বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৭ অপরাহ্ন

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবন ও কর্ম

-আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


(৩য় কিস্তি )

হাদীছ শিক্ষায় ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর ত্যাগ
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) সম্পদশালী ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও মিতব্যয়ী ছিলেন।[১] আবুল হাসান ইউসুফ ইবনু আবু যার আল-বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

مرض محمد بن إسماعيل البخاري فعرض ماؤه على الأطباء فقالوا لو أن هذا الماء ماء بعض أساقفه النصارى فإنهم لا يأتدمون فصدقهم محمد بن إسماعيل وقال لم ائتدم منذ أربعين سنة فسألوا عن علاجه فقالوا علاجه الإدام فامتنع عن ذلك حتى ألح عليه المشايخ ببخارى أهل العلم إلى ان أجابهم أن يأكل بقية عمره في كل يوم سكرة واحدة مع رغيف

‘ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) একদা অসুস্থ হলে ডাক্তার তার মূত্রের পরীক্ষা করে জানান এই মূত্র নাছারাদের গুরু-সন্ন্যাসীদের মূত্রের মত। কারণ, তারা সবজি বা তরকারী খান না। তখন ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তাদের কথার সত্যায়ন করে বললেন, আমি গত চল্লিশ বছরে কোন দিন তরকারী খাইনি। লোকেরা তার চিকিৎসা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে ডাক্তারগণ তাকে সবজি-তরকারী খাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি সবজি খেতে রাযী হলেন না; কিন্তু ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর শিক্ষক-ছাত্রগণ রুটির সাথে তরকারী খাওয়ার জন্য খুব চাপাচাপি করলেন। ফলে, তিনি রুটির সাথে হালকা চিনি খেতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন’।[২] মুহাম্মাদ বিন আবি হাতিম ওররাক্ব আল-বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

وَكَانَ أَبُو عَبْدِ اللهِ رُبَّمَا يَأْتِي عَلَيْهِ النَّهَارُ فَلَا يَأْكُلُ فِيْهِ رُقَاقَةً إِنَّمَا كَانَ يَأْكُلُ أَحْيَانًا لوزتين أَوْ ثَلَاثًا وَكَانَ يَجتَنِبُ توَابِلَ القُدُوْرِ مِثْلَ الحِمّصِ وَغَيْرِهِ

‘ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) দিনে খুব কম সময়ই পূর্ণ একটি রুটি খেতেন। তিনি কখনো কখনো দুই-তিনটি বাদাম খেতেন। আর তিনি মটরশুঁটির মত মশলা জাতীয় মুখরোচক খাবার পরিহার করতেন’।[৩] মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ আল-বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

كُنْتُ مَعَ مُحَمَّدِ بنِ إِسْمَاعِيْلَ بِمَنْزِلِهِ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَأَحصيتُ عَلَيْهِ أَنَّهُ قَامَ وَأَسْرَجَ يَسْتَذكرُ أَشْيَاءَ يُعَلِّقُهَا فِي لَيْلَةٍ ثَمَانِ عَشْرَةَ مرَّة

‘একদা এক রাতে আমি ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সাথে তাঁর বাড়ীতে ছিলাম। আমি দেখলাম, রাতে যখন তার কোন কিছু স্মরণ হচ্ছিল, তখন তিনি উঠে বাতি জ্বালিয়ে তা লিখছিলেন। আমি গণনা করলাম, তিনি এভাবে সারা রাতে প্রায় ১৮ বার উঠেছেন’।[৪]

ছাত্রদের সাথে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) -এর সুসম্পর্ক
ছাত্রদের সাথে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সুসম্পর্ক ছিল। তিনি ছাত্রদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতেন। ছাত্রদের সাথে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সুসম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায় নিম্নের ঘটনায়। ইমাম আবু আহমাদ হাকেম, ওমর ইবনু মালিক থেকে বর্ণনা করেন,

مات محمد بْن إِسْمَاعِيل الْبُخَارِيّ ولم يُخلف بخُراسان مثل ابنِ عِيسَى فِي العلم والحفظ والزُّهْد والورع بكى حَتَّى عَمي

