সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১২:১২ অপরাহ্ন

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবন ও কর্ম

আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


(২য় কিস্তি )

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর শিক্ষকগণ :
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রায় এক হাজার শিক্ষকের নিকট ‘ইলম হাছিল করেছেন। ‘আলী ইবনুল মাদীনী, ইয়াহইয়া ইবনু মা‘ইন, আহমাদ ইবন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষক। বিভিন্ন শহরে যে সমস্ত মুহাদ্দিছের নিকট থেকে তিনি ‘ইলমে হাদীছ আহরণ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন-
মক্কা : আবুল ওয়ালিদ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ আল-আযরাকী, আব্দুল্লাহ বিন ইয়াযীদ আল-মুকরী, আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর আল-হুমাইদী, ইসমাঈল ইবনু সালিম আছ-ছাইগ, আবু বাকার আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর আল-হুমাইদী প্রমুখ।
মদীনা : ইবরাহীম ইবনু মুনযির আল-খুযামী, মুতররিফ ইবনু আব্দুল্লাহ, ইবরাহীম ইবনু হামযাহ, আবু ছাবিত মুহাম্মাদ ইবনু ওবাইদুল্লাহ, আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-উওয়াইসী প্রমুখ।
সিরিয়া : মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ আল-ফিরইয়াবী, আবু নাছর ইসহাক্ব ইবনু ইবরাহীম, আদাম ইবনু আবি ইয়াস, আবুল ইয়ামান আল-হাকাম ইবনু নাফে‘ প্রমুখ।
বুখারা : মুহাম্মাদ বিন সালাম আল-বায়কান্দী, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-মুসনাদী, হারূন ইবনুল আশ‘আছ প্রমুখ।
র্মাভ : আলী ইবনু হাসান ইবনু শাকীক্ব, আব্দান, মুহাম্মাদ ইবনু মুক্বাতিল।
বাল্খ : মাক্কী ইবনু ইবরাহীম, ইয়াহইয়া ইবনু বিশর, মুহাম্মাদ ইবনু আব্বান, ইয়াহইয়া ইবনু মূসা, হাসান ইবনু সাজা‘, কুতায়বা ইবনু সাঈদ আল-বাগলানী প্রমুখ।
হিরা : আহমাদ ইবনু আবি ওয়ালিদ আল-হানাফী।
নিশাপুর : ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া, বিশর বিন হাকাম ইসহাক্ব ইবনু রাহওয়াইহ, মুহাম্মাদ ইবনু রাফে‘, মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া আয-যুহালী।
রায় : ইবরাহীম ইবনু মূসা।
বাগদাদ : মুহাম্মাদ ইবনু ঈসা, মুহাম্মাদ ইবনু সাইক, সুরাইজ, ইবনু নু‘মান, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল প্রমুখ।
ওয়াসীত্ব : হাস্সান ইবনু হাস্সান, হাস্সান ইবনু আব্দিল্লাহ, সাঈদ ইবনু আব্দিল্লাহ ইবনু সুলায়মান প্রমুখ।
বছরা : আবু আসিম আন-নাবিল, সাফওয়ান ইবনু ঈসা, বাদল ইবনু মাহরাব, ‘আফফান ইবনু মুসলিম, সুলায়মান বিন হারব, আবুল ওয়ালিদ আত-ত্বয়ালিসী, মুহাম্মাদ ইবনু সিনান প্রমুখ।
কূফা : ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মূসা, আবূ নু‘আইম, আহমাদ ইবনু ই‘য়াকুব, ইসমা‘ঈল বিন আবান, হাসান ইবনু রাবী‘, খালিদ বিন মাখলাদ, সাঈদ ইবনু হাফছ, ‘আমর ইবনু হাফছ, ক্বাবিছাহ ইবনু ঊক্ববাহ, আবু গাস্সান প্রমুখ।
মিসর : উছমান ইবনু ছালিহ, সা‘ঈদ বিন আবু মারইয়াম, ‘আব্দুল্লাহ বিন ছালিহ, আহমাদ ইবনু শাবীব, সাঈদ ইবনু ঈসা, সা‘ঈদ ইবনু কাছীর, ইয়াহইয়া ইবনু ‘আব্দুল্লাহ ইবনু বুকাইর প্রমুখ।
আল-জাযিরাহ : আহমাদ ইবনু ‘আব্দুল মালিক আল-হাররানী, আহমাদ ইবনু ইয়াযিদ আল-হাররানী, আমর ইবনু খালফ, ইসমা‘ঈল ইবনু ‘আব্দিল্লাহ প্রমুখ।[১]
ইমাম হাকিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) উপরিউক্ত দেশগুলোতে ‘ইলম অন্বেষণের জন্য ভ্রমণ করেছেন এবং প্রতিটি দেশের শহরে অবস্থানরত শায়খদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি আরো বলেন, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) পূর্ববর্তী প্রত্যেক জনপদের শায়খের নাম উল্লেখ করেছেন, যাতে তাঁর সনদের মান প্রমাণিত হয়।[২]

