শারঈ পর্দা : একটি পর্যালোচনা
-ওবাইদুল্লাহ আল-আমীন*
(৩য় কিস্তি)
৪. বড় চাদর দ্বারা আবৃত করা ওয়াজিব
পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে মহিলারা শুধু মাথা ঢেকে রাখাকে যথেষ্ট মনে করত। আর গ্রীবাদেশ ও তার পাশাপাশি জায়গা উন্মুক্ত রাখত। এমনকি তাদের বক্ষদেশ প্রশস্ত হওয়ার কারণে তাদের সিনা প্রকাশিত হত। পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা তাদের গ্রীবাদেশ ও তৎসংশ্লিষ্ট স্থান ঢেকে রাখার নির্দেশ প্রদান করে আয়াত নাযিল করেন। তিনি বলেন, وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ ‘তারা যেন তাদের বক্ষদেশে নিজেদের ওড়না ফেলে রাখে’ (সূরা আন-নূর : ৩১)।
আর خمر শব্দটি خمار এর বহুবচন। এর অর্থ হচ্ছে, মাথার ঢাকনী। ফাইয়ূমী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ثَوْبٌ تُغَطِّي بِهِ الْمَرْأَةُ رَأْسَهَا وَالْجَمْعُ خُمُرٌ ‘এমন কাপড়, যদ্বারা মহিলারা মাথা ঢেকে রাখে। আর তার বহুবচন হচ্ছে خُمُرٌ’।[১] ‘আল-কামূসুল মুহীত্ব’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, وهو النصيف ‘সেটা হল- ওড়না’।[২] যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ غَدْوَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى الْأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَابَيْنَهُمَا وَلَمَلَأَتْ مَا بَيْنَهُمَا رِيْحًا وَلَنَصِيْفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর পথে এক সকাল এবং এক সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও তার সমস্ত সম্পদ হতে উত্তম। যদি জান্নাতবাসিনী কোন নারী পৃথিবীর পানে উঁকি দেয়, তাহলে পৃথিবী তার রূপের ছটায় আলোকিত করে ফেলবে এবং আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানসমূহ সুগন্ধিতে বিমোহিত করে ফেলবে। এমনকি তাদের হুরদের মাথার ওড়নাও গোটা দুনিয়া এবং তার সম্পদরাজী হতে উত্তম।[৩] উক্ত হাদীছের মধ্যে وَلَنَصِيْفُهَا শব্দটি ‘ওড়না’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
আর جُيُوْبٌ শব্দটি جَيْبٌ এর বহুবচন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল- কণ্ঠদেশ ও সিনা। কেননা জামার বক্ষদেশ সেই অংশ, যেখান দিয়ে মাথা প্রবেশ করে।[৪] ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) (৭০১-৭৭৪ হি.) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ ‘তারা যেন বক্ষদেশে নিজদের ওড়না ফেলে রাখে’ (সূরা আন-নূর : ৩১), দ্বারা তাদের বক্ষদেশ ঢেকে রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যাতে তাদের বক্ষদেশের নিচে যা আছে তা আড়াল করতে পারে কিংবা লুকাতে পারে। এর মাধ্যমে জাহেলী যুগের নারীদের সংস্কৃতির বিরুদ্ধাচরণ করা হয়েছে। যেহেতু সেসময়ে তারা এটা করত না। বরং তারা পুরুষের মাঝে এমনভাবে চলাচল করত যে, তারা তাদের বক্ষ প্রদর্শন করে চলত, কিন্তু তারা কোন আড়াল করত না। আবার কখনও কখনও তারা তাদের গর্দান ও চুলের খোপাও প্রকাশ করত এবং কানের ছিদ্র পর্যন্ত প্রকাশ করত। তার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদার নারীদের আদেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন তাদের চাল-চলন ও ভাব-ভঙ্গিকে যথাযথভাবে ঢেকে রাখতে’।[৫]
৫. নারীদের যে সকল পুরুষের সামনে প্রকাশ হওয়া বৈধ
মহিলার জন্য কিছু লোকের সামনে তথা গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নিজেকে প্রকাশ করা বৈধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
