ইসলামিক প্যারেন্টিং
তিনা খান*
(৩য় কিস্তি)
খেলাচ্ছলে শিক্ষাদান
খেলাচ্ছলে শিক্ষা আদর্শ প্যারেন্টিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামের শিক্ষাটা যতটা না শাব্দিক তার চেয়েও বেশি হলো হার্দিক। বাহ্যিক কাজ তো আমরা করিই। কিন্তু পেছনে একটা দর্শন বা চিন্তা ছেলেবেলাতেই যোগ করে দিতে পারলে কচিমনে শিক্ষাটা আরও পোক্ত হয়ে বসে যাবে। আসুন! প্যারেন্টিং এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করি। যেমন:
১- মা ছেলেকে স্কুল বা মাদরাসায় যাওয়ার আগে চুল আঁচড়ে দেয়। তখন শুধু এটুকু বলা যে,
-বাবা! নবী (ﷺ) বলেছেন, مَنْ كَانَ لَهُ شَعْرٌ فَلْيُكْرِمْهُ ‘যার চুল আছে সে যেন তার সম্মান (যত্ন) করে’।[১]
-ছোট্ট একটা কথা, সাথে হাদীছ শেখা হলো। সুন্নাত আদায় হলো। ছেলের সাজুগুজু হলো আবার মানসও গঠন হলো আলহামদুলিল্লাহ।
২- বাবার সাথে জুমু‘আহ পড়তে বের হওয়ার আগে, মা ছেলেকে প্রস্তুত করে দিলেন। বাবা আতর মেখেছেন। সোনামণিকেও একটু সুবাস মাখানো যেতে পারে। কাজটা হাতের হলেও, মুখটা বন্ধ না রেখে বলতে পারি,
-‘বাবা! নবী কী বলেছেন জানো’? ‘কী বলেছেন আম্মু’? তিনি বলেছেন, حُبِّبَ إِلَىَّ مِنَ الدُّنْيَا النِّسَاءُ وَالطِّيْبُ وَجُعِلَ قُرَّةُ عَيْنِى فِى الصَّلَاةِ ‘তোমাদের দুনিয়া থেকে আমার কাছে প্রিয় করা হয়েছে তিনটা বস্তু। যথা: সুগন্ধি, নারী আর ছালাত হলো আমার চক্ষু শীতলকারী’।[২]
৩- বাচ্চাটা মাদরাসা বা স্কুলে যাওয়ার আগে, তাকে এগিয়ে দিতে এসে, একটা হাদীছ স্মরণ করিয়ে দেয়া যেতে পারে।
-আব্বু বলো তো! ইলম শিখতে বের হওয়ার ব্যাপারে নবী (ﷺ) কী বলেছেন?
-তিনি বলেছেন, مَنْ سَلَكَ طَرِيْقًا يَلْتَمِسُ فِيْهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيْقًا إِلَى الْجَنَّةِ ‘যে ইলম শেখার জন্য পথ চলবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন’।[৩]
-একদম ঠিক বলেছ। সোনামণি এবার রওনা হয়ে যাও।
৪- বিকালে স্কুল-মাদরাসা থেকে ফিরেই দু’ভাইবোনে মিলে খেলায় মগ্ন হয়েছে। চলছে হই-হুল্লোড়। হাসাহাসি। একফাঁকে বলে দেয়া যেতে পারে:
-তোমাদের হাসির কথা কিন্তু নবী (ﷺ) বলে গেছেন!
-তাই? তিনি কী বলেছেন আম্মু?
-তিনি বলেছেন, تَبَسُّمُكَ فِىْ وَجْهِ أَخِيْكَ لَكَ صَدَقَةٌ ‘তোমার ভাইয়ের সামনে হাসিমুখে থাকাও ছাদাক্বাহস্বরূপ’।[৪]
৫- ছেলেকে আদর করলে, নতুন কিছু বানিয়ে খাওয়ালে, সে খুশি হয়ে বলে:
-আম্মু! তুমি খুউব ভালো!