শিক্ষকগণের সাথে ইমাম বুখারীর হৃদ্যতা :
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর শিক্ষকম-লীর সাথে সদা সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন। খত্বীব বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) ইমাম ফিরাবরী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে নকল করেন, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

كل ذَلِكَ أجالس أَحْمَد بْن حنبل فقال لي آخر ما ودّعته يا أَبَا عَبْد الله تترك العِلم والنّاس وتصير إلى خُراسان؟

‘(আমি যতবার বাগদাদ গেছি) ততবার ইমাম আহমাদের সাথে একত্রে বসেছি। শেষবার যখন আমি তার কাছে বিদায় নেই, তখন আমাকে বলেন, হে আবু ‘আব্দিল্লাহ! তুমি ‘ইলম ও মুহাদ্দিছগণকে ছেড়ে খোরাসান যাচ্ছ?’[৩] ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আলী ইবনু মাদীনী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বিষয়ে বলেন,

ما استصغرت نفسي عند أحد إلا عند عليّ بن المديني

‘আলী ইবনুল মাদীনী (রাহিমাহুল্লাহ) ছাড়া আমি কোন সময় কারো সামনে নিজেকে ছোট মনে করিনি’।[৪]

ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর ছাত্রগণ :
তাঁর ছাত্র সংখ্যা ছিলেন লক্ষাধিক। মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ আল-ফিরাব্রী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকট থেকে ছহীহ বুখারী শ্রবণ করেছেন ৭০ হাজার ছাত্র। তবে তাঁর থেকে ছহীহ বুখারী বর্ণনাকারীদের মধ্য হতে আমি ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট নেই। তাঁর থেকে আরো অনেকেই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে তাঁর মজলিসে বসে সরাসরি হাদীছ গ্রহণ করেছেন এমন ছাত্রের সংখ্যা বিশ হাজারের অধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছাত্রের মধ্যে রয়েছে, ইমাম মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আবু যুর‘আহ, ইবনু খুযায়মাহ, আবূ হাতিম আর-রাযী, আবূ বাকার ইবনু আবিদ দুনিয়া, আবু ইসহাক্ব ইবরাহীম ইবনু ইসহাক্ব আল-হারবী, ছালিহ ইবনু মুহাম্মাদ, ইয়াহইয়া ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু সা‘ঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দিল্লাহ মাত্বীন প্রমুখ। খতীব বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, সর্বশেষ বাগদাদে যিনি ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তিনি হলেন হুসাইন ইবনু ইসমা‘ঈল আল-মুহামিলী (রাহিমাহুল্লাহ)’।[৫]

হিংসা ও ষড়যন্ত্রের করালগ্রাসে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) :

