বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ অপরাহ্ন

অমিয় বাণী

-ইউনুস বিন আহসান*


 عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ صَالِحٍ الْعِجْلِيِّ رَحِمَهُ الله قَالَ كَانَ رَجُلٌ مِنْ وَلَدِ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا يَجْلِسُ فِيْ مَجْلِسِ ابْنِ السَّمَّاكِ فَكَانَ يُطِيْلُ السُّكُوْتَ فَقَالَ لَهُ ابْنُ السَّمَّاكِ ذَاتَ يَوْمٍ يَا فَتَى أَلَا تَخُوْضَ فِيْمَا يَخُوْضُ فِيْهِ القَوْمُ مِنَ الْحَدِيْثِ؟ فَقَالَ إِنَّمَا قَعَدْتُ لِأَسْمَعَ وَأَنْصُتَ لِأَفْهَمَ وَمَا كَانَ مِنَ الْحَدِيْثِ لِغَيْرِ اللهِ فَعَاقَبَتُهُ النَّدَمُ فَقَالَ خَرَجْتَ وَاللهِ مِنْ مَعْدِنٍ

১). আব্দুল্লাহ ইবনু ছালেহ আল-‘আজালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর বংশধরদের একজন লোক ছিল তিনি ইবনু সাম্মাকের দারসে বসতেন। আর তিনি দীর্ঘক্ষণ যাবৎ চুপ থাকতেন। ফলে একদিন তাকে ইবনু সাম্মাক জিজ্ঞেস করলেন, হে যুবক! অন্যান্য লোকেরা যখন বিভিন্ন আলাপচারিতায় ব্যস্ত থাকে, তখন তুমি কেন তাদের সাথে শরীক হও না? তিনি বললেন, আমি শোনার জন্য বসেছি আর দারস বুঝার জন্য চুপচাপ থাকি। আর যে কথা আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য বলা হয় তার পরিণতি হয় নিন্দনীয়। ফলে তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! তুমি খনি থেকে বের হয়ে গেছ![১]
-----

 عَنْ عِتَابِ بْنِ زِيَادٍ رَحِمَهُ الله قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ الْمُبَارَكِ يَقُوْلُ يَا ابْنَ الْمُبَارَكِ إِذَا عَرَفْتَ نَفْسَكَ لَمْ يَضُرُّكَ مَا قِيْلَ فِيْكَ

২). ঈতাব ইবনু যিয়াদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রাহিমাহুল্লাহ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি নিজেই নিজেকে বলেছেন, হে ইবনুল মুবারক! যখন তুমি নিজেকে চিনতে পারবে তখন তোমার ব্যাপারে বলা কারো কোন কথা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।[২]
-----

يُوْسُفُ بْنُ أَسْبَاطٍ رَحِمَهُ الله قَالَ قَالَ لِيْ حُذَيْفَةُ الْمَرْعَشِيُّ رَحِمَهُ الله كَانَ يُقَالُ إِذَا رَأَيْتُمُ الرَّجُلَ قَدْ جَلَسَ وَحْدَهُ فَانْظُرُوْا إِلَى أَيِّ شَيْءٍ جَلَسَ فَإِنْ كَانَ جَلَسَ لِيُجْلَسَ إِلَيْهِ فَلَا يُجْلَسُ إِلَيْهِ وَقَالَ حُذَيْفَةُ لَأَنْ أَدَعَ لِلهِ كِذْبَةً أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَحُجَّ حَجَّةً

৩). ইউসুফ ইবনু আসবাত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হুযায়ফা আল-মার‘আশী (রাহিমাহুল্লাহ) আমাকে বললেন, বলা হত, যখন তোমরা কাউকে দারস দেয়ার জন্য বসতে দেখবে, তখন লক্ষ্য করবে যে, সে কেন বসেছে, তার উদ্দেশ্য যদি হয় এই যে, তার কাছে অনেক মানুষ আসবে, তবে তার বৈঠকে বসা উচিত নয়। হুযায়ফা (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য একটি মিথ্যা ছেড়ে দেয়া আমার কাছে একবার হজ্জ করার চেয়েও বেশি প্রিয়।[৩]
-----

عَنْ يُوْنُسَ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَحِمَهُ الله وَقِيْلَ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى رَحِمَهُ الله قَالَ قَالَ الشَّافِعِيُّ يَا أَبَا مُوْسَى لَوِ اجْتَهَدْتَ كُلَّ الْجَهْدِ عَلَى أَنْ تَرْضَى النَّاسَ كُلَّهُمْ فَلَا سَبِيْلَ إِلَيْهْ فَإِنْ كَانَ كَذَلِكَ فَأَخْلِصْ عَمَلَكَ وَنِيَّتَكَ لِلهِ عَزَّ وَجَلَّ

