বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পারিবারিক জীবন

-মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ
-অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


(৬ষ্ঠ কিস্তি) 

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের সাথে শুধু রসিকতা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতেন না, বরং তিনি তাঁর স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করতেন

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ خَرَجْتُ مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فِيْ بَعْضِ أَسْفَارِهِ وَأَنَا جَارِيَةٌ لَمْ أَحْمِلِ اللَّحْمَ وَلَمْ أَبْدُنْ فَقَالَ لِلنَّاسِ تَقَدَّمُوْا فَتَقَدَّمُوْا ثُمَّ قَالَ لِيْ تَعَالَيْ حَتَّى أُسَابِقَكِ فَسَابَقْتُهُ فَسَبَقْتُهُ فَسَكَتَ عَنِّيْ حَتَّى إِذَا حَمَلْتُ اللَّحْمَ وَبَدُنْتُ وَنَسِيْتُ خَرَجْتُ مَعَهُ فِيْ بَعْضِ أَسْفَارِهِ فَقَالَ لِلنَّاسِ تَقَدَّمُوْا فَتَقَدَّمُوْا ثُمَّ قَالَ تَعَالَيْ حَتَّى أُسَابِقَكِ فَسَابَقْتُهُ فَسَبَقَنِيْ فَجَعَلَ يَضْحَكُ وَهُوَ يَقُوْلُ هَذِهِ بِتِلْكَ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সময়ে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সফরে ছিলাম। তখন আমি হালকা-পাতলা গড়নের বালিকা ছিলাম। তিনি ছাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা অগ্রগামী হও, তারা অগ্রগামী হল। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, আস তোমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আমি তাঁর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় তাঁর অগ্রগামী হলাম (অর্থাৎ জিতে গেলাম), তিনি নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। তারপর যখন আমি মোটা স্থুলকায় হয়ে গেলাম এবং ইতিমধ্যে সে কথা ভুলে গিয়েছিলাম। অতঃপর তাঁর সাথে আবার কোন এক সফরে বের হলাম। তিনি লোকদেরকে অগ্রগামী হতে বললে তারা অগ্রগামী হল। এরপর তিনি বললেন, আস আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি। তখন পুনরায় তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলাম। তখন তিনি আমার আগে বেড়ে (জিতে) গেলেন। তখন তিনি হেসে দিয়ে বললেন, এটা তোমার প্রথমবারে জেতার বদলা।[১] অর্থাৎ হে আয়েশা! আজকের প্রতিযোগিতায় তোমার উপরে বিজয়ী হওয়া জীবনের প্রথমবার তোমার সাথে হেরে যাওয়ার বদলা।

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝেও স্ত্রীদের বিনোদনের প্রতি খেয়াল রাখতেন। তিনি সেই (জাহেলিয়াতের) যুগে স্ত্রীদের সাথে এধরণের উত্তম আচরণ করতেন। আর আজকের যুগের তথাকথিত সভ্য লোকেরা তাঁকে সেকেলে বলে তাচ্ছিল্য করে, অথচ তারা নিজেরাই শিষ্টাচার থেকে অনেক দূরবর্তী! বরং আজকের যুগের তথাকথিত সভ্য লোকেরা স্ত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতা করা তো দূরের কথা হাঁটতেও অপসন্দ করে।

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীরা তাঁর সফরসঙ্গী হলে তিনি তাদের সাথে নৈশালাপে যোগ দিতেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নিতেন

