শাহ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ)
-মুহাম্মাদ বযলুর রহমান*
ভূমিকা
উপমহাদেশে ধর্মীয় সংস্কার কার্যক্রমে শাহ ‘আব্দুল আযীয (১১৫৯-১২৩৯ হি./১৭৪৭-১৮২৪ খ্রি.) (রাহিমাহুল্লাহ) অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) ধর্মীয় সংস্কারের যে বৃক্ষটি রোপণ করেছিলেন, তৎপরবর্তী সময়ে তাঁরই জৈষ্ঠ পুত্র শাহ ‘আব্দুল ‘আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) সে বৃক্ষটি সঠিক পরিচর্যা ও পরিশোধনের মাধ্যমে পত্র-পল্লবে সুশোভিত করেছিলেন। ব্রিটিশদের ক্রমবর্ধমান শাসন, নিপীড়ন ও ইসলাম বিরোধী কর্মকা- যখন চরম আকার রূপ নিয়েছিল, তখন মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি তাঁর পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, শিরক-বিদ‘আত, কুসংস্কার প্রভৃতি অনৈসলামী ‘আক্বীদা-বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একদিকে তিনি যেমন ক্ষুরধার লেখনি পরিচালনা করেন, অন্যদিকে দারস-তাদরীস ও তারবিয়াতের মাধ্যমে জিহাদ আন্দোলনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের যোগ্য কর্মী তৈরি করেন। তিনি সমকালীন যুগে ‘আলিমগণের সর্দার’, ‘আলিমগণের শিরোমণি’, ‘সকলের নয়ন প্রদীপ, ‘সিরাজুল হিন্দ’ ও ‘হুজ্জাতুল্লাহ’ উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। এক্ষণে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য ও ধর্মীয় সংস্কারে তাঁর অবদান বিশ্লেষণ করা হবে।
নাম ও জন্ম
মূল নাম- ‘আল্লামা শাহ ‘আব্দুল আযীয ইবনু শাহ ওয়ালিউল্লাহ ইবনু শাহ ‘আব্দির রহীম ‘উমারী আদ-দেহলবী। তিনি ভারতগুরু শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জৈষ্ঠ পুত্র। ১১৫৯ হিজরীর ২৫ রামাযান বৃহস্পতিবার রাতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।[১]
শিক্ষা জীবন
‘হায়াতে ওয়ালী’ গ্রন্থের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, বাল্যকালেই তিনি কুরআনের হেফয সম্পন্ন করেন এবং তাজভীদ ও ক্বিরাআত সম্পর্কে শিক্ষা অর্জন করেন। তবে ১১ বছর বয়সেই তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়।[২] শিক্ষা জীবনের শুরুতে তিনি তাঁর পিতার পূর্ণ তত্ত্বাবধানে তত্ত্বানুসন্ধান, প্রামাণ্যভাবে ও অত্যন্ত মনোযোগের সাথে শিক্ষা অর্জন করেন। অতঃপর ১৬ বছর বয়সে পিতার ইন্তিকালের পর শাইখ নূরুল্লাহ বাড়হানুভী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ মুহাম্মাদ আমীন কাশ্মীরী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং শাহ মুহাম্মাদ ‘আশিক ইবনু উবাইদুল্লাহ ফুলতী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকট বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান হাসিল করেন।[৩] তিনি তাঁর পিতার নিকট থেকে হাদীছের উপর যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করেন। তিনি পূর্ণ মুসাওয়াহ সহ মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত, হিছনে হাছীন, শামায়েলে তিরমিযী এবং সুনানু নাসাঈর কিছু অংশের সবক গ্রহণ করেন। এছাড়া ছহীহুল বুখারীর ‘কিতাবুল হজ্জ’-এর পূর্ব পর্যন্ত শ্রবণ করেন সাইয়েদ গোলাম হোসাইন মাক্কীর নিকট, জামে‘ তিরমিযী ও সুনানু আবী দাঊদ শ্রবণ করেন মাওলানা যহুরুল্লাহ মুরাদাবাদীর নিকট, মুকাদ্দমা ছহীহ মুসলিম ও এর কিছু হাদীছ, সুনানু ইবনি মাজাহর কিয়দংশ মুহাম্মাদ জাওয়াদ ফুলতীর নিকট থেকে শ্রবণ করেন। এতদ্ব্যতীত তিনি ‘কুতুসুস সিত্তাহ’-এর অবশিষ্ট গ্রন্থগুলো তাঁর পিতার অন্যান্য খলীফার নিকট থেকে শ্রবণ করেন।[৪] ষোল বছর বয়সেই তিনি তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ, উছূল, আক্বাইদ, মানতিক, কালাম, জ্যামিতি, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করেন।[৫]
গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য
তিনি দীর্ঘদেহী, ক্ষীণকায়, বাদামী বর্ণের, প্রশস্ত চোখের অধিকারী ছিলেন। দাড়ি ছিল ঘন। খত্তে নখস ও রুকআ খুবই চমৎকারভাবে লিখতেন। তীর নিক্ষেপণ, অশ্বারোহণ ও সঙ্গীতেও দক্ষতা ছিল তাঁর।[৬] তাঁর স্মরণশক্তি ছিল অতুলনীয়। অনেক অখ্যাত পুস্তকাদির সুদীর্ঘ উদ্বৃতি তিনি মুখস্থ লিখিয়ে দিতে পারতেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এতই বাস্তবধর্মী ছিল যে, তিনি সৎ নিয়তে ইংরেজী শিক্ষা করার ফৎওয়া প্রদান করেন।[৭]
কর্ম জীবন
পিতার মৃত্যুর পর তিনি ষোল বছর বয়সে অধ্যাপনার পৈত্রিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন থেকে মৃত্যু অবধি তিনি অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা, রচনা ও সংকলন, তাবলীগ ও তা‘লীমের কাজে ব্যাপৃত থাকেন।[৮] তাঁর নিকট থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তাঁর ভাইয়েরা। যেমন শাহ আব্দুর কাদের, শাহ রফীউদ্দীন, শাহ আব্দুল গনী এবং তার জামাতা মাওলানা আব্দুল হাই ইবনু হিবাতুল্লাহ বাড়হানুভী।[৯]
তাঁর সম্পর্কে শাইখ মুহসিন ইবনু ইয়াহইয়া তারহাতী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তিনি জ্ঞান, পরাকাষ্ঠা, খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতার এমন উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন, যার ফলে গোটা ভারতের লোকজন তাঁর সাথে আত্মীয়তা সম্পর্ক বরং তার ছাত্র-শিষ্য অপেক্ষাও নগণ্য সম্পর্কের উপর গর্ববোধ করত। তাঁর সেসব পরাকাষ্ঠা, যাতে তার সমসাময়িকদের কেউ তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্য ছিল না, এর মধ্যে উপস্থিতবুদ্ধি এবং প্রতুৎমন্নমতিত্বও ছিল অন্যতম। যার কারণে বিতর্কে তাঁরই জয় হত। শ্রোতাকে করে দিতেন নিরত্তর। তন্মধ্যে তার বাগ্মিতা, যাদুময়ী বাচনভঙ্গি ও চমৎকার রচনাশৈলীর কারণে বিজ্ঞমহল তাঁকে সবার চেয়ে অগ্রগামী স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তাঁর এ ধরনের পূর্ণাঙ্গতার মধ্যে আরও ছিল তাঁর অন্তর্দৃষ্টি, যার বদৌলতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে স্বপ্নের ব্যাখ্যাদানের স্বতন্ত্র যোগ্যতা দান করেছিলেন। তিনি স্বপ্নের এমন ব্যাখ্যা দিতেন, যা পূর্ণ হত এবং তার প্রত্যক্ষ বাস্তবতা মনে হত। এ যোগ্যতা অত্যন্ত পুণ্যাত্মা মানুষেরই নসিব হয়। এছাড়াও তাঁর অনেক পূর্ণাঙ্গতা ও পরাকাষ্ঠা রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সত্তায় নানা ধরনের এবং বহুমুখী প্রতিভা ও শ্রেষ্ঠত্ব একত্র করে দিয়েছিলেন, যা সমকালীন লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল’।[১০]
রচনাবলী
শাহ ‘আব্দুল ‘আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) সমকালীন প্রেক্ষাপটে লেখনীর মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তার রচনাবলী পণ্ডিত তদের নিকটে প্রামাণ্য গ্রন্থরূপে বিবেচিত হয়।[১১] তাঁর রচিত কিতাবলীর মধ্যে রয়েছে,
(১) তাফসীরুল কুরআন, যা ‘ফাতহুল ‘আযীয’ নামে প্রসিদ্ধ (ফারসী)।[১২]
