প্রশ্নোত্তরে মুসলিম নারীদের ইসলাম শিক্ষা
আব্দুল গাফফার মাদানী*
(৪র্থ কিস্তি)
মহিলাদের লজ্জাস্থান সিক্ততা প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: মহিলার লজ্জাস্থান থেকে যে সিক্ততা নির্গত হয় সেটা পবিত্র, না-কি অপবিত্র?
উত্তর: এ বিষয়ে দলীলগুলো গভীর দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, ‘মহিলার লজ্জাস্থান থেকে যে সিক্ততা নির্গত হয় সেটা অপবিত্র’ এ পক্ষে কোন ছহীহ দলীল বর্ণিত হয়নি’।[১] দলীলগুলো নিম্নরূপ: আবদুর রহমান ইবনু ’আওফের উম্মু ওয়ালাদ হতে বর্ণিত আছে, তিনি (উম্মু ওয়ালাদ) বলেন,
قُلْتُ لِأُمِّ سَلَمَةَ إِنِّيْ امْرَأَةٌ أُطِيْلُ ذَيْلِيْ وَأَمْشِيْ فِي الْمَكَانِ الْقَذِرِ فَقَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُطَهِّرُهُ مَا بَعْدَهُ.
‘আমি উম্মু সালামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে বললাম, আমি আমার কাপড়ের আচল নিচের দিকে লম্বা করে দেই এবং ময়লা-আবর্জনার স্থান দিয়ে চলাচল করি (এর বিধান কী)? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, পরবর্তী পবিত্র জায়গার মাটি এটাকে পবিত্র করে দেয়’।[২] অন্যত্র আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُصَلِّيْ بِأَصْحَابِهِ إِذْ خَلَعَ نَعْلَيْهِ فَوَضَعَهُمَا عَنْ يَسَارِهِ فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ الْقَوْمُ أَلْقَوْا نِعَالَهُمْ فَلَمَّا قَضَى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ صَلَاتَهُ قَالَ مَا حَمَلَكُمْ عَلَى إِلْقَائِكُمْ نِعَالَكُمْ. قَالُوْا رَأَيْنَاكَ أَلْقَيْتَ نَعْلَيْكَ فَأَلْقَيْنَا نِعَالَنَا. فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ جِبْرِيْلَ ﷺ أَتَانِيْ فَأَخْبَرَنِيْ أَنَّ فِيْهِمَا قَذَرًا. وَقَالَ إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَلْيَنْظُرْ فَإِنْ رَأَى فِيْ نَعْلَيْهِ قَذَرًا أَوْ أَذًى فَلْيَمْسَحْهُ وَلْيُصَلِّ فِيْهِمَا.
‘একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ছাহাবীদের নিয়ে ছালাত আদায়কালে তাঁর জুতাজোড়া খুলে তাঁর বাম পাশে রেখে দিলেন। এ দৃশ্য দেখে লোকেরাও তাদের জুতা খুলে রাখল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছালাত শেষে বললেন, তোমরা তোমাদের জুতা খুললে কেন? তারা বলল, আপনাকে আপনার জুতাজোড়া খুলে রাখতে দেখে আমরাও আমাদের জুতা খুলে রেখেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, জিবরীল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমার কাছে এসে আমাকে জানালেন, আপনার জুতাজোড়ায় নাপাকি লেগে আছে। তিনি আরো বললেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন তার জুতাজোড়া দেখে নেয়। তাতে নাপাকি দেখতে পেলে যেন যমীনে তা ঘষে নিয়ে পরিধান করে ছালাত আদায় করে’।[৩] বানু আব্দুল আশহালের জনৈক মহিলা সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)!
إِنَّ لَنَا طَرِْيقًا إِلَى الْمَسْجِدِ مُنْتِنَةً فَكَيْفَ نَفْعَلُ إِذَا مُطِرْنَا قَالَ أَلَيْسَ بَعْدَهَا طَرِيْقٌ هِيَ أَطْيَبُ مِنْهَا . قَالَتْ، قُلْتُ، بَلَى. قَالَ فَهَذِهِ بِهَذِهِ.
‘আমাদের মসজিদে যাওয়ার রাস্তাটি আবর্জনাপূর্ণ। সুতরাং বৃষ্টি হলে আমরা কী করব? তিনি বললেন, এর পরের রাস্তাটা কি এর চাইতে ভাল নয়? আমি বললাম, হ্যাঁ, ভাল। তিনি বললেন, তাহলে এটা ওটার পরিপূরক। (অর্থাৎ এ রাস্তার ময়লা ঐ রাস্তা দূর করে দিবে’।[৪]
মহিলাদের বীর্য (মনীর) বিবরণ
প্রশ্ন: মহিলাদের বীর্য কীরূপ?