‘ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তার মৃত্যুর পরে ইলম, হিফয ও পরহেযগারিতার দিক দিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত হিসাবে ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর চেয়ে যোগ্য কাউকে ছেড়ে যাননি। ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) তার মৃত্যু শোকে এতটাই কেঁদেছেন যে, কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গেছেন’।[৫]

ইমাম মুসলিমের সাথে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর গাঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ইমাম মুসলিম (রাহিমাহুল্লাহ) ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে سَيِّدُ المُحَدِّثِيْنِ (মুহাদ্দিছগণের সরদার), طبيْبَ الحَدِيْثِ فِيْ عِلَلِهِ (ইলালে হাদীছের ডাক্তার) ইত্যাদি বলে সম্বোধন করতেন। যেমন ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে লক্ষ্য করে ইমাম মুসলিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

دَعْنِيْ أُقَبِّلْ رِجْلَيْكَ يَا أُسْتَاذَ الْأُسْتَاذِيْنَ وَسَيِّدَ المُحَدِّثِيْنَ وَطبيْبَ الحَدِيْثِ فِيْ عِلَلِهِ

‘হে উস্তাযগণের উস্তায! মুহাদ্দিছগণের সরদার! এবং ইলালে হাদীছের ডাক্তার! আমাকে আপনার পদ চুম্বন করার সুযোগ দিন’।[৬]

ইমাম যুহালী তার ছাত্রদেরকে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর দারসে বসতে নিষেধ করার পর প্রায় সকল ছাত্র ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে পরিত্যাগ করে। কিন্তু ইমাম মুসলিম (রাহিমাহুল্লাহ) পরিত্যাগ করেননি। বিষয়টি ইমাম যুহালীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বলেন,

ألا من قَالَ باللفظ فلا يحل له أن يحضر مجلسنا فأخذ مسلم الرداء فوق عمامته وقام على رءوس الناس وخرج من مجلسه وجمع كل ما كان كتب منه وبعث به على ظهر حمال إلى باب محمد بن يحيى

‘যে ব্যক্তি ‘লাফযী বিল কুরআন মাখলূক’¡ বলবে, তার জন্য আমাদের দারসে বসা বৈধ নয়। তার এই মন্তব্য শুনে ইমাম মুসলিম (রাহিমাহুল্লাহ) তার চাদরকে পাগড়ীর উপর উঠিয়ে সবার সামনে মজলিস থেকে বের হয়ে গেলেন। আর ইমাম যুহালী থেকে যত হাদীছ তিনি লিখেছিলেন, সব পাণ্ডুলিপি বাহনে করে ইমাম যুহালীর নিকট পাঠিয়ে দিলেন’।[৭]

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর পরহেযগারিতা ও আল্লাহভীতি
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন অত্যন্ত পরহেযগার ব্যক্তি। তিনি ছাত্রদের প্রতি অধিক ইহসানকারী ছিলেন। নিম্নের ঘটনায় ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বিনয়-নম্রতার আরো প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন মুহাম্মাদ ইবনু মানছূর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

كنا في مجلس أبي عبد الله محمد بن إسماعيل فرفع إنسان من لحيته قذاة فطرحها على الأرض قال فرأيت محمد بن إسماعيل ينظر إليها وإلي الناس فلما غفل الناس رأيته مد يده فرفع القذاة من الأرض فادخلها في كمة فلما خرج من المسجد رأيته أخرجها فطرحها على الأرض

‘আমরা একদা আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল আল-বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মজলিসে ছিলাম। এক ব্যক্তি তার দাড়ি থেকে ময়লা উঠিয়ে যমীনে ফেলে দিল। আমি লক্ষ্য করলাম, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ময়লা এবং ব্যক্তিটির দিকে তাকালেন। মানুষেরা যখন অন্য দিকে মনোযোগ দিল, তখন আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি ময়লা মেঝে হতে উঠিয়ে তাঁর জামার আস্তিনের ভিতর রাখলেন। অতঃপর আমি দেখলাম যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হলেন তখন ময়লা আস্তিন হতে বের করে বাইরে ফেলে দিলেন।[৮]