৪). ইউনুস ইবনু আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ), যিনি ইবনু আব্দুল আ‘লা নামেও পরিচিত। তিনি বলেন, ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হে আবূ মূসা! যদি তুমি নিজেকে সম্পূর্ণ উজাড় করে সকল মানুষকে খুশি করতে চাও তবুও তা সম্ভব হবে না। সুতরাং তুমি তোমার নিয়ত ও যাবতীয় আমল একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই কর।[৪]
-----

 وَقَالَ الشَّافِعِيُّ رَحِمَهُ الله لَا يَعْرِفُ الرِّيَاءَ إِلَّا مُخْلِصٌ يَعْنِيْ لَا يَتَمَكَّنُ فِيْ مَعْرِفَةِ حَقِيْقَتِهِ وَالْاِطِّلَاعِ عَلَى غَوَامِضِ خُفْيَاتِهِ إِلَّا مَنْ أَرَادَ الْإِخْلَاصَ فَإِنَّهُ يَجْتَهِدُ أَزْمَانًا فِيْ مُطَاوَلَةِ الْبَحْثِ وَالْفِكْرِ وَالتَّنْقِيْبِ عِنْدَهُ حَتَّى يَعْرِفَهُ أَوْ يَعْرِفَ بَعْضَهُ وَلَا يُحْصَلُ هَذَا لِكُلِّ أَحَدٍ

৫). ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘একমাত্র মুখলিছ ব্যক্তি ছাড়া কেউ রিয়া বুঝতে পারবে না। অর্থাৎ, একমাত্র যে ইখলাছের সাথে অনুসন্ধান করবে সে ছাড়া কেউ রিয়া এর প্রকৃত পরিচয় ও এর অন্তর্নিহিত জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হবে না। কেননা সে এটা সম্পর্কে দীর্ঘ সময় যাবৎ গভীরভাবে চিন্তা, গবেষণা ও অনুসন্ধান চালায়। ফলে সে রিয়া সম্পর্কে বা তার কিছুটা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। আর এটা সবাই অর্জন করতে পারে না।[৫]
-----

عَنِ الشَّافِعِيِّ رَحِمَهُ الله أَنَّهُ قَالَ وَدِدْتُ أَنَّ الْخَلْقَ تَعَلَّمُوْا مِنِّيْ هَذَا الْعِلْمِ عَلَى أَنْ لَا يَنْسُبُ إِلَيَّ حَرْفٌ مِنْهُ وَقَالَ رَحِمَهُ الله مَا نَاظَرْتُ أَحَدًا قَطُّ عَلَى الْغَلَبَةِ وَوَدِدْتُ إِذَا نَاظَرْتُ أَحَدًا أَنْ يَظْهُرَ عَلَى يَدَيْهِ وَقَالَ مَا كَلَّمْتُ أَحَدًا قَطُّ إِلَّا وَدِدْتُ أَنْ يُوَفَّقَ وَيُسَدَّدَ وَيُعَانَ وَيَكُوْنَ عَلَيْهِ رِعَايَةٌ مِنَ اللهِ وَحِفْظٌ

৬). ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, ‘আমি চাই মানুষ আমার দিকে সম্বোধিত না করে আমার কাছ খেকে ইলম শিক্ষা লাভ করুক’। তিনি আরো বলেন, ‘আমি কখনো কাউকে আমার কাছে পরাজিত মনে করি না। বরং আমি এটাই কামনা করি যেন তার উভয় হাতে হক্ব প্রকাশিত হয়’। তিনি আরো বলেন, ‘আমি যখনই কাউকে সম্বোধন করে কিছু বলেছি, তার জন্য তাওফীক্ব ও সাহায্য কামনা করেছি। আরো কামনা করেছি, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যেন একজন তত্ত্বাবধায়ক ও হিফাযতকারী নিযুক্ত হয়’।[৬]


* শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহী।

তথ্যসূত্র : 
[১]. হিললইয়াতুল আওলিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৫৩।
[২]. আল-মুজালাসাতু ওয়া জাওয়াহীরিল ইলম লিদ্দাইনূরী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬১৪।
[৩]. হিললইয়াতুল আওলিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৮২।
[৪]. আস-সামারক্বান্দী, বুসতানুল ‘আরিফীন, ১, খণ্ড, পৃ. পৃ. ১০।
[৫]. আস-সামারক্বান্দী, বুসতানুল ‘আরিফীন, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮।
[৬]. হুসাইন ইবনু মানছূর, আদাবুল ঊলামা ওয়াল মুতা‘আল্লিমীন, ১ম খণ্ড, পৃ. ১।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিবিধ

ফেসবুক পেজ