রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যক্তিজীবন (শেষ কিস্তি)
-মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদক : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যক্তিজীবন
ফ. আচরণবিধির ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ :
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আচরণবিধির দিক দিয়ে সর্বোত্তম মানুষ ছিলেন। তিনি নিজ হাতে ক্রয়-বিক্রয় করতেন। তিনি মজুরী খাটতেন, আবার মজুরী নিয়োগ দিতেন। এছাড়া বাড়ির অন্যান্য কাজেও অংশগ্রহণ করতেন। একটি হাদীছে এসেছে, আস-সায়িব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَتَيْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلُوْا يُثْنُوْنَ عَلَىَّ وَيَذْكُرُوْنِىْ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا أَعْلَمُكُمْ يَعْنِىْ بِهِ قُلْتُ صَدَقْتَ بِأَبِىْ أَنْتَ وَأُمِّىْ كُنْتَ شَرِيْكِى فَنِعْمَ الشَّرِيْكُ كُنْتَ لَا تُدَارِىْ وَلَا تُمَارِىْ
‘একদা আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। তখন ছাহাবীরা আমার প্রশংসা করতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তার সম্বন্ধে তোমাদের চেয়ে বেশি জ্ঞাত। আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনি সত্য বলেছেন, আপনি আমার (সফর) সঙ্গী ছিলেন। আপনি কতো উত্তম সঙ্গী! আপনি না আমার বিরোধিতা করেছেন; আর না আমার সঙ্গে ঝগড়া করেছেন।[১]
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদিয়া প্রদান করতেন, নিজেও গ্রহণ করতেন এবং হাদিয়ার বিনিময়ে উপঢৌকন হিসাবে কিছু দিতেন। তিনি বন্দক রাখার মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করতেন আবার বন্দক ছাড়াও ঋণ নিতেন। তিনি প্রয়োজনে মানুষের কাছে কর্য করতেন। তিনি নগদ অথবা প্রয়োজনে বাকীতেও মানুষের কাছে দ্রব্য ক্রয় করতেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঋণ গ্রহণ করলে, তা উত্তমভাবে আদায় করতেন। তিনি কোন ব্যক্তির নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করলে তা পরিশোধের সময় সেই ব্যক্তির জন্য দু‘আ করতেন। যেমন, ইবনু আবি রাবী‘আ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে,
اسْتَقْرَضَ مِنِّى النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعِيْنَ أَلْفًا فَجَاءَهُ مَالٌ فَدَفَعَهُ إِلَىَّ وَقَالَ بَارَكَ اللهُ لَكَ فِىْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ إِنَّمَا جَزَاءُ السَّلَفِ الْحَمْدُ وَالأَدَاءُ
‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট হতে চল্লিশ হাজার দিরহাম কর্য নিয়েছিলেন। এরপর তাঁর নিকট মাল আসলে তিনি তা পরিশোধ করে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার ঘরে এবং মালে বরকত দান করুন। কর্যের বিনিময় তো এই যে, লোক কর্যদাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে এবং তা পরিশোধ করবে।[২]
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একখণ্ড জমি ছিল, তিনি তা আল্লাহর রাস্তায় ছাদাক্বাহ করে দেন। তিনি কারো হয়ে সুপারিশ করতেন আবার তার কাছে সুপারিশ করা হত। বারীরা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) স্বীয় স্বামী মুগীছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুপারিশকে প্রত্যাখ্যান করলে, তিনি তার উপরে রাগ করলেন না আবার দোষারোপও করলেন না। কেননা তিনি ছিলেন উত্তম আদর্শ ও নমুনা।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশির অধিক জায়গায় শপথ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে তিন জায়গায় শপথ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি কখনো কখনো শপথ থেকে ফিরে এসে কাফফারা আদায় করতেন আবার কখনো শপথের উপর অটল থাকতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য কথার মাধ্যমে রসিকতা করতেন। তিনি কখনো তাওরিয়্যাহ করতেন, তবে তাতে কোন মিথ্যা মিশ্রিত থাকত না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন পদক্ষেপ ও লড়াইয়ে নিজেকে অগ্রগামী রাখতেন। তিনি নিজ হাতে জুতা মেরামত ও কাপড় সেলাই করতেন। তিনি নিজ হাতে বালতি মেরামত করতেন, ছাগলের দুধ দোহন করতেন এবং নির্জন প্রান্তরে ধোয়া কাপড় বিছিয়ে দিতেন।