حُرِّمَتۡ عَلَیۡکُمۡ اُمَّہٰتُکُمۡ وَ بَنٰتُکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ وَ عَمّٰتُکُمۡ وَ خٰلٰتُکُمۡ وَ بَنٰتُ الۡاَخِ وَ بَنٰتُ الۡاُخۡتِ وَ اُمَّہٰتُکُمُ الّٰتِیۡۤ اَرۡضَعۡنَکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ مِّنَ الرَّضَاعَۃِ وَ اُمَّہٰتُ نِسَآئِکُمۡ وَ رَبَآئِبُکُمُ الّٰتِیۡ فِیۡ حُجُوۡرِکُمۡ مِّنۡ نِّسَآئِکُمُ الّٰتِیۡ دَخَلۡتُمۡ بِہِنَّ ۫ فَاِنۡ لَّمۡ تَکُوۡنُوۡا دَخَلۡتُمۡ بِہِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ ۫ وَ حَلَآئِلُ اَبۡنَآئِکُمُ الَّذِیۡنَ مِنۡ اَصۡلَابِکُمۡ ۙ وَ اَنۡ تَجۡمَعُوۡا بَیۡنَ الۡاُخۡتَیۡنِ اِلَّا مَا قَدۡ سَلَفَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا
‘তোমাদের জন্য অবৈধ করা হয়েছে তোমাদের মাতৃগণ, তোমাদের কন্যাগণ, তোমাদের ভগ্নিগণ, তোমাদের ফুফুগণ, তোমাদের খালাগণ, তোমাদের ভ্রাতৃ কন্যাগণ, তোমাদের ভগ্নি কন্যাগণ, তোমাদের সেই মাতৃগণ, যারা তোমাদেরকে স্তন্যদান করেছেন, তোমাদের দুগ্ধ-ভগ্নিগণ, তোমাদের স্ত্রীদের মাতৃগণ, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ, সেই স্ত্রীদের (পূর্ব স্বামীর) যে সকল কন্যা তোমাদের ক্রোড়ে অবস্থিত; কিন্তু যদি তোমরা তাদের সাথে সহবাস না করে থাক তবে তোমাদের জন্য কোন অপরাধ নেই এবং যারা তোমাদের ঔরসজাত, সে পুত্রদের পত্মীগণ এবং যা অতীত হয়ে গেছে তদ্ব্যতীত দু’ভগ্নিকে একত্রিত করা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল! করুণাময়’ (সূরা আন-নিসা : ২৩)। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا زَوْجَ النَّبِىِّ ﷺ أَخْبَرَتْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ عِنْدَهَا وَأَنَّهَا سَمِعَتْ صَوْتَ رَجُلٍ يَسْتَأْذِنُ فِىْ بَيْتِ حَفْصَةَ قَالَتْ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ هَذَا رَجُلٌ يَسْتَأْذِنُ فِىْ بَيْتِكَ فَقَالَ النَّبِىُّ ﷺ أُرَاهُ فُلَانًا لِعَمِّ حَفْصَةَ مِنَ الرَّضَاعَةِ قَالَتْ عَائِشَةُ لَوْ كَانَ فُلَانٌ حَيًّا لِعَمِّهَا مِنَ الرَّضَاعَةِ دَخَلَ عَلَىَّ فَقَالَ نَعَمِ الرَّضَاعَةُ تُحَرِّمُ مَا تُحَرِّمُ الْوِلَادَةُ
নবী করীম (ﷺ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ঘরে বসে ছিলেন। এমন সময় শুনলেন এক ব্যক্তি হাফছাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! লোকটি আপনার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন বলেন, আমি জানি, সে ব্যক্তি হাফছার দুধ সম্পর্কের চাচা। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, যদি অমুক ব্যক্তি বেঁচে থাকত সে দুধ সম্পর্কে আমার চাচা হত (তাহলে কি আমি তার সঙ্গে দেখা করতে পারতাম)? নবী করীম (ﷺ) বলেন, হ্যাঁ, রক্ত সম্পর্কের কারণে যাদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ, দুধ সম্পর্কের কারণেও তাদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ।[৬]