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রতি রাতে তেরো রাক‘আত তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করতেন। যেমন ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সাথে এক সফরের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে মুহাম্মাদ বিন আবি হাতিম ওররাক্ব আল-বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

وَكَانَ أَبُوْ عَبْدِ اللهِ يُصَلِّي فِيْ وَقْتِ السَّحَرِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةًوَكَانَ لَا يُوْقظنِيْ فِيْ كُلِّ مَا يَقُوْم فَقُلْتُ أَرَاكَ تحْمِلُ عَلَى نَفْسِكَ وَلَمْ توْقظْنِيْ قَالَ أَنْتَ شَابٌّ وَلَا أُحِبُّ أَنْ أُفْسِدَ عَلَيْكَ نَومَكَ

‘ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ফজরের পূর্বে ১৩ রাক‘আত তাহাজ্জুদ পড়তেন, কিন্তু তিনি আমাকে জাগাতেন না। আমি তাকে বললাম, আপনি শুধু নিজে নিজে ছালাত আদায় করেন, আমাকে কেন ডাকেন না? ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) জবাবে বললেন, তুমি যুবক মানুষ। আমি তোমার ঘুম নষ্ট করতে চাই না’।[৯] বাকর বিন মুনীর বলেন, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, أَرْجُوْ أَنْ أَلقَى اللهَ وَلَا يحَاسِبْنِيْ أَنِّي اغْتَبْتُ أَحَدًا ‘আমি আশা করি, মহান আল্লাহর সাথে আমি এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ করব যে, তিনি আমার বিরুদ্ধে কারো গীবতের হিসাব নিতে পারবেন না’।[১০] বাকর বিন মুনীর বলেন,

كَانَ مُحَمَّدُ بنُ إِسْمَاعِيْلَ يُصَلِّي ذَاتَ لَيْلَةٍ فلسعَهُ الزُّنْبُورُ سَبْعَ عَشْرَةَ مَرَّةً فَلَمَّا قضَى الصَّلاةَ قَالَ انْظُرُوا أَيش آذَانِي

‘ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) একবার রাতে ছালাত আদায় করছিলেন। ছালাতের মাঝে তাকে ভিমরুল প্রায় ১৭ বার দংশন করে। তিনি ছালাত শেষে আমাদেরকে বললেন, দেখ তো! আমাকে কী কষ্ট দিল?’[১১] অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে,

!فَقَالَ لَهُ بَعْضُ القَوْمِ كَيْفَ لَمْ تخرجْ مِنَ الصَّلاةِ أَوَّلَ مَا أَبَرَكَ؟ قَالَ كُنْتُ فِي سُوْرَةٍ فَأَحْبَبْتُ أَنْ أُتِمَّهَا

‘ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে কেউ জিজ্ঞেস করল, যখন আপনাকে প্রথমবার দংশন করেছিল, তখন কেন আপনি ছালাত ছেড়ে দিলেন না? ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) জবাবে বলেন, আমি একটি সূরা তেলাওয়াত করছিলাম। মন চাচ্ছিল সূরাটা শেষ করি’।[১২]

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর গঠন-অবয়ব
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন পাতলা ও চিকন গড়নের। অত্যধিক লম্বাও নন আবার খাটও নন। যেমন হাসান ইবনুল হুসাইন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, رأيت محمد بن إسماعيل شيخا نَحِيف الجسم ليس بالطويل ولا بالقصير ‘আমি ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে দেখেছি, তিনি ছিলেন পাতলা ও চিকন গড়নের। অত্যধিক লম্বাও নন, আবার খাটও নন’।[১৩]