-তাই! (তখনই বলে ফেলেন) নবী (ﷺ) কী বলেছেন জানো বাবা!
-কী?
-তিনি বলেছেন, الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ ‘উত্তম কথাও ছাদাক্বাহস্বরূপ’।[৫]
৬- খেতে বসেছে। সবাই। ভাইয়া পরে এসে বসেছে। হাঁড়িতে ভাত বাড়ন্ত। টান পড়বে। নিজের প্লেট থেকে কিছু ভাত তুলে দিতে হবে:
-আব্বু! তোমার বেশি হলে ভাইয়াকে কিছু ভাত দিয়ে দাও! নবী (ﷺ) বলেছেন, তোমার প্লেট থেকে ভাইয়াকে কিছু দেয়া ছাদাক্বাহস্বরূপ।[৬] তুমি অনেক ছাওয়াব পাবে। আল্লাহ খুশি হবেন।
৭- ঈদ উপলক্ষে সবাই একসাথ হয়েছে। বাড়িভর্তি লোকজন। গিজগিজ করছে। ছোটবড় সকলেই। একফাঁকে ডেকে নিয়ে বলে দেয়া যায় যে,
-আব্বু! একটু সতর্ক হয়ে থাকবে। তোমার দ্বারা যেন কেউ কষ্ট না পায়। নবী (ﷺ) বলেছেন: مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيْرَنَا وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيْرِنَا فَلَيْسَ مِنَّا ‘যে ছোটদের স্নেহ করে না আর বড়দের শ্রদ্ধা করে না, সে আমাদের কেউ নয়’।[৭]
সুধী অভিভাবক! এখানে তো মাত্র কয়েকটা হাদীছ উল্লেখ করা হলো। এমন আরও অসংখ্য হাদীছ আছে। বিভিন্ন উপলক্ষে আমরা সেগুলো ছোটদের শুনিয়ে দিতে পারি। স্মরণ করিয়ে দিতে পারি। বার বার হাজিরা নিতে পারি। একটু সচেতন থাকলে, আলাদা করে পড়াতে হয়? এমনি এমনিই তো অনেক কুরআন-হাদীছ-কবিতা-আদব-কায়দা শেখা হয়ে যায়!
শিশুর মুখে সর্বপ্রথম যে খাদ্য দেবেন
হিজরতের পর মদীনাতেও ছাহাবায়ে কিরামগণ তাদের সদ্যোজাত শিশুকে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর কাছে আনতেন। রাসূল (ﷺ) খেজুর চিবিয়ে তার কিছু অংশ শিশুর মুখে দিতেন। শিশুর পক্ষে তো আর খেজুর খাওয়া সম্ভব নয়, যিনি চিবিয়ে দিলেন তার মুখের লালা এবং খেজুরের কিছু রস শিশুর জিহ্বা স্পর্শ করল এবং শিশু তা গলাধঃকরণও করল। এ সম্পর্কিত হাদীছগুলো নিম্নরূপ:
১- আবু মূসা আল-আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
وُلِدَ لِىْ غُلَامٌ فَأَتَيْتُ بِهِ النَّبِىَّ ﷺ فَسَمَّاهُ إِبْرَاهِيْمَ فَحَنَّكَهُ بِتَمْرَةٍ وَدَعَا لَهُ بِالْبَرَكَةِ وَدَفَعَهُ إِلَىَّ وَكَانَ أَكْبَرَ وَلَدِ أَبِىْ مُوْسَى .