তিনি তাঁর নিজের ও পরিবারের সেবা করতেন। মসজিদ নির্মাণের সময় তিনি নিজে সাথে করে দুধ বহন করে নিয়ে গেছেন। তিনি নিজে ছাহাবীদেরকে নিমন্ত্রণ করেছেন আবার তাঁকেও নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি অসুস্থের সেবা-শুশ্রুষা করতেন। লোকের জানাযায় উপস্থিত হতেন। তিনি মানুষের দাওয়াতে সাড়া দিতেন। তিনি বৃদ্ধা, মিসকীন ও দুর্বলের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেন। তিনি কবিতার প্রশংসাগাঁথা শুনতেন এবং ভুল থাকলে শুধরিয়ে দিতেন।[৩]
ব. অসুস্থের সেবায় উত্তম আদর্শ :
ছাহাবীদের (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে তিনি তার সেবাশুশ্রুষা করতেন। একদা আহলে কিতাবের একজন গোলাম অসুস্থ হলে তিনি তার সেবাশুশ্রুষা করেন। তিনি তাঁর মুশরিক চাচার সেবা-শুশ্রুষা করেন এবং তার নিকটে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। কিন্তু ইহুদী গোলামটি ইসলাম গ্রহণ করলেও তাঁর চাচা ইসলাম গ্রহণ করেননি।
তিনি অসুস্থের কাছাকাছি হয়ে তার শিউরে বসতেন এবং শরীরের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। শিউরে বসে তিনি বলতেন, كَيْفَ تَجِدُكَ ‘তুমি কেমন অনুভব করছ?’ এসময় তিনি স্বীয় ডান হাত দ্বারা অসুস্থের গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেন এবং বলতেন,
اَللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ البَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِيْ لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
‘হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূর করুন এবং আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্য দানকারী, আপনার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান করুন, যাতে কোন রোগ অবশিষ্ট থাকে না’।[৪]
ভ. স্বভাবজাতগত সুন্নাহ পালনে উত্তম আদর্শ
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুতা পরিধান করা, চুল আঁচড়ানো, ওযূ করা, কোন কিছু ধরা ও প্রদান করার ক্ষেত্রে ডান হাত ব্যবহার করাকে পসন্দ করতেন। তিনি তাঁর ডান হাতকে খানা-পিনা ও পবিত্রতা অর্জনের জন্য ব্যবহার করতেন এবং পেশাব-পায়খানা ও অন্যান্য নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাম হাত ব্যবহার করতেন। চুল কাটার ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ ছিল, হয় পুরো চুল রাখতেন অথবা পুরোটাই কেটে ফেলতেন। তিনি কখনোই কিছু অংশ রেখে কিছু অংশ কাটতেন না। তিনি মিসওয়াক করাকে খুব পসন্দ করতেন। তিনি ছিয়াম রাখা অবস্থায় ও না রাখা উভয় অবস্থায় মিসওয়াক করতেন। তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে ও ওযূর পূর্বে মিসওয়াক করতেন। তিনি ছালাত ও বাড়িতে প্রবেশের সময়ও মিসওয়াক করতেন। তিনি অধিক হারে সুগন্ধি ব্যবহারকে পসন্দ করতেন, তিনি কখনোই সুগন্ধি ছাড়তেন না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুল আঁচড়িয়ে রাখাকে পসন্দ করতেন। কখনো তিনি নিজেই নিজের চুল আঁচড়াতেন আবার কখনো আয়েশা সিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তাঁর চুল আঁচড়িয়ে দিতেন।[৫]
অতএব, মুসলিমরা তাদের দুর্দশার দিকে লক্ষ্য করে দেখুক! তারা যেন পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কাফের সম্প্রদায় ও অভিনয় শিল্পীদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকালচার পরিত্যাগ করে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর ছাহাবীদের মধ্যে থাকা সুউচ্চ ও সর্বোত্তম আদর্শকে গ্রহণ করে।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কার্যবিধি চার ভাগে বিভক্ত। যথা
প্রথম প্রকার : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বভাবজাতগত কাজ-কর্ম। যে কর্মগুলো সাধারণ মানুষের মত রাসুলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট থেকে প্রকাশ পেত। যার সাথে অহীর কোন সম্পর্ক ছিল না। যেমন রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাড়াচাড়া, দাঁড়ানো, বসা, হাঁটা, খানা-পিনা, ঘুমানো ইত্যাদি কর্মের সাথে তাঁর আদেশ-নিষেধের কোন সম্পর্ক নেই। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেসব কর্ম নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ধারাবাহিক আদায় করেছেন, সেগুলো জায়েয থেকে মুস্তাহাব পর্যায়ে উন্নিত হবে। যেমন তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়মিত ডান কাঁধে করে ঘুমাতেন। অনুরূপভাবে যখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকে কোন কাজ করার প্রতি উৎসাহ প্রকাশ পায়, তখন তা মুস্তাহাব আমল হিসাবে পরিগণিত হয়। যেমন তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা এবং ডান হাতে খাওয়া ইত্যাদি।