উত্তর: মহিলাদের বীর্য পাতলা হুলুদ বর্ণের। হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِنَّ مَاءَ الرَّجُلِ غَلِيْظٌ أَبْيَضُ وَمَاءَ الْمَرْأَةِ رَقِيْقٌ أَصْفَرُ ‘পুরুষের বীর্য গাঢ়, সাদা আর মহিলাদের বীর্য পাতলা, হলুদ’।[৫] ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মহিলাদের বীর্য পাতলা হুলুদ বর্ণের, কখনো কখনো কারোর বিশেষ শক্তির কারণে সাদা হয়ে থাকে, তার দু’টি বৈশিষ্ট্যের যে কোন একটির মাধ্যমে চেনা যাবে। যথা: ক- পুরুষের বীর্যের গন্ধের মতই তার গন্ধ হবে। খ- বীর্য নির্গত হওয়াতে তৃপ্তি অনুভব করবে এবং নির্গত হওয়ার সাথে সাথে তার চাহিদা শেষ হয়ে যাবে’।[৬]
মহিলাদের স্বপ্নদোষ সম্পর্কে
প্রশ্ন: কোন মহিলার স্বপ্নদোষ হলে তার জন্য কি গোসল করা ওয়াজিব?
উত্তর: কোন মহিলা যদি ঘুমে দেখে যে, সে সহবাস করতেছে, এমতাবস্থায় ঘুম থেকে সজাগ হয়ে তার কাপড়ে যদি বীর্য দেখে; তাহলে তার উপর গোসল করা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে যদি বীর্য দেখতে না পায়, তাহলে গোসল করা ওয়াজিব নয়। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَتْ جَاءَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ اللهَ لَا يَسْتَحِيْ مِنَ الْحَقِّ، فَهَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ غُسْلٌ إِذَا احْتَلَمَتْ فَقَالَ نَعَمْ إِذَا رَأَتِ الْمَاءَ.
উম্মু সালামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদিন উম্মু সুলাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আল্লাহ তো সত্য বলার ক্ষেত্রে লজ্জা করতে নির্দেশ দেন না। সুতরাং মেয়ে লোকের স্বপ্নদোষ হলে কি তার উপরও গোসল করা ফারয (ফরয)? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যদি সে পানি, বীর্য দেখতে পায়’।[৭] আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, উম্মু সুলাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেছেন যে,
أَنَّهَا سَأَلَتْ نَبِيَّ اللهِ ﷺ عَنِ الْمَرْأَةِ تَرَى فِيْ مَنَامِهَا مَا يَرَى الرَّجُلُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا رَأَتْ ذَلِكِ الْمَرْأَةُ فَلْتَغْتَسِلْ.
‘নিশ্চয় তিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে সেই মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, যে ঘুমে পুরুষ যা দেখে তাই দেখতে পায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, মেয়ে লোক যখন ঐরূপ দেখবে তখন সে গোসল করবে’।[৮]
দুই লিঙ্গের মিলনে গোসল প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: স্বামী-স্ত্রী সহবাস করার পর যদি বীর্য বের না হয়, তাহলে কি তাদের উপর গোসল করা যরূরী?
উত্তর: কোন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে উভয়ের উপর গোসল ফরয; চাই বীর্য বের হোক বা না হোক। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الْأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغَسْلُ ‘কোন ব্যক্তি স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সাথে সঙ্গত হলে, তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়’।[৯] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِيْ مُوسَى، قَالَ اخْتَلَفَ فِيْ ذَلِكَ رَهْطٌ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْأَنْصَارِ فَقَالَ الْأَنْصَارِيُّوْنَ لَا يَجِبُ الْغُسْلُ إِلَّا مِنَ الدَّفْقِ أَوْ مِنَ الْمَاءِ. وَقَالَ الْمُهَاجِرُوْنَ بَلْ إِذَا خَالَطَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ. قَالَ قَالَ أَبُوْ مُوْسَى فَأَنَا أَشْفِيْكُمْ مِنْ ذَلِكَ . فَقُمْتُ فَاسْتَأْذَنْتُ عَلَى عَائِشَةَ فَأُذِنَ لِيْ فَقُلْتُ لَهَا يَا أُمَّاهْ - أَوْ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِيْنَ - إِنِّيْ أُرِيْدُ أَنْ أَسْأَلَكِ عَنْ شَىْءٍ وَإِنِّيْ أَسْتَحْيِيْكِ . فَقَالَتْ لَا تَسْتَحْيِيْ أَنْ تَسْأَلَنِيْ عَمَّا كُنْتَ سَائِلًا عَنْهُ أُمَّكَ الَّتِيْ وَلَدَتْكَ فَإِنَّمَا أَنَا أُمُّكَ . قُلْتُ فَمَا يُوْجِبُ الْغُسْلَ قَالَتْ عَلَى الْخَبِيْرِ سَقَطْتَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الْأَرْبَعِ وَمَسَّ الْخِتَانُ الْخِتَانَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ.