‘আমার এক ছেলে ভূমিষ্ঠ হলে আমি তাকে নিয়ে নবী (ﷺ)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি তার নামকরণ করলেন ‘ইবরাহীম’ এবং একটি খোরমা চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। এরপর তার জন্য বরকতের দু‘আ করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। এটি ছিল আবূ মূসার বড় সন্তান’।[৮]
২- আসমা বিনতে আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, মক্কায় অবস্থানকালেই আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর আমার গর্ভে এসেছিল। গর্ভকাল পূর্ণ হবার সময় নিকটবর্তী হলে আমি হিজরত করে মদীনায় দিকে রওনা হই এবং কু‘বা পল্লীতে অবতরণ করি। সেখানে অবস্থানকালেই আব্দুল্লাহ ভূমিষ্ঠ হলে আমি তাকে রাসূল (ﷺ)-এর কাছে নিয়ে তার কোলে উঠিয়ে দিই । তিনি তখন খেজুর চেয়ে পাঠান। খেজুর এনে দেয়া হলে তিনি তা চিবিয়ে তার মুখে দেন এবং তার পেটে সর্বপ্রথম যে জিনিস প্রবেশ করেছিল তা হলো, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর মুখের পবিত্র লালা। এরপর তিনি চিবানো খেজুর মুখে দিয়ে দু‘আ করে মুবারকবাদ দেন। মদীনায় মুহাজিরদের সন্তানদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম জন্মগ্রহণ করেছিলেন, আর এ কারণে মুসলিমগণ অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করেছিল। কারণ মুসলিমদের সম্পর্কে এ কথা প্রচার করা হয়েছিল যে, তোমাদের উপর ইহুদীরা জাদু করেছে, ফলে তোমাদের আর কো সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করবে না’।[৯]
২- আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আবূ তালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর এক শিশু পুত্রসন্তান (আবূ উমার) অসুস্থ ছিল এবং তিনি (কোন প্রয়োজনীয় কাজে বাড়ির) বাইরে গেলেন। কিছুক্ষণ পরেই সে পুত্র সন্তানটি ইনতেকাল করল। সন্তানের মা উম্মে সুলাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) নিজের মৃত সন্তানকে গোসল করালেন এবং কাপড়ে জড়িয়ে ঘরের এক কোণে শুইয়ে দিলেন তারপর রাতের রান্না শেষ করলেন, ইতোমধ্যে তার স্বামী আবূ তালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বাড়িতে ফিরে এসে জানতে চাইলেন, তার সন্তান এখন কেমন আছে। উম্মে সুলাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জানালেন, সে পূর্বে যেমন ছিল তার তুলনায় এখন অনেক বেশি শান্তি ও স্বস্তিতে রয়েছে। এরপর তিনি রাতের খাবার এনে স্বামীর সামনে দিলেন এবং খাওয়া শেষ করে তারা বিছানায় গেলেন। এ সময় স্বামী তার সাথে মিলিত হলো। পরবর্তী সময়ে তিনি তার স্বামীকে জানালেন যে, অসুস্থ সন্তানটি ইনতেকাল করেছে। অতএব তার দাফনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেদিন ফজরের পর আবূ তালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বিষয়টি নবী করীম (ﷺ)-কে জানালেন। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তার কাছে জানতে চাইলেন, তিনি স্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন কিনা। আবূ তালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ইতিবাচক জবাব দিলে আল্লাহর রাসূল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাদের স্বামী-স্ত্রীর জন্য দু‘আ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! এ দু’জনকে আপনি বরকত দান করুন’। এরপর যথাসময়ে উম্মে সুলাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) আরেকটি পুত্র সন্তান জন্ম দিলে তার স্বামী তাকে জানাল, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কাছে না নেয়া পর্যন্ত সদ্যোজাত শিশুকে হেফাযত কর। এরপর তিনি শিশুকে নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে নিয়ে যাবার সময় তার স্ত্রী তাকে কিছু খেজুর দিলেন। তিনি শিশু সন্তানকে নিয়ে আল্লাহর নবী (ﷺ)-এর কোলে উঠিয়ে দিলেন। রাসূল (ﷺ) শিশুকে কোলে নিয়ে জানতে চাইলেন, এর সাথে কি আরও কিছু আছে? তাকে জানানো হলো, কয়েকটি খেজুর রয়েছে। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সেগুলো নিয়ে চিবিয়ে নিজের মুখ থেকে বের করে শিশুর মুখে দিলেন এবং তার নামকরণ করলেন ‘আব্দুল্লাহ’। সুফিয়ান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, একজন আনছারী বলেছেন, আমি উম্মে সুলাইমের নয়জন সন্তানকে দেখেছি, যারা সকলেই কুরআন অধ্যয়ন করেছে।[১০]
সুধী অভিভাবক! যে আল্লাহভীরু মানুষের উচ্ছিষ্ট সর্বপ্রথমে শিশুর উদরে প্রবেশ করল, পিতা-মাতা যদি শিশুকে সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেন তাহলে আল্লাহর রহমতে সেই শিশুটি ঐ ব্যক্তির অনুরূপ আল্লাহভীরু হতে পারে। উপযুক্ত বয়সে সে সন্তানের স্বভাব-চরিত্রে আল্লাহভীরুতার বৈশিষ্ট্য প্রস্ফুটিত হতে পারে এবং সব থেকে প্রধান বিষয়টি হচ্ছে, আদালতে আখিরাতে পিতা-মাতা এ কথা তো বলতে পারবেন, আমাদের সন্তানকে আমরা পরহেযগার-মুত্তাকি হিসাবে গড়ার চেষ্টা করেছি।
শেষের ঘটনাটির হাদীছটি তালহা আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এবং তার স্ত্রী উম্মে সুলাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সম্পর্কিত। আল্লাহর নবী (ﷺ)-এর মহিলা ছাহাবী ঐ নারীর জ্ঞান, বিবেক-বুদ্ধি ও ধৈর্যের প্রতি দৃষ্টি দিন। অসুস্থ শিশু সন্তান ইনতেকাল করেছে, কিন্তু গর্ভধারিণী মা হয়েও তিনি প্রবল ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন অর্থাৎ কুরআনের ভাষায় ‘ছাবরুন জামীল’ বা সর্বোত্তম ধৈর্য অবলম্বন করেছেন। জাহিলদের অনুরূপ আর্তচিৎকার করেননি। স্বামী বাইরে থেকে পরিশ্রান্ত হয়ে এসে অসুস্থ সন্তানের সংবাদ জানতে চেয়েছেন। তিনি স্বামীকে জানিয়েছেন, পূর্বের তুলনায় তাদের সন্তান বর্তমানে অনেক ভালো রয়েছে। অর্থাৎ ক্লান্ত-শ্রান্ত স্বামীকে তিনি মানসিক আঘাত দিতে চাননি এবং শোকাহত হয়ে তিনি রাতের আহার থেকে বিরত থাকুন এটাও তিনি চাননি। তার কথা দ্বারা তিনি তার স্বামীকে বুঝিয়েছেন, ইতঃপূর্বে তাদের সন্তান রোগ যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিল, বর্তমানে সেই সন্তান সকল কষ্টের ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে এবং মহান আল্লাহর রহমতে জান্নাতের অধিবাসী হয়েছে। সন্তান মহান আল্লাহর দান। যাকে ইচ্ছে তিনি তাকে দান করেন আবার দান করা থেকে বিরতও থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা যাকে যে পরিমাণ জীবনকাল দান করেন, তা পূর্ণ হলেই তার মৃত্যু ঘটান। সুতরাং কারো মৃত্যু হলে আপনজন যারা রয়েছে তারা শোকাহত হবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু অধৈর্য হয়ে জাহিলদের অনুরূপ বুক চাপড়িয়ে আর্তনাদ করা মহান আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্টি প্রকাশ ও অভিযোগ করার শামিল ।
সামর্থ্য অনুযায়ী আহার করান
সালাফগণ সন্তান ভূমিষ্ঠের পর সামর্থ্য অনুসারে লোকজনদের দাওয়াত দিয়ে আহার করাতেন। এ হাদীছটির প্রতি লক্ষ্য করা যেতে পারে, মু‘আবিয়া ইবনু র্কুরাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