দ্বিতীয় প্রকার : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যেসব স্বভাবজাতগত কর্ম তাঁর স্ব-জাতি ও বহুল প্রচলিত প্রথা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, যে ব্যাপারে শরী‘আতের সুস্পষ্ট কোন দিকনির্দেশনা নেই। যেমন পোশাকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। কেননা পোশাক দেশের মানুষের অভ্যাসের সাথে সম্পৃক্ত। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওত লাভ করার পর পূর্বের পরিধেয় পোশাককে বর্জন করেননি। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী ও পুরুষের পোশাকে আলাদা আলাদা পদ্ধতি ও শর্তারোপ করেছেন। অনুরূপভাবে তার লম্বা চুল রাখার বিষয়টির ক্ষেত্রেও বলা যাবে না যে, এসবের অনুসরণ করা সুন্নাত। কেননা এসব কাজের দ্বারা শরী‘আত ও ইবাদাহকে উদ্দেশ্য করা হয় না। যখন রাসূলুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশ বা উৎসাহমূলক কর্মের কথা বর্ণিত হবে অথবা সেই আমলের ব্যাপারে এমন কোন ইঙ্গিত পাওয়া যাবে, যা শরী‘আতের স্বভাবজাত কাজ হিসাবে প্রমাণ করে, তখন তা এই প্রকারের আমল হিসাবে গণ্য হবে না। যেমন সাদা কাপড় পরিধান করা এবং টাখনুর উপরে কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি।
তৃতীয় প্রকার : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিজের সাথে খাছ কিছু বিষয়। যার মধ্যে নির্দিষ্ট কোন (اسوة) আদর্শ নেই। যেমন ছিয়াম ছেড়ে দেয়া। চারের অধিক স্ত্রী গ্রহণ করা। মহর নির্ধারণ ছাড়াই উপঢৌকনের মাধ্যমে বিবাহ দেয়া ইত্যাদি।
চতুর্থ প্রকার : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইবাদতগত কর্ম। যা তিনি আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে করতেন। এসকল কাজে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুসরণ করতে হবে। এ প্রকারের কর্মগুলো কখনো ওয়াজিব বা মুস্তাহাব পর্যায়ের হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে কিছু কর্ম রয়েছে, যা পরিত্যাগের ক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করতে হবে। এখানে পরিত্যাগ করা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক কোন একটি কাজ ছেড়ে দেয়া, যা নিম্নোক্ত দু’ভাবে হতে পারে।
প্রথমত : এটা স্পষ্ট হওয়া যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অমুক অমুক কাজ ছেড়ে দিয়েছেন, তা করেননি। যেমন ঈদের ছালাতের ব্যাপারে বিশিষ্ট ছাহাবী ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর বক্তব্য-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى الْعِيْدَ بِلَا أَذَانٍ وَلَا إِقَامَةٍ
‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আযান ও ইক্বামত ব্যতীতই ঈদের ছালাত আদায় করেছেন’।[৬]
দ্বিতীয়ত : ছাহাবীদের থেকে কোন কাজ উদ্ধৃত না হওয়া, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি তা করতেন, তাহলে অবশ্যই উম্মতের জন্য তা বর্ণনার ক্ষেত্রে ছাহাবীদের ইচ্ছা বিদ্যমান থাকত। ছাহাবীদের মধ্য হতে কেউই যদি তা বর্ণনা না করেন এবং জনসম্মুখেও কখনোই যদি তা আলোচনা না করা হয়, তাহলে বুঝা যাবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেনইনি। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক ছালাত আরম্ভের সময় উচ্চারণ করে নিয়্যত করা ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি। আর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক কোন কিছু ছেড়ে দেয়া দলীল হিসাবে সাব্যস্ত হয়। তবে তিনি প্রতিবন্ধকতার কারণে যে কাজটি ছেড়ে দিয়েছেন, যেমন উম্মতের উপর ফরয হয়ে যাওয়ার ভয়ে রামাযান মাসে জামা‘আতের সাথে ক্বিয়ামুল লাইল আদায়কে ছেড়ে দেয়া। প্রতিবন্ধকতা দূর হওয়ার পর এধরণের কাজগুলো ছেড়ে দেয়ার মধ্যে তাঁর আদর্শ নেই বরং তা আদায় করার মধ্যেই তাঁর আদর্শ বিদ্যমান।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পারিবারিক জীবন
