আল্লামা মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী*
(শেষ কিস্তি)
তাঁর লিখিত কিতাবাদি ও গবেষণা
শায়খের অনেক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বই-পুস্তক ও গবেষণা কর্ম রযেছে। সেগুলোর সংখ্যা শতাধিক। তন্মধ্যে অনেকগুলোই বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। কোন কোনটি একাধিকবার মুদ্রিত হয়েছে। সেগুলো থেকে নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বইয়ের তালিকা প্রদান করা হল :
১. ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজি আহাদীছি মানারিস সাবীল। [নয় খণ্ডে সমাপ্ত] (إرواء الغليل في تخريج أحاديث منار السبيل)
২. সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ। ছহীহ হাদীছ সিরিজ এবং সেগুলোর কিছু ব্যাখ্যা ও শিক্ষা। [সাত খণ্ডে সমাপ্ত] (وسلسلة الأحاديث الصحيحة و شيء من فقهها و فوائدها)
৩. সিলসিলাতুল আহাদীছিয যাঈফাহ ওয়াল মাওযূ‘আহ (দুর্বল ও বানোয়াট হাদীছ সিরিজ এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে তার কুপ্রভাব)। [চৌদ্দ খণ্ডে সমাপ্ত] (سلسلة الأحاديث الضعيفة و الموضوعة و أثرها السيئ في الأمة)
৪. ছহীহ ওয়া যাঈফ সুনান আবূ দাউদ (সুনান আবুদাউদের হাদীসগুলো তাখরীজ এবং তাহক্বীক্ব করে ছহীহ ও যঈফ দু’ভাগে ভাগ করা হযেছে।) [দশ খণ্ডে সমাপ্ত] (صحيح وضعيف سنن أبي داود)
৫. ছহীহ ও যাঈফ সুনান নাসাঈ (সুনান নাসাঈর হাদীছগুলো তাহক্বীক্ব করে ছহীহ ও যঈফ দু’ভাগে ভাগ করা হযেছে।) [সাত খণ্ডে সমাপ্ত] (صحيح وضعيف سنن النسائي)
৬. ছহীহ ওয়া যঈফ সুনান তিরমিযী (সুনান তিরমিযীর হাদীছগুলো তাহক্বীক্ব করে ছহীহ ও যঈফ দু’ভাগে ভাগ করা হযেছে।) [সাত খণ্ডে সমাপ্ত] (صحيح وضعيف سنن الترمذي)
৭. ছহীহ ওয়া যাঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (সুনান ইবনু মাজার হাদীছগুলো তাহক্বীক্ব করে ছহীহ ও যঈফ দু’ভাগে ভাগ করা হযেছে।) [ছয় খণ্ডে সমাপ্ত] (صحيح وضعيف سنن ابن ماجه)
৮. ছহীহ ওয়া যঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীব। (তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবের হাদীছগুলো তাহক্বীক্ব করে ছহীহ ও যঈফ দু’ভাগে ভাগ করা হযেছে।) [পাঁচ খণ্ডে সমাপ্ত] (صحيح وضعيف الترغيب والترهيب)
৯. তাববীব ওয়া তারতীবু আহাদীছিল জামে’ আছ-ছাগীর। (تبويب وترتيب أحاديث الجامع الصغير وزياداته على أبواب الفقه)
১০. ছহীহ ওয়া যঈফুল জামে’ আছ-ছাগীর ওয়া যিয়াদাহিহী। (صحيح وضعيف الجامع الصغير وزياداته)
১১. আত-তা’লীকাতুল হিসান আলা ছহীহ ইবনি হিব্বান। (التعليقات الحسان على صحيح ابن حبان)
১২. ছহীহুল আদাবুল মুফরাদ। (এই গ্রন্থে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) রচিত আল-আদাবুল মুফরাদ কিতাবের ছহীহ হাদীছগুলো তাহক্বীক্ব করে পৃথক করা হযেছে।) (صحيح الأدب المفرد)
১৩. যঈফুল আদাবুল মুফরাদ। (এই গ্রন্থে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) রচিত আল-আদাবুল মুফরাদ কিতাবের দুর্বল হাদীছগুলো তাহক্বীক্ব করে পৃথক করা হযেছে।) (ضعيف الأدب المفرد)
১৪. তামামুল মিন্নাহ ফীত তা‘লীক্ব আলা ফিক্বহিস সুন্নাহ। (আল্লামা সাইয়েদ সাবিকের লেখা ফিক্বহুস সুন্নাহ গ্রন্থের তাহক্বীক্ব ও তাতে টীকা সংযোজন।) (تمام المنة في التعليق على فقه السنة)
১৫. তাহক্বীক্ব মিশকাতিল মাছাবীহ লিত তিবরীযী। (মিশকাতুল মাছাবীহের তাহক্বীক্ব) (تحقيق كتاب مشكاة المصباح للتبريزي)
১৬. আস-সুমুরুল মুসতাত্বাব ফী ফিক্বহিস সুন্নাহ ওয়া কিতাব। (الثمر المستطاب في فقه السنة والكتاب)
১৭. আত-তাওহীদ আওয়ালান ইয়া দু‘আতাল ইসলাম। (হে ইসলাম প্রচারকগণ! সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দিন) (التوحيد أولًا يا دعاة الإسلام)
১৮. ফাযলুছ ছালাতি ‘আলান্নাবী (নবী (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠের ফযীলত) (فضل الصلاة على النبي ﷺ)
১৯. ফিতনাতুত তাকফীর (মুসলমানকে কাফির বলার ফিতনা) (فتنة التكفير)
২০. তাহযীরুস সাজিদ মিন ইত্তিখাযিল কুবূরি মাসাজিদ। (কবরকে মসজিদ বানানোর ব্যাপারে সতর্কতা) (تحذير الساجد من اتخاذ القبور مساجد)
২১. শারহুল আক্বীদাহ আত-ত্বহাবীয়্যাহ (আকীদা ত্বহাবিয়ার ব্যাখ্যা) (شرح العقيدة الطحاوية)
২২. তাহক্বীক্ব মুখতাছারুর উলূ‘ লিল আলিয়্যিল গাফফার (ইমাম যাহাবীর লেখা মুখতাসার আল-ঊলূ কিতাবের তাহকীক) تحقيق مختصر العلو للعلي الغفار لمحمد بن أحمد بن عثمان الذهبي
২৩. কিতাবুল ঈমান (ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) রচিত কিতাবুল ঈমানের তাহক্বীক্ব ও তাখরীজ) (تحقيق و تخريج كتاب الإيمان لابن تيمية)
২৪. জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমাহ (মুসলিম নারীর পর্দা) (جلباب المرأة المسلمة)
২৫. হিজাবুল মারআহ ও লিবাসুহা ফিছ ছালাহ (শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) রচিত ‘ছালাতে নারীর পর্দা ও পোশাক’ শীর্ষক কিতাবের তাহক্বীক্ব ও তাতে টীকা সংযোজন) (حجاب المرأة ولباسها في الصلاة تأليف: شيخ الإسلام ابن تيمية)
২৬. আর-রাদ্দুল মুফহিম (যারা নারীদের মুখ ও হস্তদ্বয় ঢাকাকে ওয়াজিব বলে তাদের প্রতিবাদ) (الرد المفحم، على من خالف العلماء وتشدد وتعصب، وألزم المرأة بستر وجهها وكفيها وأوجب، ولم يقتنع بقولهم: إنه سنة ومستحب)
২৭. তাহরীমু আলাতিত ত্বরব (বাদ্য যন্ত্র হারাম) (تحريم آلات الطرب)
২৮. ওসীলা গ্রহণ: প্রকার ও বিধিবিধান (التوسل أنواعه وأحكامه)
২৯. আহকামুল জানাইয (জানাযার বিধান ও বিদ‘আত সমূহ) (أحكام الجنائز وبدعها)
৩০. যিলালুল জান্নাহ ফী তাখরীজিস সুন্নাহ (ظلال الجنة في تخريج السنة لابن أبي عاصم)
৩১. আদাবুয যুফাফ (সুন্নাহর আলোকে বাসর শয্যার আদব) (آداب الزفاف في السنة المطهرة)
৩২. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল উমরাহ (হজ্জ ও উমরার বিধিবিধান) (مناسك الحج والعمرة في الكتاب والسنة وآثار السلف وسرد ما ألحق الناس بها من البدع)
৩৩. কিয়ামু রামাযান (রামাযান মাসে তারাবীহর ছালাতের ফযীলত, নিয়ম-কানুন, জামায়াতে আদাযের বৈধতা এবং ই’তেকাফ সংক্রান্ত আলোচনা) (قيام رمضان)
৩৪. ছালাতুত তারাবীহ (তারাবীহর ছালাত) (صلاة التراويح)
৩৫. ছহীহু সীরাতিন নববিয়্যাহ (বিশুদ্ধসূত্রে প্রমাণিত রাসূল (ﷺ)-এর জীবনী) (صحيح السيرة النبوية)
৩৬. ছালাতুল ঈদাইন ফিল মুছাল্লা (ঈদগাহে ঈদের ছালাত পড়া সুন্নত) (صلاة العيدين في المصلى هي السنة)
৩৭. তাহক্বীক্ব ফিক্বহিস সীরাহ (মুহাম্মদ গাযালী (রাহিমাহুল্লাহ) রচিত রাসূল (ﷺ)-এর জীবনী বিষয়ক গ্রন্থের তাহক্বীক্ব) (تحقيق فقه السيرة لمحمد الغزالي)
৩৮. ইমাম নাসাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) রচিত ‘কিতাবুল ইলম’ গ্রন্থের তাহক্বীক্ব, তাখরীজ ও তাতে টীকা সংযোজন) (تحقيق و تخريج كتاب العلم للحافظ أبي خيثمة زهير بن حرب النسائي)
৩৯. হাফেয ইবনে রজব হাম্বলী (রাহিমাহুল্লাহ) রচিত ‘কালিমাতুল ইখলাছ’-এর তাহক্বীক্ব, তাখরীজ ও টীকা সংযোজন) (كلمة الإخلاص وتحقيق معناها للحافظ ابن رجب الحنبلي)
৪০. মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ (ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) রচিত শামাইলে মুহাম্মাদিয়া বা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর স্বভাব-চরিত্র ও দেহাবয়ব বিষয়ক কিতাবের তাহক্বীক্ব ও সংক্ষিপ্তকরণ) (مختصر الشمائل المحمدية للإمام أبي عيسى محمد بن سورة الترمذي صاحب السنن)
৪১. ছালাতুর রাগাইব তথা রজব মাসের বিদ‘আত (ছালাতুর রাগাইব প্রসঙ্গে দু’মহামান্য ইমাম আল-ঈয ইবনু আব্দিস সালাম ও ইবনুস সালাহ এর মাঝে সংঘটিত মুনাযারা) (مساجلة علمية بين الإمامين الجليلين العز بن عبد السلام و ابن الصلاح حول صلاة الرغائب المبتدعة)
৪৩. নাসবুল মাজানীক (গারানিকের ঘটনা প্রসঙ্গে বিভ্রান্তির জবাব) (نصب المجانيق لنسف قصة الغرانيق)
৪৪. কিছ্ছাতুল মাসীহিদ দাজ্জাল ও নুযূলি ঈসা (আলাইহিস সালাম) (দাজ্জাদ ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর অবতরণ প্রসঙ্গ) (قصة المسيح الدجال ونزول عيسى عليه الصلاة و السلام وقتله إياه على سياق رواية أبي أمامة رضي الله عنه مضافا إليه ما صح عن غيره من الصحابة رضي الله عنهم)
৪৫. ফিক্বহুল ওয়াকি (দাওয়াহর ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতির জ্ঞান থাকা প্রসঙ্গে একটি গবেষণামূলক বই) (حول فقه الواقع)
৪৬. ছিফাতুল ফাতওয়া (ইমাম আহমাদ ইবনু হামদান (রাহিমাহুল্লাহ) রচিত ফাতাওয়া, মুফতী এবং ফাতাওয়া প্রার্থীর বিবরণ শীর্ষক কিতাবের তাহক্বীক্ব) (تحقيق صفة الفتوى والمفتي والمستفتي للإمام أحمد بن حمدان الحراني الحنبلي)
৪৭. হুকূকুন নিসা (মুহাম্মাদ রশীদ রেযা (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক রচিত ‘ইসলামে নারী অধিকার’ শীর্ষক কিতাবের তাহক্বীক্ব ও টীকা সংযোজন) (حقوق النساء في الإسلام وحظهن من الإصلاح المحمدي لمحمد رشيد رضا)
৪৮. হুকমু তারিকিস ছালাহ (সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান)। (حكم تارك الصلاة)
৪৯. ছিফাতুছ ছালাহ (নবী (ﷺ)-এর ছালাত- তাকবীর থেকে সালাম পর্যন্ত যেন আপনি তাঁকে দেখছেন)। (صفة صلاة النبي صلى الله عليه وسلم من التكبير إلى التسليم كأنك تراها)
৫০. তারাজুতুশ শাইখ আল-আলবানী (আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) যে সকল হাদীছের উপর ছহীহ কিংবা যঈফ হুকুম প্রদানের ক্ষেত্রে মত পরিবর্তন করেছেন) (تراجعات الشيخ الألباني في بعض أحكامه الحديثية)
এছাড়াও আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর লিখিত হাদীছের খেদমতে এবং ইসলামে বিভিন্ন বিষয় প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত অনেক গ্রন্থ রয়েছে। লেখার কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় সেগুলো এখানে উল্লেখ করা হল না।
আন্তর্জাতিক বাদশাহ ফায়সাল পুরস্কার
ইসলামী জ্ঞান-গবেষণা ও ইসলামী শিক্ষার প্রচারে অবদানের জন্য তাঁকে ১৪১৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৯৯ ইং সনে ‘আন্তর্জাতিক বাদশাহ ফায়সাল’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তাঁর পুরস্কারের শিরোনাম ছিল, ‘প্রায় একশ’র অধিক পুস্তক রচনার মধ্য দিয়ে হাদীছের তাহক্বীক্ব, তাখরীজ ও গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে হাদীছের সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সিরীয় নাগরিক সম্মানিত শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানীকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হল’।
তাঁর ব্যাপারে আলেমগণের ভূয়সী প্রশংসা
১. শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তিনি ছিলেন সুন্নাতের অনুসারী, হকের সাহায্যকারী এবং বাতিলপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী’।
২. শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে আসমানের নিচে আল্লামা মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মত এত বড় হাদীছের আলেম আমি দেখিনি’। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকট এই হাদীছটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। যে হাদীছে রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রতি একশ’ বছরের মাথায় এই উম্মতের জন্য এমন একজনকে পাঠাবেন যিনি দ্বীন-ইসলামকে সংস্কার করবেন’। তিনি বলেন, আমার ধারণা, শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হলেন এ যুগের মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক। আল্লাহ সব চেযে ভাল জানেন’।
৩. আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ ইবনু ছালেহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘শায়খের সাথে বৈঠকাদীতে বসার পর (যদিও তা কম) যা বুঝতে পেরেছি তা হল, তিনি সুন্নাহর প্রতি আমল এবং আমল-আক্বীদা উভয় ক্ষেত্রেই বিদ‘আত উৎখাতে খুবই আগ্রহী। আর তার লিখিত বই-পুস্তক পড়ে তার ব্যাপারে জানতে পারলাম যে, তিনি হাদীছের সনদ ও মতন উভয় ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী। এ সকল বই-পুস্তক দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা অনেক মানুষকে উপকৃত করেছেন যেভাবে জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে তারা লাভবান হয়েছে তদ্রুপ নীতি নির্ধারণ এবং ইলমে হাদীছের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও তারা লাভবান হয়েছেন। এটি মুসলিমদের জন্য বড় একটি প্রাপ্তি। আলহামদুলিল্লাহ। আর ইলমে হাদীছের ক্ষেত্রে তার জ্ঞানগর্ভ গবেষণা সত্যি চমৎকৃত হওয়ার মত’।
৪. খ্যাতনামা মুফাসসির আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীতী (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ আব্দুল আযীয আল-হাদ্দাহ বলেন, ‘আল্লামা শানক্বীতী শায়খ আলবানীকে বিষ্ময়করভাবে সম্মান করতেন। তিনি মদীনার মসজিদে হারামে দারস প্রদান করার সময় যদি শায়খ আলবানীকে হেঁটে যেতে দেখতে তিনি তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সালাম প্রদান করতেন।
৫. শায়খ মুকবিল আল-ওয়াদাঈ বলেন, ‘আমি যে আক্বীদা পোষণ করি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে দ্বীন হিসাবে মনে করি তা হল, শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী হলেন সে সকল মুজাদ্দিদগণের অন্তর্ভুক্ত যাদের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর এই হাদীছটি প্রযোজ্য। ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রতি একশ‘ বছরের মাথায় এই উম্মতের জন্য এমন একজনকে পাঠাবেন যিনি দ্বীন-ইসলামকে সংস্কার করবেন’।
শায়খের স্ত্রী-পরিবার
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) মোট চারজন বিবাহ করেছিলেন। এদের মধ্যে ৩ স্ত্রীর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ১২ জন সন্তান দান করেছিলেন। বয়স অনুপাতে তাদের নাম হল, প্রথম স্ত্রী থেকে : (১) আব্দুর রহমান (২) আব্দুল লতীফ (৩) আব্দুর রাযযাক। দ্বিতীয় স্ত্রী থেকে : (৪) আব্দুল মুসাব্বির (৫) আব্দুল আ‘লা (৬) মুহাম্মাদ (৭) আব্দুল মুহাইমিন (৮) আনীসা (৯) আসিয়া (৯) সুলামা (১০) হাস্সানাহ (১১) সাকীনাহ এবং তৃতীয় স্ত্রী থেকে : (১২) হেবাতুল্লাহ। চতুর্থ স্ত্রী থেকে কোন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেনি।
আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অন্তিম অছিয়ত
প্রথমতঃ আমি আমার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব ও যারা আমাকে ভালোবাসে তাদের নিকট এই অছিয়ত করছি, যখন তাদের কাছে আমার মৃত্যু সংবাদ পৌঁছবে তারা যেন আমার জন্য আল্লাহর নিকট রহমত ও মাগফিরাত কামনা করে দু‘আ করে এবং আমার মৃত্যুতে কেউ যেন নিয়াহা বা উচ্চ আওয়াজে ক্রন্দন না করে।
দ্বিতীয়তঃ যেন অনতিবিলম্বে আমাকে দাফন করা হয় এবং প্রযোজনীয় কাফন-দাফনের প্রস্তুতির জন্য যাদেরকে না হলেই নয় তাদেরকে ছাড়া নিকটাত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবকে মৃত্যুর সংবাদ দিতে গিয়ে যেন দাফন কর্ম বিলম্ব না করে। আমাকে গোসল দেয়ার দায়িত্ব পালন করবে আবূ আব্দুল্লাহ ইজ্জত খাযার এবং তিনি যাকে এ কাজে সহযোগিতার জন্য পসন্দ করবেন। তিনি আমার প্রতিবেশী এবং একান্ত অন্তরঙ্গ বন্ধু।
তৃতীয়তঃ তিনি মৃত্যুর আগেই তাঁর বাড়ির অদূরেই কবরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেন। যেন গাড়িতে উঠিয়ে তার লাশ বহন করে দূরে নিতে না হয় কিংবা কবর দিতে আসা লোকজনকে গাড়িতে চড়ে লাশের সাথে যেতে না হয়। সেই সাথে এমন পুরনো গোরস্থানে যেন তাকে কবর দেয়া হয় যেটার ব্যাপারে আশা করা যায় যে, সেটা আর খুঁড়া-খুঁড়ি করা হবে না।
আমি যদি দেশের বাইরে মারা যাই তবে আমার দাফন কর্ম সমাধান করার আগে যেন দেশে আমার সন্তান-সন্ততি বা অন্য লোকজনকে খবর না দেয়া হয়। অন্যথা তারা আবেগের বশবর্তী হযে হয়ত এমন কিছু করবে যার কারণে আমার দাফন কর্ম বিলম্ব হযে যাবে।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, আমি যেন তাঁর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করি যে, তিনি মৃত্যুর আগেই আমার পূর্বাপর সকল গুনাহ মাফ করে দিযেছেন।
চতুর্থতঃ আমার লাইব্রেরীর ব্যাপারে অছীয়ত হল, লাইব্রেরীর প্রকাশিত-অপ্রকাশিত, পাণ্ডুলিপি, আমার লেখা বা অন্যের লেখা সকল বই-পুস্তক মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াকফ করছি। যেন কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফে ছালেহীনের মানহাজের দিকে দাওয়াতের পথে এগুলো স্মৃতি হিসাবে অবশিষ্ট থেকে যায়। কারণ আমি এককালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম। আল্লাহর নিকট আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকা অবস্থায় তিনি যেভাবে আমার মাধ্যমে ছাত্রদের উপকার করেছেন ঠিক সেভাবে আমার লাইব্রেরীতে যে সকল মানুষ জ্ঞানার্জনের জন্য আসবে তারাও যেন এগুলো থেকে উপকৃত হয়। আর আমি নিজেও যেন তাদের দু‘আর মাধ্যমে লাভবান হই।
رب أوزعني أن أشكر نعمتك التي أنعمت علي و على والدي و أن أعمل صالحاً ترضاه و أصلح لي في ذريتي إني تبت إليك و إني من المسلمين
‘হে প্রভু! আপনি আমাকে এবং আমার পিতা-মাতাকে যে নে‘মত দিয়েছেন তার শুকরিয়া আদায়ের তাওফীক দান করুন। আরও তাওফীক দান করুন এমন নেক আমল করার যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। আমার উপকারের জন্য আমার সন্তান-সন্ততিকে পরিশুদ্ধ করে দিন। আমি আপনার নিকট তওবা করলাম। নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’।
২৭ জুমাদাল আওয়াল ১৪১০ হিজরী।
আখিরাতের পথে যাত্রা
আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এই নশ্বর জগত ছেড়ে আখিরাতের পথে যাত্রা করেন শনিবার, ২২ জুমাদাল আখেরা, ১৪২০ হিজরী মোতাবেক ২ অক্টোবর, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৮ বছর। যেদিন মারা যান সেদিনই এশার ছালাতের পরে তাকে দাফন দেয়া হয়। তাঁর জানাযার ছালাতের ইমামতি করেন তাঁর ছাত্র শায়খ ইবরাহীম শাকরাহ। জানাযায় তাঁর ছেলেরা, আত্মীয়-স্বজন, ছাত্র, বন্ধু-বান্ধব ও সাধারণ মানুষ সহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। লাশ দাফন করা হয় উমানের রাজধানী আল-হামলান নামীয় পাহাড়ে নিজ বাড়ি সংলগ্ন পারিবারিক গোরস্থানে। আল্লাহ তা‘আলা শায়খ আলবানীকে অবারিত রহমত বর্ষণে সিক্ত করুন। আমীন!!
দুই কারণে শায়খের দাফন তাড়াতাড়ি দেয়া হয়
প্রথমতঃ তাঁর অছীয়ত বাস্তবায়ন। দ্বিতীয়তঃ শায়খের মৃত্যুর সময়কালটা ছিল খুব গরম। তাই যেন দাফন দিতে আসা লোকজনের কষ্ট না হযে যায়। যদিও শায়খের মৃত্যুর সংবাদ নিকটাত্মীয় ও কাফন-দাফনে সহযোগিতা করার জন্য বিশেষ কিছু লোককে ছাড়া অন্য কাউকে দেয়া হয়নি এবং মৃত্যুবরণের পর দাফন করতে তেমন বিলম্বও করা হয়নি তথাপি তাঁর জানাজায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের সমাগম হয়। কারণ যে ব্যক্তিই তাঁর মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছে সেই অন্য ভাইকে এই খবর পৌঁছে দিয়েছে।
পরিশেষে দু‘আ করি, ইলমে হাদীছের এই মহান খাদেমকে আল্লাহ তা‘আলা যেন মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করেন। আমীন!!
* দাঈ, যুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
প্রসঙ্গসমূহ »:
সালাফে ছালেহীন
সর্বশেষ প্রবন্ধ
ফেসবুক পেজ
সর্বাধিক পঠিত প্রবন্ধ