لَمَّا وُلِدَ لِي إِيَاسٌ دَعَوْتُ نَفَرًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَطْعَمْتُهُمْ، فَدَعَوْا، فَقُلْتُ: إِنَّكُمْ قَدْ دَعَوْتُمْ فَبَارَكَ اللَّهُ لَكُمْ فِيمَا دَعَوْتُمْ، وَإِنِّي إِنْ أَدْعُو بِدُعَاءٍ فَأَمِّنُوا، قَالَ: فَدَعَوْتُ لَهُ بِدُعَاءٍ كَثِيرٍ فِي دِينِهِ وَعَقْلِهِ وَكَذَا، قَالَ: فَإِنِّي لَأَتَعَرَّفُ فِيهِ دُعَاءَ يَوْمِئِذٍ
‘আমার সন্তান ইয়াস ভূমিষ্ঠ হলে আমি আল্লাহর নবী (ﷺ)-এর একদল ছাহাবীকে দাওয়াত দিয়ে আহার করাই। তারা দু‘আ করলেন। তখন আমি বললাম, আপনারা দু‘আ করেছেন। মহান আল্লাহ আপনাদের দু‘আর উসিলায় আপনাদের বরকত দান করুন। আমিও এখন কিছু দু‘আ করব এবং তা মঞ্জুরের জন্য আপনারা আবেদন করবেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তার জ্ঞান-যোগ্যতা ও আল্লাহভীরুতা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক দু‘আ করলাম এবং আমি সেদিনের দু‘আর প্রভাবও লক্ষ্য করেছি।[১১]
সুস্থ সন্তান আল্লাহর নে‘মত
মাতৃগর্ভে সন্তান এলে অনেকেই দুশ্চিন্তা করতে থাকে, সন্তান পুত্র হবে, না-কি কন্যা হবে। বর্তমানে তা জানার জন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। সন্তান পুত্র হবে, না-কি কন্যা হবে সেটি মুখ্য বিষয় নয়, মুখ্য বিষয় হচ্ছে সন্তান পূর্ণাঙ্গ মানবশিশু হিসাবে পৃথিবীতে আগমন করছে কি-না, সন্তান দৈহিক বা মানসিক কোন ত্রুটিসহ আগমন করছে কি-না। নিম্নের হাদীছটির প্রতি লক্ষ্য করুন, কাছীর ইবনু উবাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
كَانَتْ عَائِشَةُ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا إِذَا وُلِدَ فِيْهِمْ مَوْلُوْدٌ يَعْنِيْ فِيْ أَهْلِهَا لَا تَسْأَلُ: غُلَامًا وَلَا جَارِيَةً، تَقُوْلُ: خُلِقَ سَوِيًّا؟ فَإِذَا قِيْلَ: نَعَمْ، قَالَتِ: الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ.
‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর পরিবারে কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তিনি জানতে চাইতেন না যে, সন্তান পুত্র না-কি কন্যা। তিনি জানতে চাইতেন, সন্তান সুস্থ সবল সুঠামদেহী হয়েছে তো? জবাব যদি ইতিবাচক হতো তখন তিনি বলতেন, সকল প্রশংসা সৃষ্টি জগৎসমূহের রব মহান আল্লাহর’।[১২]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* মাদারটেক, ঢাকা।
[১]. আবূ দাঊদ, হা/৪১৬৩; মিশকাত, হা/৪৪৫০; সনদ হাসান ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৫০০।
[২]. নাসাঈ, হা/৩৯৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩১৫, সনদ হাসান ছহীহ।
[৩]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৪১; তিরমিযী, হা/২৬৪৬; মিশকাত, হা/২১২, সনদ ছহীহ।
[৪]. তিরমিযী, হা/১৯৫৬; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/২৯০৮।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮১৬৮।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০২১; ছহীহ মুসলিম, হা/১০০৫।
[৭]. আবূ দাঊদ, হা/৪৯৪৩; মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাইন লিল হাকিম, হা/৭৩৫৩, সনদ ছহীহ।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৪৬৭, ৬১৯৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৪৫।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৪৬৯।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩০১, ৫৪৭০।
[১১]. ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১২৫৫, সনদ ছহীহ।
[১২]. ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/১২৫৬, সনদ হাসান।
প্রসঙ্গসমূহ »:
নারীমঞ্চ