স্ত্রীদের সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আচার-ব্যবহার
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰہِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰہَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰہَ کَثِیۡرًا
‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে’ (সূরা আল-আহযাব : ২১)। উক্ত আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সকলের জন্য সাধ্যানুযায়ী রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে পরিচিতি লাভ করা যরূরী, যাতে তারা তাঁকে একনিষ্ঠতার সাথে অনুসরণ করতে পারে।
একজন স্বামীর জন্য স্বামী হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা যরূরী। একজন বিচারকের জন্য বিচারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা সম্পর্কে অবগত হওয়া যরূরী। একজন পরিচালক বা নেতার জন্য নেতৃত্বের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উত্তম আদর্শ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। স্ত্রীদের সাথে আচরণবিধির ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন সর্বোত্তম আদর্শ ও আলোকবর্তিকা, যা মানুষকে সুন্দর একটি বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশনা দেয় এবং যার ফলশ্রুতিতে বৈবাহিক ও সামাাজিক জীবনে পজিটিভ প্রভাব পড়ে। মহান আল্লাহর সাহায্যে এই অধ্যায়ে আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আলোকপাত করব।
প্রথম বিষয় : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বৈবাহিক জীবনের চিত্রাঙ্কন।
দ্বিতীয় বিষয় : স্ত্রীদের সাথে রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আচার-ব্যবহার, যার মধ্যে মুমিন নারীদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে।
তৃতীয় বিষয় : নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাড়ীর বিভিন্ন সমস্যা এবং তা সমাধানের পদ্ধতি।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বৈবাহিক জীবনের চিত্র
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এগারো জন স্ত্রী ছিলেন। তারা হলেন, খাদীজা বিনতে খুয়াইলিদ, আয়েশা বিনতে আবি বাকার, হাফছা বিনতে ওমার, সাওদাহ বিনতে যাম‘আহ আল-আমেরী, যয়নব বিনতে জাহাশ আল-আসাদী, যয়নব বিনতে খুযায়মাহ আল-হিলালী, উম্মে সালামাহ হিনদা বিনতে আবি উমাইয়্যাহ আল-মাখযুমী, উম্মে হাবীবাহ রামালাহ বিনতে আবি সুফইয়ান আল-উমাবী, মায়মুনাহ বিনতে হারিছ আল-হিলালী, জুয়াইরিয়্যাহ বিনতে হারিছ আল-মুছতালাকী, ছাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই আন-নাযীরী (রাযিয়াল্লাহু আনহা)।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর নয় জন স্ত্রী জীবিত ছিলেন এবং খাদীজী বিনতে খুয়াইলিদ ও যয়নব বিনতে খুযায়মাহ তাঁর পূর্বেই মুত্যুবরণ করে।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সত্বী-সাধবী, পবিত্রা পূণ্যবতী স্ত্রীদের সাথে খুব সুন্দরভাবে বৈবাহিক জীবন অতিবাহিত করেছেন। বৈবাহিক জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে খুব সুক্ষ্ম আদর্শ রেখে গেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَ عَاشِرُوۡہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ‘আর তোমরা তাদের সাথে সদভাবে বসবাস কর’ (সূরা আন-নিসা : ১৯)। এখানে المعروف বা সদাচারণ শব্দটি দ্বারা ব্যাপকভাবে রাসূলুল্লাহর কথা, কাজ ও মহৎ চরিত্র উদ্দেশ্য।
স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। কেনইবা এমনটা হবে না? তিনিই তো এরশাদ করেছেন, خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي ‘তোমাদের মাঝে সে-ই ভাল যে তার পরিবারের নিকট ভাল। আর আমি আমার পরিবারের নিকট তোমাদের চাইতে উত্তম’।[৭]
স্ত্রীদের সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ করতেন, যা তাদের সাথে কৃত আচার-ব্যাবহারের মধ্যে ফুটে উঠতো। যদি লোকেরা স্ত্রীদের সাথে রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আচরণকে অনুসরণ করতো, তাহলে বর্তমানকালে আমরা স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে যে নানান সমস্যার কথা শুনতে পাই, তার সমাধান হত।
