বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ অপরাহ্ন
অমিয় বাণী

বাণী-১ : ইউসুফ ইবনুল হুসাইন আল-রাজী (রহিমাহুল্লাহ) (১৮৮২-১৯২৭ খ্রি.) বলেন,

أَعَزُّ شَيْءٍ فِي الدُّنْيَا الْإِخْلَاصُ وَكَمْ أَجْتَهِدُ فِي إِسْقَاطِ الرِّيَاءِ عَنْ قَلْبِي وَكَأَنَّهُ يَنْبُتُ فِيْهِ عَلَى لَوْنٍ آخَرَ.

অর্থ: ‘পৃথিবীর বুকে সর্বোৎকৃষ্ট বস্তু হল ইখলাছ, আমি কতই না চেষ্টা করেছি আমার অন্তর থেকে রিয়া দূর করতে। কিন্তু আমি যতই চেষ্টা করি তা দূর করতে কিন্তু সেটি অন্যরূপে আবার আবির্ভূত হয়’।

বাণী-২ : ই‘য়াকূব আল-মাকফূফ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,

اَلْمُخْلِصُ مَنْ يَكْتُمُ حَسَنَاتِهِ كَمَا يَكْتُمُ سَيِّئاتِهِ. وَقِيْلَ لِبَعْضِ الْحُكَمَاءِ رَحِمَهُمُ اللهُ مَا غَايَةَ الْإِخْلَاصِ؟ قَالَ أَنْ لَا تُحِبَّ مَحْمَدَةَ النَّاسِ.

অর্থ: ‘মুখলিছ হল সেই ব্যক্তি, যে তার নেকীর কাজগুলোকে গোপন করে ঐ ভাবে, যেভাবে পাপের কাজগুলোকে গোপন করে’।  কোন কোন বিদ্বানদের বলা হয়েছিল যে, ইখলাছের উদ্দেশ্য কী? তারা বলেছেন, ‘মানুষের প্রশংসা ভাল না বাসা’।

বাণী-৩ : ইবনুল ক্বাইয়িম (রহিমাহুল্লাহ) (৬৯১-৭৫১ হি.) বলেন, اَلْعَمَلُ بِغَيْرِ اِخْلَاصٍ وَلَا اِقْتِدَاءٍ كَالْمُسَافِرِ يَمْلَأُ جَرَابِهِ رَمَلٌا يَثْقَلُهُ وَلَا يَنْفَعُهُ. অর্থ: ‘ইখলাছ বিহীন আমল ঐ মুসাফিরের ন্যায়, যে তার ব্যাগ বালি দ্বারা পূর্ণ করে বহন করে, অথচ তা তার কোন উপকারে আসে না’।

বাণী-৪ : ইবনুল মুবারক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, رُبَّ عَمَلٍ صَغِيْرٍ تُكَثِّرُهُ النِّيَّةُ وَرُبَّ عَمَلٍ كَثِيْرٍ تُصَغِّرُهُ النِّيَّةُ অর্থ: ‘অনেক ছোট আমল আছে, নিয়ত যাকে বৃদ্ধি করে দেয়। আর অনেক বেশী আমল আছে, নিয়ত তা কমিয়ে দেয়’।

বাণী-৫ : ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহিমাহুল্লাহ)(৬৬১-৭২৮ হি.) বলেন,

أَنَّ النِّيَّةَ الْمُجَرَّدَةَ مِنْ الْعَمَلِ يُثَابُ عَلَيْهَا وَالْعَمَلُ الْمُجَرَّدُ عَنْ النِّيَّةِ لَا يُثَابُ عَلَيْهِ فَإِنَّهُ قَدْ ثَبَتَ بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَاتِّفَاقِ الْأَئِمَّةِ: أَنَّ مَنْ عَمِلَ الْأَعْمَالَ الصَّالِحَةَ بِغَيْرِ إخْلَاصٍ لِلهِ لَمْ يُقْبَلْ مِنْهُ ذَلِكَ.

অর্থ: ‘শুধু নিয়তের কারণে ছওয়াব দান করা হয় এবং নিয়তবিহীন আমলে কোন ছওয়াব দেয়া হয় না। অতএব কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর মাধ্যমে ইমামগণের ঐকমত্যে কেউ যদি ইখলাছবিহীন আমল করে, তাহলে তা গ্রহণ করা হয় না’।

বাণী-৬ : ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, فَمَنْ خَلُصَتْ نِيَّتُهُ فِي الْحَقِّ وَلَوْ كَانَ عَلَى نَفْسِهِ كَفَاهُ اللهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّاس অর্থ: ‘যে ব্যক্তি হক্বের ক্ষেত্রে তার নিয়ত নির্ভেজাল করতে সম্মত হয়, যদিও স্বয়ং হক্বটি তার মনের বিপক্ষে হয়, তাহলে তার এবং মানুষের মাঝের বিষয়াদির ক্ষেত্রে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়’।