যুগে যুগে যারাই সত্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তাদের উপরই নেমে এসেছে অকথ্য যুল্ম-নির্যাতন। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। মুহাম্মাদ বিন ইয়াহ্ইয়া আয-যুহালী (রাহিমাহুল্লাহ) নিশাপুরের একজন বিখ্যাত মুহাদ্দিছ। তাঁর দাওয়াতেই ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) নিশাপুরে আগমন করেন। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) যখন নিশাপুরে প্রবেশ করেন, তখন তাঁকে অনেক জাকজমকপূর্ণভাবে স্বাগত জানানো হয়। অথচ নিশাপুরের ইতিহাসে কোন খলীফাকেও এভাবে স্বাগত জানানো হয়নি। যেমন ইমাম সুবকী প্রণীত ‘তাবাক্বাতুশ শাফেঈয়্যাহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে, মুহাম্মাদ ইবনু আখরাম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আমার সঙ্গীদের বলতে শুনেছি, তারা বলতেন,

لما قدم البخارى نيسابور استقبله أَرْبَعَة آلَاف رجل على الْخَيل سوى من ركب بغلا أَو حمارا وَسوى الرجالة

‘যখন ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) নিশাপুরে আগমন করলেন, তখন চার হাজার মানুষ ঘোড়ায় আরোহণ করে তাঁকে স্বাগত জানালেন। আর কত মানুষ খচ্চর ও গাধায় আরোহণ করে এসেছিল এবং কত মানুষ পায়ে হেঁটে এসেছিল, তাঁর কোন ইয়ত্তা নেই’।[৬] ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) নিশাপুরে আগমন করলে লোকদের উদ্দেশ্যে ইমাম যুহালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছিলেন,

اذهبوا إلى هذا الرجل العالم الصّالح فاسمعوا منه قَالَ فذهب الناس إليه واقبلوا على السماع منه حتى ظهر الخلل في مجالس محمد بن يحيى، فحسده بعد ذلك وتكلم فيه

‘তোমরা এই সৎ আলেম এই ব্যক্তিটির নিকটে গমন কর এবং তাঁর কাছ থেকে হাদীছ শ্রবণ কর। রাবী বলেন, লোকজন তাঁর নিকটে গমন করে হাদীছ শ্রবণ করা আরম্ভ করল। ফলে মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া আয-যুহালীর মজলিস লোক শূন্য হয়ে গেল। এরপর তিনি ইমাম বুখারীর সমালোচনা ও তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে লাগলেন’।[৭]
নিশাপুর যাওয়ার পর ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) দারস প্রদান শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাঁর দারসে ছাত্র বাড়তে থাকে, অন্যদিকে ইমাম যুহালীর দারসে ছাত্র কমতে থাকে। এতে ইমাম যুহালী ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর ক্ষুব্ধ হোন। অতঃপর একদা ইমাম বুখারীকে কোন ছাত্র ‘লাফযী বিল কুরআন মাখলূক্ব’ মর্মে জিজ্ঞেস করে। ইমাম বুখারী তার প্রশ্নের উত্তর দেন। তার জবাবকে বিকৃত করে নিশাপুরে প্রচার করা হয়। ফলশ্রুতিতে ইমাম যুহালী ইমাম বুখারীর বিরুদ্ধে ফৎওয়া প্রদান করেন এবং তাঁর দারসের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তিনি ঘোষণা প্রদান করেন, যারা ইমাম বুখারীর দারসে যাবে, তারা যেন তার দারসে না বসে। যেমন আবু হামিদ আশ-শারক্বী বলেন, আমি ইমাম যুহালী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

من زعم أن القرآن مخلوق فقد كفر وخرج عن الإيمان وبانت منه امرأته يستتاب فإن تاب وإلا ضربت عنقه وجعل ماله فيئا بين المسلمين ولم يدفن في مقابر المسلمين ومن وقف وقال لا أقول مخلوق أو غير مخلوق فقد ضاهى الكفر ومن زعم أن لفظي بالقرآن مخلوق فهذا مبتدع لا يجالس ولا يكلم ومن ذهب بعد مجلسنا هذا إلى محمد بن إسماعيل البخاري فاتهموه فإنه لا يحضر مجلسه إلا من كان على مثل مذهبه