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাজির ও আনছারদের একটি দল এ ব্যাপারে মতবিরোধ করল। আনছারগণ বলল, জোরে অথবা স্বাভাবিক গতিতে পানি (বীর্য) বের না হলে গোসল ফরয হয় না। আর মুহাজিরগণ বলল, স্ত্রীর সঙ্গে শুধু মিললেই গোসল ফরয (বীর্য বের হোক বা না হোক)। আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি এ ব্যাপারে তোমাদেরকে শান্ত করছি। এরপর আমি উঠে গিয়ে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর কাছে (প্রবেশের) অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। আমি তাকে বললাম, মা! অথবা (তিনি বলেছিলেন) হে মুমিনদের মা! আমি আপনার কাছে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে চাই কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করছি। তিনি বললেন, তুমি তোমার গর্ভধারিণী মাকে যে ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারতে সে ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করতে লজ্জাবোধ করো না। আমি তো তোমার মা। আমি বললাম, গোসল কিসে ফরয হয়? তিনি বললেন, জানা-কোন লোকের কাছেই তুমি প্রশ্ন করেছ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন পুরুষ স্ত্রীর চার হাত-পায়ের মাঝখানে বসবে এবং একের লজ্জাস্থান অপরের লজ্জাস্থানের সাথে লাগবে তখন গোসল ফরয হবে’।[১০]
প্রশ্ন: যদি পুরুষের লিঙ্গ স্ত্রী লিঙ্গের বহিরাভাগে স্পর্শ করে প্রবেশ না করে এবং বীর্য বের না হয়, তাহলে কি তাদেরকে গোসল করতে হবে?
উত্তর: ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি পুরুষের লিঙ্গ স্ত্রী লিঙ্গের বহিরাভাগে স্পর্শ করে প্রবেশ না করে এবং বীর্য বের না হয়, তাহলে তাদের উপর গোসল ফরয হবে না, এ বিষয়ে জমহূর আলেম ঐকমত্য পোষণ করেছেন’।[১১]
‘একজন মহিলাকে তার স্বামী সহবাসের জন্য আহ্বান করল কিন্তু সে পানি পেল না’ প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: একজন মহিলাকে তার স্বামী নিজ বিছানায় আহ্বান করল কিন্তু স্ত্রী তার সাথে সহবাস করতে অস্বীকার করল অপবিত্র থেকে গোসলের জন্য পানি না থাকার কারণে, এটা কি তার জন্য বৈধ?
উত্তর: কোন স্বামী যখন তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আহ্বান করবে তখন স্ত্রী নিজেকে স্বামীর থেকে দূরে রাখা বৈধ নয়, যদিও পানি না পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امرَأتَهُ إِلٰـى فرَاشِهِ فَلَمْ تَأتِهِ فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا المَلَائِكَةُ حَتّٰـى تُصْبحَ.
আবূ হুরাইরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে এবং সে না আসে, অতঃপর সে (স্বামী) তার প্রতি রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে ফিরিশতাগণ তাকে সকাল অবধি অভিসম্পাত করতে থাকেন।[১২] এমতাবস্থায় ঐ মহিলার জন্য আবশ্যক হলো তার স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া । আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا ‘পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও’ (সূরা আন-নিসা: ৪৩)। সুতরাং তার জন্য যেহেতু তায়াম্মুমের সুযোগ রয়েছে এ জন্য আবশ্যক হলো তার স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া। সালাফদের থেকেও এ ব্যাপারে বিভিন্ন উদ্ধৃতি পাওয়া যায়। যেমন:
‘আত্বা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যখন কোন মহিলা ঋতু (হায়েয) থেকে পবিত্র হল কিন্তু পানি পেল না তাহলে সে এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করে স্বামীর কাছে আসবে’। হাসান বাছরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি কোন মহিলা সফর অবস্থায় হায়েযগ্রস্ত হয় এরপর সে পবিত্র হওয়ার লক্ষণ বুঝতে পারে, তাহলে চাইলে সে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করতে পারে’। জাবের ইবনু জায়েদ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো এক ব্যক্তি সম্পর্কে, যে পানি থেকে অনেক দূরে রয়েছে কিন্তু তার সাথে তার পরিবার আছে। তখন তিনি বলেন, সে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে এবং তায়াম্মুম করবে’। ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কোন মহিলা তার স্বামীকে সঙ্গম করা থেকে বাধা দেয়া বৈধ নয়, বরং সে তার সাথে সহবাস করবে। যদি গোসলের সক্ষম হয়, তাহলে তা করবে অন্যথা তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে। আর যখন হায়েয থেকে পবিত্র হবে তখন কেবল গোসলের পরেই সঙ্গম করবে অন্যথা তায়াম্মুম করে স্বামীর সাথে সহবাস করবে। আর সঙ্গমকারী ছালাতের তায়াম্মুমের ন্যায় তায়াম্মুম করবে’।[১৩]
কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর লজ্জাস্থান ব্যতীত সহবাস প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর লজ্জাস্থান ব্যতীত অন্য কোথাও সহবাস করে অতঃপর তার বীর্যপাত হলে করণীয় কী?
