বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন
উত্তর : পিতা-মাতা সন্তানের উপর বিনা কারণে যুলম করবেন এটা মোটেও উচিত নয়; বরং তারা সর্বদা সন্তানের প্রতি ইহসান করবেন এবং কল্যাণের দু‘আ করবেন। তারা যদি কোন কারণ ছাড়াই সন্তানের উপর যুলম করেন বা রাগান্বিত হোন, সেক্ষেত্রে সন্তানের কোন গুনাহ হবে না এবং কোন ক্ষতিও হবে না ইনশাআল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

‏مَنْ أَعَانَ عَلَى خُصُوْمَةٍ بِظُلْمٍ أَوْ يُعِيْنُ عَلَى ظُلْمٍ لَمْ يَزَلْ فِيْ سَخَطِ اللهِ حَتَّى يَنْزِعَ‏.‏

‘যে ব্যক্তি কোন অন্যায়মূলক কাজে সহযোগিতা করে অথবা অত্যাচারে সহায়তা করে, সে তা থেকে নিবৃত্ত না হওয়া পর্যন্ত সর্বদাই আল্লাহর ক্রোধে ও অসন্তোষে নিমজ্জিত থাকে’ (ইবনু মাজাহ, হা/২৩২০; আবূ দাঊদ, হা/৩৫৯৭, সনদ ছহীহ)।

অকারণে সন্তানের বিরুদ্ধে বদ-দু‘আ করাও জায়েয নয়। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

لَا تَدْعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ وَلَا تَدْعُوْا عَلَى أَوْلَادِكُمْ وَلَا تَدْعُوْا عَلَى أَمْوَالِكُمْ لَا تُوَافِقُوْا مِنَ اللهِ سَاعَةً يُسْأَلُ فِيْهَا عَطَاءٌ فَيَسْتَجِيْبُ لَكُمْ

‘তোমরা তোমাদের উপর এবং তোমাদের সন্তানদের উপর এবং নিজের ধন-সম্পদের উপর বদ-দু‘আ কর না। এমন যেন না হয় যে, তোমরা এমন মুহূর্তে বদ-দু‘আ করছ যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া হলে, তা কবুল হয়ে যায়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৩০০৯, ৭৪০৫; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-২৯৬০৫৩)। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, এটি আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি রাগান্বিত ও ক্রোধান্বিত অবস্থায় সন্তানদের উপর পিতা-মাতার বদ-দু‘আ কবুল করেন না। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যখন কোন ব্যক্তি ত্রুদ্ধ ও রাগান্বিত অবস্থায় নিজেদের উপর অথবা সন্তানদের উপর অথবা ধন-সম্পদের উপর বদ-দু‘আ করে, তখন তিনি তা কবুল করেন না (তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/৫৫৪ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-৯০১৭৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَا يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيْعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ.‏

‘বান্দার দু‘আ সর্বদা গৃহীত হয়, কিন্তু যদি সে অন্যায় ও অবৈধ উদ্দেশ্যে অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য অথবা দু‘আতে তাড়াহুড়া করে, তখন তার দু‘আ গৃহীত হয় না (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৩৫; ছহীহুল জামি‘, হা/৭৭০৫)।

তাছাড়া এই কারণে স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা উচিত হবে না। স্বামীর উচিত সাধ্যানুযায়ী স্ত্রীর হক্ব আদায় করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সৎভাবে জীবন-যাপন কর, তোমরা যদি তাদেরকে (স্ত্রীদেরকে) ঘৃণা কর, তাহলে এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ যার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকে ঘৃণা করছ’ (সূরা আন-নিসা : ১৯; আল-মুনতাক্বা ইবনে ফাওযান, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১১৭)। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে উৎকৃষ্ট পন্থায় বার্তালাপ করা এবং উত্তম আচরণ প্রর্দশন করা স্বামীর উপর অপরিহার্য।

