সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন
আল-ইখলাছ সম্পর্কিত
 -আল-ইখলাছ ডেস্ক

বাণী-১ : ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) (৭০১-৭৭৪ হি.) বলেন,

فَإنَّهُ تَعَالَى لَا يَتَقَبَّلُ الْعَمَلَ حَتَّى يَجْمَعِ هٰذَيْنِ الرُّكْنَيْنِ أَنْ يَّكُوْنَ صَوَابًا مُوَافَقًا لِلشَّرِيْعَةِ وَأَنْ يَّكُوْنَ خَاِلصًا مِّنَ الشِّرْكِ

‘আল্লাহ তা‘আলা কোন আমল গ্রহণ করেন না, যতক্ষণ না এ দু’টি রুকন তাতে বিদ্যমান থাকে। যথা- (১) শরী‘আতের পদ্ধতি অনুযায়ী হওয়া এবং (২) শিরক মুক্ত হওয়া’।[১]

বাণী-২ : সাঈদ ইবনু ইয়াযীদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

خَمْسُ خِصَالٍ بِهَا تَمَامُ الْعِلْمِ وَهِيَ مَعْرِفَةُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَمَعْرِفَةُ الْحَقِّ وَإِخْلَاصُ الْعَمَلِ للهِ وَالْعَمَلُ عَلٰى السُّنَّةِ وَأَكْلُ الْحَلَالِ فَإِنْ فَقْدَتْ وَاحِدَةً لَمْ يَرْفَعِ الْعَمَلَ

‘ইলম পূর্ণতা লাভ করে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে। যথা- (১) আল্লাহ সম্পর্কিত জ্ঞান (২) প্রকৃত শিক্ষা (৩) একমাত্র আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ আমল (৪) সুন্নাতী পদ্ধতিতে আমল করা এবং (৫) হালাল রিযিক্ব ভক্ষণ করা। এগুলোর কোন একটি না থাকলে আমল গৃহীত হবে না’।[২]

বাণী-৩ : ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৩১-৬৭৬ হি.) বলেন,

أَنَّ الْمُبَاحَ إِذَا قُصِدَ بِهِ وَجْهَ اللهِ تَعَالٰى صَارَ طَاعَةٍ

‘যখন মুবাহ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়, তখন সে আমল মহৎ কর্মে পরিণত হয়’।[৩]

বাণী-৪ : যায়েদ আল-ইয়ামী বলেন,

إِنِّىْ لَأُحِبُّ أَنْ تَكُوْنَ لِىْ نِيَّةٌ فِىْ كُلِّ شَيْئٍ حَتّٰى فِى الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ

‘আমি প্রত্যেক মুবাহ কাজে নিয়ত করা অত্যন্ত পসন্দ করি। এমনকি খাওয়ার সময়েও’।[৪]

বাণী-৫ : ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৬১-৭২৮ হি.) বলেন,

فَإِذَا أَخْلَصَ الْعَبْدُ لِرَبِّهِ الدِّيْنَ كَانَ هَذَا مَانِعًا لَهُ مِنْ فِعْلِ ضِدِّ ذَلِكَ وَمِنْ إيقَاعِ الشَّيْطَانِ لَهُ فِيْ ضِدِّ ذٰلِكَ. وَإِذَا لَمْ يُخْلِصْ لِرَبِّهِ الدِّيْنَ وَلَمْ يَفْعَلْ مَا خُلِقَ لَهُ وَفُطِرَ عَلَيْهِ عُوْقِبَ عَلٰى ذٰلِكَ. وَكَانَ مِنْ عِقَابِهِ تَسَلُّطُ الشَّيْطَانِ عَلَيْهِ حَتّٰى يُزَيِّنَ لَهُ فِعْلَ السَّيِّئَاتِ وَكَانَ إلْهَامُهُ لِفُجُوْرِهِ عُقُوْبَةً لَهُ عَلٰى كَوْنِهِ لَمْ يَتَّقِ اللهَ

‘যখন কেউ তার রবের জন্য ইখলাছ করে, তখন তার রব তাকে পসন্দ করেন। অতঃপর তার অন্তর পুনরুজ্জীবিত করেন। সে তার রবের প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং তার থেকে সব ধরনের অন্যায় অশ্লীলতা ফিরিয়ে দেন। এই অন্তরটি ঐ অন্তরের বিপরীত, যে অন্তরে আল্লাহর ইখলাছ নেই। সেই অন্তর শুধু (দুনিয়ার) সন্ধানে এবং সাধারণ ভালবাসায় লিপ্ত থাকে। কখনো হারামের দিকে ধাবিত হয়। সে শুধু তার মনের পূজা করে, যার ফলে সে মানুষের নিকট শত্রু এবং সমালোচনার পাত্র হয়ে পড়ে’।[৫]