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا خَرَجَ أَقْرَعَ بَيْنَ نِسَائِهِ فَطَارَتِ الْقُرْعَةُ عَلَى عَائِشَةَ وَحَفْصَةَ فَخَرَجَتَا مَعَهُ جَمِيْعًا وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا كَانَ بِاللَّيْلِ سَارَ مَعَ عَائِشَةَ يَتَحَدَّثُ مَعَهَا فَقَالَتْ حَفْصَةُ لِعَائِشَةَ أَلَا تَرْكَبِيْنَ اللَّيْلَةَ بَعِيْرِي وَأَرْكَبُ بَعِيْرَكِ فَتَنْظُرِيْنَ وَأَنْظُرُ؟ قَالَتْ بَلَى فَرَكِبَتْ عَائِشَةُ عَلَى بَعِيْرِ حَفْصَةَ وَرَكِبَتْ حَفْصَةُ عَلَى بَعِيْرِ عَائِشَةَ فَجَاءَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِلَى جَمَلِ عَائِشَةَ وَعَلَيْهِ حَفْصَةُ فَسَلَّمَ ثُمَّ سَارَ مَعَهَا حَتَّى نَزَلُوْا فَافْتَقَدَتْهُ عَائِشَةُ فَغَارَتْ فَلَمَّا نَزَلُوْا جَعَلَتْ تَجْعَلُ رِجْلَهَا بَيْنَ الْإِذْخِرِ وَتَقُوْلُ يَا رَبِّ سَلِّطْ عَلَيَّ عَقْرَبًا أَوْ حَيَّةً تَلْدَغُنِيْ رَسُولُكَ وَلَا أَسْتَطِيْعُ أَنْ أَقُوْلَ لَهُ شَيْئًا

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফরে বের হতেন, তখন নিজ স্ত্রীদের ব্যাপারে লটারি করতেন। একবার লটারিতে আয়েশা ও হাফছার নাম উঠল। উভয়েই তাঁর সাথে বের হলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতে সফর করতেন, তখন তিনি আয়েশার সাথে আলাপ করে চলতেন। হাফছা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে বললেন, আজ রাত তুমি আমার উটে চড় আর আমি তোমার উটে চড়ি। এরপর তুমি অপেক্ষা করবে আমিও অপেক্ষা করব। অতঃপর আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হাফছা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর উটে আর হাফছা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর উটে আরোহণ করলেন। যখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর উটের কাছে এলেন এবং এতে সওয়ার ছিলেন হাফছা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তখন তিনি সালাম দিলেন এবং তাঁর সাথে চললেন। অবশেষে মনযিলে গিয়ে অবতরণ করলেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তাঁকে না পেয়ে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লেন। যখন সবাই মনযিলে গিয়ে নামলেন, আয়েশা তাঁর পা ইযখীর ঘাসের উপর রেখে বলতে লাগলেন, হে রব! একটা সাপ বা বিচ্ছু আমার দিকে ধাবিত করে দিন যেন আমাকে দংশন করে। তিনি তো আপনার রাসূল, আমি তাঁকে কিছু বলতেও পারি না।[২] আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) কর্তৃক এধরণের আচরণ মূলত রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি তার তীব্র আবেগ থেকেই ঘটেছিল। আর এধরণের প্রবল আগ্রহ বা ঈর্ষা ক্ষমাযোগ্য।

স্ত্রীদের প্রতি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্নেহপরবশ হওয়ার বড় নমুনা হল, সফরে তিনি বাহনের চালককে তাঁর স্ত্রীদের প্রতি সহজতা ও কমল আচরণ করার নির্দেশ দিতেন

عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فِيْ بَعْضِ أَسْفَارِهِ وَغُلَامٌ أَسْوَدُ يُقَالُ لَهُ أَنْجَشَةُ يَحْدُوْ فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَا أَنْجَشَةُ رُوَيْدَكَ سَوْقًا بِالْقَوَارِيْرِ

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে ছিলেন। আনজাশাহ নামক একজন হাবশী ক্রীতদাস হুদী (গীত) গাইছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আনজাশাহ! ধীরে, ‘কাঁচের দ্রব্য’ অর্থাৎ কাঁচের ন্যায় ভঙ্গুর নারীদের বহনকারী উটগুলোকে (সতর্কতার সাথে) হাঁকাও।[৩] আলোচ্য হাদীছে (سَوْقًا بِالْقَوَارِيْرِ) দ্বারা নারীদের দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আলেমগণ বলেন, নারীদেরকে কাঁচের ন্যায় ভঙ্গুর বস্তুর সাথে তুলনা করা হয়েছে, কাঁচের পাত্রের ন্যায় তাদের মনোবল দুর্বল হওয়ার কারণে।