বাণী-৭ : আবু সুলায়মান আদ-দারানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, إِذَا أَخْلَصَ الْعَبْدُ انْقَطَعَتْ عَنْهُ كَثْرَةُ الْوَسَاوِسِ وَالرِّيَاءِ  অর্থ: ‘বান্দা যখন একনিষ্ঠভাবে আমল করে, তখন তার থেকে কুমন্ত্রণা ও রিয়া দূরীভূত হয়ে যায়’।

বাণী-৮ : মা‘রূফ (রহিমাহুল্লাহ) কেঁদে কেঁদে বলতেন, يَا نَفْسُ كَمْ تَبْكِيْنَ؟ أَخْلِصِيْ تَخْلُصِيْ অর্থ: ‘হে অন্তর! কতই না ক্রন্দন করছ, তুমি ইখলাছ কর, তাহলে তুমি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পাবে’।

বাণী-৯ : ইয়াহইয়া ইবনু কাছীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, تَعَلَّمُوا النِّيَّةَ فَإِنَّهَا أَبْلَغُ مِنَ الْعَمَلِ অর্থ: ‘তোমরা নিয়তের জ্ঞানার্জন কর, কেননা তা আমলের পরিপূরক’।

বাণী-১০ : মাক্বদেসী (রহিমাহুল্লাহ) (জন্ম ৩৭৫ হি.) বলেন,

وَلَيْتَ شَعْرِىْ تُصْلِحُ نِيَّةٌ مَنْ لَا يَعْرِفُ حَقِيْقَةَ النِّيَّةِ؟ أَوْ كَيْفَ يُخَلِّصُ مَنْ صَحَّ نِيَّةً إِذْ لَمْ يَعْرِفْ حَقِيْقَةَ الْإِخْلَاصِ؟ أَوْ كَيْفَ يُطَالِبُ الْمُخِلِصُ نَفْسَهُ بِالصِّدْقِ إِذَا لَمْ يَتَحَقَّقُ مَعْنَاهُ؟ فَالْوَظِيْفَةُ الْأُوْلَى عَلَى عَبْدٍ أَرَادَ طَاعَةَ اللهِ تَعَالَى أَنْ يَّعْلَمَ النِّيَّةَ أَوَّلًا لِتَحَصُّلِ لَهُ الْمعْرِفَةِ ثُمَّ يَصِحُّهَا بِالْعَمَلِ بَعْدَ فَهْمِ حَقِيْقَةِ الصِّدْقِ وَلْإِخْلَاصِ الَّذِيْنَ هُمَا وَصِيْلَتَانِ لِلْعَبْدِ إِلَى النَّجَاةِ.

অর্থ: ‘হায় আমার আফসোস! কিভাবে নিয়ত পরিশুদ্ধ হবে, যে তার প্রকৃতি জানে না বা মুখলিছ কিভাবে তার আত্মার নিকট সততার দাবী করতে পারে? যতক্ষণ সে তার অর্থ বাস্তবায়ন না করবে। অতএব একজন বান্দার সর্বপ্রথম কর্তব্য হল আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করা। প্রথমতঃ সেটা অর্জনের জ্ঞান লাভ করা। অতঃপর তা আমলের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করবে ইখলাছ ও ছিদক্বের প্রকৃতি বুঝার পর। যে দু’টি বান্দার জন্য নাজাতের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম’।

১. ইবনু রজব আল-বাগদাদী, জামি‘ঊল ঊলূম ওয়াল হিকাম ফী শারহি খামসীনা হাদীছান মিন জাওয়ামি‘ইল কালাম (বৈরূত : মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ৭ম সংস্করণ ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.), ১ম খ-, পৃ. ৮৪।

২. ইমাম গায্যালী, ইহইয়াউ ‘উলূমিদ্দীন, ৩য় খ-, পৃ. ৩৭৮।

৩. মুহাম্মাদ ইবনু ‘উছমান আয-যাহাবী, আল-কাবাইর, ১ম খ-, পৃ. ৯।

৪. ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ, আল-ফাওয়াইদ (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৩৯৩ হি./১৯৭৩ খ্রি.), পৃ. ৪৯।

৫. শামসুদ্দীন আয-যাহাবী, সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা (কায়রো : দারুল হাদীছ, ১৪২৭ হি./২০০৬ খ্রি.), ৮ম খ-, পৃ. ৪০০।

৬. আহমাদ ইবনু তাইমিয়্যাহ, আল-ফাতাওয়াউল কুবরা (দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৮ হি.), ১ম খ-, পৃ. ২১১; ঐ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২২ তম খ-, পৃ. ২৪৩।

৭. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/২১০৪২।

৮. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন, ২য় খ-, পৃ. ৯২।

৯. সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, ৯ম খ-, পৃ. ৩৪১।

১০. হিলয়াতুল আওলিয়া, ৩য় খ-, পৃ. ৭০।

১১. মুখতাছার মিনহাজুল কাসেদীন, পৃ. ৩৬০।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিবিধ নীতি-নৈতিকতা

ফেসবুক পেজ