(২) তুহফায়ে ইছনা আশারিয়া। এটি শী‘আ মতাদর্শের সমালোচনা ও খণ্ডন প্রসঙ্গে একটি অতুলনীয় কিতাব।[১৩]
(৩) বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন। এটি হাদীছ গ্রন্থাবলী ও মুহাদ্দিছগণের বিস্তারিত নামের তালিকা ও জীবানালেখ্য, যা অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়।
(৪) আল-উজালাতুন নাফিয়াহ। এটি উছূলে হাদীছ সম্পর্কিত একটি পুস্তিকা।
(৫) মীযানুল বালাগাহ। এটি বালাগাত শাস্ত্রের একটি উন্নততর মতন।
(৬) আস-সিররুল জালীল ফিল মাসয়ালাহ। এ গ্রন্থে খুলাফায়ে রাশিদীনের মর্যাদাগত পার্থক্যের বিবরণ রয়েছে।
(৭) মীযানুল কালাম। দর্শনশাস্ত্রের একটি মতন।
(৮) সিররুশ শাহাদাতাইন। এটি হুসাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) -এর বর্ণনায় একটি উত্তম রচনা। এগুলো ছাড়া বংশসম্পর্কে, স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রসেঙ্গ, যুক্তি ও দর্শনশাস্ত্রে ‘মীর যাহেদ রিসালাহ’, ‘মীর যাহেদ মোল্লা জালাল’, ‘মীর যাহেদ শরহে মাওয়াকিফে’র উপর একাধিক টীকা-টিপ্পনী রয়েছে। ‘হাশিয়ায়ে মোল্লা কোসাজ’-এর উপর ‘আযীযিয়্যাহ’ নামে রচিত হাশিয়াও রয়েছে।[১৪]
তাঁর রচনাবলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল সময়োপযোগিতা, দ্ব্যর্থহীনতা, তীক্ষ্মতা এবং বাকপটুতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তাইতো গদ্য-পদ্য, লেখনিশক্তিতে, রচনাশৈলীতে, বর্ণনাজাদুতে তিনি নিজেই নিজের উপমা ছিলেন।
রোগের বর্ণনা
শাহ ‘আব্দুল ‘আযীয দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) পঞ্চান্ন বছর বয়সেই নানান যন্ত্রণাদায়ক রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। কেউ কেউ তাঁর চৌদ্দটি মারাত্মক রোগের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি মস্তিষ্ক বিকৃতি, ধবল ও কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হন এবং তাঁর দৃষ্টিশক্তিও হ্রাস পায়। তাঁর খাবারে অরুচি এতই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, কয়েকদিন ধরে তিনি খাবার মুখে দিতে পারতেন না। মাঝে মাঝে জ্বর আসত।[১৫] আমীর হায়দার ইবনু নূরুল হোসাইন বলগ্রামী কর্তৃক একটি গ্রন্থ কিংবা বার্তা লেখার কথা বললে তিনি তাকে এক পত্রের মাধ্যমে জানান যে, ‘আপনি যদি আপনার প্রিয়জনের অবস্থা জানতে চান, তবে সে খুবই খারাপ আছে। সকাল-সন্ধ্যা তা বৃদ্ধি পায়। তাকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নানান রোগে ঘিরে ধরেছে। হারিয়ে গেছে স্বস্তি ও শান্তি। বেড়ে গেছে কষ্ট ও যাতনা। আর এসব এমন রোগ-ব্যাধির কারণে, যার একটিই মানুষকে অস্থির-চিন্তিত করার জন্য যথেষ্ট। যেমন অর্শ্বরোগ, পাকস্থলী ও নাড়িতে গ্যাস সমস্যা। এত বেশি অরুচি, যার কারণে কয়েক দিনরাত পর্যন্ত খাবার খাওয়ার সুযোগ হয় না অর্থাৎ ক্ষুধামন্দা। জ্বর-তাপ যখন বুকের দিকে ওঠে, তখন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। যখন মস্তিষ্কের দিকে ওঠে, তখন যন্ত্রণাদায়ক মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়। মনে হয় হামানদিস্তার পিটুনী। এমতাবস্থায় একটি শব্দ ব্যক্ত করার অনুমতি দেয় না, কোন গ্রন্থ রচনা কিংবা বার্তা লেখা তো দূরের কথা’।[১৬]
