সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০২:১৮ অপরাহ্ন
অমিয় বাণী : ইখলাছ
বাণী-১ :
ফুযাইল ইবনু ‘ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ)-কে আল্লাহর বাণী لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا -এর ব্যাখ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

يَا أَبَا عَلِيٍّ مَا أَخْلَصَهُ وَأَصْوَبَهُ فَقَالَ إِنَّ الْعَمَلَ إِذَا كَانَ خَالِصًا وَلَمْ يَكُنْ صَوَابًا لَمْ يُقْبَلْ وَإِذَا كَانَ صَوَابًا وَلَمْ يَكُنْ خَالِصًا لَمْ يُقْبَلْ حَتَّى يَكُوْنَ خَالِصًا صَوَابًا وَالخْاَلِصُ أَنْ يَّكُوْنَ لِلهِ وَالصَّوَابُ أَنْ يَّكُوْنَ عَلَى الْسُّنَّةِ

‘একদা তাকে বলা হল- হে আবু আলী! أَخْلَصُهُ وَأَصْوَبُهُ কী? তিনি বলেন, যখন আমলের মধ্যে ইখলাছ থাকে কিন্তু নেকীর উদ্দেশ্য থাকে না, তখন সে আমল কবুল করা হয় না। আর যখন আমলের মধ্যে নেকী উদ্দেশ্য থাকে কিন্তু ইখলাছ থাকে না, তখন সে আমলও কবুল করা হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত নেকী ও ইখলাছ দু’টি একত্রিত না হবে। আর ইখলাছ হল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হওয়া আর নেকী হল আমলটি সুন্নাহ মোতাবেক হওয়া’।[১]

বাণী-২ :
ইবনু শাহীন (রাহিমাহুল্লাহ) ও লালকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) যৌথভাবে সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

لَا يُقْبَلُ قَوْلٌ وَعَمَلٌ إلَّا بِنِيَّةِ وَلَا يُقْبَلُ قَوْلٌ وَعَمَلٌ وَنِيَّةٌ إلَّا بِمُوَافَقَةِ السُّنَّةِ

‘আল্লাহর নিকট কোন কথা ও আমল গ্রহণযোগ্য হয় না বিশুদ্ধ নিয়ত ব্যতীত। আর কোন কথা, আমল ও নিয়ত কবুল হয় না সুন্নাত মোতাবেক না হওয়া পর্যন্ত’।[২]

বাণী-৩ :
আল্লামা শামসুদ্দীন আয-যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৭৩-৭৪৮ হি./১২৭৫-১৩৪৭ খ্রি.) খুরায়বী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন,

كَانُوْا يَسْتَحِبُّوْنَ أَنْ يَكُوْنَ لِلرَّجُلِ خَبِيئَةٌ مِنْ عَمَلٍ صَالِحٍ لَا تَعْلَمُ بِهِ زَوْجَتُهُ وَلَا غَيْرُهَا

‘(সালাফে ছালেহীন) পসন্দ করতেন যে, প্রত্যেক ব্যক্তির একটি গোপনীয় সৎ আমল থাকবে, যা তার স্ত্রী এবং অন্য কেউ জানবে না’।[৩][৩]

বাণী-৪ :
সালামাহ ইবনু দীনার (মৃ. ১৩৩ অথবা ১৩৫ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, اُكْتُمْ حَسَنَاتِكَ أَشَدَّ مِمَّا تَكْتُمُ سَيِّئَاتِكَ ‘তুমি তোমার সৎ আমলগুলো অধিক গোপন কর, তোমার খারাপ আমল গোপন করা থেকে’।[৪]

বাণী-৫ :
বিশরূল হাফীর (১৭৯-২২৭ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

أَخْمِلْ ذِكْرَكَ وَطَيِّبْ مَطْعَمَكَ لَا يَجِدُ حُلْوَةَ الْأَخِرَةِ رَجُلٌ يُحِبُّ فِى الدُّنْيَا أَنْ يَّعْرِفَهُ النَّاسُ

