শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫২ অপরাহ্ন

 অমিয় বাণী

-হাফেয আবূ তাহের বিন মজিবুর রহমান*



قالَ سَلَامُ بنُ أبِيْ مُطِيْعٍ كانَ قَتادَةُ يَخْتِمُ القُرْآنَ فِيْ سَبْعٍ وَإِذَا جَاءَ رَمَضَانُ خَتَمَ فِيْ كُلِّ ثَلَاثٍ

১. সালাম ইবনু আবী মুতী‘ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ক্বাতাদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সাতদিনে কুরআন খতম করতেন। আর যখন রমাযান মাস আগমন করত তখন তিনদিনে কুরআন খতম করতেন’।[১]
-----
عن عَبْدِ اللهِ بْنِ شَوْذَبٍ قال كانَ عُرْوَةُ يَقْرَأُ رُبُعَ القُرْآنِ كُلَّ يَوْمٍ

২. আব্দুল্লাহ ইবনু শাওযাব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, উরওয়া ইবনু যুবাইর প্রত্যেক দিন কুরআনের এক চতুর্থাংশ পড়তেন’।[২]
-----
كَانَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِيْ لَيْلَى إِذَا صَلَّى الصُّبْحَ قَرَأَ الْمُصْحَفَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ

৩. আব্দুর রহমান ইবনু আবী লাইলা (রাহিমাহুল্লাহ) ফজর ছালাত আদায় করার পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কুরআন পড়তেন।[৩]
-----
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أنَّهُ قالَ إنّا لَنَقْرَأُ القُرْآنَ فِيْ ثَمَانٍ

৪. উবাই ইবনু কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নিশ্চয় আমরা আট রাতে কুরআন খতম করতাম।[৪]
-----
عَنْ نافِعٍ أنَّ ابْنَ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا كانَ إذَا قَرَأ القُرْآنَ كَرِهَ أنْ يَتَكَلَّمَ أوْ لَمْ يَتَكَلَّمْ حَتّى يَفْرُغَ

৫. নাফে‘ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) যখন কুরআন তেলাওয়াত করতেন তখন কথা বলা অপসন্দ করতেন অথবা শেষ করার আগে কথা বলেননি।[৫]
-----
قالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا إنَّما هَذِهِ القُلُوْبُ أوْعِيَةٌ فَاشْغَلُوْهَا بِالقُرْآنِ وَلَا تَشْغَلُوْهَا بِغَيْرِهِ

৬. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নিশ্চয় এই অন্তর খালি পাত্র। সুতরাং তোমরা তাকে কুরআনের সাথে ব্যস্ত রাখ এবং তাকে অন্য কিছুর সাথে ব্যস্ত রেখো না।[৬]
-----
قَالَ ابْنُ وهْبٍ قِيْلَ لِأُخْتِ مَالِكٍ مَا كانَ شُغْلُ مالِكٍ فِيْ بَيْتِهِ؟ قالَتْ المُصْحَفُ التِّلاَوَةُ

৭. ইবনু ওয়াহাব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মালেক ইবনু দীনারের বোনকে জিজ্ঞেস করা হল, মালেক ইবনু দীনার তার বাড়ীতে কী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন? তিনি বললেন, কিতাব ও কুরআন তেলাওয়াত নিয়ে।[৭]
-----
أنَّ وَكِيْعًا كَانَ لَا يَنامُ حَتَّى يَقرَأَ جُزْءَهُ مِنْ كُلِّ لَيْلَةٍ ثُلُثَ القُرْآنَ ثُمَّ يَقُوْمُ فِيْ آخِرِ اللَّيْلِ فَيَقرَأُ المُفَصَّلَ ثُمَّ يَجْلِسُ فَيَأْخُذُ فِي الْاسْتِغْفارِ حَتَّى يَطْلُعَ الفَجْرُ