সুতরাং উক্ত নছ এটা প্রমাণ করে যে, মহিলার মাহরাম হচ্ছে, তার স্বামী, আর بَعُوْلَةٌ দ্বারা স্বামীই উদ্দেশ্য। বাপ-দাদা চাই তার পিতৃকুলের হোক বা মাতৃকুলের। আর স্বামীর পিতা-দাদাগণ বা তার ঊর্ধ্বতন। ছেলেরা এবং স্বামীর ছেলেরা এর মধ্যে পৌত্র ও তার সন্তানরাও শামিল আছে। আর ভাইগণ ও সহোদর ভাই-বোনের ছেলে। অথবা পিতার শরীকি বা মার শরীকি হোক না কেন। আর মায়ের স্বামী, তার চাচা ও মামারা। আর দুধ সম্পর্কের কারণে যারা হারাম। তারা সকলে মহিলার মাহরাম। এদের কারো সাথে বিবাহ বৈধ নয়। আর মহিলার জন্য এদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করাও জায়েয। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলার বাণী, وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا لِبُعُوۡلَتِہِنَّ ‘... তারা যেন তাদের স্বামী ব্যতীত কারো নিকট তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে ...’ (সূরা আন-নূর : ৩১)।[৭]
সুধী পাঠক! এখানে اَلزِّيْنَةٌ শব্দ দ্বারা ‘তার স্থানসমূহ’ উদ্দিষ্ট মূল সাজ-সজ্জা নয়। যেমনটি পূর্বের আয়াতে উল্লেখ হয়েছে। আবূ বকর আল-জাছ্ছাছ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘জানার বিষয় হচ্ছে, এখানে সাজসজ্জার স্থান উদ্দেশ্য। আর তা হচ্ছে চেহারা হাত, বাহু। কেননা এগুলো চুড়ি বা ব্রেসলেট পরিধানের জায়গা। কনুই ও বন্ধনি একত্রিতকরণের স্থান। গ্রীবাদেশ ও বুক মালা পরিধানের জায়গা। নলা ঝুমুর পরিধানের স্থান। সুতরাং উক্ত আয়াতে উল্লেখিত ব্যক্তিদের জন্য ঐ জায়গাগুলো দেখার বৈধতা দাবি করে’।[৮] তবে স্বামীর জন্য এর থেকেও বেশি দেখা হালাল হবে। যেহেতু স্পর্শ ও দৃষ্টিপাত বিবেচনায় তার জন্য পুরা শরীরই হালাল।[৯]
বিশেষ সতর্কতা
আল্লামা কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) (৬০০-৬৭১ হি./১২০৪-১২৭৩ খ্রি.) বলেন, ‘যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা প্রথমেই স্বামীদের কথা উল্লেখ করেছেন। দ্বিতীয়ত রক্ত সম্পর্ক আত্মীয়দের কথা বলেছেন এবং তাদের মাঝে সৌন্দর্য প্রকাশ করাকে সমান গণ্য করেছেন। তবে ব্যক্তি বিবেচনায় এই স্তরে কিছুটা তারতম্য হবে। সুতরাং নিঃসন্দেহে পিতা ও ভাইয়ের কাছে মহিলার সৌন্দর্য প্রকাশ করাটা তার স্বামীর ছেলের নিকট প্রকাশ করার চেয়ে বেশি সতর্কতার বিষয়। আর তাদের নিকটে প্রকাশ হওয়ার একটা ধারাবাহিকতা থাকবে। তাহলে পিতার নিকট যে খোলামেলা থাকতে পারবে সেভাবে স্বামীল ছেলের নিকট পারবে না।[১০] অনুরূপভাবে আয়াতের চাহিদা এটা প্রমাণ করে যে, মহিলার জন্য সাধারণ মুসলিম নারীদের সামনে পর্দা ছেড়ে দেয়া বৈধ। তবে কাফের নারী এর ব্যতিক্রম। এছাড়া মুসলিম নারীদের সামনে তার সৌন্দর্যের স্থানসমূহ প্রকাশ করা বৈধ।[১১]
এমনিভাবে দাসের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করা বৈধ। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ ব্যাপারে অনেক হাদীছ এসেছে। আর এই সুবিধাটা প্রয়োজনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা একজন মহিলার জন্য তার সাক্ষী, কর্মচারী এবং প্রস্তাবকারীর দিকে দৃষ্টিপাত করার চেয়ে তার দাসের সাথে কথা-বার্তা বলাটা বেশি প্রয়োজন। যখন তাদের দিকে নজর প্রদান বৈধ, তখন গোলামের দিকে দেখা তার জন্য আরও বেশি বৈধ। তবে বিষয়টি এটা সাব্যস্ত করে না যে, তারা মুহরিম হবে এবং তাদের সাথে মহিলার সফর করা বৈধ হবে। যেমন নপুংসক ব্যক্তির দিকে নজর করা বৈধ কিন্তু সে তার মাহরাম হবে না এবং তার সাথে সফর করতে পারবে না। বিষয়টি এমন নয় যে, যাকে দেখা বৈধ তার সাথে সফর করা বৈধ এবং নির্জনে যাওয়াও বৈধ। বরং যদিও সে তার সাথে নির্জনবাস করতে এবং সফর করতে পারে না। কেননা সে নবী করীম (ﷺ)-এর নি¤েœর বাণীর মধ্যে শামিল হবে না। তিনি বলেন, لَا تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ يَوْمَيْنِ إِلَّا مَعَهَا زَوْجُهَا أَوْ ذُوْ مَحْرَمٍ ‘কোন নারী তার মাহরাম পুরুষ বা স্বামী ব্যতীত কারো সাথে দু’দিন/তিনদিন সফর করতে পারবে না’।