বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৬ অপরাহ্ন

আল্লামা মুহাম্মাদ বিন আলী আল-ইথিওপীর বিদায় : ঝরে গেল শরী‘আতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

 -আযহারুল ইসলাম*


দিনটি ঠিক জানা যায় না। তবে ক্যালেন্ডারের পাতা অতিক্রম করছিল ১৩৬৫ হিজরী। ইথিওপিয়ায় এক শিশুর জন্ম হয়। কে জানত সেই শিশুই হয়ে ওঠবে ৭০০-৮০০ বছর আগের সালাফদের প্রতিচ্ছবি! হয়ে যাবে জগৎসেরা মনীষী! শিশুটির নাম রাখা হয় মুহাম্মাদ। জানত কি কেউ একদিন ইথিওপিয়ার সেই ছোট্ট মুহাম্মাদের নাম নেবে বিশ্ববাসী? তাঁর পরিচিতি হবে সূর্যের মত বিস্তৃত? মানুষ স্বগৌরবে স্মরণ করবে তার নাম? শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর পরে তিনি হয়ে ওঠবেন হাদীছশাস্ত্রের এক উজ্জ্বল জোতিষ্ক? জি, মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ, নাহুবীদ, উছূলবীদ সহ বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী হিসাবে এক অনবদ্য বিদ্বান ছিলেন শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু আদম আল-ইথিওপী (১৯৪৬-২০২০ খ্রি.) (রাহিমাহুল্লাহ)। শায়খের সংক্ষিপ্ত জীবনকর্ম নিম্নে উল্লেখ করা হল।

নাম, জন্ম ও শৈশবকাল

তার নাম মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু আদম ইবনু মূসা আল-ইথিওপী (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি ১৩৬৬ হিজরী মোতাবেক ১৯৪৬ সালে ইথিওপিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্নেহময়ী পিতা প্রখ্যাত আলেম, উছূলবীদ, মুহাদ্দিছ শায়খ আলী ইবনু আদম আল-ইথিওপীর নীড়েই বেড়ে ওঠেন। পিতা তাঁর আদরের দুলালকে অতি উত্তমভাবে প্রতিপালন করেন। ইলমকে তার কাছে প্রিয় করে তুলেন। এভাবে বাল্যকাল থেকেই ইলমের প্রতি ভালবাসা নিয়ে লালিত-পালিত হতে থাকেন একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ এ মুহাদ্দিছ। তার এই উত্তমভাবে বেড়ে ওঠা এবং কঠোর পরিশ্রমী ছাত্রদলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পেছনে তার পিতার ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

জ্ঞানার্জনের পথে ইথিওপী

শৈশবে পিতার কাছে কুরআন মুখস্থ করার মাধ্যমেই তিনি তার ইলমী যাত্রা শুরু করেন। অতঃপর শায়খ মুহাম্মদ ক্বাইয়ূ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে দারস গ্রহণ করেন এবং তার কাছেই পুরো কুরআন মুখস্থ করেন। অতঃপর শায়খের মাদরাসায় ইলমের বিভিন্ন ধরনের কিতাব পড়তে শুরু করেন। একই সাথে স্বীয় পিতা ও তার অঞ্চলের অন্যান্য শায়খদের থেকেও দারস গ্রহণ করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ

শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু আদম আল-ইথিওপী (রাহিমাহুল্লাহ) অনেক শিক্ষকের নিকট থেকে দারস গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ হলেন নিম্নরূপ :

