সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৩:৩৫ অপরাহ্ন
উত্তর : কুরআনের কিছু আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কিছু অপরাধী চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে বসবাস করবে। যেমন কাফির, মুশরিক ও মুনাফিক্ব। তাই কুফরী এমন এক অপরাধ, যার জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নাম ভোগ করতে হবে। কুফরী মানে অস্বীকার, আল্লাহকে অবিশ্বাস অথবা আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কিত কিছু বিষয়কে অবিশ্বাস করা। কপটতা বা মুনাফিক্বীর কুফরী, সন্দেহ পোষণের কুফরী, কিছুতে বিশ্বাস ও কিছুতে অবিশ্বাসের কুফরী, আদেশ-নিষেধ অমান্য করার কুফরী ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন, ‘যারা অবিশ্বাস করে কিতাবকে এবং যা সহ আমার রাসূলগণকে আমি পাঠিয়েছি তাকে; তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। যখন তাদের গলায় বেড়ী ও শৃঙ্খল থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে, তারপর তাদেরকে পোড়ানো হবে আগুনে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা শরীক করতে কোথায় তারা? তারা বলবে, তারা তো আমাদের কাছ থেকে উধাও হয়েছে, বরং আগে আমরা কিছুকে ডাকিনি। এভাবে আল্লাহ কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করেন। এটা এ জন্য যে, তোমরা ভূপৃষ্ঠে অযথা উল্লাস করতে এবং এ জন্য যে, তোমরা অহংকার করতে। তোমরা জাহান্নামের বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, তাতে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য, অতএব কতই না নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল!’ (সূরা আল-মুমিন বা গাফির: ৭০-৭৬, ১১-১২, ৫০)। এর ধরনের আরো আয়াত আছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে ও যুলুম করেছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না, জাহান্নামের পথ ছাড়া, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে এবং এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ’ (সূরা আন-নিসা: ১৬৮-১৬৯)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘এরাই তারা, যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করেছে, আর এরাই তারা, যাদের গলদেশে থাকবে শিকল। আর তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে’ (সূরা আর-রা‘দ: ৫)।

মুনাফিক্বদের জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নাম, অপরাধের দিক থেকে কুফরীর চাইতে মুনাফিক্বী অধিকতর সাংঘাতিক। তাই তার শাস্তিও অধিক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ মুনাফিক্ব পুরুষ, মুনাফিক্ব নারী ও কাফিরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, এটা তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি’ (সূরা আত-তাওবাহ: ৬৮)। অনুরূপভাবে স্বৈরাচারী অহংকারীদের জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নাম। এই অহংকারের ফলে মানুষ সত্য প্রত্যাখ্যান করে। ঈমান আনতে নাক সিঁটকায়, মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করে। অহংকারী জাহান্নামীদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করেছে এবং অহংকারে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারাই জাহান্নামী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ৩৬; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২১৩৬৫)।

‘নিশ্চিতরূপে জান্নাতীরা জান্নাতে চিরস্থায়ী হবে, সেখানে না থাকবে মৃত্যুর ভয় আর না থাকবে বহিষ্কৃত হওয়ার ভয়’ (সূরা আল-হিজর: ৪৫-৪৮; সূরা আদ-দুখান: ৫১-৫৭)। ঠিক তেমনি কিছু জাহান্নামী জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে। ‌তারা সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তারা আগুন থেকে বের হতে চাইবে, কিন্তু তারা তা থেকে বের হতেই পারবে না এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি’ (সূরা আল-বাক্বারা: ১৬৭; সূরা আল-মায়িদাহ: ৩৭; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাত ইবনে বায, ৪/৩৬১ পৃ.)।

উল্লেখ্য যে, কাফির, মুশরিক ও মুনাফিক্বরা ছাড়া কাবীরা গুনাহের জন্য কোন মুমিন জাহান্নামে চিরস্থায়ী বাসিন্দা হবে না। যার বুকে সরিষার দানা পরিমান ঈমান থাকবে, সে একদিন না একদিন জান্নাতে প্রবেশ করবে। যদিও আল্লাহ্ তা‘আলা সূদখোর এবং ইচ্ছাকৃতভাবে মুমিন ব্যক্তিকে হত্যাকারীর জন্য চিরস্থায়ী শাস্তির কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন’ (সূরা আন-নিসা: ৯৩)।