উক্ত হাদীছ থেকে উদ্দেশ্য হল, উট চালনায় ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা। কেননা উট যখন চালকের হুদী (গীত) শুনতে পায় তখন দ্রুত চলে যা চালক উপভোগ করে। কিন্তু এই দ্রুত চলা আরোহীকে অস্বস্থিতে ফেলে দেয়, যে কারণে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ থেকে নিষেধ করেছেন। কেননা উটের তীব্র নাড়াচাড়া নারীদের মনোবলকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং তাদের উট থেকে পড়ে গিয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।[৪]

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের মাঝে পরস্পর হাসি-কৌতুককে সমর্থন দিতেন এবং তাদের হাসি-কৌতুক দেখে নিজেও মুচকি হাসতেন

قَالَتْ عَائِشَةُ زَارَتْنَا سَوْدَةُ يَوْمًا فَجَلَسَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بَيْنِيْ وَبَيْنَهَا إِحْدَى رِجْلَيْهِ فِيْ حِجْرِيْ وَالْأُخْرَى فِيْ حِجْرِهَا فَعَمِلْتُ لَهَا حَرِيْرَةً أَوْ قَالَ خَزِيْرَةً فَقُلْتُ كُلِيْ فَأَبَتْ فَقُلْتُ لَتَأْكُلِيْ أَوْ لَأُلَطِّخَنَّ وَجْهَكِ فَأَبَتْ فَأَخَذْتُ مِنَ الْقَصْعَةِ شَيْئًا فَلَطَّخْتُ بِهِ وَجْهَهَا فَرَفَعَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ رِجْلَهُ مِنْ حِجْرِهَا تَسْتَقِيْدُ مِنِّيْ فَأَخَذَتْ مِنَ الْقَصْعَةِ شَيْئًا فَلَطَّخَتْ بِهِ وَجْهِي وَرَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَضْحَكُ فَإِذَا عُمَرُ يَقُوْلُ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ فَقَالَ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قُوْمَا فَاغْسِلَا وُجُوْهَكُمَا فَلَا أَحْسِبُ عُمَرَ إِلَّا دَاخِلًا

আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদা সাওদা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) আমাদের ঘরে বেড়াতে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ও সাওদার মাঝখানে বসলেন। তার এক পা আমার কোল এবং অপর পা সাওদার কোল ঘেষে ছিল। আমি তার জন্য হারীরাহ (আটা, চর্বি ও পানি দিয়ে তৈরি এক প্রকার সুপ) তৈরি করে তাকে খেতে বললাম। কিন্তু সে খেতে অস্বীকৃতি জানাল। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমাকে খেতে হবে, না হলে আমি এগুলো তোমার মুখে মাখায়ে দিব। তবুও সাওদা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) খেতে অস্বীকৃতি জানাল। এবার পাত্র থেকে কিছু সুপ নিয়ে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তার মুখে মেখে দিলেন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উরুকে সাওদাহর উরুর সাথে লাগিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, তুমিও তার মুখে মাখায়ে দাও। অতঃপর সাওদা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) আমার মুখেও সুপ মেখে দিল। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার হাসতে লাগলেন। এসময়ে হঠাৎ আওয়াজ এলো ওমর ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)! হে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)! বলে ডাকছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যাও তোমরা তোমাদের মুখ ধুয়ে নাও। যেকোন সময় ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) প্রবেশ করতে পারে।[৫]