(১). তাঁর পিতা উছূলবীদ, মুহাদ্দিছ শায়খ আলী ইবনু আদম আল-ইথিওপী। তাঁর কাছে তিনি আক্বীদা, ফিক্বহে হানাফী, উছূলে ফিক্বহ এবং অন্যান্য বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহ পড়েন। এমনকি তিনি তাকে ইযাযাও দিয়েছিলেন।
(২). শায়খ মুহাম্মাদ কাইয়ূ ইবনু ওয়াদ্দী । তিনি তাঁর কাছে পুরো কুরআন মুখস্থ করেছিলেন।
(৩). শায়খ মুহাম্মাদ যাইন ইবনু মুহাম্মাদ আদ-দানী (রাহিমাহুল্লাহ)। তাঁর কাছে ইমাম নববীর ব্যাখ্যাসহ ছহীহ মুসলিম এবং হাদীছের অন্যান্য গ্রন্থ পড়েন।
(৪). হাবাশার প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শায়খ আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনু রাফি‘ ইবনু বাছরী (রাহিমাহুল্লাহ)। তাঁর কাছে জামি‘ঊত তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসাঈ এবং হাদীছের অন্যান্য গ্রন্থ পড়েন।
(৫). শায়খ আল্লামা মুহাম্মাদ সা‘দ ইবনুশ শায়খ আলী আদ-দাররী (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি তাঁর কাছে তিন বছর ভাষা, হাদীছ এবং অন্যান্য ইলম অর্জন করেন।
(৬). শায়খ আব্দুল বাছির ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু হাসান আছয়ূবী আল-মিন্নাসী (রাহিমাহুল্লাহ)। শায়খ তাঁর কাছে উলূমুল আরাবিয়্যাহ সংক্রান্ত ইলম অর্জন করেন।
(৭). শায়খ হায়াহ ইবনু আলী আল-ইথিওপী।
(৮). শায়খ ইসমাঈল ইবনু উসমান যাইন।
(৯). শায়েখ আল-মুসনাদ মুহাম্মাদ ইয়াসিন আল-ফাদানী এবং
(১০). শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সূমালী।

সত্যান্বেষী ইথিওপী

তাঁর জনৈক ছাত্র বলেন, তিনি আমাদেরকে সর্বদা বলতেন, আমি যখন মক্কায় হিজরত করে আল-মা‘হাদ আল-হারামে দারস নেয়া শুরু করি আর শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া, ইবনুল ক্বাইয়িম এবং মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহাবের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করি, তখন তাদের কিতাবে এমন কিছু পাই যা আমাদের দেশে পাঠ্যসূচী আক্বীদার কিতাব সমূহের বিপরীত। তখন আমি আমার পূর্বের মানহাজে চলতে থাকি অর্থাৎ সঠিক দলীলের অনুসরণ করি। আমি লক্ষ্য করি, এসকল আলেমদের কিতাবে যা আছে তা বিশুদ্ধ দলীল ভিত্তিক। তাই আমি আমার পূর্বের আক্বীদা-বিশ্বাস ছেড়ে দেই, যা আমি আমার দেশের আশ‘আরী শায়খদের থেকে শিখেছিলাম এবং ঐ সব আকীদা-বিশ্বাস থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যাই। পরবর্তীতে আমার বাবাকে দেখতে যখন আমি আমার দেশে যাই তখন দেশের কেউ কেউ আমাকে বলে, তুমিতো ওয়াহাবী হয়ে গেছ! আমি বললাম, আরে না বরং আমি দলীলের অনুসরণ করছি। তাছাড়া মক্কা যাওয়ার আগে থেকেই তুমি জানো যে, আমি বিশুদ্ধ দলীলের অনুসরণ করে থাকি। সে বলল, ঠিক আছে তা জানি, তবে তুমি একটু বেশি কঠিন হয়ে গেছ! তখন আমি তাকে বললাম, তুমি কি জানো না, ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) যখন হিযায ও ইরাকে ছিলেন, তখন তার বুঝ ছিল একরকম‌। অতঃপর যখন মিশরে গিয়ে আরো অনেক দলীলাদি পেলেন, তখন পুরাতন বুঝ ছেড়ে দিয়ে নতুন বুঝ গ্রহণ করলেন? আমিও তেমনি, যখন আমি সে সমস্ত দলীলাদি পেয়ে গেলাম, যা আমার দেশে অনুপস্থিত ছিল, তখন আমি সে দলীলগুলো অনুসরণ করি এবং সে অনুযায়ী আমল করতে শুরু করি। আল্লাহ চাহেন তো পুরোটা জীবন আমি এভাবেই চলব।