‘যে ব্যক্তি ধারণা করল যে, কুরআন আল্লাহর সৃষ্ট- সে কুফরী করল। সে ঈমান থেকে বের হয়ে গেল। স্ত্রীর সাথে তার বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। তার কাছে তওবাহ চাইতে হবে। হয়তো সে তওবাহ করবে অথবা তার গর্দান কর্তন করা হবে। তার অর্থ-সম্পদ মুসলিমদের মাঝে মালে ফায় হিসাবে বণ্টন করে দেয়া হবে। তাকে মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। যে ব্যক্তি বলবে, আমি কুরআন মাখলুক্ব বা মাখলুক্ব নয় কোনটাই বলব না, সে কুফরীর অনুরূপ কাজ করল। আর যে ব্যক্তি বলবে ‘লাফযী বিল কুরআন মাখলূক্ব’ বা ‘আমার মুখ থেকে উচ্চারিত কুরআন সৃষ্ট’, সে বিদ‘আতী। তার সাথে বসা যাবে না ও কথা বলা চলবে না। এরপরেও যে ব্যক্তি ইমাম বুখারীর দারসে যাবে, তাকে তোমরা ভ্রান্ত আক্বীদার অভিযোগে অভিযুক্ত কর! কেননা তার মজলিসে তারাই উপস্থিত হয়, যারা তার মতকে বিশ্বাস করে’।[৮]
অথচ ইমাম বুখারীকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আমাদের মুখ থেকে উচ্চারিত কুরআন কি সৃষ্ট? তখন তিনি জবাবে বলেছিলেন, ‘মানুষের কাজ সৃষ্ট’। তার এই কথাকে এক শ্রেণীর মানুষ স্রেফ হিংসার বশবর্তী হয়ে বিকৃত করে প্রচার করে যে, ইমাম বুখারী বলেছেন, ‘কুরআন সৃষ্ট’, অথচ তিনি এমনটা কখনোই বুঝাতে চাননি। যেমন মুহাম্মাদ ইবনু নাছর আল-মারওয়াযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

من زعم أني قلت لفظي بالقرآن مخلوق فهو كذاب فإني لم أقله. فقلت له يا أبا عبد الله قد خاض الناس في هذا وأكثروا فيه؟ فقال ليس إلا ما أقول وأحكي لك عنه

‘যে ব্যক্তি ধারণা করবে, আমি বলেছি, কুরআনের শব্দ মাখলুক্ব বা সৃষ্ট, সে মহা মিথ্যাবাদী। কেননা আমি এমনটা কখনোই বলিনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু ‘আব্দিল্লাহ! এ ব্যাপারটা নিয়ে মানুষজন অহেতুক বিতর্ক ও বাড়াবাড়ি করছে, সে সম্পর্কে আপনি কি বলবেন? অতঃপর ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, আমি তোমাকে যা বললাম এর বাইরে আমি কিছুই বলিনি’।[৯] অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, আবু আমর আল-খাফফাফ বলেন,

فَأَتَيْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيْلَ فَنَاظَرْتُهُ فِيْ شَيْءٍ مِنَ الْحَدِيْثِ حَتَّى طَابَتْ نَفْسُهُ فَقُلْتُ لَهُ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ هَاهُنَا رَجُلٌ يَحْكِي عَنْكَ أَنَّكَ قُلْتَ هَذِهِ الْمَقَالَةِ. فَقَالَ لِيْ يَا أَبَا عَمْرٍو احْفَظْ مَا أَقُوْلُ مَنْ زَعَمَ مِنْ أَهْلِ نَيْسَابُوْرَ وَقُوْمَسَ وَالرَّيِّ وَهَمَذَانَ وَحُلْوَانَ وَبَغْدَادَ وَالْكُوْفَةِ وَالْمَدِيْنَةِ وَمَكَّةَ وَالْبَصْرَةِ أَنِّيْ قُلْتُ لَفْظِيْ بِالْقُرْآنِ مَخْلُوْقٌ فَهُوَ كَذَّابٌ فَإِنَّىْ لَمْ أَقُلْ هَذِهِ الْمَقَالَةَ إِلَّا أَنِّيْ قُلْتُ أَفْعَالُ الْعِبَادِ مَخْلُوْقَةٌ