আজকের যামানায় যদি স্বামীর উপস্থিতিতে দু’স্ত্রীর মাঝে এমন ঘটনা ঘটত, তাহলে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রসিকতা ও খুনসুটিপূর্ণ বৈবাহিক আচরণ সম্পর্কে জাহালাতের কারণে উভয় স্ত্রীকে স্বামী ত্বালাক্ব দিয়ে বসত। এই হাদীছের আরো শিক্ষা হল- রসিকতা ও খুনসুটির জগতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতিক্রিয়া এবং তাতে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা। এখানে যদিও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য স্ত্রীদের তুলনায় আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে বেশি মহব্বত করতেন, তদুপরি বাহ্যিকভাবে কখনো তা প্রকাশ করেননি। বরং হাদীছের মধ্যে দেখা যায়, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর অপর স্ত্রী সাওদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর মুখে সুপ মেখে দেয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছিলেন। আর এতে করে বৈঠকটি রসিকতা ও খুনসুটির রঙ্গমঞ্চ হিসাবে চিত্রিত হয়, যা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচ্ছিলেন।

স্ত্রীদের সাথে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কৌতুক ও খুনসুটিমাখা সম্পর্কের আরো দৃষ্টান্ত হল,

عَنْ كُلْثُوْمٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَ كَانَتْ زَيْنَبُ تَفْلِيْ رَأْسَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَعِنْدَهُ امْرَأَةُ عُثْمَانَ بْنِ مَظْعُوْنٍ وَنِسَاءٌ مِّنَ الْمُهَاجِرَاتِ يَشْكُوْنَ مَنَازِلَهُنَّ وَأَنَّهُنَّ يَخْرُجْنَ مِنْهُ وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِنَّ فِيْهِ فَتَكَلَّمَتْ زَيْنَبُ وَتَرَكَتْ رَأْسَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّكِ لَسْتِ تَكَلَّمِيْنَ بِعَيْنَيْكِ تَكَلَّمِيْ وَاعْمَلِيْ عَمَلَكِ. فَأَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَوْمَئِذٍ أَنْ يُوَرَّثَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ النِّسَاءُ

কুলছূম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা যয়নব (রাযিয়াল্লাহু আনহা) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুলে উকুন তালাশ করছিলেন। এ সময় তাঁর নিকট ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর স্ত্রী ও কয়েকজন মুহাজির মহিলা বসা ছিলেন, যারা তাদের ঘর-বাড়ীর ব্যাপারে অভিযোগ করছিল যে, (স্বামীর মৃত্যুর পর) তাদের সেখান হতে বের করে দেয়া হয় এবং সেখানে বসবাস করতে তাদের কষ্ট হয়। এসময় যয়নব নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথা ছেড়ে দিয়ে তাদের সাথে কথা বলা আরম্ভ করলে, তাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তুমি তোমার দু’চোখ দিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে সক্ষম হবে না, বরং তুমি আমার সাথে কথা বল এবং যে কাজ করছিলে তা করতে থাক। অতঃপর তিনি নির্দেশ দেন যে, মুহাজিরদের স্ত্রীরা তাদের ঘরের উত্তরাধিকারী হবে। (ফলে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ ল-এর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী তাঁর ঐ বাড়ীর উত্তরাধিকারী হন, যা মদীনাতে ছিল)।[৬] এখান থেকে স্ত্রীর সাথে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খুনসুটিমাখা সম্পর্কের কথা ফুটে উঠে।

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের কাছে কৌতুক শুনতে চাইতেন

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَرَأَيْتَ لَوْ نَزَلْتَ وَادِيًا وَفِيْهِ شَجَرَةٌ قَدْ أُكِلَ مِنْهَا وَوَجَدْتَ شَجَرًا لَمْ يُؤْكَلْ مِنْهَا فِيْ أَيِّهَا كُنْتَ تُرْتِعُ بَعِيْرَكَ؟ قَالَ فِي الَّذِيْ لَمْ يُرْتَعْ مِنْهَا تَعْنِيْ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ لَمْ يَتَزَوَّجْ بِكْرًا غَيْرَهَا