দেশ ত্যাগে বাধ্যকরণ
নিশাপুর যাওয়ার পর ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) দারস প্রদান শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার দারসে ছাত্র বাড়তে থাকে, অন্যদিকে ইমাম যুহালীর দারসে ছাত্র কমতে থাকে। এতে ইমাম যুহালী ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর উপর ক্ষুব্ধ হোন। অতঃপর একদা ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে কোন ছাত্র ‘লাফযী বিল কুরআন মাখলূক্ব’ মর্মে জিজ্ঞেস করে। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তার প্রশ্নের উত্তর দেন। তার জবাবকে বিকৃত করে নিশাপুরে প্রচার করা হয়। ফলশ্রুতিতে ইমাম যুহালী ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বিরুদ্ধে ফৎওয়া প্রদান করেন এবং তার দারসের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তিনি ঘোষণা প্রদান করেন, যারা ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর দারসে যাবে, তারা যেন তার দারসে না বসে।[১৪]

এমন বৈরী পরিবেশে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) নিশাপুর থেকে বেরিয়ে নিজ শহর বুখারাতে ফিরে যাওয়ার জন্য মনস্থ করলেন। সেখানে লোকেরা তাকে পরিপূর্ণ সম্মানের সাথে অভ্যর্থনা জানাল। এ সম্পর্কে আহমাদ ইবনু মানছুর আশ-শিরাযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

سَمِعْتُ بَعْضَ أَصْحَابِنَا يَقُوْلُ لَمَّا قَدِمَ أَبُو عَبْدِ اللهِ بُخَارَى نُصِبَ لَهُ القبَابُ عَلَى فرسخٍ مِنَ البلدِ وَاسْتقبلَهُ عَامَّةُ أَهْلِ البلدِ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مَذْكُوْرٌ إلَّا اسْتَقبَلَهُ وَنُثِرَ عَلَيْهِ الدَّنَانِيْرُ وَالِدَرَاهِمُ وَالسُّكَّرُ الكَثِيْرُ فَبقيَ أَيَّاما

‘আমি আমার কতক সাথীকে বলতে শুনেছি, যখন তিনি বুখারায় ফিরে আসলেন, তখন তাকে স্বাগত জানানোর জন্য শহরের বাইরে তাঁবু স্থাপন করা হল। জনসাধারণ সকলেই তাকে অভ্যর্থনা জানাল। আর তাকে দীনার ও দিরহাম ও মিষ্টান্ন দ্বারা পরিতুষ্ট করা হল। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হল’।[১৫]

বুখারার গভর্নর আমীর খালিদ ইবনু আহমাদ ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকটে এই মর্মে নির্দেশ পাঠালেন যে, আপনি ‘ছহীহ বুখারী’, ‘তারীখ’ ইত্যাদি গ্রন্থ আমার নিকট নিয়ে আসুন, যাতে আমি সেগুলো আপনার কাছ থেকে শ্রবণ করতে পারি। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) জবাবে দূতকে বললেন, আমি ইলমকে অপমান করতে পারি না এবং ইলমকে মানুষের দ্বারে দ্বারে নিয়ে যেতে পারি না। যদি আপনার ইলমের কোন প্রয়োজন থাকে, তাহলে আমার নিকট আমার মসজিদে বা আমার বাড়ীতে এসে উপস্থিত হন’।[১৬]

যখন ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বাদশাহর প্রস্তাব নাকচ করলেন, তখন বাদশাহ হুরাইছ ইবনু আবুল ওরাক্বা এবং অন্য কতিপয় আলেমের সহযোগিতা চাইলেন, যাতে তারা ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর আক্বীদা ও মাযহাব নিয়ে সমালোচনা করে। তারা তাই করল এবং বাদশাহ ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে এলাকা থেকে বিতাড়িত করলেন। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তাদের উপর বদ দু‘আ করলেন। বদ দু‘আ করার এক মাসের মধ্যে যাহিরিয়্যাদের পক্ষ থেকে আমীর খালিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক আসল। আর হুরাইছ তার পরিবার নিয়ে পরীক্ষায় পতিত হল এবং নিজ পরিবারের মাঝে এমন কিছু দেখল, যা বর্ণনীয় নয়’।[১৭]