৮. নিশ্চয় ওয়াকী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রত্যেক রাতে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ না পড়ে ঘুমাতেন না। অতঃপর রাতের শেষে (ছালাতে) দাঁড়াতেন ও মুফাছ্ছালের সূরাগুলো পাঠ করতেন। এরপরে বসে ফজর হওয়া পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।[৮]
-----
عَنِ الْحَسَنِ قالَ تَفَقَّهُوْا الحَلَاوَةَ فِيْ ثَلَاثٍ فِي الصَّلَاةِ وَفِى القُرْآنِ وفى الذِّكْرِ فَإنْ وجَدْتُمُوْها فامْضُوْا وأبْشِرُوْا فَإنْ لَمْ تَجِدُوْها فاعْلَمْ أنَّ بابَكَ مُغْلَقٌ

৯. হাসান বাছরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তোমরা তিনটি জিনিসে স্বাদ অনুসন্ধান কর। যথা : ১. ছালাতে, ২. কুরআনে ও ৩. যিকিরের মধ্যে। যদি তা (স্বাদ) পেয়ে যাও তাহলে এগিয়ে যাও এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। আর যদি তা না পাও, তাহলে জেনে নিও তোমার দরজা বন্ধ আছে’।[৯]
-----
جَعْفَرُ بْنُ بُرْقَانَ قَالَ سَمِعْتُ مَيْمُوْنَ بْنَ مِهْرانَ يَقُوْلُ مَن تَبِعَ القُرْآنَ قادَهُ الْقُرْآنُ حَتَّى يَحِلَّ بِهِ فِي الْجَنَّةِ وَمَنْ تَرَكَ الْقُرْآنَ لَمْ يَدَعْهُ القُرْآنُ يَتْبَعُهُ حَتَّى يَقْذِفَهُ فِي النَّارِ

১০. জা‘ফর ইবনু বুরক্বান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি মাইমূন ইবনু মিহরান (রাহিমাহুল্লাহ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের অনুসরণ করবে কুরআন তাকে বহন করে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি কুরআনকে ছেড়ে দিবে কুরআনও তাকে ছেড়ে দিবে; এমনকি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে’।[১০]
-----
عَنْ أَبِي الْأَحْوَصِ قَالَ كَانَ عَبْدُ اللهِ يَقُوْلُ إِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ مَأْدُبَةُ اللهِ فَمَنْ دَخَلَ فِيْهِ فَهُوَ آمِنٌ

১১. আবুল আহওয়াছ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘এ কুরআন হল আল্লাহর মেহমানখানা। ফলে সেখানে যে ব্যক্তিই প্রবেশ করল, সে নিরাপত্তা লাভ করল।[১১]
-----
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيْدَ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ مَنْ أَحَبَّ الْقُرْآنَ فَلْيُبْشِرْ

১২. আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ হতে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনকে ভালোবাসে সে যেন আনন্দিত হয়’।[১২]
-----
عَنِ الشَّعْبِيِّ أَنَّ ابْنَ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا كَانَ يَقُوْلُ يَجِيءُ الْقُرْآنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَشْفَعُ لِصَاحِبِهِ فَيَكُوْنُ لَهُ قَائِدًا إِلَى الْجَنَّةِ وَيَشْهَدُ عَلَيْهِ وَيَكُوْنُ لَهُ سَائِقًا إِلَى النَّارِ

১৩. শা‘বী হতে বর্ণিত, ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলতেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআন এসে তার সাথী (পাঠক)-এর জন্য শাফা‘আত করবে এবং তাকে জান্নাতের দিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। আবার তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে এবং তাকে জাহান্নামের দিকে চালিয়ে নিয়ে যাবে।[১৩]
-----
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ مَا يَمْنَعُ أَحَدَكُمْ إِذَا رَجَعَ مِنْ سُوْقِهِ أَوْ مِنْ حَاجَتِهِ فَاتَّكَأَ عَلَى فِرَاشِهِ أَنْ يَقْرَأَ ثَلَاثَ آيَاتٍ مِنْ الْقُرْآنِ

১৪. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘তোমরা বাজার হতে কিংবা তোমাদের কোন প্রয়োজন সেরে বাড়িতে প্রবেশ করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে কুরআনের তিনটি আয়াত পাঠ করা হতে তোমাদেরকে কিসে বাধা দেয়?’[১৪]
-----
قالَ عُثْمَانُ بْنُ عَفّانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا لَوْ طَهُرَتِ القُلُوْبُ لَمْ تَشْبَعْ مِنَ التِّلَاوَةِ لِلْقُرْآنِ