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মনে করুন আপনি এমন একটি ময়দানে গিয়ে পৌঁছলেন, যেখানে একটি গাছের কিছু অংশ খাওয়া হয়ে গেছে। আর এমন একটি গাছ পেলেন, যার কিছুই খাওয়া হয়নি। এর মধ্যে কোন গাছের পাতা আপনার উটকে খাওয়াবেন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন, যে গাছ থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। এ কথার দ্বারা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর উদ্দেশ্য ছিল নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ছাড়া অন্য কোন কুমারীকে শাদী করেননি।[৭]

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক ভারসাম্যপূর্ণ নির্দোষ কৌতুক করার আরো কিছু নমুনা

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ رَجَعَ إِلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ذَاتَ يَوْمٍ مِنْ جَنَازَةٍ بِالْبَقِيْعِ وَأَنَا أَجِدُ صُدَاعًا فِيْ رَأْسِيْ وَأَنَا أَقُوْلُ وَارَأْسَاهْ قَالَ بَلْ أَنَا وَارَأْسَاهْ قَالَ مَا ضَرَّكِ لَوْ مِتِّ قَبْلِيْ فَغَسَّلْتُكِ وَكَفَّنْتُكِ ثُمَّ صَلَّيْتُ عَلَيْكِ وَدَفَنْتُكِ؟ قُلْتُ لَكِنِّيْ أَوْ لَكَأَنِّيْ بِكَ وَاللهِ لَوْ فَعَلْتَ ذَلِكَ لَقَدْ رَجَعْتَ إِلَى بَيْتِيْ فَأَعْرَسْتَ فِيْهِ بِبَعْضِ نِسَائِكَ قَالَتْ فَتَبَسَّمَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ثُمَّ بُدِئَ فِيْ وَجَعِهِ الَّذِيْ مَاتَ فِيْهِ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাকী (উদ্যান) থেকে ফিরে এসে আমাকে মাথা ব্যথায় যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় পেলেন। তখন আমি বলছিলাম, হায় আমার মাথা! তিনি বলেন, হে আয়েশা! আমিও মাথা ব্যথায় ভুগছি। হায় আমার মাথা! অতঃপর তিনি বলেন, তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যেতে, তাহলে তোমার কোন ক্ষতি হত না। কেননা আমি তোমাকে গোসল করাতাম, কাফন পরাতাম, তোমার জানাযার ছালাত পড়তাম এবং তোমাকে দাফন করতাম। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যেন আপনাকে দেখতে পাচ্ছি, আপনি এসব কাজ সম্পন্ন করে আমার ঘরে ফিরে এসে আপনার কোন স্ত্রীর সাথে বাসর যাপন করছেন। তিনি বলেন, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হাসলেন। তারপরই তার সেই (অসুখের) যন্ত্রণা শুরু হল, যে অসুখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৮]

وبلطفه يرعى مشاعرها * في كل نائبة يواسيها
متجملاً من أجلها عطراً * إن الذي يرضيهِ يرضيها
و علي الذي هويت يتابعها  * فيما يحل لها ويعطيها
وعلى جلالته يسابقها * واذا تجاريه يجاريها
إن السماحة في شريعته * واليسر أصل كامنٌ فيها

‘কমলতার সাথে তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীর অনুভূতির মূল্যায়ন করতেন, স্ত্রীর সকল বিপদে তাকে সমবেদনা জানাতেন।
তিনি সুগন্ধি মেখে নিজেকে সজ্জিত করতেন, যা তাঁকে সন্তুষ্ট করত এবং তাঁর স্ত্রীকেও সন্তুষ্ট করত।
বৈধ যা কিছু স্ত্রী পসন্দ করত, তাতে তিনি সম্মতি দিতেন এবং তা প্রদান করতেন।
তিনি আপন মর্যাদায় তার উপরে বিজয়ী হতেন, যখন স্ত্রী তাঁর সাথে প্রতিযোগিতা করত, তিনিও তার সাথে অংশ নিতেন।
সহমর্মিতা জ্ঞাপন ছিল তাঁর নীতি, আর স্ত্রীর মধ্যে ছিল সুপ্ত সরলতা’।