অসুস্থতার তীব্রতা এত বেশি থাকা সত্ত্বেও তিনি দারস দিতেন, লেখালেখি, ফৎওয়া প্রদান এবং ওয়ায নাছিহতের ধারাও চালু রাখেন। প্রত্যেক মঙ্গলবার তার সাপ্তাহিক বক্তব্য ও কুরআনের তাফসীরের জন্য ধার্য ছিল। তবে জীবনের শেষ দিকে তিনি মজলিসে সামান্য সময়ও বসতে পারতেন না। এজন্য তিনি নতুন-পুরাতন মাদরাসাগুলো পরিদর্শন করে বেড়াতেন আর অসংখ্য মানুষ এ অবস্থাও তার থেকে উপকৃত হত। তাঁর পাঠদান, ফৎওয়া ও বক্তব্য চলত। এভাবে আছর ও মাগরিবের মাঝামাঝি সময়ে দু’জন লোকের সাহায্যে মাদরাসা ও জামে মসজিদের সড়কে বের হতেন। মানুষ পথিমধ্যে তাঁর অপেক্ষায় থাকত এবং নিজ নিজ সমস্যার সমাধান করে নিত। এছাড়া এই যন্ত্রণাদায়ক রোগ-ব্যাধি থাকা সত্ত্বেও তিনি সচেতন, প্রত্যুপন্নমতী ও মিষ্টভাষী ছিলেন। বিনয়-ন¤্রতা, ভদ্রতা-প্রফুল্লতা, ¯েœহ-ভালোবসাও তেমনি ছিল, যেমন শুরু থেকে ছিল। যদিও তিনি দু’ভাই শাহ রফিউদ্দীন (রাহিমাহুল্লাহ) ও শাহ আব্দুর কাদির (রাহিমাহুল্লাহ)-এর উপর লেখালেখির দায়িত্ব অর্পণ করেন।[১৭]
সন্তান-সন্ততি
তিনি তিন কন্যার পিতা ছিলেন। তন্মধ্যে প্রথম কন্যা ভ্রাতুষ্পুত্র ঈসার সঙ্গে, দ্বিতীয় কন্যা মাওলানা আব্দুল হাই (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সঙ্গে এবং তৃতীয় কন্যা স্ববংশীয় শাহ মুহাম্মাদ আফযালের সঙ্গে বিবাহ প্রদান করেন। তৃতীয় কন্যার পুত্র শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক্ব ও শাহ মুহাম্মাদ ইয়াকূব তাঁর স্থলাভিষিক্ত ছিলেন। কিন্তু ১২৫৬ হিজরীতে তারা ভারত হতে মক্কায় হিজরত করেন।[১৮]
ইন্তিকাল
শাহ ‘আব্দুল ‘আযীয দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) ১২৩৯ হিজরীর রামাযান মাস মোতাবেক ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে প্রচুর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমান্বয়ে অসুস্থতার তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে তিনি তাঁর নগদ অর্থ ও সমস্ত সম্পদ শরী‘আত অনুযায়ী ভ্রাতুষ্পুত্র ও যুল আরহামদের মাঝে বণ্টন করে দেন এবং তাঁর পরিহিত বস্ত্র দ্বারাই তাঁকে কাফন পরানোর অছিয়ত করেন। অতঃপর ৭ শাওয়াল ১২৩৯ হিজরী মোতাবেক ৫ জুন ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে রবিবার সকালে তিনি ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছরের একটু বেশি। আশ্চর্যের বিষয় হল- পঞ্চান্নবার তাঁর জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর দিল্লীর বাইরে পারিবারিক গোরস্থানে পিতার পাশে তাকে দাফন সম্পন্ন হয়।[১৯]
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. তাঁর ঐতিহাসিক নাম ‘গোলাম হালীম’। দ্রষ্টব্য : আল্লামা আশ-শারীফ ‘আব্দুল হাই ইবনু ফাখরুদ্দীন আল-হাসানী, নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড (বৈরূত : দারু ইবনি হায্ম, ১ম সংস্করণ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.), পৃ. ১০১৪; ‘আল্লামা সাইয়িদ আবুল হাসান ‘আলী আন-নাদভী, রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দা‘ওয়াতি ফিল ইসলাম, ৪র্থ খণ্ড (বৈরূত : দারু ইবনি কাছীর, ৩য় সংস্করণ, ১৪২৮ হি./২০০৭ খ্রি.), পৃ. ৬৭৯। তবে ‘ইসলামী বিশ্বকোষ’-এ ‘হায়াতে ওয়ালী, পৃ. ৩২০’-এর উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁর জন্ম তারিখ হিসাবে ১১৫৭ হিজরীর ২৫ রামাযান মোতাবেক ১৭৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১ অক্টোবর লেখা হয়েছে। দ্রষ্টব্য : ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২য় সংস্করণ, ২০০৪ খ্রি.), পৃ. ৬৭৫। তবে এক্ষেত্রে আমরা ‘নুযহাতুল খাওয়াতির’ এর তারিখকে প্রাধান্য দিয়েছি।