১৫. উছমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, যদি অন্তর পবিত্র করতে চাও তাহলে কুরআন তেলাওয়াতে বিরক্ত বা ক্লান্ত হয়ো না।[১৫]
-----
عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قالَ مَن أَرَادَ العِلْمَ فَلْيَقْرَأ القُرْآنَ فَإنَّ فِيْهِ عِلْمَ الْأوَّلِيْنَ والْآخِرِيْنَ

১৬. আব্দল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে চায় সে যেন কুরআন তেলাওয়াত করে। কেননা তাঁর মাঝেই পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জ্ঞান রয়েছে।[১৬]
-----
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا فِي الْقُرْآنِ شِفَاءَانِ , الْقُرْآنُ وَالْعَسَلُ الْقُرْآنُ شِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُوْرِ وَالْعَسَلُ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ

১৭. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, ‘কুরআনে দু’টি শিফা রয়েছে। যথা : ১. আল-কুরআন এবং ২. মধু। আল-কুরআন হচ্ছে সীনার কুমন্ত্রণার ঔষধ আর মধু হচ্ছে সকল রোগের ঔষধ’।[১৭]
-----
عَنْ زَيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ قالَ قَالَ لِيْ أبُو البُحْتُرِيِّ الطّائِيُّ اتَّبِعْ هَذَا القُرْآنَ فَإنَّهُ يَهْدِيْكَ

১৮. যায়েদ ইবনু জুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমাকে আবুল বুহতারী আত-তাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তুমি এই কুরআনের অনুসরণ কর। কেননা সে তোমাদের সঠিক পথের দিশা দিবে’।[১৮]

* দাওরায়ে হাদীছ, মাদরাসা মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়্যাহ, উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা; শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ, খড়খড়ি, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র :
[১]. সিয়ারু আ‘লামুন নুবালা, ৮ম খ-, পৃ. ৪৯০; কিতাবু মিন আখবারিস সালাফিস সালিহ, পৃ. ১৫৩।
[২]. হায়াতুত তাবিঈন, ১ম খ-, পৃ. ৫৬০; কিতাবু মিন আখবারিস সালাফিস সালিহ, পৃ. ১৫৩।
[৩]. দারেমী, হা/৩৩৫১, সনদ ছহীহ।
[৪]. আল-ফিরইয়াবী, ফাযাইলুল কুরআন, ১ম খ-, পৃ. ২২১।
[৫]. কিতাবু মিন আখবারিস সালাফিছ ছালিহ, পৃ. ১৪৫।
[৬]. কিতাবু মিন আখবারিস সালাফিছ ছালিহ, পৃ. ১৪৫।
[৭]. সিয়ারু আ‘লামুন নুবালা, ৮ম খ-, পৃ. ১১১।
[৮]. কিতাবু মিন আখবারিস সালাফিছ ছালিহ, পৃ. ১৪৫; সিয়ারু আ‘লামুন নুবালা, ৭ম খ-, পৃ. ৫।
[৯]. হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৬ষ্ঠ খ-, পৃ. ১৭১; কিতাবু মিন আখবারিস সালাফিছ ছালিহ, পৃ. ১৪৯।
[১০]. হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৪র্থ খ-, পৃ. ৮৪।
[১১]. দারেমী, হা/৩৩২২, সনদ ছহীহ।
[১২]. দারেমী, হা/৩৩২৩, সনদ ছহীহ।
[১৩]. মুছান্নাফু ইবনি আবী শাইবাহ, হা/১০১০২।
[১৪]. দারেমী, হা/৩৩৩৬, সনদ ছহীহ।
[১৫]. আল-বুরহানু ফী ঊলূমিল কুরআন, ১ম খ-, পৃ. ৪৫২।
[১৬]. মুছান্নাফু ইবনি আবী শাইবাহ, ২য় খ-, পৃ. ১২৬।
[১৭]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৯৩৫০।
[১৮]. মুছান্নাফু ইবনি আবী শাইবাহ, হা/৩০৬৩২।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিবিধ

ফেসবুক পেজ