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক স্ত্রীদেরকে উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া, যাতে তারা মুমিন নারীদের আদর্শ হতে পারে

স্ত্রীদের সাথে রসিকতা ও খুনসুটি করার পাশাপাশি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে শিষ্টাচারও শিক্ষা দিতেন; যাতে করে তারা অন্য সকল নারীদের উপর উত্তম আদর্শ হতে পারে। স্বামী হিসাবে স্ত্রীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে ভেবেই তিনি একাজ করতেন। এ সম্পর্কে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّ اللهَ سَائِلٌ كُلَّ رَاعٍ عَمَّا اسْتَرْعَاهُ أَحَفِظَ ذَلِكَ أَمْ ضَيَّعَ؟ حَتَّى يُسْأَلَ الرَّجُلُ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ

‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে তাঁর তত্ত্বাবধানের বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। সে ঠিকমত তার দায়িত্ব পালন করেছে, না-কি অবহেলা করেছে? এমনকি ব্যক্তিকে তার পরিবার সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা হবে’।[৯]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ أَنَّهُ قَالَ أَلَا كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالْأَمِيْرُ الَّذِيْ عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ عَنْهُمْ

ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর সূত্রে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্ববান এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। আমীর বা নেতা তার অধীনস্ত লোকদের উপর দায়িত্ববান এবং সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিবার পরিজনের ব্যাপারে দায়িত্ববান এবং সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।[১০]

স্বামী তার স্ত্রীকে তা‘লীম বা প্রশিক্ষণ, দিক-নির্দেশনা ও সু-পরামর্শ দেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। অধিকাংশ বৈবাহিক জীবনে অসৎকাজের অনুপ্রবেশ ঘটে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি দ্বীনের সঠিক তা‘লীম বা প্রশিক্ষণ না দেয়া ও তাদের হক্ব যথাযথভাবে আদায় না করার কারণে।

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে ইবাদতের তা‘লীম দিতেন এবং নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন

عَنْ أمِّ سَلمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ اِسْتَيْقَظَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَيْلَةً فَزِعًا يَقُوْلُ سُبْحَانَ اللهِ مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الْخَزَائِنِ؟ وَمَاذَا أُنْزِلَ مِنَ الْفِتَنِ؟ مَنْ يُّوْقِظُ صَوَاحِبَ الْحُجُرَاتِ يُرِيْدُ أَزْوَاجَهُ لِكَيْ يُصَلِّيْنَ؟ رُبَّ كَاسِيَةٍ فِى الدُّنْيَا عَارِيَةٍ فِى الْآخِرَةِ

উম্মে সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একরাতে আশঙ্কিত অবস্থায় জাগ্রত হলেন এবং বলতে লাগলেন, সুবহানাল্লাহ, এ রাত্রিতে কত রহমত নাযিল হল এবং কত বিপদ এসে পৌঁছল। কে জাগিয়ে দিবে এই হুজরাবাসিনীদেরকে? এটা দ্বারা তিনি তাঁর স্ত্রীগণের প্রতিই ইঙ্গিত করছিলেন, যাতে তাঁরা ছালাত আদায় করে। আহা! দুনিয়াতে সুশোভিত কত নারী আখেরাতে সম্পূর্ণ উলঙ্গিনী হবে।[১১]

যখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবগত হলেন যে, একই দিনে দুনিয়াতে অসংখ্য নেকীর ভা-ার ও ফিতনা অবতরণ করা হয়েছে, তখন তিনি অধিক কল্যাণ ও অকল্যাণের কথা চিন্তা করে শঙ্কিতাবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উন্মুক্ত কল্যাণের ভা-ার ও ফিতনার দরজা বিষয়ে মানুষের উদাসীনতা দেখে আশ্চর্য হলেন। একারণে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদেরকে ছালাতের জন্য ডেকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইঙ্গিত করলেন যে, তাঁর স্ত্রীদের জন্য যরূরী হল ইবাদত-বন্দেগী থেকে গাফেল না থাকা এবং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রী বলে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়ার আশা না করা।

হাদীছের শিক্ষা : পরিবারের কর্তা তার পরিবারকে ইবাদতের জন্য জাগিয়ে দিবে, বিশেষ করে আল্লাহর নিদর্শনাবলী প্রকাশের দিনগুলোতে।

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানের শেষ দশকে স্ত্রীদেরকে ক্বিয়াম ও ইবাদত-বন্দেগীর জন্য জাগিয়ে দিতেন

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ وَأَحْيَا لَيْلَهُ وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রামাযানের শেষ দশক আসত, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবাদতের জন্য কোমর বেঁধে ফেলতেন। তিনি রাত্রি জেগে নিজে ইবাদত করতেন এবং তাঁর পরিবারকেও জাগাতেন।[১২]

عَنْ عَلِيٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ يُوْقِظُ أَهْلَهُ فِي العَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ

আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারের লোকদেরকে রামাযানের শেষ দশ দিন জাগাতেন।[১৩]

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানের শেষ দশকে রাতের ছালাত আদায়, যিকির ও দু‘আ পাঠের জন্য পরিবারকে জাগিয়ে দিতেন। সকল সুন্নাহ পালনের সাথে সাথে বিশেষত বিতরের ছালাত আদায়ের জন্য তাদেরকে জাগিয়ে দিতেন, কেননা নিয়মিত সুন্নাতগুলোর মধ্যে বিতরের ছালাত বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ فَإِذَا أَوْتَرَ قَالَ قُوْمِيْ فَأَوْتِرِي يَا عَائِشَةُ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে ছালাত আদায় করতেন। বিতর আদায় করার সময় হলে বলতেন, হে আয়েশা! উঠ বিতর আদায় কর।[১৪]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসুত্র : 
[১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬২৭৭; আবূ দাউদ, হা/২৫৭৮; ইবনু মাজাহ, হা/১৯৭৯; আলবানী ছহীহ বলেছেন, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৩১।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২১১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৪৫।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১৬১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩২৩।
[৪]. ইমাম নববী, শরহে ছহীহ মুসলিম, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৮১।
[৫]. নাসাঈ, সুনানুল কুবরা, হা/৮৮৬৮; আলবানী হাসান বলেছেন; সিলসিলা ছহীহা, হা/৩১৩১।
[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৫১০; শু‘আইব আরনাঊত্ব হাদীছটিকে হাসান বলেছেন; আবূ দাউদ, হা/৩০৮০; আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৭৭।
[৮]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯০৮, হাসান; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৬৫; আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।
[৯]. নাসাঈ, সুনানুল কুবরা, হা/৯১২৯; আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন, সিলসিলা ছহীহা, হা/১৬৩৬।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৮৯৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২৯।
[১১]. ছহীহ বুখারী হা/১১৫, ১১২৬।
[১২]. ছহীহ বুখারী হা/২০২৪; ছহীহ মুসলিম হা/১১৭৪।
[১৩]. ছহীহ বুখারী হা/২০২৪; ছহীহ মুসলিম হা/১১৭৪।
[১৪]. ছহীহ বুখারী হা/৫১২; ছহীহ মুসলিম হা/৭৪৪।




প্রসঙ্গসমূহ »: জীবন কথা নবী-রাসূল
নববী আদর্শ (৭ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৩য় পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৯তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (২০তম পর্ব) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৬ তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৪র্থ পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৭তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৫ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৫তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (২য় পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৮ম পর্ব) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১১তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