[২]. এসময় তাঁর পিতা স্বীয় খলীফাদের মধ্য থেকে একজন যোগ্য ব্যক্তি শাহ মুহাম্মাদ আশিক ইবনু ওবাইদুল্লাহ ফুলতিকে তার শিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করেন। মাত্র দু’বছরেই তিনি আরবী ভাষার বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিস্ময়কর দক্ষতা লাভ করেন। তাঁর স্বাভাবিক উদ্যম ও মেধার নযীর ছিল বিরল। দ্রষ্টব্য : ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৭৫।
[৩]. নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১০১৪; রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দা‘ওয়াতি ফিল ইসলাম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৬৭৯।
[৪]. প্রাগুক্ত।
[৫]. ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৭৫।
[৬]. নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১০১৪; রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দা‘ওয়াতি ফিল ইসলাম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৬৮০।
[৭]. ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৭৫।
[৮]. প্রাগুক্ত।
[৯]. নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১০১৪-১০১৫; রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দা‘ওয়াতি ফিল ইসলাম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৬৮০।
[১০]. নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১০১৬।
[১১]. ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৭৫।
[১২]. এই গ্রন্থটি তিনি কঠিন রোগ ও দুর্বল অবস্থায় লিখেছিলেন। এটা ছিল কয়েকটি বৃহৎ খণ্ডে রচিত, যার বড় অংশ ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের গোলযোগে বিলীন হয়ে যায়। তবে কেবল শুরু ও শেষে দুই খণ্ড রক্ষা পায়। তন্মধ্যে ‘আল-ফাতাওয়া ফিল মাসাইলিল মুশকিলা’ একটি। এটি কলেবরে অনেক বড় ছিল কিন্তু আজ কেবল তার সারাংশ দু’খণ্ড পাওয়া যায়। দ্রষ্টব্য : নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১০১৬।
[১৩]. এ গ্রন্থটি মূলত তিনি ফারসী ভাষায় রচনা করেন। পরবর্তীতে তাঁরই এক বিজ্ঞ শাগরিদ শায়খুল হাফিয গোলাম মুহাম্মাদ ইবনু মুহিউদ্দীন ইবনু ‘উমার আল-আসলামী উক্ত গ্রন্থের আরবী অনুবাদ করেন। যা ১৩৭৩ হিজরীতে কায়রোর ‘মাতবা‘আতুস সালাফিয়্যাহ’ নামক প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়।
[১৪]. নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১০১৬-১০১৭; রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দা‘ওয়াতি ফিল ইসলাম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৬৮৪-৬৮৭।
[১৫]. রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দা‘ওয়াতি ফিল ইসলাম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৬৮১।
[১৬]. নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১০১৫।
[১৭]. রিজালুল ফিকরি ওয়াদ দা‘ওয়াতি ফিল ইসলাম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৬৮১।
[১৮]. ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৭৫-৬৭৬।
[১৯]. নুযহাতুল খাওয়াতির ওয়া বাহজাতুল মাসামি‘ই ওয়ান নাওয়াযির, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১০১৮; ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৭৫।
প্রসঙ্গসমূহ »:
জীবন কথা