উপরিউক্ত আয়াতে শাস্তি হিসাবে যে চিরস্থায়ী জাহান্নামের কথা বর্ণিত হয়েছে, তার অর্থ হল, তাতে সুদীর্ঘ কাল অবস্থান করতে হবে। কারণ, কাফির ও মুশরিকরাই কেবল জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে। তাছাড়া সূদ ও হত্যার সম্পর্ক যদিও বান্দার অধিকারের সাথে, যা থেকে তাওবার মাধ্যমেও দায়িত্বমুক্ত হওয়া যায় না, তবুও আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় কৃপা ও অনুগ্রহে তার এমনভাবে নিষ্পত্তি করতে পারেন যে, নিহত ব্যক্তিও প্রতিদান পেয়ে যাবে এবং সূদখোর ও হত্যাকারীরও মাফ হয়ে যাবে (ইবনু কাছীর ও ফাৎহুল ক্বাদীর দ্রষ্টব্য)। প্রত্যেক মুসলিম যারা কাবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়েছে, তারা তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করার পর মুক্তি পাবে। অর্থাৎ কোন মুসলিমের বুকে যদি তাওহীদ থাকে, তাহলে সে একদিন না একদিন মুক্তি পাবে, যদিও শাস্তি ভোগার পরে। যেমন আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেন, شَفَاعَتِيْ لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِيْ ‘আমার উম্মাতের কাবীরা গুনাহগারদের জন্যও আমার শাফা‘আত বরাদ্দ’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৭৩৯; তিরমিযী, হা/২৪৩৫)।


প্রশ্নকারী : সামিউল, কুলপাড়া, রাজশাহী।





প্রশ্ন (৯) : সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পাঠের সময় আঊযুবিল্লাহ-সহ বিসমিল্লাহ বলে পাঠ করতে হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৩) : বান্দার আমল কখন ইবাদতে পরিণত হয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) ‘সম্পদ সঞ্চয়’-এর ব্যাপারে ইসলাম কী বলেছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : মহিলারা কি ঠোটে লিপিস্টিক লাগাতে পারবে, বিশেষ করে ছালাত আদায়কারী মহিলা? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : মায়ের সম্পদে মেয়েদের বা বোনদের অংশ কি বেশি থাকে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : আমার মা অসহায়। তাকে দেখার কেউ নেই। অন্যদিকে আমার স্বামী স্বাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও মাকে সহযোগিতা করতে চায় না। আমি কি স্বামীর সংসার থেকে গোপনে আমার মাকে সহযোগিতা করতে পারব? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : ‘জুমু‘আহ মুবারক’- বলা কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : জনৈক বক্তা বলেন, যে ব্যক্তি চারটি রাত জাগবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে- মিনা, আরাফা, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের রাত। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : কোন ব্যক্তি তার আপন খালাতো বোনের মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪০) : প্রচলিত আছে যে, বিলাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আযান সঠিকভাবে দিতে না পারার জন্য তাকে বাদ দিয়ে নতুন মুয়াযিযন নিয়োগ দেয়। তখন বিলাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আল্লাহর কাছে অভিযোগ করে আল্লাহ তুমি আমাকে তোতলা বানিয়েছ। এটার জন্য দায়ী তুমি। আর আমার মুয়াযিযন না থাকার দায়ী তুমি। নতুন মুয়াযিযন ফজরের আযান দিল, তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এসে বলেন, আজ কি আযান হয়নি? তখন লোকজন বলল, হ্যাঁ, অনেক সুন্দর হয়েছে। তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বলেন, বিলাল আযান না দিলে সকাল হবে না এবং সূর্যও উঠবে না। প্রশ্ন হল- উক্ত ঘটনার কি কোন দলীল আছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৯) : ছালাত অবস্থায় মোবাইলে রিংটোন বাজলে করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : মসজিদের দেওয়ালে কুরআনের বা হাদীছ লেখে রাখা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