অধিকাংশ সময় একজন ব্যক্তি পরিবার ও সমাজের নানাবিধ সমস্যা ও বৈবাহিক জটিলতা দেখে, শুনে বা পত্রিকায় পড়ে প্রভাবিত হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মুসলিম বিশ্বের গড় তালাক্ব একটি ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধির মধ্যে সাম্প্রতিক বছরে (১৪৩০ হি.) সউদী প্রশাসনের হিসাব মতে বিয়ের আনুপাতিক হারে তালাক্ব ২১ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সউদীর প্রধান শহর রিয়াযে এর পরিমাণ বিয়ের সমান আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।[৮]
স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্কে নানাবিধ সমস্যা ও তালাকের পরিমাণ বৃদ্ধির এই ভয়াবহ চিত্রের মাঝে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গৃহের চিত্র তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভব করছি। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের সাথে কেমন আচরণ করতেন, কিভাবে তাঁদের বিভিন্ন আচরণে ছবর করতেন, কিভাবেই বা তাদের ভুলগুলো দেখে রাগান্বিত হতেন? এবিষয়গুলো আমরা তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশা-আল্লাহ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবন-চরিতের মধ্যেই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিদিন তাঁর স্ত্রীদের সাথে ঘনিষ্টভাবে বসে তাদের খোঁজ-খবর নিতেন।
একটি হাদীছে এসেছে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الصُّبْحَ جَلَسَ فِيْ مُصَلَّاهُ وَجَلَسَ النَّاسُ حَوْلَهُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ دَخَلَ عَلَى نِسَائِهِ امْرَأَةً امْرَأَةً يُسَلِّمُ عَلَيْهِنَّ وَيَدْعُوْ لَهُنَّ فَإِذَا كَانَ يَوْمُ إِحْدَاهُنَّ جَلَسَ عِنْدَهَا
‘আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের ছালাত আদায়ের পর মুছাল্লায় বসে থাকতেন এবং লোকেরাও সূর্যোদয় পর্যন্ত তার সাথে বসে থাকতেন। তারপর এক এক করে সকল স্ত্রীর ঘরে প্রবেশ করতেন এবং তাদের সাথে সালাম ও দু‘আ বিনিময় করতেন। অতঃপর যে স্ত্রীর ঘরে সেদিনের পালা থাকতো, তার ঘরে অবস্থান করতেন’।[৯]
প্রত্যেহ দিনের প্রথমাংশে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের সাথে দেখা করে সালাম বিনিময় করতেন। আর দিনের শেষ ভাগে তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘনিষ্টভাবে তাঁর স্ত্রীদের কাছাকাছি হয়ে তাদের খোঁজ নিতেন এবং আলোচারিতায় অংশ নিতেন। যেমন আয়েশা ছিদ্দীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا انْصَرَفَ مِنَ العَصْرِ دَخَلَ عَلَى نِسَائِهِ فَيَدْنُوْ مِنْ إِحْدَاهُنَّ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আছরের ছালাত শেষ করতেন, তখন স্বীয় স্ত্রীদের মধ্য থেকে যে কোন একজনের নিকট গমন করতেন’।[১০] এখানে فَيَدْنُوْ مِنْ إِحْدَاهُنَّ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, সহবাস ছাড়া শুধু স্ত্রীর সংস্পর্শে অবস্থান ও চুম্বন করা।[১১]
ইবনু হাজার আসকালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিনের প্রথম প্রহরে স্ত্রীদের সাথে শুধু সালাম ও দু‘আ বিনিময় করতেন। আর শেষ ভাগে সবার সাথে ঘনিষ্টভাবে বসে কথা-বার্তা বলতেন।[১২] আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,
قَلَّ يَوْمٌ إِلَّا وَهُوَ يَطُوْفُ عَلَيْنَا جَمِيْعًا فَيَدْنُوْ مِنْ كُلِّ امْرَأَةٍ مِنْ غَيْرِ مَسِيْسٍ حَتَّى يَبْلُغَ إِلَى الَّتِيْ هُوَ يَوْمُهَا فَيَبِيْتَ عِنْدَهَا
‘এমন দিন খুব কমই হয়েছে; যেদিন তিনি আমাদের কাছে আসতেন এবং সহবাস না করে সবার সাথে আলাপ করতেন। অতঃপর যার নিকট রাত যাপনের পালা হতো, তিনি সেখানে রাত যাপন করতেন’।[১৩]
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের সাথে ঘনিষ্টভাবে মিশতেন যাতে তাদের সাথে বন্ধুত্বভাবাপন্ন সম্পর্ক তৈরী হয়, তাদের অন্তরগুলোকে পরিশুদ্ধ করা যায় এবং যাতে সেই দিনের সমস্যাগুলোর সমাধান হয় এবং তাদের অন্তুরগুলো পরিশুদ্ধ হয়।[১৪] তাঁর স্ত্রীগণ কখনোই তাঁকে অনুপস্থিত পেতেন না, বরং প্রতিদিন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হত। তাহলে সেসব স্বামীদের কী অবস্থা, যারা দিনের পর দিন এমনকি বহু মাস পর্যন্ত স্ত্রীদের থেকে পৃথক থাকে!!
অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যারা তাদের বন্ধুদের সাথে প্রতিদিন আড্ডা দেন, অনেক রাত পর্যন্ত তাদের সাথে গল্প-গুজবে কাটান, অতঃপর অনেক রাত করে ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরেন যতক্ষণে তাদের পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর বিছানায় শরীরকে এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
হাদীছের মধ্যে পালা ছাড়াও অন্য স্ত্রীদের সাথে দেখা করা, তাদের সাথে ঘনিষ্ট হওয়া, তাদের স্পর্শ বা চুম্বন করার দলীল রয়েছে। এর মধ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উত্তম চরিত্রের কথা ফুটে উঠেছে যে, তিনি পরিবারের নিকটে সর্বশ্রেষ্ট মানুষ ছিলেন।[১৫] রাতে কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সকল স্ত্রী একই ঘরে উপস্থিত হতেন এবং তিনি তাদের কাছে গমন করতেন, তাদের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে খোঁজ-খবর নিতেন। আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যায়ে নাবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নয়জন সহধর্মিণী ছিলেন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মাঝে পালাবণ্টন কালে দিনের আগে (পালার) প্রথম স্ত্রীর কাছে পুনরায় পৌঁছতেন না। প্রতি রাতে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে ঘরে অবস্থান করতেন সেখানে তারা (নাবী পত্নীগণ) সমবেত হতেন’।[১৬] উপরোক্ত হাদীছ থেকে বুঝা যায়, স্বামীর জন্য প্রত্যেক স্ত্রীর বাড়িতে গমন করা মুস্তাহাব, স্ত্রীদেরকে নিজেদের বাড়িতে ডেকে নেয়া অনুত্তম।[১৭]
* এম. এ, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[১]. আবূ দাঊদ, হা/৪৮৩৬; ইবনু মাজাহ, হা/২২৮৭; আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।
[২]. নাসাঈ, হা/৪৬৮৩; ইবনু মাজাহ, হা/৪২৪২; আলবানী ছহীহ বলেছেন, ছহীহুল জামে‘ হা/২৩৫৩।
[৩]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, ১ম খ-, পৃ. ১৬৫।
[৪]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, ১ম খ-, পৃ. ৪৯৪; ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৪৩।
[৫]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, ১ম খ-, পৃ. ১৭৬।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৫৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৮৬; আবুদাউদ, হা/১১৪৭।
[৭]. তিরমিযী, হা/৩৮৯৫; আলবানী ছহীহ বলেছেন, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩১৪।
[৮]. ২০/০৩/২০১২ সালের দেশীয় অনলাইন পত্রিকা দ্রষ্টব্য।
[৯]. তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/৮৭৬৪।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২১৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭৪।
[১১]. উমদাতুল কারী, ৩০তম খ-, পৃ. ৯২।
[১২]. ফাৎহুল বারী, ৯ম খ-, পৃ. ৩৮৯।
[১৩]. আবুদাউদ, হা/২১৩৫; আলবানী ছহীহ বলেছেন, ছহীহ আবুদাউদ, হা/১৮৫২।
[১৪]. কুরতুবী, আল-মুফহাম, ১৩তম খ-, পৃ. ৯০।
[১৫]. আউনুল মা‘বুদ, ৬ষ্ট খ-, পৃ. ১২২।
[১৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৬২।
[১৭]. শারহুন নববী লি ছহীহিল মুসলিম, ১০ম খ-, পৃ. ৪৭।
প্রসঙ্গসমূহ »:
নবী-রাসূল