শায়খের চরিত্র এবং কল্যাণকর কাজে তাঁর আগ্রহ

তিনি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব এবং বহুবিধ ভাল গুণের অধিকারী ছিলেন। তাঁকে চিনে এবং তাঁর সাথে উঠাবসাকারী এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই তা জানতেন। তিনি ছাত্রদের সাথে এমনভাবে মেলামেশা করতেন যেন তারা তার ভাই। কোন ছাত্রের মধ্যে তিনি পার্থক্য করতেন না। বরং সকলকেই সমান চোখে দেখতেন। তিনি ছাত্রদের খোঁজখবর নিতেন, তাদেরকে উৎসাহ দিতেন, ইলমের প্রতি আগ্রহ যোগাতেন। সর্বোপরি তিনি ছিলেন ছাত্রদের জন্য প্রেরণার বাতিঘর। নিজের অসুস্থতা সত্ত্বেও কোন ছাত্র অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যেতেন। ছাত্রদেরকে এত ভালবাসলেন যে, তারা ‘দারুল হাদিছ আল-খাইরিয়্যা’ থেকে লেখাপড়া সমাপ্ত করে চলে যাওয়ার পরও তিনি তাদের খোঁজখবর রাখতেন। তার এক ছাত্র বলেন, আমি তাকে কোন ছাত্রকে ভর্ৎসনা করতে দেখিনি।

তিনি সময়ের প্রতি খুবই যত্নবান ছিলেন। এমনকি চলাফেরা করার সময়ও তিনি তার মুখস্থ কবিতাসমূহের পুনরাবৃত্তি করতেন। তাছাড়া মানুষের মতামত এবং ছাত্রদের পর্যালোচনা গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী। লেখালেখি ও গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে শায়খের প্রবল ঝোঁক ছিল। তাঁর জনৈক ছাত্র বলেন, সর্বশেষ আমি যখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম তখন তিনি কাঁদছিলেন আর অসুস্থতা ও শক্তি সামর্থ্য কমে যাওয়ায় তিনি আফসোস করতে করতে বলছিলেন, আমি তো আর জামে‘ আত-তিরমিযীর ব্যাখ্যাটা শেষ করে যেতে পারব না!

ইলমের প্রচার-প্রসারে তাঁর তৎপরতা

তিনি তীক্ষ্ম মেধা ও অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ইলম ও আলেমদের প্রতি তাঁর ভালবাসা ছিল অসাধারণ। লিখনীর ক্ষেত্রেও শায়খের ছিল অদ্ভুত এক দক্ষতা। সঊদী আরবে আগমনের পর থেকেই কোনরকম ক্লান্তি-অবসাদ ছাড়াই বছরের পর বছর দারস দিয়েছেন। ১৪০৮ হিজরীতে তিনি মক্কাস্থ ‘দারুল হাদীছ আল-খাইরিয়্যা’ হতে ছাত্র হিসাবে ভর্তি হওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দিতে যান। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত পরীক্ষকগণ তাঁর অসাধারণ ধীশক্তি ও প্রখর মেধায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সেখানকার শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেন। এভাবেই তিনি মক্কাস্থ ‘দারুল হাদীছ আজইয়াদে’ও ১৫ বছর কুতুবে সিত্তার দারস দিয়েছেন এবং মক্কার মাকতাবাতু তা‘আবূনীতে ১৪২৭ হিজরী থেকে ১৪৩৪ হিজরী পর্যন্ত দারস দিয়েছেন। অতঃপর ১৪৩৪ হিজরীর ১ম রামাযান থেকে মাসজিদুল হারামের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। সেখানে তিনি সপ্তাহের সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দারস দিতেন। আমৃত্যু তিনি এই দারসে নিমগ্ন ছিলেন। একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন না কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তো সার্টিফিকেটের জায়গা’। শায়খের দারসী জীবনে হাজার হাজার ছাত্র সরাসরি তাঁর থেকে ইলম অর্জন করেছেন। এছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে তাঁর দারস সারাবিশ্বের লাখ লাখ ছাত্রের মাঝে ছড়িয়ে যেত।