বাণী-৬ : শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, কথিত আছে যে,

أَنَّ بَعْضَ النَّاسِ بَلَغَهُ أَنَّهُ مَنْ أَخْلَصَ لِلهِ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا تَفَجَّرَتْ يَنَابِيْعُ الْحِكْمَةِ مِنْ قَلْبِهِ عَلَى لِسَانِهِ فَأَخْلَصَ فِيْ ظَنِّهِ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا لِيَنَالَ الْحِكْمَةَ فَلَمْ يَنَلْهَا فَشَكَا ذَلِكَ إلَى بَعْضِ حُكَمَاءِ الدِّيْنِ فَقَالَ إنَّك لَمْ تُخْلِصْ لِلهِ سُبْحَانَهُ وَإِنَّمَا أَخْلَصَتْ لِلْحِكْمَةِ

‘কিছু লোক শুনেছে, যে ব্যক্তি ৪০ দিন আল্লাহর জন্য ইখলাছের সাথে আমল করবে সে ব্যক্তির বিচক্ষণতা অন্তর থেকে বের হয়ে মুখে প্রকাশ পাবে। এক ব্যক্তি মনে মনে ৪০ দিন ইখলাছ করার পরে ‘হিকমাহ’ না পেয়ে হাকীমের নিকট অভিযোগ করে। হাকীম তাকে বলেন, তুমি তো আল্লাহর জন্য ইখলাছ করনি বরং তুমি ‘হিকমাহ’ পাওয়ার আশায় করেছ’।[৬]

বাণী-৭ : ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

اَلْإِخْلَاصُ لَهُ فَإِنَّ الْقَلْبَ لَابُدَّ لَهُ مِنَ التَّعَلُّقِ بِمَحْبُوْبٍ فَمَنْ لَّمْ يَكُنِ اللهَ وَحْدَهُ مَحْبُوْبَهُ وَإِلٰهَهُ وَمَعْبُوْدَهُ فَلَابُدَّ أَنْ يَّتَعَبَّدَ قَلْبَهُ لِغَيْرِهِ

‘কোন ব্যক্তির একনিষ্ঠতা হল- নিশ্চয় তার অন্তর কোন প্রিয় সত্তার সাথে সম্পৃক্ত থাকে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যার অন্তরে একমাত্র প্রিয়সত্তা, ইলাহ ও মা‘বূদ হিসাবে না থাকবে, তখন তার অন্তর অবশ্যই অন্য কারো ইবাদত করবে’।[৭]

বাণী-৮ : হাসান বাছরী (রাহিমাহুল্লাহ) (২১-১১০ হি.) বলেন,

كَانَ الرَّجُلُ إِذَا هَمَّ بِصَدَقَةٍ تَثْبُتُ فَإِنْ كَانَ لِلهِ مَضًا إِنْ خَالَطَهُ شَكٌّ أَمْسَكَ

‘যখন কোন ব্যক্তি ছাদাক্বার ইচ্ছা পোষণ করত, তখন সে তার নিয়ত স্থির করত, যদি তা শুধু আল্লাহর জন্যই হত; তখন তা বাস্তবায়ন করত অন্যথা কোন সংশয় সংমিশ্রিত হলে তা থেকে বিরত থাকত’।[৮]

[১] তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪০৩।
[২] আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবুবকর শামসুদ্দীন কুরতুবী, আল-জামে‘ঊ লি আহকামিল কুরআন (রিয়ায : দারু ‘আলিমিল কুতুব, ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ২০৮।
[৩] আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনু শারফ আন-নববী, আল-মিনহাজ শারহু ছহীহ মুসলিম (বৈরূত : দারু ইহইয়াউত তুরাছিল ‘আরাবী, ২য় সংস্করণ, ১৩৯২ হি.), ১১তম খণ্ড, পৃ. ১১২।
[৪] আবুল ফারজ আব্দুর রহমান ইবনু আহমাদ ইবনু রজব আল-হাম্বলী, জামি‘উল ঊলূম ওয়াল হিকাম (বৈরূত : দারুল মা‘আরিফাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪০৮ হি.), পৃ. ১৩।
[৫] ইমাম ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ১৪ তম খণ্ড, পৃ. ৩৩২; ইমাম ইবনু তায়মিয়া, আল-হাসানাতু ওয়াস সায়ইয়াহ (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়াহ, তাবি), পৃ. ৯৩।
[৬] ইমাম ইবনু তায়মিয়া, আল-ফাতাওয়াউল কুবরা (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়াহ, ১ম সংস্করণ ১৪০৮ হি./১৯৮৭ খ্রি.), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৭৯।
[৭] ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ, ইগাছাতুল লাহফান ফী হুকমি ত্বালাকিল গাযবান (বৈরূত : আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, ২য় সংস্করণ ১৪০৮ হি./১৯৮৮ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৭।
[৮] মুহাম্মাদ ইবনু জারীর আবু জা‘ফর আত-ত্বাবারী, জামি‘ঊল বায়ান ফী তা’বীলি কুরআন (বৈরূত : মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ১ম সংস্করণ ১৪২০ হি./২০০০ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৭০।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিবিধ নীতি-নৈতিকতা

ফেসবুক পেজ