আল্লাহ বলেছেন, ‘পুরুষদের যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনি নারীদের রয়েছে পুরুষদের উপর ন্যায়সঙ্গত অধিকার’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২২৮)। শরী‘আতের দৃষ্টিতে স্বামীর উপর স্ত্রীর কিছু ন্যায্য অধিকার রয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا‏ ‘তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৯৭৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَإِنَّ لِوَلَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا ‘তোমার সন্তানদেরও তোমার উপর অধিকার আছে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১১৫৯)। স্বামী তার সাধ্যানুযায়ী স্ত্রীর ভরণপোষণ, অন্নবস্ত্র ও অন্যান্য সব চাহিদা পূরণ করবেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৮০; আবূ দাঊদ, হা/২২৮৪)। স্বামী তার সাধ্যানুযায়ী স্ত্রীর জন্য বসবাসযোগ্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করবেন (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ৬)।

অন্যদিকে সন্তানের উপর আবশ্যক হল, পিতা-মাতার অধিকার যথাযথভাবে আদায় করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَوَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ اِحۡسٰنًا ‘আর আমরা মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি’ (সূরা আল-আহক্বাফ : ১৫)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে (বিরক্তিসূচক শব্দ) ‘উহ’ বল না এবং তাদেরকে ভর্ৎসনা কর না, বরং তাদের সাথে সম্মানসূচক নম্র কথা বল। আর মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, ‘হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ২৩-২৪; (ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৫)।

অতএব একজন আদর্শ মুসলিমের জীবনে তার পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও ভাই-বোনদের অধিকার রয়েছে এবং প্রত্যেক অধিকারীর অধিকার স্ব স্ব স্থানে নির্ধারিত। তবে একজনের অধিকার আদায় করতে গিয়ে অপরজনকে বঞ্চিত করা যাবে না।


প্রশ্নকারী : নাহিদা সুলতানা, চট্টগ্রাম।





প্রশ্ন (১৮) : স্টুডিও-এর ব্যবসা যেমন ছবি তোলা, ছবি প্রিন্ট করা প্রভৃতির ব্যবসা করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : মসজিদের নাম পাগলা মসজিদ বলে পরিচিত। হাজার হাজার মানুষ মনের বাসনা পূরণের জন্য সেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা দান করে, মানত করে। প্রতিমাসে কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এমন মসজিদে দান করা যাবে কি? আর এভাবে ‘পাগলা মসজিদ’ নামে নামকরণ করা কি শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : বয়স কমিয়ে দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে। শরী‘আতের দৃষ্টিতে বিষয়টি হারাম জানার পরে জন্ম নিবন্ধন ও অন্যান্য সার্টিফিকেট পুনরায় ঠিক করতে অনেক সময় ও অর্থ খরচ হবে এবং অনেক হয়রানির শিকার হতে হবে। এক্ষেত্রে করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : ইয়া’জূজ-মা’জূজ মানুষ জাতি। তারা কি সবাই পথভ্রষ্ট? ইয়া’জূজ-মা’জূজ কি কোন নবীর অনুসরণ করতে পেরেছে? তাদেরকে কেন সুযোগ দেয়া হল না? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৩) : আহলে বাইত বলতে কাদেরকে বুঝানো হয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : তাফসীর ইবনু আব্বাস কি ছহীহ সনদে প্রমাণিত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১): সারা বছর যোহরের ছালাতের সময় হয় ১১:৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১২:১৮ মিনিটের মধ্যে। কিন্তু অধিকাংশ আহলেহাদীছ মসজিদে ১২:৫০ বা ১টায় আযান দিয়ে ছালাত আদায় করা হয়। প্রশ্ন হল- এই সময়ে ছালাত আদায় করলে আওয়াল ওয়াক্ত থাকবে কি বা আওয়াল ওয়াক্তের ফযীলত পাওয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : পাত্রী দ্বীনদার কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেল পাত্রী ফেসবুক মেসেঞ্জারে অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলে। জানা সত্ত্বেও ওই পাত্রীকে বিয়ে করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : যক্ষা রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি ছিয়াম রাখতে পারবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : বর্গা চাষের ফসলের উপর ওশরের বিধান কেমন হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৭) : সাত আসমানে সাতজন মুহাম্মাদ (ﷺ) আছেন। এই দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩২) : তাবলীগ জামা‘আতের ‘ফাযায়েলে আমল’ বইয়ে বর্ণিত আছে যে, সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব (রাহিমাহুল্লাহ) পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত এশা ও ফজরের ছালাত একই ওযূ দ্বারা পড়েছেন (ঐ, (বাংলা), পৃ. ১৬০; (উর্দূ), পৃ. ৬৮)। উক্ত বিষয়টি কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