তার মায়ের পূর্বে স্বামীর আনুগত্য করা অপরিহার্য। স্বামীর অনুমতি ব্যতীত সে মায়ের কাছে যেতে পারবে না’ (শারহু মুনতাক্বাল ইরাদাত, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৭)।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘পুণ্যময়ী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে (স্বামীর ধন ও নিজেদের ইজ্জত) রক্ষাকারিণী; আল্লাহর তাওফীক্বে তারা তা হেফাযত করে’ (সূরা আন-নিসা : ৩৪)। সুতরাং পুরোপুরিভাবে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর উপর অপরিহার্য। যেমন সেবা-যত্নে, ভ্রমণে, শক্তিশালীকরণে এবং অন্যান্য বিষয়ে, যা ছহীহ সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত। বিবাহের পূর্বে যেমন পিতা-মাতার আনুগত্য করা ওয়াজিব ছিল, বিবাহের পর ঠিক তেমনি স্বামীর আনুগত্য করা অপরিহার্য। পিতা-মাতার কাছ থেকে সমস্ত আনুগত্য স্বামীর কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। পিতা-মাতার আর কোন আনুগত্য অবশিষ্টই নেই’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৩২তম খণ্ড, পৃ. ২৬০-২৬১)। তিনি আরো বলেন যে, ‘নিজের পিতা-মাতার বাড়িতে যাওয়ার পরও স্বামীর আনুগত্য করা অপরিহার্য, বাড়ির বাহিরে কোথাও যাওয়ার জন্য স্বামীর অনুমতি প্রয়োজন’ (ফাতাওয়া আল-কুবরা লি ইবনি তাইমিয়্যাহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪৭)।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি স্বামীর সহবাসের ইচ্ছা পূরণ করা স্ত্রীর উপর অপরিহার্য হয়, তাহলে তো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা অধিকতর যরূরী। যেমন সন্তান লালন-পালন পরিকল্পনা, পরিবার সংরক্ষণ করা ইত্যাদি’ (আদাবুয যিফাফ, পৃ. ২১০-২৮২)। হাদীছে এসেছে, স্বামীর আনুগত্য করার মাধ্যমে স্ত্রী যেকোন দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬১; সনদ হাসান, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৯৩২)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদাহ করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদাহ করতে। সেই প্রতিপালকের শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার রবের প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। স্ত্রী কোন কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চাইলেও স্ত্রীর পক্ষে তা প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়’ (ইবনু মাজাহ, হা/১৫১৫, ১৮৫৩; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১২০৩; আদাবুয যিফাফ, পৃ. ১৭৮)।
ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন বা বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বা অন্যান্য বিষয়ে পিতা-মাতার আদেশ মান্য করা অপরিহার্য নয়। বরং স্বামীর আনুগত্য করা অধিকতর যরূরী’ (আল-ইনসাফ, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৩৬২)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে সমস্ত নারী কোন উপযুক্ত কারণ ছাড়াই স্বামীর নিকট ত্বালাক্ব চায়, তার উপর জান্নাতের সুগন্ধিও হারাম’ (তিরমিযী, হা/১১৮৬-১১৮৭; আবূ দাঊদ, হা/২২২৬)।
প্রশ্নকারী : রুবেল সিনহা, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম।