আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ)
-ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*
‘আল্লামাহ শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ)
(১১৯৩-১২৪৬ হি./১৭৭৯-১৮৩১ খ্রি.)
ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় সংস্কারে ‘আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী বীর সিপাহসালার ও লড়াকু সৈনিক। নির্ভেজাল তাওহীদী ‘আক্বীদার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও শিরককে প্রত্যাখ্যান, বিশুদ্ধ সুন্নাহর পুনরুজ্জীবন ও বিদ‘আতকে প্রতিরোধকরণ, তাক্বলীদী ধ্যান-ধারণার উচ্ছেদসাধন, প্রচলিত রসম-রেওয়াজসমূহের মূলোৎপাটন, শী‘আ মতবাদের যুক্তি খণ্ডন ও প্রতিহতকরণ এবং ইংরেজ বেনিয়া গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্বশস্ত্র সংগ্রামের এক অকুতোভয় বীর সেনানি ছিলেন আল্লামা শাহ ইসমাাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ)। তাঁর দাদা সুপণ্ডিত, প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ভারতরত্ন শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বৈপ্লবিক চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং চাচা শাহ ‘আব্দুল ‘আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে ‘দারুল হারব’ বা যুদ্ধ এলাকা ঘোষণার বাস্তব ফলশ্রুতি হিসাবে ভারত উপমহাদেশে শতাধিক বর্ষব্যাপী যে জিহাদ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তিনি তার সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি জিহাদ আন্দোলনে যেমন বীরযোদ্ধা ছিলেন, তেমনি কলমী জিহাদেও ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী মহান লেখক। যার লেখনীর ঝঙ্কারে শিরকের আস্তানা যেমন নাস্তানাবুদ হয়েছিল, তেমনি ব্রিটিশদের শাসনযন্ত্র প্রকম্পিত হয়ে ওঠেছিল। সমকালীন যুগে দ্বীন ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং সাবির্ক সংস্কারে তাঁর ভূমিকা বর্ণনাতীত। সমসাময়িক যুগে তিনি ‘শায়খুল ‘আলিমিল কাবীর’, ‘আল্লামাহ’, ‘মুজাহিদ ফী সাবীলিল্লাহ’ ও ‘শাহীদ’ নামে পরিচিত ছিলেন।[১] এক্ষণে তাঁর জীবনের মূল্যবান দিকগুলো উল্লেখ করে ধর্মীয় সংস্কারে তাঁর অকৃত্রিম অবদান সম্পর্কে এক নাতিদীর্ঘ আলোচনা উপস্থাপন করব।
পরিচিতি
মূল নাম- শাহ মুহাম্মাদ ইসমাঈল ইবনু শাহ ‘আব্দুল গনী ইবনু শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইবনু ‘আব্দুর রহীম ইবনু শায়খুশ শাহীদ ওয়াজীহুদ্দীন আল-‘উমরী আদ-দেহলভী। প্রাচীন যুগ হতে ভারতের রাজধানী ‘দিল্লী’ নাম থেকে তাঁকে ‘দেহলভী’ বলা হয়। আর তাঁর ওমর নামের এক সন্তান ছিল, যার নামানুসারে তাঁর কুনিয়াত ছিল ‘আবূ ওমর’। উপাধি ‘মিয়াঁ’, ‘সাইয়েদ’, ‘শাহীদ’। তাঁর মাতার নাম ফাতিমা বিনতে ‘আলাউদ্দীন।
জন্ম ও শৈশবকাল
তিনি ১১৯৩ হিজরীর ১২ই রবীউছ ছানী মোতাবেক ১৭৭৯ সালের ২৯শে এপ্রিল মুযাফ্ফরনগর জেলার ফুলাতে তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তাঁর জন্মের পর পিতার ইচ্ছা ছিল দুধ পানের জন্য কোন ধাই মায়ের নিকট তাঁকে রাখবেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে অত্যন্ত দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মা ফাতিমা বিনতে ‘আলাউদ্দীন নিজেই তাঁর দুধ পান করাবেন বলে সেটা অস্বীকার করেন। দেখা যায় যে, তাঁর পুত্রের জন্য এক্ষেত্রে তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। অতঃপর ১২৩৬ হিজরীতে শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) ও সাইয়েদ আহমাদ শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সাথে হজ্জ আদায়ের উদ্দেশ্যে তাদের সাথে গমন করেন। অতঃপর তিনি মক্কার মীনাতে মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানেই তার দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়।[৩] আর তিনি ১২৪৬ হিজরীর যুলকাদা মোতাবেক ১৮৩১ সালের ৬ মে তারিখে পাকিস্তানের বলাকোটে শাহাদতবরণ করেন।[৪] তিনি দ্বিতীয় খলীফা ‘উমার ফারূক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ৩৩তম অধঃস্তন পুরুষ ছিলেন।[৫] এই বরেণ্য ‘আলিম ও মুজাহিদ ভারতগুরু শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) (১৭০৩-১৭৬২ খ্রি.)-এর পৌত্র, শাহ ‘আব্দুল গনী (রাহিমাহুল্লাহ) (১৭৫৮-১৮১২ খ্রি.)-এর পুত্র এবং শাহ ‘আব্দুল ‘আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) (১৭৪৭-১৮২৪ খ্রি.), শাহ ‘আব্দুল কাদের (রাহিমাহুল্লাহ) (১৭৫৫-১৮৩৮ খ্রি.) ও শাহ রফীউদ্দীনের (রাহিমাহুল্লাহ) (১৭৫০-১৮১৮ খ্রি.) প্রাণাধিক প্রিয় ভাতিজা ছিলেন।
শিক্ষা-দীক্ষা
শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) সমসাময়িক যুগে তীক্ষ্ম মেধা ও বিচক্ষণতার অধিকারী ছিলেন। তিনি ‘ইলম ও তাক্বওয়ার শিক্ষা তাঁর পরিবার থেকেই লাভ করেন। কেননা তৎকালীন কুরআন ও হাদীছের ‘ইলম তাদের পরিবার ছাড়া ভারতের অন্য কোথাও ছিল না। তাঁর দাদা শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীছের জ্ঞান আনয়ন করেন। অতঃপর তিনি ও তাঁর পুত্রগণ সেটা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করেছেন এবং চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।[৬] মাত্র ৬ বছর বয়সে পিতা শাহ ‘আব্দুল গনীর কাছে তাঁর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। ৮ বছর বয়সে তিনি কুরআন মাজীদ হিফয (মুখস্থ) সমাপ্ত করেন। জীবনীকার মিরযা হায়রাত দেহলভী বলেন, ‘এই হিফয তোতাপাখির মত ছিল না; বরং তাকে পুরা কুরআন মাজীদের অর্থও পড়ানো হয়েছিল’।[৭] ১১ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি নাহু-ছরফের প্রাথমিক গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে শাহ ইসমাঈলের পিতা মৃত্যুবরণ করেন। পিতার মৃত্যুর পর চাচা শাহ আব্দুল কাদের (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকট তিনি নিজের সন্তানের মত লালিত-পালিত হন ও তাঁর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা অব্যাহত থাকে। এরপর বড় চাচা শাহ ‘আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকটে মা‘কূলাত ও মানকূলাত-এর পাঠ গ্রহণ করেন। শাহ রফীউদ্দীনের নিকটও তিনি জ্ঞানার্জন করেন।[৮]
শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) দিল্লীর যে ঐতিহ্যবাহী আলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, সে পরিবারের সদস্যদের কর্ণকুহরে শৈশব থেকেই ‘ক্বালাল্লাহ’ ও ‘ক্বালার রাসূল (ﷺ)’ ধ্বনি গুঞ্জরিত হত। জীবনীকার আবুল হাসান নাদভী (রহ.) বলেন, ‘যেসব ‘ইলমী কথা, মাসআলা-মাসায়েল, হালাল-হারাম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী ধর্মপ্রাণ লোকদেরকে বই-পত্র পড়ে জানতে হয়, সেগুলো শাহ ইসমাঈল (রাহিমাহুল্লাহ) পারিবারিক আলাপ-আলোচনা ও কিসসা-কাহিনীর মাধ্যমেই অবগত হয়ে যান। শিক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে এই শিক্ষা খুবই পূর্ণাঙ্গ ছিল, যা খুব কম সৌভাগ্যবানের কপালেই জোটে’।[৯] তিনি দিল্লীর মাদরাসা রহীমিয়ার ছাত্র হওয়ার কারণে শাহ ওয়ালীউল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) ও শাহ ‘আব্দুল ‘আযীয (রাহিমাহুল্লাহ)-এর লেখনী ও শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তাঁদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রায় সবটুকুই ছিল মূলত ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’-এর লেখনী ও শাহ ‘আব্দুল ‘আযীয (রাহিমাহুল্লাহ)-এর শিক্ষার ফলশ্রুতি।[১০]
অনন্য সাধারণ প্রতিভা
শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর অনন্য সাধারণ প্রতিভা, বিচক্ষণতা ও মুখস্থ শক্তি আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত অন্যতম নে‘মত ছিল। জ্ঞানের বিচারে তাঁর সমসাময়িক যুগে তার সমান কেউ ছিল না। তিনি যা শুনতেন তার সবটাই এমনভাবে মুখস্থ করে নিতেন, যাতে পরে তার দিকে ফিরে যেতে না হয়। তিনি ব্যায়াম, ঘোড়দৌড়, সাঁতার এবং অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণ গ্রহণে ব্যস্ত থাকতেন।[১১] তিনি ‘সাদরা’র (হিকমত বা দর্শন বিষয়ক গ্রন্থের) মত কিতাব বিনা মুতালা‘আয় ৮/১০ পৃষ্ঠার কম পড়তেন না। পরে কখনো ঐসব পাঠের পুনরাবৃত্তিও করতেন না।[১২] শৈশবে পড়াশোনার চেয়ে খেলাধূলার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি। ছাত্রজীবনে তিনি তীরন্দাযী, গুলী চালানো, শিকার, ঘোড়দৌড়, লাঠিখেলা ও সাঁতার কাটতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। শাহ ‘আব্দুল ‘আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) একদিন তাকে বললেন, তুমি খেলাধূলায় বেশি সময় অতিবাহিত করছ, পড়াশোনা করছ না। জবাবে শাহ ইসমাঈল (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, আমাকে পঠিত বিষয় থেকে কিছু জিজ্ঞেস করুন। শাহ ছাহেব দু’একটি প্রশ্ন করলে তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে জবাব দিয়ে দেন। এমনকি পরীক্ষা করার জন্য কিছু আলিম তাঁকে জটিল প্রশ্ন করলে তিনি জবাব প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে পরিতৃপ্ত করতেন। যার মাধ্যমে তাঁর মুখস্থ শক্তি ও যোগ্যতার প্রমাণ মেলে।[১৩] এছাড়া তিনি ৩০ হাযার হাদীছের হাফেয ছিলেন।[১৪]
মাত্র ষোল বছর বয়সে আক্বলী ও নাক্বলী জ্ঞানের উপর ব্যাপক দক্ষতা অর্জন করেন। অতঃপর তিনি তাঁর যুগে কুরআন, হাদীছ, দর্শন, মানতিক, ভূগোল ইত্যাদি জ্ঞানশাস্ত্রের উপর পাঠদান করেন। তিনি তাঁর যুগে অন্যান্য আলিমের মত শুধু পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের কাজে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং তিনি ঘোড়দৌড়, শারীরিক ব্যায়াম, বন্দুক চালানো, কুস্তি ইত্যাদিতে সময় অতিবাহিত করতেন।[১৫]
গুণাবলী
দুনিয়াবিমুখতা ও ইবাদতের ক্ষেত্রে শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর নিজেকে এবং নিজের সমগ্র জীবনকে আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত ও জিহাদের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে তাঁকে অনেক বড় বড় বিপদ ও সমস্যার মুকাবেলা করতে হয়েছে। তিনি আল্লাহর রাস্তার মুহাজির ও মুজাহিদগণের মত সাধারণ জীবন-যাপনের জন্য আল্লাহর রাস্তায় হিজরত ও জিহাদের সংকল্প গ্রহণ করেন। তিনি আল্লাহর ইবাদত ও অনুনয়-বিনয়ের জন্য রাত্রি জাগরণ করতেন। তাঁর চাচাতো ভাই মূসা ইবনু রাফীউদ্দীন (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক বর্ণিত একটি ঘটনা থেকে জানা যায় যে, ‘একবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তার ঘরে গেলাম। এমতাবস্থায় খাদেম ওযূ করার জন্য পানি আনলে আমি তাকে বললাম, ফজর পর্যন্ত আমার পানির প্রয়োজন নেই। তখন তিনি তার চাচাতো ভাইকে বললেন, ‘তুমি ইসমাঈলের ভাই নও। কেননা তিনি এশার ছালাত আদায় করেন অতঃপর কিছু সময় ঘুমান। অতঃপর জাগ্রত হন, ওযূ করে ফজর পর্যন্ত নফল ছালাতসমূহ আদায় করেন। আর ইবাদতের ক্ষেত্রে তার থেকে তুমি কোথায়? এ কথা শুনে মূসা ইবনু রাফীউদ্দীন (রাহিমাহুল্লাহ) লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলেন’।[১৬]
শিক্ষকবৃন্দ
শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর পরিবার ছিল তৎকালীন শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-গরিমায় শ্রেষ্ঠ। সমসাময়িক যুগে ভারতবর্ষে তাঁর চাচারা ব্যতীত কিতাব ও সুন্নাহর শিক্ষা প্রদান ও তার দা‘ওয়াত দেয়ার মত কেউ ছিল না। কুরআন-হাদীছের পাঠদানের মত তাদের মাদরাসা ব্যতীত অন্য কোন মাদরাসাও ছিল না। মূলত তাঁর দাদা শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) ও চাচাগণই তৎকালীন ইসলামী শিক্ষা বিশেষ করে হাদীছ ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠদান করাতেন। এই পরিবারের সদস্য হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই তিনি ‘ইলম অর্জনের প্রতি উৎসাহিত হন। তিনি মূলত পিতা ও চাচাদের নিকটেই ইলম অর্জন করেছেন। তাঁর কতিপয় শিক্ষকের নাম নিম্নরূপ :
১. তাঁর পিতা আব্দুল গনী (রাহিমাহুল্লাহ)
শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) পিতা আব্দুল গনী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকট থেকে ছরফ, নাহু, আদব সহ ইলমের অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। অতঃপর দশ বছর বয়সে তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন।
২. শাহ আব্দুল কাদির (রাহিমাহুল্লাহ)
তিনি শাহ আব্দুল কাদির (রাহিমাহুল্লাহ)-এর থেকে মানতিক, দর্শন ও ইলমের অন্যান্য শাখার ইলম অর্জন করেন। যেমন রফীউদ্দীনের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি শাহ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকট থেকে পঠন ও শ্রবণরীতিতে হাদীছ ও তৎসংশ্লিষ্ট জ্ঞান হাসিল করেন। সেখানে তিনি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে নির্ভুলভাবে হাদীছ পড়তেন।
৩. শায়খ আব্দুল হাই বিদিহানভী
তিনি তাঁর নিকট থেকেও ইলম হাসিল করেন। তাঁর রয়েছে ফিক্বহের উপর ব্যাপক দক্ষতা এবং পাঠদানেও অভিজ্ঞ। তিনি আফগান যুদ্ধে জিহাদের ময়দানে ১২৪৩ হিজরীতে শাহাদতবরণ করেন।[১৭]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* পি-এইচ. ডি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহী।।
তথ্যসূত্র :
[১]. নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৯১৪।
[২]. মুহাম্মাদ ‘আব্দুস সালাম মুহাম্মাদ গাওছ, জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল ইবনু ‘আব্দুল গানী ইবনু শাহ ওয়ালীউল্লাহ আদ-দেহলভী ফী তাওযীহি ‘আক্বীদাতিস সালাফ ফী শিবহিল কাররাতিল হিনদিয়্যাহ (সঊদী আরবের মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আক্বীদাহ’ বিভাগের থিসিস, ১৪১৫ হি./১৯৯৫ খ্রি.), পৃ. ৪৪ (পরবর্তীতে এই উৎসটি ‘জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল’ নামে উল্লিখিত হবে); নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৯১৪; ইসলামী বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ, জুন ২০০৬ খ্রি.), ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪৮২।
[৩]. জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল, পৃ. ৪৪-৪৫; মুহাম্মাদ খালিদ সাইফ, তাযকিরায়ে শহীদ (লাহোর : মাকতাবাতু গাযনাভিয়্যাহ, ১৯৮৩ খ্রি.), পৃ. ৫৫।
[৪]. শায়খ ‘আব্দুল গানী, আল-ইয়ানি‘ঊল জানিউ ফী আসানীদ ‘আলা হাশিয়া কাশফুল আশতার মিন রিজালি মা‘আনিল ‘আছার (দিল্লী : যিয়াদ প্রেস, ১৩৩৯ হি.), পৃ. ৭৬; ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী আল-কানূযী, আবজাদুল ‘উলূম, ৩য় খণ্ড (দামেস্ক : মানছূরাত ওয়াযারাতুছ ছাক্বাফাহ, ১৯৭৮ খ্রি.), পৃ. ২৪৬; আবূ ইয়াহইয়া ইমাম খান নওশাহরাবী, তারাজিমে ‘উলামাই হাদীছ হিন্দ (দিল্লী : যিয়াদ বিরুকাই প্রেস, ১৩৫৬ হি.), পৃ. ৭১।
[৫]. আল-ইয়ানি‘ঊল জানিউ ফী আসানীদ ‘আলা হাশিয়া কাশফুল আশতার মিন রিজালি মা‘আনিল ‘আছার, পৃ. ৭৬; জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল, পৃ. ৪৪; ইসলামী বিশ্বকোষ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪৮২।
[৬]. জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল, পৃ. ৪৫।
[৭]. মিরযা হায়রাত দেহলভী, হায়াতে তাইয়িবা (প্রকাশনা স্থান, সংস্থা, সংস্করণ ও তারিখ বিহীন), পৃ. ৩৩-৩৫।
[৮]. ‘জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল’, পৃ. ৪৫; নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৯১৪; ইসলামী বিশ্বকোষ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪৮২।
[৯]. সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, সীরাতে সাইয়িদ আহমাদ শহীদ, পৃ. ৩৭৩।
[১০]. আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ, পৃ. ২৫৬-২৫৭।
[১১]. ‘জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল’, পৃ. ৪৫।
[১২]. তারাজিমে ‘উলামাই হাদীস হিন্দ (লায়ালপুর-পাকিস্তান : জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ ১৩৯১ হি./১৯৮১ খ্রি.), পৃ. ৯২; তাযকিরায়ে শাহীদ, পৃ. ৬১।
[১৩]. তারাজিমে ‘উলামাই হাদীস হিন্দ (লায়ালপুর-পাকিস্তান : জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ ১৩৯১ হি./১৯৮১ খ্রি.), পৃ. ৯৩; হায়াতে তাইয়েবা, পৃ. ৪১; জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল, পৃ. ৪৫।
[১৪]. আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ, পৃ. ২৭৮ টীকা দ্র.।
[১৫]. ‘জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল’, পৃ. ৪৫-৪৬।
[১৬]. ‘জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল’, পৃ. ৪৭।
[১৭]. আল-ইয়ানি‘ঊল জানিউ ফী আসানীদ ‘আলা হাশিয়া কাশফুল আশতার মিন রিজালি মা‘আনিল ‘আছার, পৃ. ৭৬; জুহূদুশ শাহ ইসমাঈল, পৃ. ৫৯; নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৪৯।