উত্তর : উক্ত হাদীছকে ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) ও শাইখ শু‘আইব আল-আরনাউত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) ছহীহ বলেছেন। আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনার নবুওয়াত কখন অবধারিত হয়েছে? তিনি বললেন, যখন আদম (আলাইহিস সালাম) তার শরীর ও রূহের মধ্যে ছিল’ (তিরমিযী, হা/৩৬০৯; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৮৫৬; হিদায়াতুর রুওয়াত, হা/৫৬৯০; ছহীহুল জামি‘, হা/৪৫৮১; তাখরীজু সিয়ারি ‘আলামিন নুবালা, ১৩/৪৫১ পৃ.; ছহীহুল মুসনাদ, হা/১১৪৬)।
দ্বিতীয়তঃ এই হাদীছের মধ্যে নবী (ﷺ) বলেছেন যে, ‘যখন আদম (আলাইহিস সালাম) তার শরীর ও রূহের মধ্যে ছিল, তখন আমার নবুওয়াত অবধারিত হয়েছে’। অর্থাৎ আমার নবুওয়াত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আদম (আলাইহিস সালাম)-এর শরীর তৈরির পর এবং তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেয়ার পূর্বে। অর্থাৎ আদম (আলাইহিস সালাম)-এর শরীর তৈরির পর এবং তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেয়ার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবুওয়াত প্রাপ্তির বিষয়টি লিপিবদ্ধ করেন এবং তা প্রকাশ করেন এবং প্রকাশ্য ঘোষণা করেন। যেমন নবী (ﷺ) বলেছেন যে, মায়ের উদরে নবজাতকের দেহ তৈরির পর এবং রূহ ফুঁকে দেয়ার পূর্বে তার ভাগ্যের রিয্ক্ব, মৃত্যুস্থান, আমাল, হতভাগ্য ও সৌভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয় (ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৯৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৪৩)। মুহাম্মাদ (ﷺ) আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সন্তানদের নেতা এবং সর্বোচ্চ সম্মানিত। নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) সেই সময় থেকেই আল্লাহ তা‘আলার চিরন্তন জ্ঞানে একজন নবী ছিলেন। তখন থেকেই তিনি নবী হবেন বলে অবধারিত ছিলেন (আল-মাউসূ‘আতুল হাদীছিয়্যাহ)। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর যখন আল্লাহ নবীদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিলেন যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞা দান করছি, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে যখন একজন রসূল আসবে, তখন নিশ্চয় তোমরা তাকে বিশ্বাস ও সাহায্য করবে। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি স্বীকার করলে এবং আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করলে?’ তারা বলল, ‘আমরা স্বীকার করলাম’। তিনি বললেন, ‘তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম’ (সূরা আলে ইমরান: ৮১)।
তবে এই পৃথিবীতে আগমনের পর ৪০ বছর বয়সে তাঁর নবুওয়্যাত প্রকাশ পায়। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ)-কে নবুওয়াত দেয়া হয় চল্লিশ বছর বয়সে, এরপর তিনি তের বছর মক্কায় কাটান। এ সময় তার প্রতি অহী নাযিল হচ্ছিল। তারপর হিজরতের নির্দেশ পান এবং হিজরতের পর দশ বছর কাটান। আর তিনি তেষট্টি বছর বয়সে মারা যান (ছহীহ বুখারী, হা/৩৯০২, ৩৮৫১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৫১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৪২)। অন্য বর্ণনায় আসছে, আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) না অতিরিক্ত লম্বা ছিলেন, না বেঁটে ছিলেন, না ধবধবে সাদা ছিলেন, আর না ফ্যাকাশে সাদা ছিলেন, চুল অতিশয় কোঁকড়ানোও ছিল না, আর সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহ তাঁকে নবুওয়্যাত দান করেন। এরপর মক্কায় দশ বছর এবং মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেন। ষাট বছর বয়সকালে আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দান করেন। এ সময় তাঁর মাথায় ও দাড়িতে বিশটি চুলও সাদা হয়নি (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯০০, ৩৫৪৮, ৩৫৪৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৪৭)। অনুরূপভাবে সীরাতগ্রন্থগুলো তালাশ করলেও স্পষ্ট আকারে বুঝা যায় যে, উম্মাতের জন্য তাঁর নবুওয়্যাত প্রকাশ পায় চল্লিশ বছর বয়সে। আল্লামা সফীউর রহমান মুবারাকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যখন তিনি (ﷺ) নবুওয়্যাত লাভ করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল, চন্দ্র বছরের হিসাবে চল্লিশ বছর, ছয় মাস, বার দিন। সূর্যবর্ষ হিসাবে ঊনচল্লিশ বছর, তিন মাস, বিশ দিন ছিল’ (আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃ. ৫১)।
প্রশ্নকারী : রাসেল, হাজীগঞ্জ।