তাঁর সম্পর্কে আলেমদের মন্তব্য

শায়খ আব্দুল আযীয ইবনু বায, ছালিহ আল-উছায়মীন, নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুমুল্লাহ), ছালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আব্দুল কারীম আল-খুযাইর (হাফিযাহুল্লাহ) সহ প্রমুখ মনীষী তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

(১). শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর সাথে সাক্ষাতের পর তাঁকে আল্লামা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
(২). শায়খ আব্দুর রহমান আস-সুদাইসী (হাফিযাহুল্লাহ) তাঁকে দেখলে মাথায় চুমু দিয়ে বলেন, ‘হে হাদীছের ইমাম, হাদীছের উস্তায ও ডাক্তার! আপনি আমাকে ইমাম মুসলিম (রাহিমাহুল্লাহ)-এর ঐ কথা মনে করে দিলেন যা তিনি ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘হে উস্তাযদের উস্তায, মুহাদ্দিছদের শিরোমণি, ইলালুল হাদীছের ডাক্তার! আপনি আমাকে সুযোগ দেন, আমি আপনার পদযুগল চুম্বন করি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনার মত দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি বর্তমানে পৃথিবীতে নেই’।
(৩). আল্লামা শায়খ রাবী ইবনু হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি প্রতিটি বিষয়েই আলেম’।
(৪). শায়খ মুক্ববীল ইবনু হাদী আল-ওয়াদিঈ (হাফিযাহুল্লাহ) তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি হচ্ছেন জ্ঞানের সমুদ্র’।
(৫). সুনানে নাসাঈর উপর লিখিত তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘বিগত যুগেও সুনানে নাসাঈর উপর এরকম কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না’।
(৬). অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ আব্দুল মুহিসন ইবনু আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ)-কে মুসলিমের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা গ্রন্থ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি মুহাম্মাদ ইবনু আদম (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক লিখিত মুসলিমের ব্যাখ্যাটির কথা উল্লেখ করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী  

শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু আদম আল-ইথিওপী (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক রচিত বিভিন্ন শাস্ত্রের উপর বহু গ্রন্থ তাঁর নানামুখী প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে। তিনি তাঁর একনিষ্ঠ ইখলাছ ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে লেখা প্রায় হাজারের অধিক খণ্ডে রচিত বিশাল লেখনী খিদমাহ আঞ্জাম দিয়েছেন। নিম্নে তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের বিবরণ দেয়া হল :

হাদীছ ও ঊলূমুল হাদীছ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী  

১. সুনান আন-নাসাঈর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘যাখীরাতুল ঊক্ববা ফী শারহিল মুজতবা’ [ذخيرة العقبى في شرح المجتبى]। যা ৪২ খণ্ডে রচিত। প্রতিটি খণ্ড প্রায় ৫০০-৭০০ পৃষ্ঠা সমৃদ্ধ। গ্রন্থটি সম্পর্কে শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সুনান নাসাঈর উপর এরূপ আর কোন ব্যাখ্যাগ্রন্থ আছে বলে আমার জানা নেই’।

২. ছহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আল-বাহরুল মুহীত্ব আছ-ছাজ্জাজ শারহু ছহীহি মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ’ [البحر المحيط الثجاج شرح صحيح مسلم ابن الحجاج]। যা ৪৫ খণ্ডে রচিত।