‘একদা আমি ইমাম বুখারীর সাথে হাদীছের একটি বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করলাম। আমি তার মনোভাব ভাল দেখে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু ‘আব্দিল্লাহ! এখানকার একজন মানুষ বলছে, আপনি না-কি কুরআন সম্পর্কে এরূপ বলেছেন। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) জবাবে বললেন, হে আবু ‘আমর! আমি যা বলছি, তা মুখস্থ করে নাও! নিশ্চয় নিশাপুর, কুমাস, রায়, হামাযান, হুলওয়ান, বাগদাদ, কূফা, মদীনা, মক্কা ও বাছরার যে ব্যক্তি বলবে যে, আমি বলেছি ‘আমার মুখ থেকে উচ্চারিত কুরআন সৃষ্ট’, সে মিথ্যুক। কারণ আমি এই মন্তব্য করিনি; বরং আমি বলেছি, ‘মানুষের কাজ সৃষ্ট’।[১০]
ইমাম ইবনু ‘আদী (রাহিমাহুল্লাহ) ছহীহ সনদে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেছেন, ইমাম বুখারীকে যখন এই প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেন,

القران كلام الله غير مخلوق وأفعال العباد مخلوقة

‘কুরআন সৃষ্ট নয়, বরং মহান আল্লাহ্র বাণী। আর মানুষের কাজ সৃষ্ট’।[১১]
অতএব উক্ত আলোচনায় স্পষ্ট হয় যে, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ছহীহ আক্বীদা সম্প্রসারণে কত গভীর হিংসা-বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। যদিও আল্লাহ তাঁকে হেফাযত করেছেন এবং তাঁর সম্মানকে বাড়িয়ে দিয়েছেন।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

* এম. ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
১. ইমাম নববী, তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, তা.বি.), ১ম খ-, পৃ. ৭১-৭২।
২. তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত, ১ম খ-, পৃ. ৭২।
৩. তারীখে বাগদাদ, ২য় খ-, পৃ. ২২; তারীখুল ইসলাম, ১৯তম খ-, পৃ. ১৭১।
৪. ইবুন আদী, আল-কামিল, ১ম খ-, পৃ. ২১৩।
৫. তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত, ১ম খ-, পৃ. ৭৩।
৬. তাজুদ্দীন সুবকী, আত-তাবাক্বাতুশ শাফিঈয়্যাহ, ২য় খ-, পৃ. ২২৫।
৭. তারীখে বাগদাদ, ২০ তম খ-, পৃ. ৩৫২।
৮. তারীখে বাগদাদ, ২০ তম খ-, পৃ. ৩৫৪।
৯. তারীখে বাগদাদ, ২০তম খ-, পৃ. ৩৫৪।
১০. তারীখে বাগদাদ, ২০তম খ-, পৃ. ৩৫৪।
১১. ইবনু আদী, আছামী, পৃ. ৬৪।




আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
আল্লামা মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) - শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
সাঈদ ইবনু জুবায়ের (রাহিমাহুল্লাহ) - প্রফেসর এ কে এম শামসুল আলম
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবন ও কর্ম (৩য় কিস্তি ) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবন ও কর্ম (২য় কিস্তি ) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
শাহ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবনকর্ম - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
সৈয়দ নাযীর হুসাইন দেহলভী - প্রফেসর এ কে এম শামসুল আলম
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবন ও কর্ম (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
শাহ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
আল্লামা মুহাম্মাদ বিন আলী আল-ইথিওপীর বিদায় : ঝরে গেল শরী‘আতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র - আযহারুল ইসলাম

ফেসবুক পেজ