উত্তর: যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর লজ্জাস্থান ব্যতীত অন্য কোথাও সহবাস করে এবং তাতে বীর্যপাত হয়, তাহলে তার উপর গোসল করা ওয়াজিব কিন্তু তার স্ত্রীর উপর তা ওয়াজিব নয়। তবে স্ত্রীর যদি মুযী বের হয়, তাহলে তার উপর ওযূ ওয়াজিব হবে। ইবরাহীম আন-নাখঈ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘তাকে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে, যে তার স্ত্রীর লজ্জাস্থান ব্যতীত সহবাস করেছে এবং তাতে তার বীর্যপাত হয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, ঐ সময় স্বামী গোসল করবে কিন্তু স্ত্রীর উপর ওয়াজিব নয়। তবে স্ত্রীর শরীরে কোন কিছু লাগলে তা ধুয়ে ফেলবে’। অনুরূপ হাসান আল-বাছরী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকেও ছহীহ সূত্র বর্ণিত হয়েছে যে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হল এমন ব্যক্তি সম্পর্কে, যে তার স্ত্রীর লজ্জাস্থান ব্যতীত সহবাস করেছে? তিনি বলেন, যদি তাতে স্ত্রীর বীর্যপাত হয়, তাহলে সে গোসল করবে অন্যথা সে ওযূ করবে এবং তার শরীরে যা কিছু লেগে আছে তা ধুয়ে ফেলবে’।[১৪]
গোসলের পর স্ত্রীর শরীরের সাথে শরীর লাগানো প্রসঙ্গে
প্রশ্ন: কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে গোসল করল কিন্তু তার স্ত্রী গোসল করেনি, এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি তার স্ত্রীর শরীরের সাথে শরীর লাগানো বা তার থেকে উষ্ণতা গ্রহণের বিধান কী?
উত্তর: স্ত্রীর শরীরের সাথে শরীর লাগাতে ঐ ব্যক্তির কোন পাপ হবে না। যদিও সে নিজে গোসল করেছে কিন্তু তার স্ত্রী ঐ সময় গোসল করেনি। অধিকাংশ আলেম এমনটাই অভিমত পেশ করেছেন। কিন্তু তার পরবর্তী ওযূর মাসআলায় আলিমগণ মতানৈক্য করেছেন যে, তার উপর ওযু করা আবশ্যক কিনা? এর উপর ভিত্তি করে আরো একটি মাসালার ব্যাপারে মতভেদ করেছেন তা হল: মহিলাকে স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হবে কি-না? ইতিপূর্বে একটি মাসআলা আমরা স্পষ্ট করেছি যে, মহিলাকে স্পর্শ করলে (সঙ্গম ব্যতীত) ওযূ আবশ্যক হয় না। সুতরাং কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর শরীরের সাথে শরীর লাগালে ওযূ আবশ্যক হবে না। সাঈদ ইবনু মুসাইযয়্যিব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্ত্রীর শরীরের সাথে শরীর লাগলে ওযূ নষ্ট হয় না (আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক জ্ঞাত)’।[১৫]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* শিক্ষক, দারুল হুদা ইসলামী কমপ্লেক্স, বাঘা, রাজশাহী।
[১]. জামিঊ আহকামিন নিসা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৯।
[২]. তিরমিযী, হা/১৪৩; আবূ দাঊদ, হা/৩৮৩; ইবনু মাজাহ, হা/৫৩১, সনদ ছহীহ।
[৩]. আবূ দাঊদ, হা/৬৫০, সনদ ছহীহ।
[৪]. আবূ দাঊদ, হা/৩৮৪; ইবনু মাজাহ, হা/৫৩৩, সনদ ছহীহ।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩১১।
[৬]. আল মাজমূ‘, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৪১।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১২১।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩১১।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯১।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩৪৯।
[১১]. আল-মাজমূঊ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫০।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/৫১৯৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৬; আবূ দাঊদ, হা/২১৪১।
[১৩]. জামিঊ আহকামিন নিসা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩১-৩২।
[১৪]. জামিঊ আহকামিন নিসা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩১।
[১৫]. জামিঊ আহকামিন নিসা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৩৩।
প্রসঙ্গসমূহ »:
নারীমঞ্চ