৩. সুনান ইবনু মাজাহ এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মাশারিকুল আনওয়ার আল-ওয়াহ্হাজাহ ওয়া মাতালিঊল আসরার আল-বাহ্হাজাহ ফী শারহি সুনানি ইবনি মাজাহ’ [مشارق الأنوار الوهاجة ومطالع الأسرار البهاجة في شرح سنن ابن ماجه]। যা ৪ খণ্ডে রচিত।

৪. ছহীহ মুসলিমের ভূমিকার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘কুররাতু আয়নিল মুহতাজ ফী শারহি মুকাদ্দিমাতি মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ’ [قرة عين المحتاج في شرح مقدمة مسلم بن الحجاج] যা ২ খণ্ডে রচিত।

৫. ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রাহিমাহুমুল্লাহ)-এর জীবনী সংক্রান্ত গ্রন্থ ‘কুররাতুল আঈন ফী তালখীছি তারাজিমিছ ছহীহায়ন’ [قرة العين في تلخيص تراجم الصحيحين]।

৬. ইমাম সুয়ূত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক রচিত উছূলে হাদীছ সংক্রান্ত গ্রন্থ ‘আলফিয়্যাতুস সুয়ূত্বী’ এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ইস‘আফু যাভীল ওয়াত্বর ফী শারহী নাযমিদ দুরার’ [إسعاف ذوي الوطر في شرح نظم الدرر]। যা ২ খণ্ডে রচিত।

৭. নাযমু শা-ফিয়াতিল গিলাল ফী আলফিয়্যাতিল ‘ইলাল [نظم شافية الغلل في ألفية العلل]।

৮. মাযীলুল খালাল শারহু শা-ফিয়াতিল গিলাল [مزيل الخلل شرح شافية الغلل ]।

৯. নাযমুল জাওয়াহিরিন নাফীস ফী নাযমি আসমা-ই ওয়া মারাতিবিল মাওছূফীনা বিত তাদলীস [نظم الجوهر النفيس في نظم أسماء ومراتب الموصوفين بالتدليس]।

১০. আল-জালীসুল আনীস ফী শারহিল জাওয়াহিরিন নাফীস [الجليس الأنيس في شرح الجوهر النفيس]।

১১. তাযকিরাতুত ত্বলিবীন ফী যিকরিল মাওযূঈ ওয়া আছনাফিল ওয়াযযাঈন [تذكرة الطالبين في ذكر الموضوع وأصناف الوضاعين]।

১২. আল-জালীসুল আমীন ফী শারহি তাযকিরাতিত ত্বলিবীন [الجليس الأمين في شرح تذكرة الطالبين]।

১৩. নাযমু ইতহাফি আহলিস সা‘আদাহ বিমা‘রিফাতি আসবাবিশ শাহাদাহ  [نظم إتحاف أهل السعادة بمعرفة أسباب الشهادة]।

১৪. রফ‘ঊল গয়নি ফী ছূবূতী যিয়াদাতি ওয়া বারাকাতিহী ফিত তাসলীমি মিনাল জা-নিবাইন [رفع الغين في ثبوت زيادة وبركاته في التسليم من الجانبين]।

১৫. ঊমদাতুল মুহতাত্ব ফী নাযমি আসমাই মান রুমিয়া মিনাছ ছিক্বাতি বিল ইখতিলাত্ব [عمدة المحتاط في نظم أسماء من رُمي من الثقات بالاختلاط]।

১৬. ঊদ্দাতু উলিল ইগতিবাত্ব ফী শারহি ঊমদাতিল মুহতাত্ব [عُدّة أولي الاغتباط في شرح عمدة المحتاط]।

১৭. বুগয়াতু ত্বলিবিস সা‘আদাহ ফী শারহি ইতহাফি আহলিস সা‘আদাহ বিমা‘রিফাতি আসবাবিশ শাহাদাহ [بغية طالب السعادة في شرح إتحاف أهل السعادة بمعرفة أسباب الشهادة]।