‘ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বায়কান্দের উদ্দেশ্যে বের হলেন। বায়কান্দের মানুষ দু’ ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল, একদল তার পক্ষে অপরদল তার বিপক্ষে। ইতিমধ্যেই সমরকন্দবাসী ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে লিখিত দাওয়াত প্রদান করল। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) সমরকন্দের কিছু গ্রামে পৌঁছে গেলে সেখানকার মানুষও দু’ ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, একদল মানুষ তাকে সমরকন্দে প্রবেশ করতে দিবে; আরেকদল দিবে না। অবশেষে তারা একমত হলে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) সমরকন্দের উদ্দেশ্যে বের হন। বাহনে উঠার পর তিনি মহান আল্লাহর নিকট দু‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ কর! এই দু‘আ তিনবার করার পর তিনি বাহন থেকে পড়ে যান এবং মৃত্যুবরণ করেন। এমতাবস্থায় তার নিকট সমস্ত সমরকন্দবাসী উপস্থিত হয়েছিল’।[১৮]

*এম. ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. আবুত ত্বাইয়্যিব মুহাম্মাদ ছিদ্দীক্ব খান ইবনু আলী, আল-হিত্তা ফি যিকরিছ ছিহাহ আছ-ছিত্তাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৪৪।
[২]. ইবুন আসাকির, তারীখে দিমাষ্ক, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৮০।
[৩]. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, ১২তম খণ্ড (মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ৩য় সংস্করণ, ১৯৮৫ খ্রি.), পৃ. ৪৫০।
[৪]. ইবুন আসাকির, তারীখে দিমাষ্ক, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৭০।
[৫]. ইমাম যাহাবী, তারীখুল ইসলাম (মাকতাবাতুত তাওফিক্বিয়্যাহ, তা. বি.), ২০তম খণ্ড, পৃ. ৪৬১; সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, ১২তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৪।
[৬]. তারীখে বাগদাদ, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১০৩।
[৭]. প্রাগুক্ত।
[৮]. তারীখে বাগদাদ, ২য় খ-, পৃ. ১৩; তারীখে দিমাষ্ক, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৮০।
[৯]. তারীখে দিমাষ্ক, ৫২তম খ-, পৃ. ৭১; তারীখে বাগদাদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩২২।
[১০]. তারীখে দিমাষ্ক, ৫২তম খ-, পৃ. ৮১; তারীখে বাগদাদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩২২; ইমাম যাহাবী, তারীখুল ইসলাম, ১৯তম খণ্ড, পৃ. ১৮২।
[১১]. তারীখে দিমাষ্ক, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৮০; তারীখে বাগদাদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩২২।
[১২]. তারীখে দিমাশক্ব, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৮০।
[১৩]. ইমাম যাহাবী, তারীখুল ইসলাম (মাকতাবাতুত তাওফীক্বিয়্যাহ প্রকাশনী) ১৯ম খণ্ড, পৃ. ১৮৫।
[১৪]. তারীখে বাগদাদ, ২০তম খণ্ড, পৃ. ৩৫৪।
[১৫]. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু ‘আলামীন নুবালা, ১০ম খণ্ড, পৃ. ১১৬।
[১৬]. তারীখে বাগদাদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩২; তারীখে দিমাষ্ক, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৯৬; সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা (রিসালা প্রকাশনী), ১২তম খণ্ড পৃ. ৪৬৪।
[১৭]. তারীখে বাগদাদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩২; তারীখে দিমাষ্ক, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৯৭; সিয়ারু ‘আলামীন নুবালা, ১২তম খণ্ড, পৃ. ৪৬৫।
[১৮]. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামীন নুবালা, ১২তম খণ্ড, পৃ. ৪৬৩।




আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
শাহ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
শাহ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
সাঈদ ইবনু জুবায়ের (রাহিমাহুল্লাহ) - প্রফেসর এ কে এম শামসুল আলম
আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
আল্লামা মুহাম্মাদ বিন আলী আল-ইথিওপীর বিদায় : ঝরে গেল শরী‘আতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র - আযহারুল ইসলাম
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবন ও কর্ম (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবনকর্ম - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবন ও কর্ম (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ড. মুহাম্মাদ মুখতার বিন মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীতি (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বিদায় - তানযীল আহমাদ

ফেসবুক পেজ