[১২] যেহেতু মহিলার জন্য তার দাসকে আজাদ করার পর বিয়ে করাও বৈধ নয়। যেমন তার বোনের স্বামীর জন্য জায়েয তাকে বিবাহ করা যখন তার বোনকে ত্বালাক্ব দিবে। আর মাহরাম হল সেই পুরুষ, যে স্থায়ীভাবে বিবাহের ক্ষেত্রে হারাম। এজন্যই ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন, ‘গোলামের সাথে সফর করা মহিলার ধ্বংসের কারণ’।[১৩] অত্র আয়াত সৌন্দর্য প্রকাশের ক্ষেত্রে রক্ত সম্পর্ক আত্মীয় ও অন্যান্যদের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে। আর সফরের হাদীছের মধ্যে শুধু মাহরামদেরই অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর অত্র আয়াতে উল্লেখ হয়েছে যে, ‘নারী তাদের সাথে সফর করবে না’।[১৪]
আয়াতটি এটাও প্রমাণ করে যে, নপুংসক অনুগামী পুরুষের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করা বৈধ। তবে এই ধরনের লোকদের দু’টি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। শর্ত দু’টি হল নিম্নরূপ:
প্রথমতঃ তারা হবে অনুগামী। এর অর্থ হল- তারা কোন কিছুর অনুসরণ করেন, যা তাকে প্রদান করা হয়। একারণে অনেকেই বলে থাকেন যে, সে আপনার অনুসরণ করে এবং পেটের ক্ষুধায় উদ্বিগ্ন থাকে। এটা দ্বারা উদ্দেশ্য হল- তাদের সরলতা ও নির্বুদ্ধিতা।
দ্বিতীয়তঃ তাদের কোন নারী চাহিদা থাকতে পারবে না। যেমন খাসিকৃত পুরুষ, হিজড়া, বয়োবৃদ্ধ এবং নির্বোধ লোক। উক্ত দু’টি শর্ত পাওয়া না গেলে মহিলার জন্য তাদের দেখা বৈধ নয়। আর الإربة অর্থ সঙ্গমের চাহিদা।[১৫]
এছাড়া মহিলার জন্য নারীর যৌনাঙ্গ সম্পর্কে জ্ঞান নেই এমন প্রত্যেক শিশুর সামনে পর্দা করা আবশ্যক নয়।[১৬]
প্রকাশ থাকে যে, মহিলার স্বামীর নিকটাত্মীয় তার মাহরাম হবে না। একথাটির সমর্থন নবী করীম (ﷺ)-এর নিম্নোক্ত হাদীছ দ্বারা পাওয়া যায়।
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ য قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِيَّاكُمْ وَالدُّخُوْلَ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَرَأَيْتَ الْحَمْوَ ؟ قَالَ الْحَمْوُ الْمَوْتُ
ঊক্ববা ইবনু আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে সাবধান থাক। একজন ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! দেবর সম্পর্কে বলুন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, দেবর মৃত্যু সমতুল্য।[১৭]
লাইছ ইবনু সা’দ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, الحمو أخو الزوج وما أشبهه من أقارب الزوج ‘স্বামীর ভাই বা এ ধরনের স্বামীর নিকটাত্মীয়গণ’।[১৮] আর হাদীছে বর্ণিত اَلْحَمْوُ الْمَوْتُ এর অর্থ হল- أن خلوته معها أشد من خلوة غيره ‘তার সাথে নির্জনবাস, যা মৃত্যু থেকেও মারাত্মক’।[১৯]
সুধী পাঠক! এত ভয়ংকর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও লোকেরা এ ব্যাপারে খুবই উদাসীন। সুতরাং এই উপদেশ বাণীর দ্বারা তাদের উপকৃত হওয়া উচিত।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* সুপার, দারুস সুন্নাহ সালাফিয়া মাদরাসা, খালিশপুর, খুলনা।
তথ্যসূত্র :
[১]. আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী আল-ফাইয়ূমী, আল-মিছবাহুল মুনীর ফী গারীবিশ শারহিল কাবীর, ৩য় খণ্ড, পৃ., ১৩৩।