১৮. ইতহাফুন নাবীল বিমুহিম্মাতি ‘ইলমিল জারহি ওয়াত তা‘দীল [إتحاف النبيل بمهمات علم الجرح والتعديل]।

১৯. ইযাহুস সাবীল ফী শারহি ইতহাফিন নাবীল [إيضاح السبيل في شرح إتحاف النبيل]।

২০. ক্বসীদাতুন ফী মাদখালি শারহিন নাসাঈ [قصيدة في مدخل شرح النسائي]।

২১. ক্বসীদাতুন ফির রদ্দি ‘আলা বকর ইবনি হাম্মাদ আশ-শা‘ঈর আল-মাগরিবী ফী যাম্মিহী ‘ইলমিল হাদীছ ওয়া আহলিহী [قصيدة في الرد على بكر بن حماد الشاعر المغربي في ذمه علم الحديث وأهله]।

২২. মুখতাছার মাজমাঊল ফাওয়ায়েদ ওয়া মানবাঊল আওয়ায়েদ বিযিকরিল আছবাত ওয়াল আসানীদ [مختصر مجمع الفوائد ومنبع العوائد بذكر الأثبات والأسانيد]। যা মাওয়াহিবুছ ছামাদ লি‘আবদিহী মুহাম্মাদ [مواهب الصمد لعبده محمد] নামে প্রসিদ্ধ।

ইলমুন নাহু, ফিক্বহ, কবিতা ও অন্যান্য বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী  

২৩. ‘ইলমুন নাহু’ বিষয়ে রচিত ‘ফাৎহুল ক্বরীবিল মুজীব শারহু মুদনীল হাবীব নাযমু মুগনীল লাবীব’ [فتح القريب المجيب شرح مُدني الحبيب نظم مغني اللبيب]। যার কবিতা লিখেছেন শায়খ আব্দুল বাসিত্ব ইবনু মুহাম্মাদ (রাহিমাহুল্লাহ)। গ্রন্থটি ২ খণ্ডে রচিত।

২৪. ‘উছূলে ফিক্বহ’ বিষয়ে রচিত ‘আল-জালীসুস ছলিহুন নাফি‘ শারহুল কাওকাবিস সাত্বি‘ [الجليس الصالح النافع شرح الكوكب الساطع]।

২৫. ‘ইলমুন নাহু’ বিষয়ে কবিতার গ্রন্থ ‘আত-তুহফাতুল মারযিয়্যাহ নাযমুন ফী উছূলিল ফিক্বহী আলা ত্বরিক্বাতি আহলিস সুন্নাতিস সানিয়্যাহ’ [التحفة المرضية نظم في أصول الفقه على طريقة أهل السنة السنيّة]। উল্লেখিত গ্রন্থটি মোট ৩০৭২টি কবিতার পংক্তি দ্বারা সন্নিবেশিত হয়েছে।

২৬. আল-মিনহাতুর রযিয়্যাহ ফী শারহিত তুহফাতিল মারযিয়্যাহ [المنحة الرضية في شرح التحفة المرضية]। যা ৩ খণ্ডে রচিত।

২৭. ফাৎহুল কারীমিল লাত্বীফ শারহু আরজূযাতিত তাছরীফ [فتح الكريم اللطيف شرح أرجوزة التصريف]। আলোচ্য গ্রন্থে লেখক (রাহিমাহুল্লাহ) শায়খ আব্দুল বাসিত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক রচিত ‘আল মুরাহ ফিছ ছরফ’ [المراح في الصرف] গ্রন্থের ব্যাখ্যা করেছেন।

২৮. আল-ফাওয়াইদুস সামিয়্যাহ ফী ক্বাওয়াঈদি ওয়া যাওয়াবিতি ‘ইলমিয়্যাহ [الفوائد السمية في قواعد وضوابط علميّة]।

২৯. ক্বসীদাতুর রদ্দিল মুবকী লিলমুজরিমিদ দায়নুমারকী [قصيدة الرد المُبكي للمجرم الدينماركي]।