‘তুমি তোমার খ্যাতি নিষ্ক্রিয় কর এবং হালাল খাবার খাও, কোন ব্যক্তি পরকালের স্বাদ লাভ করতে পারবে না, যদি সে পার্থিব জীবনে মানুষের কাছে পরিচিত হওয়া পসন্দ করে’।[৫]

বাণী-৬ :
ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) (১৫০-২০৪ হি.) বলেন, وَدِدْتُ أَنَّ الْخَلْقَ يَتَعَلَّمُوْنَ هَذَا الْعِلْمَ وَلَا يُنْسَبُ إِلَىَّ مِنْهُ شَيْئٌ ‘আমি ভালবাসি যে, মানুষ আমার থেকে এই ইলম শিক্ষা অর্জন করবে কিন্তু আমার দিকে তার কিছুই সম্বোধন করা হবে না’।[৬]

বাণী-৭ :
আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী (১৭০৭-১৩৭৬ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, لَا يَرَائِيُ بِعَمَلِهِ بَلْ يَعْمَلُهُ خَالِصًا لِوَجْهِ اللهِ تَعَالٰى ‘লোক দেখানোর জন্য আমল করবে না, বরং আমল করবে ইখলাছসহ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য’।[৭]

বাণী-৮ :
ইবনু হাজার হাইছামী (৯০৯-৯৭৪ হি./১৫০৪-১৫৬৭ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, اَلْأَعْمَالُ الَّتِيْ قُصِدَ بِهَا غَيْرُ اللهِ تَعَالَى يَبْطُلُ ثَوَابُهَا صَارَتْ كَالْهَبَاءِ الْمَنْثُوْرِ ‘ঐ সমস্ত আমল যেগুলো আল্লাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে করা হয়, সেগুলোর ছওয়াব বাতিল হবে এবং তা হবে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণার মত’।[৮]

বাণী-৯ :
ইমাম আল্লামা কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, أَنَّ الْعِبَادَةَ لَا تَنْفَعُ إِلَّا مَعَ الإِخْلَاصِ ‘নিশ্চয় ইখলাছশূন্য ইবাদত কোন উপকারে আসবে না’।[৯]

বাণী-১০ :
আল্লামা শানক্বীতী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

أَنَّ الْإِخْلَاصَ كُلَّهُ فِيْ عِبَادَتِهِ هُوَ ثَمَرَةُ الْكُتُبِ الْمُنَزَّلَةِ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ صَلَوَاتُ اللهِ عَلَيْهِمْ وَسَلَامُهُ

‘নিশ্চয় ইখলাছ সহ ইবাদত হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত। আর এটা নবীগণের উপর নাযিলকৃত আসমানী কিতাবগুলোর মূল বক্তব্য’।[১০]

[১]. ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইসতিক্বামাহ (মদীনা : জামি‘আতুল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু সাঊদ, ১ম সংস্করণ ১৪০৩ হি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০৮-৩০৯।

[২]. ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ২২তম খণ্ড, পৃ. ১৭৭; আল-ইসতিক্বামাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০৯।

[৩]. সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৯২।

[৪]. হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৯।

[৫]. মিনহাজুল ক্বাসিদীন, পৃ. ২১০।

[৬]. হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১১৮।

[৭]. আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী, তায়সীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান (বৈরূত : মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ১ম সংস্করণ ১৪২০ হি.), পৃ. ৪৮৯।

[৮]. ইবনু হাজার আল-হাইতামী, আয-যাওয়াজিরু আন ইকতিরাফিল কাবাইর (দারুল ফিকর, ১৪০৭ হি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৯।

[৯]. আল-জামি‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১৪ তম খণ্ড, পৃ. ৩২।

[১০]. আযওয়াউল বায়ান ফী ইযাহিল কুরআন বিল কুরআন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১১।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিবিধ নীতি-নৈতিকতা

ফেসবুক পেজ