[২]. মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াকূব আল-ফীরূযাবাদী, আল-কামূসুল মুহীত্ব, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৪৮।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৯৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৮০; মিশকাত, হা/৫৬১৪।
[৪]. হাফিয ইবনু হাজার আল-‘আসক্বালানী, তাফসীরু গারীবিল হাদীছ, পৃ. ১৬১।
[৫]. আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনু কাছীর আদ-দিমাস্কী, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম (দারু ত্বাইয়েবা, ২য় সংস্করণ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৪৬।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৩১০৫, ৫০৯৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৪৯২; মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/২২৩৩।
[৭]. বিস্তারিত দ্র. : আল-মুগনী ‘আনিল আসফার, পৃ. ৭৫-৭৭।
[৮]. আহমাদ ইবনু আলী আল-মাকনী বিআবী বকর আর-রাযী আল-জাছ্ছাছ, আহকামুল কুরআন (বৈরূত : দারু ইহইয়াইত তুরাছিল ‘আরাবী, ১৪০৫ হি.), ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৭৪।
[৯]. আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ আবূ বকর শামসুদ্দীন আল-কুরতুবী, আল-জামি‘ঊ লি আহকামিল কুরআন (কায়রো : দারুল কিতাবিল মিছরিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৩৮৪ হি./১৯৬৪ খ্রি.), ১২তম খণ্ড, পৃ. ২৩১।
[১০]. আল-জামি‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১২তম খণ্ড, পৃ. ২৩২।
[১১]. রিসালাতু ইলাল মারয়াতিল মুসলিমাত, পৃ. ১৯।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/১০৮৬, ১০৮৭, ১১৯৭, ১৮৬২, ১৯৯৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৮, ৮২৭; আবূ দাঊদ, হা/১৭২৭; তিরমিযী, হা/১১৬৯; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৯৮।
[১৩]. আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, বর্ণনাটি ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যা ছহী নয়, বরং যঈফ। দ্র. : সিলসিলা যঈফাহ, হা/৩৭০১; যঈফুল জামে‘, হা/৩২৬৮।
[১৪]. শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, হিজাবুল মারয়াতি ওয়া লিবাসুহা ফিছ ছালাত (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ৫ম সংস্করণ, ১৪০৩ হি.), পৃ. ১৯-২০।
[১৫]. আবুল কাসিম মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু জুযই আল-কালবী, আত-তাসহীলু লিঊলুমিত তানযীল (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪১৫ হি./১৯৯৫ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৯০ ।
[১৬]. আত-তাসহীলু লিঊলুমিত তানযীল, ২য় খণ্ড, পৃ. ৯০ ।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৭২; মিশকাত, হা/৩১০২।
[১৮]. মাজদুদ্দীন আবুস সা‘আদাত আল-মুবারক ইবনু মুহাম্মাদ আল-জাযরী আল-আছীর, জামিঊল উছূল ফী আহাদীছির রাসূল (মাকতাবাতুল হালওয়ানী, ১ম সংস্করণ, ১৩৯১ হি./১৯৭১ খ্রি.), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৬৫৬; শায়খ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ, ফাতাওয়া সাওয়াল ওয়া জাওয়া, ফৎওয়া নং-৬০১৪৪।
[১৯]. আল-হুসাইন ইবনু মাসঊদ আল-বাগাভী, শারহুস সুন্নাহ (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ২য় সংস্করণ, ১৪০৩ হি./১৯৮৩ খ্রি.), ৯ম খণ্ড, পৃ. ২৭, হা/২২৫২-এর আলোচনা দ্র. ।