ইলমুন নাহু, ভাষা, হাদীছ এবং ফিক্বহ বিষয়ে কবিতা ও গদ্য সমৃদ্ধ ফাওয়ায়েদ গ্রন্থ ‘জামিঊল ফাওয়ায়েদ ওয়া যাবিতুল ‘আওয়ায়েদ’ [جامع الفوائد وضابط العوائد]।

৩০. ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক রচিত ‘মুক্বাদ্দিমাতুত তাফসীর’ গ্রন্থের কবিতার সংকলন ‘নাযমু মুক্বাদ্দিমাতিত তাফসীর’ [نظم مقدمة التفسير]।

৩১. তাওহীদ বিষয়ে কবিতার গ্রন্থ নাযমুন ফী ‘ইলমিত তাওহীদ [نظم في علم التوحيد]।

৩২. নাযমু খতিমাতিল মিছবাহুল মুনীর [نظم خاتمة المصباح المنير]।

৩৩. রিজযুন ফী ‘ইলমিল আরূয ওয়াল ক্বাওয়াফী [رجزٌ في علمي العروض والقوافي]।

৩৪. আগন্তুক ব্যক্তির সম্মানার্থে দাঁড়ানো, হাতে চুম্বন ও তদসংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান সংক্রান্ত বিষয়ে রচিত ‘ইতহাফু যাভিল হিম্মাহ বিফাওয়াইদিন মুহিম্মাহ’ [إتحاف ذوي الهمة بفوائد مهمة]।

মৃত্যু   

জীবনের শেষ দিনগুলোতেও তিনি নিয়মিত দারুল হাদীছে আসতেন এবং অসুস্থতা সত্ত্বেও ছাত্রদেরকে দারস দিতেন। তার এক ছাত্র বলেন, আমাদেরকে দারস দেয়ার জন্য তিনি দারুল হাদীছে আসতেন তীব্র অসুস্থতার দরুণ নিডল ফিডার তাঁর হাতেই থাকতো।

এমনকি মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত তিনি মাঝে মাঝেই দারস দেয়ার জন্য হাসপাতাল থেকে দারুল হাদীছে চলে আসতেন। অতঃপর লেখালেখি, গবেষণা এবং পাঠদানের কাজে জীবনের দীর্ঘ একটা সময় অতিবাহিত করেন। ক্লান্তিকর এক সফর শেষে ২০২০ সাল মোতাবেক ১৪৪২ হিজরীর সফর মাসের ২১ তারিখ বৃহস্পতিবার চাশতের সময় মক্কাস্থ আন-নূর হাসপাতালে ৭৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন যুগের এক কিংবদন্তি এই মুহাদ্দিছ। তাঁর মৃত্যুতে দ্বীনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র অস্তমিত হয়ে গেল। জামিঊল মুহাজিরীন মসজিদে মাগরিব ছালাতের পর প্রথম জানাযা এবং মক্কার হারামে এশার ছালাতের পর দ্বিতীয় জানাযা ছালাত আদায়ের পর তাঁকে ‘শুহাদাউল হারাম’ কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর পাপমোচন করুন, তাঁর খেদমতকে কবুল করুন এবং জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন- আমীন!!


* অধ্যয়নরত, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদীনা মুনাওয়ারাহ, সঊদী আরব।




প্রসঙ্গসমূহ »: জীবন কথা
শাহ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
সৈয়দ নাযীর হুসাইন দেহলভী - প্রফেসর এ কে এম শামসুল আলম
আল্লামা মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) - শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবন ও কর্ম (৩য় কিস্তি ) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবন ও কর্ম (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আল্লামা মুহাম্মাদ বিন আলী আল-ইথিওপীর বিদায় : ঝরে গেল শরী‘আতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র - আযহারুল ইসলাম
আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবনকর্ম - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবন ও কর্ম (২য় কিস্তি ) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